ঢাকা     বুধবার   ১৭ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ৪ ১৪৩১

আয়ারল্যান্ডের ভিসা পাওয়া এত সহজ! পর্ব ৫

উদয় হাকিম || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ০৭:৫৫, ২৪ জুন ২০১৯   আপডেট: ০৫:২২, ৩১ আগস্ট ২০২০
আয়ারল্যান্ডের ভিসা পাওয়া এত সহজ! পর্ব ৫

ক্লিফস অব মহের। আয়ারল্যান্ডের একটি ঐতিহ্যবাহী ট্যুরিস্ট স্পট

উদয় হাকিম, ডাবলিন (আয়ারল্যান্ড) থেকে ফিরে : দূতাবাসের বাইরে এলাম। সিঁড়ি দিয়ে নামার সময় নিজেকে হালকা লাগছিল। অজয়ের সঙ্গে দেখা। বেচারা ভাবলেশহীন। মুচকি হাসলাম। এরপর সে জিজ্ঞেস করল, কাজ হলো কিছু? বললাম, কাজ হবে কি না জানি না। ৪টার সময় আসতে বলেছে। আজকে ৪টায়? নাকি কালকে?

বললাম, আজকে। এত তাড়াতাড়ি! আচ্ছা, ঠিক আছে, আসুন।

পার্কের দেয়াল ঘেঁষে সেই কাঠবিড়ালী। তাকিয়ে ছিল আমার দিকে। তার সঙ্গে দেখলাম আরেকটা জুটেছে। দুজন মিলে কেমন আড়চোখে তাকাচ্ছিল। দুষ্টুমির তাকানো। ওদের চঞ্চলতায় ঠাহর করতে পারছিলাম না- ভিসা হবে কি হবে না।

ছোটবেলায় দেখেছি, আমার বাবা কোথাও যাওয়ার আগে যাত্রা আস্থি নাকি নাস্থি তা পরীক্ষা করতেন। মানে শুভ না অশুভ। আমিও দেখেছি, বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই সেটি মিলে যায়। যদিও ওসবে আমার বিশ্বাস নেই। তবু দেখতে ক্ষতি কি। হোক সংস্কার কিংবা কুসংস্কার। বলে দিই আপনাদেরকেও। নিজেরাও পরীক্ষা করে নিতে পারেন। বিশেষ করে কোথাও যাত্রা শুরুর আগে শুভ-অশুভ দেখে নিতে পারেন। একদম সহজ বিষয়টা। আঙ্গুল দিয়ে চেপে ধরে দেখুন নাকের কোন পথটা ক্লিয়ার। ডান না বাম? বোঝেন নাই? নাকের দুটি পথ দিয়ে নিঃশ্বাস নিতে হয়। আঙ্গুল দিয়ে চাপ দিয়ে দেখেন কোন পাশ দিয়ে বাতাস বেশি বের হয়। ডান পাশ দিয়ে বেশি বের হলে যাত্রা শুভ। বাম হলে..। তবে আধা ঘণ্টার মধ্যে, কখনো কখনো মিনিট দশেকের মধ্যেই এটি বদলে যেতে পারে। ঘুম বা শুয়ে থাকার কারণে বদলে যেতে পারে। আর ঠান্ডা লাগলেও বাতাসের হেরফের হয়।

ওই হুজুরের গল্প তো সবারই জানা। বেহেশতে একটা নদী আছে। সেখানে গাছের পাতা জলে পড়লে কুমির হয়ে যায়। ডাঙ্গায় পড়লে বাঘ। নোয়াখালীর লোকের প্রশ্ন- অর্ধেক জলে আর অর্ধেক স্থলে পড়লে কী হবে?

যাত্রা পরীক্ষা করে দেখলাম দুই পাশই প্রায় সমান চলে। তাহলে কী হবে? মানে ভিসা হতেও পারে, না-ও হতে পারে। এ অবস্থায় কী করব। পার্কে গিয়ে মিনিট পাঁচেক বসলাম। মনে হলো দু’ঘণ্টা এই গরমে বসে থাকার মানে হয় না। হোটেলে চলে যাই। একটা অটো নিয়ে সোজা লা মেরিডিয়ান।

হোটেল কক্ষে গিয়ে ফ্রেশ হলাম। তারপর ব্যস্ত হয়ে গেলাম মোবাইল ফোন নিয়ে। ওয়াইফাই কানেক্ট করে ফেসবুকে ঘোরাঘুরি। নিউজ পোর্টালগুলোতে দেশের খবর দেখে নিলাম। কোলকাতা থেকে এক বন্ধু ফোন করল, সেখানে যাব কি না? ওদিকে বাংলাদেশ থেকে কোলকাতায় গিয়েছেন নাটকের পরিচালক মোহাম্মদউল্লাহ নান্টু। সঙ্গে ছিলেন মডেল রানা। আমার লেখা ফেসবুক গানটি নচিকেতা গেয়েছিলেন। সেটার ভিডিও শ্যুটিং হচ্ছিল কোলকাতার গঙ্গার ধারে। নচিকেতা নিজেও গানটিতে মডেল হয়েছিলেন। বলেছিলাম, আয়ারল্যান্ডের ভিসা না হলে কোলকাতা গিয়ে যোগ দেব তাদের সঙ্গে। নচিদা’ও নাকি বলেছিলেন, উদয় বাবুকে আসতে বলো।

যাহোক, নান্টু ভাইকে ফোন দিলাম। বললাম, ভিসা হয়ে যেতে পারে। শুনে তার কিছুটা মন খারাপ। বলেই ফেললেন, ভিসাটা না হলেই ভালো হতো!

ক্লিফস অব মহের-এর পুরোটা জুড়েই সৌন্দর্যের কমতি নেই

 

বিকেল সাড়ে ৩টা। হোটেল থেকে বেরিয়ে গেলাম। সামনের রাস্তা থেকে একটা অটো নিয়ে ছুটলাম চানক্যপুরীর দিকে। চানক্যপুরী নামটা যতবার মনে পড়ছে, ততবারই ভালো লাগছে। কেমন যেন রূপকথার একটা আমেজ পাচ্ছিলাম। সেখানে নিজে ঘোরাঘুরি করছি! রূপকথার রাজ্যে বিচরণ!

কুড়ি মিনিটে পৌঁছে গেলাম চানক্যপুরী, আয়ারল্যান্ড অ্যাম্বাসিতে। অজয় আবারো মুচকি হাসে। বললেন, এখনো ১০ মিনিট বাকি। ওই পার্কে গিয়ে বসলাম। গরম। আরো কিছু লোক গাছের ছায়ায় বসে ছিলেন। খেয়াল করলাম, এবার কাঠবিড়ালী চারটা। ভালোই মজা করছিল, খেলছিল। সেবার অবশ্য খুব ব্যস্ত ওরা। কোনো দিকে তাকানোর সময় ছিল না। ‘খুশিতে, ঠেলায়’ ঘুরছিল বাঁদর কাঠবিড়ালীগুলো। 

৪টা বাজার মিনিট দুয়েক আগে গিয়ে দাঁড়ালাম চৌকির সামনে। ভেতরে বসে ছিলেন অজয়। বাইরে এলেন। বললেন, আরো দু’মিনিট আছে। জীবনে এতো সময়নিষ্ঠ লোক আর দেখিনি। ৪টে বাজল। আমি ঘড়ি দেখছিলাম। অজয় নিরুদ্বেগ। ঠিক মিনিট দুয়েক পর বলল, ওয়েট করুন, দেখছি। সম্ভবত তার ঘড়ি কিছুটা স্লো। ৪টে ৫ মিনিটে সে ফোন করল ভেতরে। কার সঙ্গে যেন কথা বলল। মিলল ভেতরে যাওয়ার অনুমতি। অজয় এগিয়ে গিয়ে গেট খুলে দিলো।

ভেতরে গিয়ে দেখলাম কেউ নেই। সেই ওয়েটিং রুমে গিয়ে বসলাম। আবারো পানি নিলাম। আয়ারল্যান্ডের কিছু ছবি টাঙানো দেয়ালে। দেখছিলাম সেগুলো। এরমধ্যে একটা ছিল ক্লিফস অব মহের নামে একটা জায়গা। সমুদ্রের খাড়া পাড়। পাথুরে। অপরূপ সৌন্দর্য নিয়ে দাঁড়িয়ে। ছিলো কিছু ল্যান্ডস্কেপ। দেশটা নিশ্চয় খুব সুন্দর। মিনিট ছয়েক পরে ডাক পড়লো- হু ইজ হেয়ার?

এগিয়ে গেলাম। আপনি কি উদয়? বললাম হ্যাঁ। কুড়ি- পঁচিশ বছরের এক যুবক। আমার পাসপোর্ট আর জমা দেওয়া কাগজগুলো নিয়ে এসেছেন। পাসপোর্ট আমার হাতে দিলেন। বললেন, এই কাগজে সাইন করতে। লিখতে বললেন, পাসপোর্ট বুঝে পাইলাম।

বাস্তবে কিন্তু কিছু না বুঝেই পাসপোর্ট পেলাম। পরে খুলে দেখব ভিসা দিলো কি দিলো না।


**

 

রাইজিংবিডি/ঢাকা/২৪ জুন ২০১৯/উদয় হাকিম/রফিক

রাইজিংবিডি.কম

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়