ঢাকা     বৃহস্পতিবার   ২৫ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ১২ ১৪৩১

সোনার বাংলাদেশ দেখতে চান তিনি

উদয় হাকিম || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ০৯:২৩, ২৭ মে ২০১৭   আপডেট: ০৫:২২, ৩১ আগস্ট ২০২০
সোনার বাংলাদেশ দেখতে চান তিনি

কঠোর পরিশ্রমী ইকবাল আহমেদ লিটন। বর্তমানে আয়ারল্যান্ডে ৫ টি রেস্টুরেন্টের মালিক তিনি

উদয় হাকিম, আয়ারল্যান্ড থেকে ফিরে : পুরো নাম ইকবাল আহমেদ লিটন। আয়ারল্যান্ড আওয়ামী লীগের একাংশের সভাপতি। থাকেন ডাবলিন শহরে। আয়ারল্যান্ডে তার সংগ্রামী জীবন এবং রাজনীতি নিয়ে কথা হলো।

শুরুতেই জানতে চেয়েছিলাম- আয়ারল্যান্ড দেশটি কেমন? বললেন, এক কথায় অসাধারণ। সামাজিক নিরাপত্তায় বিশ্বের সেরা। আইনশৃঙ্খলা এক কথায় চমৎকার। লোকজন কম। আয়তন ৪৪ হাজার বর্গমাইল। লোকসংখ্যা মাত্র ৫ মিলিয়ন। শান্তিপ্রিয় দেশ। ইউরোপীয় ইউনিয়ন থেকে প্রচুর টাকা পাচ্ছে। সেই টাকায় স্যোশাল সিকিউরিটি ভালো ভাবেই মেইনটেইন করছে এরা।

বাড়ি মানিকগঞ্জের সিঙ্গাইরে। গ্রামের নাম রামচন্দ্রপুর। হক সাহেবের বাড়ি। ক্লাস সেভেন থেকে তিনি রাজনীতি শুরু করেন। কীভাবে? জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রনেতা ছিলেন চাচাতো ভাই মাহবুব আহমেদ। ১৯৭৩ সালে তিনি এমপি হন। সেই থেকেই লিটনের রাজনীতি শুরু। মিছিল মিটিংয়ে অংশ নিতেন। সাভার কলেজে ছাত্ররাজনীতিতে জড়িয়ে পরেন। ইন্টার পাশ করে ভর্তি হন ঢাকা কলেজে।

 


আয়ারল্যান্ডের অনন্য প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের মাঝে ইকবাল আহমেদ লিটন

 

লিটন জানালেন, ঢাকা কলেজে ১৯৮৩ সালে সংঘর্ষে ৭ ছাত্র নিহত হয়। তখন তিনি ছাত্রলীগের কলেজ কমিটির যুগ্ম সম্পাদক। মামলায় আসামি হয়ে বিভিন্ন জায়গায় ঘুরে বেড়ান। ৮৬ সালে চলে যান ইংল্যান্ডে। কিন্তু সেসময় লন্ডনে ধরপাকড় শুরু হয়ে যায়। ২ মাস পর পাড়ি জমান আয়ারল্যান্ডে। পড়াশোনা করেন হোটেল ম্যানেজমেন্টে। ডিপ্লোমা কোর্স। কাজ পেলেন ইস্টার্ন তান্দুরি রেস্টুরেন্টে। পার্ট টাইম কোর্স করেন এ্যাকাউন্টিংয়ে। ধীরে ধীরে দক্ষ হয়ে ওঠেন ইংরেজিতে।

তখন থেকেই সংগঠন করার কথা ভাবছিলেন। লোক পাচ্ছিলেন না। সরকারও পারমিশন দিচ্ছিলো না। ২০০০ সাল থেকে আয়ারল্যান্ড ওয়ার্ক পারমিট দেয়া শুরু করলো। কারণ তখন তাদের লোকবলের প্রয়োজন হয়ে পড়ে। মেরি রবিনসন তখন দেশটির প্রেসিডেন্ট। এরইমধ্যে আইরিশ পাসপোর্ট পেয়ে গেলেন। অর্থাৎ নাগরিকত্ব পেলেন।

চলে গেলেন একটু ফ্ল্যাশব্যাকে। ১৯৯৭ সালে কয়েক বন্ধু মিলে মালয়েশিয়ায় যান আইসিসি ট্রফি খেলা দেখতে। বাংলাদেশ যেটাতে চ্যাম্পিয়ন হয়। সেখান থেকে মায়ের অসুখের কথা শুনে চলে আসেন বাংলাদেশে। সেবার ধরে কয়ে বিয়ে করিয়ে দেয়া হয়। বিয়ের পর আয়ারল্যান্ডে ফিরে যান। ১৯৯৯ সালে নিজেই একটা রেস্টুরেন্ট দেন। নাম সোহাগ তান্দুরি। বিয়ের রাতকে স্মরণ করে সোহাগ তান্দুরি নামকরণ। বর্তমানে তিনি ৫ টি রেস্টুরেন্টের মালিক। স্ত্রী খালেদা ইকবাল চাকুরিজীবী। মেয়ের নাম ইস্মিতা হাজেরা ইকবাল, এ লেভেল পরীক্ষার্থী। মেয়ের ইচ্ছা সে পাইলট হবে।

ডাবলিনে তখন বাংলাদেশের কোনো রাজনৈতিক দলের কর্মকাণ্ড ছিলো না। ২০১১ সালে ইউরোপীয় ইউনিয়ন থেকে আওয়ামী লীগকে সংগঠন করার অনুমতি দেয়া হলো। অল বাংলাদেশ এ্যাসোসিয়েশন অব আয়ারল্যান্ড (আবাই) এর সম্মেলনও হয় তখন। আওয়ামী লীগের কমিটি গঠনের জন্য নির্বাচন হলো। ইকবাল আহমেদ লিটনের উপর দায়িত্ব বর্তায় প্রধান নির্বাচন কমিশনারের।

এর আগে সেপ্টেম্বর মাসে হলো আওয়ামী লীগের সম্মেলন। মিরাজ সিকদার সভাপতি এবং রানা সম্পাদক হলেন। ওই কমিটির প্রধান উপদেষ্টা ছিলেন লিটন। পরবর্তী সম্মেলনে আওয়ামী লীগের সভাপতি হলেন ইকবাল আহমেদ লিটন। জসিম হলেন সম্পাদক। নির্বাচনে হেরে অপেক্ষাকৃত ছোট একটি দল নিয়ে আওয়ামী লীগের আরেকটি কমিটি করেন রানা। লিটনের আক্ষেপ- তাদের কমিটিকে স্বীকৃতি দেয়ার পরও আওয়ামী লীগের ইউরোপীয় কমিটি থেকে রানার নেতৃত্বাধীন কমিটিকেও স্বীকৃতি দেয়া হয়। সেই থেকে এখানে দুটি কমিটি।

 


আয়ারল্যান্ড আওয়ামী লীগের উপদেষ্টা, মুক্তিযোদ্ধা সাইদুর রহমানের সঙ্গে ইকবাল আহমেদ লিটন

 

লিটন বলেন, ‘আমি প্রস্তাব দিয়েছিলাম দুই কমিটিই ভেঙ্গে দিয়ে আবার নির্বাচন করার। কিন্তু ওই পক্ষ সমঝোতায় রাজি হয়নি। ১০০টা মিটিং করেছি আওয়ামী লীগের দুই গ্রুপকে একত্র করতে। কাজ হয়নি। এদিকে ২০১১ সালের পর আবাই এরও কোনো সম্মেলন হয়নি।’

তিনি দাবি করেন, নিজের টাকায় সংগঠন গুছিয়েছেন। মিছিল মিটিং করেছেন। দলের সব কর্মসূচি পালন করেছেন। এখনো করছেন। সিনিয়র মানুষ সিরাজ সিকদারকে সামনে রেখে নিজে দল গুছিয়েছেন।

লিটন বলেন, তার রক্তের মধ্যে আওয়ামী লীগ। প্রজন্ম ৭১ এর সদস্য। তার গোষ্ঠীর সবাই মুক্তিযোদ্ধা। আয়ারল্যান্ডে মাত্র দুজন মুক্তিযোদ্ধা আছেন। তাদের একজন নূরুল ইসলাম। এখন খুব একটা চলাফেরা করতে পারেন না। ফুটবল খেলতেন আবাহনীতে। শেখ কামালের বন্ধু ছিলেন। আরেকজন সাইদুর রহমান। দুজনই আওয়ামী লীগের কমিটিতে আছেন উপদেষ্টা হিসেবে।

প্রশ্ন ছিলো- রাজনীতি করে কি পেলেন? পাইনি কিছুই। কি পেলাম সেটা বড় কথা না। আমি দলের জন্য কি করেছি সেটাই বড় কথা। শরীরে যতদিন প্রাণ আছে, রক্ত আছে, আওয়ামী লীগের জন্য করে যাব।

মুক্তিযুদ্ধকে কীভাবে দেখেন? উত্তরে বলেন, ‘সাইদুর ভাইয়ের (আয়ারল্যান্ড আওয়ামী লীগের উপদেষ্টা) কাছে শুনতাম, মুক্তিযুদ্ধের কাহিনী। উনার বীরত্ব আমাকে অনুপ্রাণিত করে। দেশের জন্য মুক্তিযোদ্ধারা জীবন বাজি রেখেছেন। অথচ আমরা আজ দেশকে সাজানোর জন্য সুন্দর সুশৃঙ্খল করার জন্য কাজ করছি না।’

কথা বলতে বলতে চোখ ছল ছল। জলে ভরে ওঠে। ‘যেখানেই যাই সাইদুর ভাইকে সাথে রাখি। সব সময় শ্রদ্ধা করি তাকে। উনিও আমাকে ছাড়তে পারেন না। আমিও না। সাইদুর ভাই আছেন আমার পাশে। একজন মুক্তিযোদ্ধা সাথে আছেন, এটাই আমার বড় সাহস।’

 


এক ফ্রেমে ইকবাল আহমেদ লিটন এবং সাইদুর রহমানের পরিবার

 

জানালেন, বৈশাখী মেলা, শহীদ দিবস, স্বাধীনতা দিবস, বিজয় দিবস, বঙ্গবন্ধুর জন্ম দিন, শোক দিবস, মুজিবনগর দিবস সবই পালন করেন তারা। এছাড়া ২১ আগস্ট, শেখ হাসিনার জন্মদিন, স্বদেশ প্রত্যাবর্তন দিবস, বিভিন্ন আলোচনা সভা করেন। কোনো কর্মসূচি বাদ যায় না।

দেশের জন্য কি করছেন? জবাব দিলেন, ৮ টা ফ্যামিলিকে সাহায্য করছি বর্তমানে। ইতোমধ্যে ২১ টি পরিবারকে স্বচ্ছল করেছি। যারা এখন বিভিন্ন রকমের ব্যবসা করে স্বাবলম্বী হয়েছে।

কেমন বাংলাদেশ চান? ধীরস্থির জবাব- সোনার বাংলাদেশ দেখতে চাই। ক্ষুধা দারিদ্রমুক্ত দেশ চাই। সেখানে কেউ অনাহারে থাকবে না। চাই সারা বিশ্বে মাথা উঁচু করে দাঁড়াক বাংলাদেশ। আমার বাংলাদেশ।



রাইজিংবিডি/ঢাকা/২৭ মে ২০১৭/উদয় হাকিম/অগাস্টিন সুজন

রাইজিংবিডি.কম

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়