ট্রাম্প : ধনীর দুলাল থেকে প্রেসিডেন্ট

আন্তর্জাতিক ডেস্ক : ধনীর দুলাল থেকে যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট হলেন ডোনাল্ড ট্রাম্প।

 

যুক্তরাষ্ট্রের ৪৫তম প্রেসিডেন্ট হিসেবে হোয়াইট হাউসের বাসিন্দা হচ্ছেন ট্রাম্প। নির্বাচনী প্রচারে তিনি গুরুত্ব দিয়েছেন, যুক্তরাষ্ট্রকে তার হারানো গৌরব ও শ্রেষ্ঠত্ব ফিরিয়ে দেওয়ার ওপর। জনগণ তার সেই ডাকে সাড়া দিয়েছেন।

 

যুক্তরাষ্ট্রের বিশাল সামরিক বাহিনী, কয়েক হাজার পারমাণবিক বোমা ও বাণিজ্যের শক্তিশালী ঘাঁটি সর্বাধিনায়ক হচ্ছেন ট্রাম্প। বিশ্বের শীর্ষ ক্ষমতাধর রাষ্ট্রের অধিপতি হিসেবে এশিয়ার চীন ও ভারতকে মোকাবিলা করাই হবে ট্রাম্পের প্রধান চ্যালেঞ্জ।

 

ডোনাল্ড ট্রাম্পের জীবন গল্প অনেক রঙিন। ধনীর দুলালা হিসেবে বেড়ে ওঠা ট্রাম্প তার বাবার ব্যবসার উত্তরাধিকার হন। তবে তার বর্ণিল জীবনে রাজনীতির কোনো ছিটেফোটা ছিল না। নিউ ইয়র্কের বাসিন্দা ট্রাম্পের সঙ্গে এক সময় ক্লিনটন পরিবারের ভালো সম্পর্ক ছিলেন। বিল ক্লিনটন প্রেসিডেন্ট থাকাকালে তাদের ভোজঘরে দেখা যেত ট্রাম্পকে।

 

ট্রাম্প যে প্রেসিডেন্ট হবেন, তা কারো ভাবনাতেই ছিল না। বছর দুয়েক আগেও তিনি ছিলেন রাজনীতি থেকে পুরোটাই বাইরে। কোনো রাজনৈতিক পদে তিনি ছিলেন না। উপরন্ত রিপাবলিকান পার্টির চেয়ে ডেমোক্রেটিক পার্টির সঙ্গে একসময় তার বেশি সখ্য ছিল। সেই ট্রাম্প রিপাবলিকান পার্টির মনোনয়ন নিয়ে নির্বাচন করে প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হলেন।

 

ডেমোক্রেটিক পার্টির হেভিওয়েট প্রার্থী হিলারি ক্লিনটনের জনপ্রিয়তার ধারে কাছেও আসতে পারেননি ট্রাম্প। কিন্তু নির্বাচনের ঠিক দুই সপ্তাহ আগে তার দুর্বার উত্থান হয়। পুরোপুরো ঘুরে দাঁড়ান ট্রাম্প। জনপ্রিয়তার হিলারিকে ছুঁয়ে ফেলেন। শেষ পর্যন্ত তিনিই বাজিমাত করলেন। তাকে আটকাতে পারলেন না ট্রাম্প।

 

ট্রাম্প শুধু হিলারিকে হারিয়েছেন, তা বলা ঠিক হবে না। তার চেয়েও বড় মঞ্চে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করতে হয়েছে তাকে। তার বিরুদ্ধে দাঁড়িয়েছে নিজ দলের শীর্ষ নেতারা। কংগ্রেসের প্রতিনিধি পরিষদের স্পিকার ও রিপাবলিকান শীর্ষ নেতা পল রায়ান তার নির্বাচনী প্রচারে আসেননি। বরং বারবার তাকে ভর্ৎসনা করেছেন। যদিও ভর্ৎসনা করার মতো কথা বলতে দ্বিধা করেননি ট্রাম্প, তারপরও জনগণ তাকে বেছে নিল তাদের প্রেসিডেন্ট হিসেবে।

 

৭০ বছর বয়সি ট্রাম্পই হাসলেন শেষ হাসি। প্রতিদ্বন্দ্বী হিলারির সঙ্গে হাড্ডাহাড্ডি লড়াই করে অবশেষে বিজয় মুকুট পরলেন তিনি। তবে নানা বিতর্কিত মন্তব্য করায় তাকে নিয়ে বিশ্বজুড়ে একাংশের মানুষের মধ্যে মারাত্মক উদ্বেগ-উৎকণ্ঠা রয়েছে। ক্ষমতা গ্রহণের পর তিনি সে বিষয়ে নতুন কোনো অবস্থান গ্রহণ করবেন কি না, তা অনিশ্চিত।

 

ট্রাম্প কাহিনি

১৯৪৬ সালের ১৪ জুন ট্রাম্পের জন্ম যুক্তরাষ্ট্রের জাঁকজমকপূর্ণ শহর নিউ ইয়র্কের কুইন্সে।। বাবা ফ্রেডরিক ট্রাম্প। পাঁচ ভাইবোনের মধ্যে ট্রাম্প চতুর্থ। তার বাবা তার নাম রাখেন ডোনাল্ড। সঙ্গে বাবার নাম গ্রহণ করে তার নাম হয় ডোনান্ড জুনিয়র ট্রাম্প।

 

ট্রাম্পের বাবা ফ্রেডরিক ট্রাম্প ছিলেন রিয়েল স্টেট ব্যবসায়ী। নিউ ইয়র্কের স্ট্যাটান আইল্যান্ড ও ব্রুকলিনে মধ্যবিত্তদের জন্য বাড়ি তৈরি করতেন। সেই থেকে তাদের পারিবারিক ব্যবসা শুরু এবং ট্রাম্পের হাতে পূর্ণতা পায়।

 

নির্বাচনী প্রচারে ট্রাম্প যে অভিবাসন বিরোধী অবস্থান গ্রহণ করেন, তা তার একদিনের তৈরি কিছু নয়। এর গোড়ায় ছিলেন তার মা। তার মাও একজন কট্টর অভিবাসন বিরোধী ছিলেন। ট্রাম্পের মা ছিলেন স্কটিশ বংশোদ্ভূত। নিউ ইয়র্কে ঘুরতে এসে তার বাবার সঙ্গে পরিচয় হয়, পরে বিয়ে হয়।

 

ধনীর পুত্র ট্রাম্প শৈববে ছিলেন দুরন্ত। স্কুলে তার খামখেয়ালিপনায় অতিষ্ঠ ছিল তার শিক্ষকরা। পরে তার বয়স যখন ১৩ বছর, তখন তাকে পাঠানো হয় সামরিক একাডেমিতে। তবে  যে বিষয় বলতে হয়, অঢেল সম্পদ থাকলেও  তার বাবা তাকে সাধারণ কাজ করে অভিজ্ঞতা অর্জনের জন্য কারখানায় পাঠান।

 

১৯৬৪ সালে স্থাতক শেষ করে ফোর্ডহ্যাম বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হন ট্রাম্প। দুই বছর পর ট্রান্সফার হন পেনসিলভানিয়া ইউনিভার্সিটির হোয়ারটন স্কুল অব ফাইন্যান্সে। ১৯৬৮ সালে সেখান থেকেই অর্থনীতিতে ডিগ্রি নেন। তার উচ্চতর পড়াশোনা এখানেই শেষ হয়। ভিয়েতনাম যুদ্ধে যোগদানের জন্য তাকে মনোনিত করা হলেও তিনি অসুস্থজনিত ছুটি নিয়ে যাননি।

 

ব্যবসা শুরু করেন তার বাবার কাছ ১০ লাখ ডলার ধার করে্। বাবার মতো তিনিও রিয়েল স্টেট ব্যবসা শুরু করেন। এক সময় বাবার ব্যবসার পুরো নিয়ন্ত্রণ চলে আসে ট্রাম্পের হাতে। পরে বাবার সঙ্গে ব্যবসা করতে গিয়ে নিজের ব্যবসার বিস্তৃতিও বাড়িয়ে তোলেন ট্রাম্প।

 

১৯৭১ সালে ট্রাম্প কোম্পানির নাম বদলে হয় ‘ট্রাম্প অর্গানাইজেশন’। ১৯৯৯ সালে ট্রাম্পের বাবা মারা যান। বাবার মৃত্যুর পর ট্রাম্প বলেন, বাবাই ছিলেন তার অনুপ্রেরণা।পারিবারিক ব্যবসার নিয়ন্ত্রণ বুঝে নেওয়ার পর ব্রুকলিন ও কুইন্স থেকে প্রকল্প সরিয়ে ম্যানহাটানে বড় বড় ভবন নির্মাণে নজর দেন ট্রাম্প।

 

ম্যানহাটানের অর্থনৈতিক সম্ভাবনা আঁচ করতে পেরে সেখানে বিনিয়োগ বাড়াতে থাকেন ট্রাম্প। চমৎকার নির্মাণশৈলী ও জনগণের আস্থার কারণে সেই কাজগুলোই পরে তাকে বিপুল মুনাফা এনে দেয়।

 

ফোর্বসের তথ্যানুযায়ী, ট্রাম্পের মোট সম্পদ এখন ৩ বিলিয়ন ডলারের বেশি। তবে ট্রাম্পের সম্পদ নিয়ে বিতর্ক আছে। এই বিতর্কের জন্য তিনিই দায়ী। কারণ, তার দাবি, তার সম্পত্তির পরিমাণ আরো অনেক বেশি।

 

যার নেশা ছিল ব্যবসা, যার পরিচয় ছিল ব্যবসা, এখন সেই মানুষটি দুনিয়ার সবচেয়ে বড় নেতা। শক্তিধর ব্যক্তি হিসেবে অসীম ক্ষমতা চর্চা করার সুযোগ রয়েছে শুধু তার। ব্যবসা থেকে রাজনীতি- ট্রাম্প প্রমাণ করলেন তিনি সর্বত্রই সফল ও নায়ক। তার ব্যক্তি জীবন নিয়ে নানা বিতর্ক আছে কিন্তু সব ছাপিয়ে তিনি হলেন প্রেসিডেন্ট- এটিই শেষ কথা।  

 

 

রাইজিংবিডি/ঢাকা/৯ নভেম্বর ২০১৬/রাসেল পারভেজ