ঢাকা     শুক্রবার   ১৯ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ৬ ১৪৩১

হাতি দেখতে চুনতি অভয়ারণ্যে

সুমন্ত গুপ্ত || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ০৭:২৮, ২০ জুন ২০১৯   আপডেট: ০৫:২২, ৩১ আগস্ট ২০২০
হাতি দেখতে চুনতি অভয়ারণ্যে

অভয়ারণ্যে পর্যটকদের সতর্ক করতে সাইনবোর্ড

সুমন্ত গুপ্ত : আজ আমাদের কক্সবাজার ভ্রমণের দ্বিতীয় দিন। সাতসকালে ঘুম থেকে উঠে পেটপূজা শেষ করে বেড়িয়ে পড়লাম নতুন গন্তব্যে। আমরা আছি লোহাগড়া। সেখান থেকে মসৃণ মহাসড়ক পেড়িয়ে আমরা চলেছি সামনের দিকে। চলতি পথে দেখা পেলাম চুনতি বন্যপ্রাণী অভয়ারণ্য। বন্য হাতি চলাচলের পথ দেখে থমকে দাঁড়ালাম। আমাদের চার চাকার পাইলট পলাশ ভাইকে বললাম, নতুন গন্তব্যে যাবার আগে এই বনে ঘুরে যাই, যদি বন্য হাতির দেখা পাই!

সূর্যদেবের প্রখরতা তখনো বাড়েনি। আমরা নেমে পড়লাম বনের পথে। সঙ্গী সানন্দা আর অনিক। আমরা পদব্রজে এগিয়ে চলেছি। মনে মনে ভাবছি, এই অভয়ারণ্য সম্পর্কে যেহেতু কিছু জানি না, সেহেতু ইন্টারনেট থেকে জেনে নেব কিনা? জানলাম, চট্টগ্রাম জেলার লোহাগড়া উপজেলায় এর অবস্থান। আমরা অবশ্য সেখানেই ছিলাম। চট্টগ্রাম থেকে প্রায় ৭০ কিলোমিটার দূরে চট্টগ্রাম-কক্সবাজার মহাসড়কের পাশেই এই বনাঞ্চল। অভয়ারণ্যটি প্রধানত ক্রান্তীয় মিশ্র-চিরহরিৎ। প্রায় ৪৭৭ প্রজাতির বারো লাখেরও বেশি গাছ রয়েছে এখানে। নেট থেকে তথ্যগুলো জেনে বেশ চমকে গেলাম। আরো জানলাম, এ বনে রয়েছে বেশ কয়েকটি শতবর্ষী গর্জন গাছ। এছাড়াও শাল, সেগুন, আকাশমণি, বট, হারগোজা, চাঁপালিশ, হরিতকি, বহেরা, বাঁশ, আসাম লতা, ছন প্রভৃতি তো রয়েছেই।
 

বনের পথে বন্যপ্রাণীর পায়ের ছাপ


তবে এখানকার সবচেয়ে উল্লেখযোগ্য প্রাণী এশীয় হাতি। সেই হাতি দেখতেই বনে প্রবেশ। চুনতি বনে সাধারণত দেখা মেলে লালমুখো বানর, মুখপোড়া হনুমান, খেঁকশিয়াল, সজারু, মায়া হরিণ, বন্যশুকর, শিয়াল, নানা রকম গিরগিটি, সাম্বারসহ অন্যান্য প্রাণী। নানান জাতের পাখিরও অভয়াশ্রম এই বনাঞ্চল। সাপও আছে। জানা গেল, এই বনাঞ্চল ও পার্শ্ববর্তী এলাকা আমাদের স্বাধীনতা যুদ্ধের সময় মুক্তিযোদ্ধাদের পুনর্গঠন স্থান ছিল। আমরা এগিয়ে চলেছি। বাঁধানো দেয়ালের এক পাশে প্রবেশদ্বার। প্রবেশ পথের সঙ্গেই টিকেট কাউন্টার। কিন্তু কাউকে দেখতে পেলাম না। মনে হলো খুব একটা জনমানবের পা পড়ে না এখানে। এই বনে ঢুকতে হলে টিকেট কাটতে হয়। প্রবেশদ্বার পেড়িয়েই বনের শুরু। চারপাশে শুধু গাছ আর গাছ। দূর থেকে দেখা পেলাম পাহাড়ের। ঝি ঝি পোকার ক্লান্তিহীন ডাক এক অন্য রকম পরিবেশের সৃষ্টি করেছে। চলতি পথে আগন্তুকের মতো উপস্থিত হলেন একজন বয়োজ্যেষ্ঠ লোক। তার কাঁধে জ্বালানি কাঠ। বনের ভেতর থেকে জ্বালানি কাঠ সংগ্রহ করে ফিরছেন। বললাম আমরা এসেছি অনেক দূর থেকে। এখানের পথ চিনি না, যদি একটু সাহায্য করতেন ঘুরে দেখার জন্য। আমার কথা শুনে তিনি এক বাক্যে রাজি হয়ে গেলেন।

তিনি আমাদের পথ দেখিয়ে নিয়ে যেতে লাগলেন। চারপাশে সবুজে ভরপুর মায়াময় পরিবেশ। আলা-আঁধারের খেলা মন ভরিয়ে দেয়। গাছে গাছে নাম না জানা পাখির ডাক। চলতি পথে দেখা পেলাম মাকড়শার বসতি। বেশ ভালো লাগছিল শহরের যান্ত্রিকতাহীন পরিবেশে এসে। আমরা বেশ কয়েকটি গর্জন গাছ দেখলাম। আকাশ ছুঁয়ে আছে মনে হলো। পথের দিশারী বললেন, এশীয় হাতি এই বনের অলঙ্কার। সচরাচর দেখা যায় না হাতির দলের। ওরা নাকি দলবদ্ধ হয়ে চলাচল করে। বেজায় গোয়ার এবং রেগে গেলে রক্ষা নেই। হাতির চলার পথে সাবধানে হাঁটার নির্দেশনা চোখে পড়ল। বয়োজ্যেষ্ঠ লোকটি জানালেন, হাতি দল বেঁধে মিয়ানমার পর্যন্ত চলাফেরা করে চুনতির অভয়ারণ্যের ভেতর দিয়ে। বনটি হাতি চলাচলের অন্যতম একটি করিডর। আমরা তার কথা শুনছি আর চোখ-কান খোলা রেখে এগিয়ে যাচ্ছি। কীভাবে যে এক ঘণ্টা সময় পেরিয়ে গেল টের পেলাম না। বলে রাখা ভালো চুনতি অভয়ারণ্যের ভেতর আছে তিনটি পায়ে হাঁটা পথ বা ট্রেইল। ছোট, মাঝারি ও বড় পথ তিনটিতে হাইকিং করা যাবে যথাক্রমে আধ ঘণ্টা, এক ঘণ্টা ও তিন ঘণ্টা হিসেবে। এ পথেও দেখা মিলতে পারে বন্য হাতিসহ নানা বন্যপ্রাণীর।
 

অভয়ারণ্যে বন্যহাতির বিচরণ


দুপাশে বনের ছায়াঘেরা পথে হেঁটে হেঁটে বড় একটি টিলা পার হওয়ার পর ঢালু খাঁদ। তারপর আবার পাহাড়ের ওপরের দিকে পথ চলে গেছে। চমৎকার এই পথ দিয়ে হাঁটতে হাঁটতে মন চাইবে হারিয়ে যেতে। অভয়ারণ্য এলাকায় বনপুকুর, প্রাকৃতিক গর্জন বনাঞ্চল, বন্যহাতির বিচরণ ক্ষেত্র, গয়ালমারা প্রাকৃতিক হ্রদ, বনপুকুর ফুটট্রেইল, জাঙ্গালীয়া ফুটট্রেইল, গোলঘর, স্টুডেন্ট ডরমেটরি, নেচার কনজারভেশন সেন্টার, গবেষণা কেন্দ্র, ইকোকটেজসহ বিভিন্ন ইকোট্যুরিজম স্থাপন করা হয়েছে পর্যটকদের জন্য। কিন্তু আমাদের মন খারাপ করেই ফিরতে হলো। কারণ আমরা এতো দূর হেঁটে গিয়েও বন্য হাতির দেখা পেলাম না।

চুনতি অভয়ারণ্যের ভেতর পায়ে হাঁটা পথ


যাওয়ার উপায়: ঢাকার ফকিরাপুল, কমলাপুর, সায়দাবাদ ইত্যাদি জায়গা থেকে কক্সবাজারগামী বাসে চড়ে নামতে হবে লোহাগড়া বাজার বাস স্টেশনে। বাসে ভাড়া পড়বে জনপ্রতি ৯০০ থেকে ২০০০ টাকা পর্যন্ত। এসি, নন-এসি দু’রকম বাস আছে। এরপর বাজার থেকে প্রায় ১০ কিলোমিটার ভেতরে চুনতি অভয়ারণ্যে যেতে হবে থ্রি হুইলারে। এছাড়া চট্টগ্রামের বহদ্দারহাট ও অক্সিজেন মোড় থেকেও কক্সবাজারের বাসে চড়ে লোহাগড়া নামতে পারেন। ভাড়া ১৫০-২০০ টাকা।





রাইজিংবিডি/ঢাকা/২০ জুন ২০১৯/তারা

রাইজিংবিডি.কম

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়