ঢাকা     শুক্রবার   ১৯ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ৬ ১৪৩১

সেদিন আমার পরিবার অনেক অসম্মানিত হয়েছে: পূজা

রাহাত সাইফুল || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ০৯:০১, ৭ জুন ২০১৯   আপডেট: ০৫:২২, ৩১ আগস্ট ২০২০
সেদিন আমার পরিবার অনেক অসম্মানিত হয়েছে: পূজা

পূজা চেরি। নায়িকা হিসেবে অভিষেক সিনেমা দিয়েই দর্শকমনে জায়গা করে নিয়েছেন। শিশুশিল্পী হিসেবে মিডিয়াতে পা রাখলেও অল্পদিনেই সেই খোলস ভেঙে বেরিয়ে এসেছেন তিনি। পূজা চেরির সাক্ষাৎকার নিয়েছেন রাহাত সাইফুল। 

রাইজিংবিডি : চলচ্চিত্রের রঙিন জগতে আসার গল্পটা শুনতে চাই।
পূজা চেরি : আমাদের পাশের বাসায় এক আন্টি থাকতেন। তিনি বুটিকসে কাজ করতেন। ক্যাটালগের জন্য আন্টি একদিন আম্মুকে বললেন, পূজা দেখতে বেশ সুন্দর! ওকে আমাদের বুটিকসের মডেল হিসেবে নিতে চাই। ক্লাস ওয়ানে তখন পড়তাম। আম্মু প্রস্তাবে রাজি হয়ে গেলেন। এরপর সুন্দর কিছু ছবি তোলা হলো। হঠাৎ একদিন চলচ্চিত্র পরিচালক সায়মন তারিক ভাইয়ের সঙ্গে দেখা। তিনি আমার খুব প্রশংসা করে সিনেমায় কাজের প্রস্তাব দিলেন। আম্মু শুনে তো ভীষণ খুশি! আমার ভেতরেও উত্তেজনা কাজ করছিল- আমি সিনেমায় অভিনয় করব! সত্যি বলতে আমার বিস্ময়ের শেষ ছিল না।

কিন্তু অনেকদিন কেটে গেল। সায়মন তারিক ভাই আর ডাকেন না। আমরা বিরক্ত হয়ে ভাবলাম, বোধহয় আমাদের আর ডাকবে না। তিনি কথারকথা বলেছিলেন। এখন ভুলে গেছেন। আমি তখন মাথার চুল কেটে ছোট করে ফেললাম। অথচ সেদিন রাতেই সায়মন ভাই ফোন দিলেন। আমাদের এফডিসিতে যেতে বললেন। এর আগে কখনও এফডিসিতে যাওয়া হয়নি। কিছুটা ভয় নিয়েই আমরা এফডিসিতে গেলাম। যাওয়ার আগে পাড়া-প্রতিবেশীদের সবাইকে জানালাম এই ঘটনা- আমরা এফডিসিতে যাচ্ছি, পরিচালক ডেকেছেন। তখন জাকির হোসেন রাজু স্যারের ‘মনের ঘরে বসত করে’ সিনেমার শুটিং চলছিল। আমাকে শাকিব ভাইয়ের ছোট বোনের চরিত্র করতে বলা হলো। আমি সানন্দে রাজি হয়ে গেলাম। সিনেমাটিতে এক সপ্তাহ কাজ করেছি। এটিই আমার প্রথম সিনেমা। যদিও এই সিনেমা নিয়ে আমার ভীষণ বেদনার গল্প আছে।

রাইজিবিডি : বেদনার গল্প?
পূজা চেরি :
হ্যাঁ। ওই সিনেমায় অভিনয়ের পর আমার মধ্যে সঙ্গত কারণেই ভীষণ এক ভালো লাগা কাজ করেছিল। জীবনের প্রথম অভিনয় বলে কথা! সিনেমাটি মুক্তির পর বন্ধুবান্ধব, আমার টিচার, আত্মীয়-স্বজন, প্রতিবেশী সবাইকে সিনেমা হলে নিয়ে গিয়েছিলাম। ইচ্ছে ছিল সবাইকে নিয়ে সিনেমাটা দেখব। সিনেমা শুরু হওয়ার পর দশ মিনিট, বিশ মিনিট, ত্রিশ মিনিট- একের পর এক দৃশ্য চলে যেতে লাগল অথচ আমার অভিনয় করা দৃশ্যটি আর এলো না। পর্দায় আমাকে খুঁজে পেলাম না। অর্থাৎ সিনেমায় আমার অভিনয়ের অংশটুকু রাখা হয়নি। সবাই তখন জানতে চাইছে- আমি কোথায়? সেদিনের মতো লজ্জা আর মন খারাপ কোনদিন আমার হয়নি। সেদিন আমার পরিবার সবার সামনে অনেক অসম্মানিত হয়েছে। সবার কাছে ছোট হয়েছে। আম্মু তখন জেদ ধরল, আমাকে যে করেই হোক একদিনের জন্য হলেও সিনেমার পদার্য় দেখবে। এরপর অনেক গল্প। সব শেষে ডিপজল ভাইয়ের ‘ছোট্ট সংসার’ সিনেমার মাধ্যমে আমাকে প্রথম চলচ্চিত্রের পর্দায় দেখা গেল। এরপর ‘মোস্ট ওয়েলকাম’, ‘মোস্ট ওয়েলকাম-টু’, ‘ভালোবাসার রং’, ‘অগ্নি, ‘আমার চ্যালেঞ্জ’, ‘সন্তানের মত সন্তান’সহ বেশ কিছু সিনেমায় শিশুশিল্পী হিসেবে কাজ করেছি।

 



রাইজিংবিডি : এত কম বয়সে চলচ্চিত্রে নায়িকা হলেন কীভাবে?
পূজা চেরি :
‘পোড়ামন-টু’ সিনেমার জন্য নায়িকা খোঁজা হচ্ছিল। তখন আজিজ ভাই আমাকে শাড়ি পরিয়ে দেখেছেন। আমি মনে মনে খুব একসাইটেড ছিলাম। মনে মনে ভাবছিলাম আমি যেন পরীক্ষায় পাস করতে পারি। আজিজ ভাই কিন্তু তখনই কিছু বললেন না। জন্মদিনে ঘোষণা দিলেন ‘পোড়ামন-টু’র নায়িকা হিসেবে তিনি আমাকে সিলেক্ট করেছেন। এরপর তো কলকাতার ‘নূরজাহান’ সিনেমায়ও অভিনয় করেছি। রাজ চক্রবর্তীর এই সিনেমা আগে মুক্তি পায়।

রাইজিংবিডি : অন্য নবাগত নায়িকারা যেরকম কভারেজ পায় আপনি সেটা পেয়েছেন কী? কী মনে হয়?
পূজা চেরি :
আমি বলবো আমি অনেক লাকি। আজিজ ভাইয়ের সিনেমার মাধ্যমে আমার নায়িকা হিসেবে এদেশে অভিষেক হয়েছে। যে কারণে আমি যথেষ্ট কাভারেজ পেয়েছি। সবাই অনেক হেল্পফুল ছিলেন।

রাইজিংবিডি : আপনার দেখা প্রথম সিনেমা আর এখনকার সিনেমার মধ্যে কী কোন পার্থক্য খুঁজে পান?
পূজা চেরি :
অনেক পার্থক্য! এখন পুরো ব্যাপারটাই ডিজিটাল হয়েছে, আধুনিক হয়েছে। এখন অনেক ঝকঝকে প্রিন্ট। আমার দেখা প্রথম সিনেমা ‘মনপুরা’। এই সিনেমার স্টাইল, দৃশ্যের সঙ্গে এখনকার স্টাইল, দৃশ্যধারণের অনেক পার্থক্য।

রাইজিংবিডি : যদি বলা হয় আপনার দেখা অতীতের কোনো সিনেমার রিমেক হলে কোন সিনেমায় অভিনয় করতে চাইবেন?
পূজা চেরি :
জীবন সংসার, অনন্ত প্রেম।

রাইজিংবিডি : সিনেমায় অভিনয় করার সময় কোনো তিক্ত অভিজ্ঞতা হয়েছে কি?
পূজা চেরি :
অনেক অভিজ্ঞতা রয়েছে। বলে শেষ করা যাবে না। আমি শুটিং ইউনিটকে নিজের পরিবার মনে করি। ‘পোড়ামন-টু’তে ক্লাইমেক্স ছিলো ফাঁসি। জ্যাকেট পরিয়ে আমাকে ঝুলিয়ে দেয়া হলো। ওই দৃশ্যে অভিনয় করতে গিয়ে প্রায় মরেই গিয়েছিলাম। প্রচন্ড ব্যথাও পেয়েছি। ঘটনা হলো- অনেকক্ষণ আমাকে দাঁড়িয়ে থাকতে হয়েছিল। অথচ গলায় দড়ি বাঁধা। একসময় আমার পা ব্যথা করতে শুরু করল। বললাম, আমার পা ব্যথা করছে, বসতে দিন। তখন কেউ একজন আমার পেছনের দড়িটা খুলে দিতেই আমার গলায় ফাঁস আটকে গেল। কারণ গলার দড়িটা সে খুলতে ভুলে গিয়েছিল। আমি তো ঝুলে আছি। গলা দিয়ে কথাও বের হচ্ছে না। আজিজ ভাই দৌড়ে এসে আমাকে উদ্ধার করেন।

 



রাইজিংবিডি : দেশে বা দেশের বাইরের সিনেমার দৃশ্য দেখে কখনও মনে হয়েছে- এই চরিত্রটা পেলে ভালো হতো।
পূজা চেরি :
বলিউডের ‘বরফি’ সিনেমায় প্রিয়াংকা চোপরার চরিত্রটা আমি করতে চাই। সুচিত্রা সেনের সব চরিত্র আমার ভালো লাগে। তার স্টাইলটাই অন্যরকম। তার কাছ থেকে অনেক শেখার আছে। তিনি যে চরিত্রে অভিনয় করেছেন আমার সবই ভালো লেগেছে। এর যে কোনো একটি চরিত্রে কাজ করতে পারলে নিজেকে ধন্য মনে করব।

রাইজিংবিডি : দশ বছর পরে নিজেকে কোন জায়গায় দেখতে চান?
পূজা চেরি :
সবাই নিজেকে ভালো একটা অবস্থানে দেখতে চায়। আমিও এর ব্যতিক্রম নই। দশ বছর পরে নিজেকে দেশের শীর্ষ নায়িকা হিসেবে দেখতে চাই।

রাইজিংবিডি : বর্তমানে কাজের ব্যস্ততা কি নিয়ে?
পূজা চেরি :
ঈদেও আমি সিনেমার শুটিং নিয়ে ব্যস্ত থাকবো। এম রাহিম পরিচালিত ‘সান’ সিনেমার শুটিং করবো। আমার সঙ্গে রয়েছে সিয়াম। এছাড়া তাসকিন, চম্পা ম্যাডাম অভিনয় করছেন।

রাইজিংবিডি : ক্রিকেট উন্মাদনায় ভাসছে বিশ্ব। ক্রিকেট নিয়ে আপনার আগ্রহ কেমন?
পূজা চেরি :
বাংলাদেশ টিমের জন্য অবশ্যই শুভ কামনা থাকবে। আমি মাশরাফি ভাইয়ের খেলা পছন্দ করি। এছাড়া সাকিব আল হাসান, তামিম ইকবাল ভাইকে আমার ভালো লাগে।



রাইজিংবিডি/ঢাকা/৭ জুন ২০১৯/রাহাত/তারা

রাইজিংবিডি.কম

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়