‘ওয়ালটন টিভি কিনে লাখপতি হানিফ পরিচিতি পেয়েছি’
জাকির হুসাইন || রাইজিংবিডি.কম
আবু হানিফের হাতে লাখ টাকার ক্যাশ ভাউচার ও অন্যান্য ওয়ালটন পণ্য তুলে দেওয়া হচ্ছে
নিজস্ব প্রতিবেদক : ‘জীবনে কোনো দিন ১০ টাকা পর্যন্ত উপহার পাইনি। অথচ ওয়ালটনের একটি টিভি কিনে ১ লাখ টাকা পেয়েছি। আমার জীবনে এমন একটি দিন আসবে তা কখনো ভাবতেও পারিনি। শুধু তাই নয়, লাখ টাকা বিজয়ী হওয়ার পর এলাকায় আবু হানিফ থেকে এখন লাখপতি হানিফ হিসেবে পরিচিতি পেয়েছি।’
কথাগুলো মো. আবু হানিফের। চাঁদপুরের কচুয়া থানার ধামালুয়া গ্রামের বাসিন্দা তিনি। তিন ভাই-বোনের মধ্যে তিনিই সবার বড়। স্নাতক শ্রেণিতে পড়াশুনা করছেন। দুই বোনের মধ্যে বড়জন একাদশ শ্রেণিতে এবং ছোটজন নবম শ্রেণিতে পড়ছেন। আবু হানিফের বাবা কৃষক। তাই সংসার চালানোয় বাবাকে সাহায্য করতে পড়ালেখার পাশাপাশি কচুয়া মডার্ন হাসপাতালে চাকরি করছেন তিনি।
আবু হানিফ বলেন, বাসায় ওয়ালটনের একটি ফ্রিজ আছে। গত চার বছর ধরে ব্যবহার হচ্ছে। এছাড়া অন্যান্য আরো অনেক পণ্য থাকলেও টিভি ছিল না। নিজের ও বোনদের পড়ালেখার কথা চিন্তা করে টিভি কেনার কথা কখনো ভাবেননি বাবা-মা। তবে এখন আমরা সবাই বড় হয়েছি। লেখাপড়ার গুরুত্ব সম্পর্কে সবাই বুঝি। তাই বাসায় একটি এলইডি টিভি কেনার সিদ্ধান্ত হয়। কিন্তু কবে কিনব তা ঠিক হয়নি।’
তিনি আরো বলেন, ‘বাবা কৃষিকাজ করে বেশি টাকা জমাতে পারেন না। যা আয় করেন তাতে আমাদের ৫ সদস্যের সংসার কোনোভাবে চলে। তাই টিভি কেনার সংকল্পটি আমিই করি। যখনই কিনি না কেন, ওয়ালটনের টিভি কিনব, এটা আগে থেকেই ঠিক করা ছিল। কারণ, ওয়ালটন পণ্য আমরা আগে থেকে ব্যবহার করি। সার্ভিস ভালো। চার বছর আগে ১১ সিএফটির একটি ফ্রিজ কিনেছিলাম। অন্যান্য কোম্পানির চেয়ে তখন অনেক কম দামে কিনেছিলাম। সেই ফ্রিজটিতে এখন পর্যন্ত কোনো দিন সমস্যা হয়নি।’
আবু হানিফ জানান, তার খুব কাছের এক বন্ধু দলিল লেখকের কাজ করেন। গত ১১ জানুয়ারি অফিস শেষে বাড়ি ফেরার পথে হঠাৎ তার সাথে দেখা। টিভি কেনার কথা তাকে আগেই বলা ছিল। তাই সেদিনই টিভিটি কেনার জন্য বললেন বন্ধুটি। তখন টিভি কেনার মতো পর্যাপ্ত টাকা নাই জানালে তিনিই আবু হানিফকে টাকা দিতে রাজি হন এবং ওয়ালটন টিভি কেনার পক্ষে মত দেন।
আবু হানিফ বলেন, ‘দুই বন্ধু মিলে ওই দিনই কচুয়া বাজারে ওয়ালটনের শোরুমে যাই। কম টাকার মধ্যে ২৪ ইঞ্চির এলইডি টিভিটি পছন্দ করি। কর্মকর্তাদের সঙ্গে কথা বলে দাম ঠিক হয় ১৩ হাজার ৭০০ টাকা। টাকা পরিশোধ করার সময় শোরুমের কর্মকর্তারা অফারের কথা জানায়। তবে কোনো অফারে আমার বিশ্বাস ছিল না। তারপরেও নিয়ম অনুযায়ী আমার মোবাইল নাম্বারসহ মেমো করেন তারা। এর কিছুক্ষণ পর টিভিটি নিয়ে যখন বাসার উদ্দেশে রওয়ানা দেব, ঠিক তখন আমার মোবাইলে একটি এসএমএস আসে। শোরুমের কর্মকর্তারাও এসএমএসের কথা জিজ্ঞাসা করেন। তখন এসএমএসটি পড়ে দেখি তাতে লেখা ১ লাখ টাকার ক্যাশ ভাউচার। প্রকৃত ঘটনা কী, জানতে চাইলে শোরুমের কর্মকর্তারাই আমাকে জানান যে, সত্যিই আমি ১ লাখ টাকা উপহার পেয়েছি।’
আবু হানিফ বলেন, ‘তখনও আমার বিশ্বাস হয়নি। এটা কীভাবে সম্ভব! জীবনে যে ব্যক্তি ১০ টাকা পর্যন্ত উপহার পায়নি, সে কীভাবে ১ লাখ টাকা পেতে পারে! এর আগে কোনো দিন লটারি বা এ জাতীয় কিছুই পাইনি। আজ পেলাম। সত্যিই কী ভাগ্য আমার! ওয়ালটনের একটি টিভি কিনে পেলাম জীবনের প্রথম ও সেরা পুরস্কার। যা কখনো আশা করিনি, কল্পনাও করিনি, আজ তাই পেলাম।’ কথাগুলো বলতে বলতে কেঁদে ফেলেন তিনি।
আবু হানিফ বলেন, ‘ওয়ালটন টিভি কিনে ১ লাখ টাকা পাওয়ার ঘটনা এখন এলাকায় সবার মুখে মুখে। তাই তো বন্ধু-বান্ধব, আত্মীয়-স্বজন সবাই এখন আবু হানিফ বাদ দিয়ে লাখপতি হানিফ নাম দিয়েছে। এই নামেই সবাই এখন আমাকে ডাকছে।’
ক্যাশ ভাউচারের এ টাকা দিয়ে কী কিনেছেন, তা জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘টিভি ছাড়া বাসায় মোটামুটি সব পণ্যই ছিল। তারপরও যখন ১ লাখ টাকা পেয়েছি তা দিয়ে অনেক কিছুই কিনেছি। এর মধ্যে রয়েছে দুটি ফ্রিজ, তিনটি মোবাইল ফোন, একটি আয়রন, ব্লেন্ডারসহ বেশ কয়েকটি পণ্য। এতে ১ লাখ টাকার চেয়ে আরো ১৫০০ টাকা বেশি হয়। যা নগদ পরিশোধ করেছি।’
তিনি জানান, এসব পণ্য থেকে মামাকে একটি ফ্রিজ দেবেন। বন্ধুকে একটি মোবাইল ফোন এবং বাকি দুটি ফোন দুই বোনকে দিয়েছেন। বাকি পণ্যগুলো তাদের পরিবারে ব্যবহার হবে।
উল্লেখ্য, ক্রেতাদের দোরগোড়ায় অনলাইনে দ্রুত ও সর্বোত্তম বিক্রয়োত্তর সেবা দিতে ডিজিটাল রেজিস্ট্রেশন কার্যক্রম চালু করেছে ওয়ালটন। এই কার্যক্রমে ক্রেতাদের অংশগ্রহণকে উদ্বুদ্ধ করতে প্রতিদিন দেওয়া হচ্ছে নিশ্চিত ক্যাশ ভাউচার। ওয়ালটন প্লাজা এবং পরিবেশক শোরুম থেকে ১০ হাজার টাকা বা তার বেশি মূল্যের পণ্য কিনে ডিজিটাল রেজিস্ট্রেশন করে সর্বনিম্ন ২০০ থেকে সর্বোচ্চ ১ লাখ টাকার ক্যাশ ভাউচার পাচ্ছেন ক্রেতারা। ক্যাশ ভাউচার পাওয়ার এই সুযোগ থাকবে আগামী ২৮ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত।
রাইজিংবিডি/ঢাকা/২০ জানুয়ারি ২০১৮/অগাস্টিন সুজন/রফিক
রাইজিংবিডি.কম
আরো পড়ুন