ঢাকা     শনিবার   ২০ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ৭ ১৪৩১

ইতিহাস গড়া হলো না হিলারির

খান মো. শাহনেওয়াজ || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ০৭:৪৬, ৯ নভেম্বর ২০১৬   আপডেট: ০৫:২২, ৩১ আগস্ট ২০২০
ইতিহাস গড়া হলো না হিলারির

খান মো. শাহনেওয়াজ : যুক্তরাষ্ট্রে প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে হিলারি ডায়নে রডহ্যাম ক্লিনটন জয়লাভ করতে পারেননি। জয়লাভ করলে তিনি হতেন দেশটির প্রথম নির্বাচিত নারী প্রেসিডেন্ট। শেষ পর্যন্ত তিনি এই ইতিহাস গড়তে পারলেন না।

 

বিশ্বের এই ক্ষমতাধর দেশটির প্রেসিডেন্ট পদে নির্বাচনে হিলারি ক্লিনটন সর্বপ্রথম আনুষ্ঠানিক নারী প্রার্থী। ডেমোক্রেটিক পার্টির প্রার্থী হিসেবে নির্বাচনী প্রচারের ময়দানে সমর্থন ও বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের জরিপে তাকেই এগিয়ে থাকতে দেখা গেছে। কিন্তু শেষ পর্যন্ত তার ভাগ্য প্রসন্ন হয়নি। নির্বাচনে তিনি হেরে গেছেন।

 

যুক্তরাষ্ট্রে প্রভাবশালী ও ব্যক্তিত্ব সম্পন্ন নারীদের মধ্যে অন্যতম হিলারি ক্লিনটন। তিনি ১৯৪৭ সালের ২৬ অক্টোবর ইলিনয় অঙ্গরাজ্যের শিকাগো নগরীতে এজওয়াটার হসপিটালে জন্মগ্রহণ করেন। তার বাবার নাম হাফ এলসওয়ার্থ এবং মায়ের নাম ডরোথি এমা হাওয়েল। হিলারির জন্মের সময় পরিবারের অর্থিক অবস্থা ভালো ছিলো না। তার যখন তিন বছর বয়স তার বাবা-মা ইলিনয়ের পার্ক রিজে চলে যান এবং সেখান বসবাস শুরু করেন। এখানেই তারা বাবা কাপড়ের ব্যবসা শুরু করেন এবং একজন সফল ক্ষুদ্র ব্যবসায়ী হিসেবে পরিচিতি পান। তার ছোট দুটি ভাই রয়েছে। তাদের মধ্যে বড় হাফ রডহ্যাম এবং ছোট টনি রডহ্যাম। হিলারি ক্লিনটন পার্ক রিজে বাবা-মায়ের অস্বচ্ছল সংসারে বেড়ে ওঠেন।

 

হিলারির বাবা প্রথম জীবনে ছিলেন নৌ-বাহিনীর একজন সৈনিক এবং দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে অংশ নেন। পরে তিনি ব্যবসায় নামেন। হিলারির মা ডরোথি এমা হাওয়েলকে তার বাবা-মা ফেলে চলে গিয়েছিলেন। নিকট আত্মীয়রাও তাকে লালন পালনে রাজী ছিলেন না। ফলে হিলারির মাকে  গৃহকর্মী হিসেবে কাজ করতে হয়েছে। ফলে তিনি ছিলেন মানোবলসম্পন্ন ও ধৈর্য্যশীলা। জীবন যুদ্ধে  লড়াইয়ের  উৎসাহ হিলারি ক্লিনটন তার মায়ের কাছ থেকেই পেয়েছেন। হিলারি যখনই সময় পেতেন তখনই তার বাবাকে ব্যবসায়িক কাজে সাহায্য করতেন। রাজনীতির প্রতি তার বাবার বেশ ঝোঁক ছিলো। রাজনীতির প্রতি হিলারির আকর্ষণ জন্মে তার বাবাকে দেখেই।

 

হিলারির স্কুল জীবন কেটেছে পার্ক রিজে।  স্কুল পাস করে ওয়েলসলি কলেজে পড়ার সময় তিনি ডেমোক্রেটিক পার্টির সমর্তক হিসেবে ছাত্র রাজনীতিতে সক্রিয় হন। স্নাতক হওয়ার আগে ১৯৬৯ সালে তিনি সিনিয়র ক্লাস প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হন। তিনি ইয়েল বিশ্ববিদ্যালয়ে আইন বিষয়ে অধ্যয়ন করেন এবং ১৯৭৩ সালে স্নাতক হন। শিক্ষা জীবনে তিনি বিভিন্ন সামাজিক ও প্রাতিষ্ঠানিক কাজের সাথে যুক্ত ছিলেন। ওয়াটারগেট কেলেঙ্কারির ঘটনায় ১৯৭৪ সালে প্রেসিডেন্ট রিচার্ড নিক্সনকে অভিশংসন (ইমপিচ) করার প্রস্তাব উত্থাপিত হলে তিনি একজন নবীন আইনজ্ঞ হিসেবে সে সম্পর্কিত তদন্ত কমিটিতে সদস্য হিসেবে স্থান পান। প্রেসিডেন্ট নিক্সন পদত্যাগ করার পর তিন আরকানসাস বিশ্ববিদ্যালয়ে আইন বিভাগে শিক্ষক হিসেবে যোগ দেন। তার সহপাঠী বিল ক্লিনটনও এই বিশ্ববিদ্যালয়ে একই বিভাগে শিক্ষকতা করতেন। হিলারি ১৯৭৫ সালে বিল ক্লিনটনকে বিয়ে করেন।

 

বিল ক্লিনটনও ডেমোক্রেটিক পার্টির সঙ্গে যুক্ত ছিলেন। ১৯৯৩ সালে বিল ক্লিনটন যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হন। প্রেসিডেন্ট ক্লিনটন দুই মেয়াদে ২০০১ সাল পর্যন্ত দেশটির প্রেসিডেন্ট ছিলেন। ফার্স্ট লেডি হিসেবে হিলারির এ সময় ব্যক্তিত্ব সম্পন্ন ইমেজ গড়ে ওঠে। পরবর্তী সময়ে তিনি নিজে ডেমোক্রেটিক পার্টিতে আরো সক্রিয় হওয়ার সিদ্ধান্ত নেন এবং সিনেটর নির্বাচিত হন। ২০০১ সাল থেকে ২০০৯ সাল পর্যন্ত তিনি সিনেটর হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। সিনেটর থাকা অবস্থায় ২০০৭ সালে তিনি পরবর্তী প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে প্রার্থী হওয়ার ইচ্ছা প্রকাশ করেন। ২০০৮ সালে প্রেসিডেন্ট পদে দলীয় মনোনয়নের জন্য লড়াই করে তিনি ডেলিগেটদের ভোটে বারাক ওবামার কাছে হেরে যান।

 

সেবার প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে দলীয় মনোনয়ন পান বারাক ওবামা এবং নির্বাচনে জয়লাভ করে বরাক ওবামা প্রেসিডেন্ট হন। সরকার গঠন করার পর প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামা পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের দায়িত্ব দেন হিলারি ক্লিনটনকে। ২০১৩ সাল পর্যন্ত প্রেসিডেন্ট ওবামার প্রথম মেয়াদের সরকারে হিলারি ক্লিনটন পররাষ্ট্রমন্ত্রী হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। প্রেসিডেন্ট পদে নির্বাচনে লড়াইয়ের প্রস্তুতির জন্য তিনি ওবামার সরকার থেকে সরে আসেন এবং রাজনীতিতে ব্যাপকভাবে সক্রিয় হন। ২০১৫ সালে তিনি প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে প্রার্থী হওয়ার ইচ্ছা প্রকাশ করেন এবং দলীয় মনোনয়ন লাভ করেন। শেষ পর্যন্ত প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করে তিনি  হেরে গেলেন।

 

 

 

রিইজিংবিডি/ঢাকা/৯ নভেম্বর ২০১৬/শাহনেওয়াজ

রাইজিংবিডি.কম

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়