ঢাকা     শুক্রবার   ১৯ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ৬ ১৪৩১

‘ওয়ালটনই গরিবের সত্যিকারের বন্ধু’

জাকির হুসাইন || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ১২:৩৬, ১৯ ফেব্রুয়ারি ২০১৮   আপডেট: ০৫:২২, ৩১ আগস্ট ২০২০
‘ওয়ালটনই গরিবের সত্যিকারের বন্ধু’

ওয়ালটনের লাখ টাকার মেসেজ ও বিজয়চিহ্ন দেখাচ্ছেন আল আমিন

নিজস্ব প্রতিবেদক  : ‘রিকশা চালিয়ে সারা দিনের রোজগারের টাকায় ১০ সদস্যের সংসার চলে। জীবনে ভালো খাবার, ভালো পোশাক এমনকি ভালো কোনো জিনিসও ব্যবহার করার সুযোগ হয়নি। কিস্তিতে একটা ফ্রিজ কিনবো। কিন্তু কোনো কোম্পানিই আমাদের ফ্রিজ দিল না। অথচ ওয়ালটন আমাদের ফ্রিজ তো দিলই। আবার শোরুমের সবচেয়ে ছোট ফ্রিজটিতেই পেলাম এক লাখ টাকা। সেই টাকায় কেনা পণ্যে ভরে গেছে আমার মতো গরিব রিকশাচালকের ঘর। ওয়ালটন সত্যিই গরিবের বন্ধু।’

কথাগুলো মো. আল আমিনের। গত ১৫ ফেব্রুয়ারি শ্রীমঙ্গল ওয়ালটন প্লাজা থেকে মাত্র ৭ হাজার ৬০০ টাকা ডাউন পেমেন্ট দিয়ে কিস্তিতে একটি ফ্রিজ কেনেন তিনি। ওয়ালটনের চলমান ডিজিটাল ক্যাম্পেইনে সেই ফ্রিজ কিনেই তিনি পেয়েছেন এক লাখ টাকার ক্যাশ ভাউচার।

আল আমিনের বাড়ি হবিগঞ্জের বানিয়াচং থানায়। তবে হাওড় এলাকা হওয়ায় সেখানে কোনো কাজ নেই। পৈত্রিক সম্পত্তি বলতে কিছুই নেই। শুধু ভিটে-বাড়িটা আছে। তাই দীর্ঘদিন ধরে জীবিকার সন্ধানে বাড়ি ছেড়ে মৌলভীবাজারের শ্রীমঙ্গলে বাবা-মা এবং ভাই-বোন সবাইকে নিয়ে এক সাথে থাকেন আল আমিন। সেখানেই রিকশা চালিয়ে কষ্টে-সৃষ্টে চলছে তার সংসার।

মো. আল আমিন বলেন, ‘চার ভাই এবং ২ বোনের মধ্যে সবার (ভাইদের) বড় আমি। বড় বোনের বিয়ে হয়েছে। আমি, বাবা ও আমার এক ভাই মোট তিন জন রিকশা চালাই। তাও নিজেদের না। অন্যের রিকশা ভাড়ায় চালাই। এক ভাই ঢাকায় গার্মেন্টসে কাজ করে। আর ছোট দুই ভাই-বোন স্কুলে পড়ালেখা করে। নিজেও বিয়ে করেছি। তিন ছেলেমেয়ে আমাদের। সব মিয়ে ১০ সদস্যের বিশাল পরিবার। সবাই মিলে যে টাকা রোজগার হয়, তা দিয়ে ঘর ভাড়া, রিকশার ভাড়া দেওয়ার পর ছেলে-মেয়েদের নিয়ে কোনো মতে চলে।’

তিনি বলেন, ‘গরিব বলে পরিবারের বেশি কিছু চাওয়ার ছিল না। তবে মা ও আমার স্ত্রী প্রায় একটা ফ্রিজ কেনার কথা বলতো। ফ্রিজ থাকলে নাকি অনেক সুবিধা। মাছ-মাংস বেশি করে কিনে পরে সুবিধামতো সময়ে তা রান্না করে খাওয়া যাবে। এতে খরচও কিছুটা কমবে। কিন্তু রিকশা চালিয়ে ফ্রিজ কেনার মতো টাকা জোগাড় করা সম্ভব ছিল না। এর মধ্যে ছোট ভাই ঢাকা থেকে ৭ হাজার টাকা পাঠায়। সেই টাকা দিয়ে ফ্রিজ কেনার পরিকল্পনা করি।’

মো. আল-আমিন বলেন, ‘কোন কোম্পানির ফ্রিজ কিনবো বুঝতে পারছিলাম না। তাই ফ্রিজের কয়েকটি দোকানে যাই। কিন্তু গরিব বলে কেউই আমাদের গুরুত্ব দিল না। কেউই বাকিতে ফ্রিজ দিতে চায় না। পরে অনেকের কাছে জানতে পারি ওয়ালটন ধনী-গরিব কোনো বাছ-বিচার করে না। সবাইকে কিস্তিতে জিনিস দেয়। এরপর আর কোনো দোকানে না গিয়ে সোজা শ্রীমঙ্গল ওয়ালটন প্লাজায় যাই। ওয়ালটন কোম্পানি আমাদের বাকিতে ফ্রিজ দিতে চায়। তবে শর্ত একজন গ্যারান্টার লাগবে। পরে আমরা যে বাসায় ভাড়া থাকি, তার মালিককে নিয়ে যাই। সেখান থেকে সবচেয়ে ছোট (৮ সিএফটি) সাইজের ফ্রিজটি পছন্দ করি। দাম পড়ে ১৯ হাজার ৬৫৬ টাকা। ৭ হাজার ৬০০ টাকা জমা দিয়ে বাকি টাকা ৬ মাসের কিস্তিতে পরিশোধ করার চুক্তিতে ফ্রিজটা কিনি।’

এর আগে শ্রীমঙ্গল ওয়ালটন প্লাজার ম্যানেজার ফয়সাল হাসান তাকে জানান, ওয়ালটন পণ্য ক্রয়ে কোটি কোটি টাকার অফার ঘোষণা করেছে। সর্বনিম্ন ১০ হাজার টাকার পণ্য কিনে ডিজিটাল রেজিস্ট্রেশন করে ২০০ টাকা থেকে এক লাখ টাকা পর্যন্ত উপহার পাওয়া যাবে। তবে এক্ষেত্রে ভাগ্য থাকতে হবে।

আল আমিন ও তার স্ত্রীর হাতে লাখ টাকার ক্যাশ ভাউচার ও অন্যান্য পণ্য তুলে দেওয়া হচ্ছে

আল আমিন বলেন, ‘আমরা গরিব মানুষ। লাখ টাকার স্বপ্ন আমরা দেখি না। শুধু আমাদের অনেক দিনের স্বপ্নের ফ্রিজটি কিস্তিতে পেয়েই খুশি। তারপরেও ওয়ালটন কর্মকর্তাদের কথায় বিশ্বাস করে নিয়ম অনুযায়ী আমার মোবাইল নাম্বার দিয়ে ডিজিটাল রেজিস্ট্রেশন করি। আর এর কয়েক মিনিটের মধ্যে এক লাখ টাকার গিফট ভাউচারের এসএমএস আসে আমার মোবাইলে। প্রথমে এটা আমাদের কারো বিশ্বাস হয়নি। পরে তাদের কথায় বিশ্বাস আসে। আমাদের ভাগ্য দেখে আমরা নিজেরাই অবাক হয়েছি। আমরা মহাখুশি।’

তিনি বলেন, ‘অনেক দুঃখ-কষ্টের সংসার আমাদের। নিজেরা কোনো দিন টিভি ফ্রিজ ব্যবহার করতে পারি নাই। কিন্তু ওয়ালটন কোম্পানির কারণে সবই পেলাম। মাত্র সাড়ে ৭ হাজার টাকা জমা দিয়ে বাকিতে ফ্রিজ কিনেছি। আর তাতে লাখ টাকা! উপহারের সেই টাকা দিয়ে এমন সব পণ্য কিনেছি যা আমার জীবনে কোনদিন হয়তো নিজের টাকা দিয়ে কেনা সম্ভব হতো না। আসলে গরিবের প্রকৃত ও সত্যিকারের বন্ধু হলো ওয়ালটন। কারণ আরো অনেক কোম্পানির কাছে গিয়েছিলাম। কিন্তু কেউ আমাদেরকে বাকিতে ফ্রিজ দেয় নাই। একমাত্র ওয়ালটনই দিল। তাই ওয়ালটনের চেয়ে গরিবের ভালো বন্ধু আর কেউ হতে পারে না।’ 

শ্রীমঙ্গল ওয়ালটন প্লাজার ম্যানেজার ফয়সাল হাসান বলেন, ‘ওয়ালটনে আমার চাকরিজীবনে আল-আমিনের মতো গরিব কাস্টমার আর একজনও দেখিনি। তবে তারা সৎ ও নম্র-ভদ্র। দীর্ঘদিন ধরে এই এলাকায় বসবাস করছেন। তারা এক লাখ টাকার ক্যাশ ভাউচার পাওয়ায় এলাকার সবাই খুশি। আমি নিজেও অনেক খুশি।’

তিনি জানান, ক্যাশ ভাউচারের টাকা দিয়ে আল আমিনের পরিবার অনেক পণ্য কিনেছেন। তার মধ্যে রয়েছে আরো ২টি ফ্রিজ, একটি ৩২ ইঞ্চির একটি এলইডি টিভি, ২টি মোবাইল ফোন, একটি ব্লেন্ডার, ফ্যান, চার্জার ফ্যান, রাইস কুকার ও আয়রনসহ মোট ১১টিট আইটেমের পণ্য। এসব পণ্য গ্রহণের সময় আল-আমিনের পরিবারের সব সদস্যই উপস্থিত ছিলেন। তাদের আত্মীয়-স্বজনসহ আরো অনেকেই এসেছিলেন। তাদের উপস্থিতিতে ওয়ালটন প্লাজা উৎসবের রূপ নেয়।

উল্লেখ্য, ক্রেতাদের দোরগোড়ায় অনলাইনে দ্রুত ও সর্বোত্তম বিক্রয়োত্তর সেবা দিতে ডিজিটাল রেজিস্ট্রেশন কার্যক্রম চালু করেছে ওয়ালটন। এই কার্যক্রমে ক্রেতাদের অংশগ্রহণকে উদ্বুদ্ধ করতে প্রতিদিন দেওয়া হচ্ছে নিশ্চিত ক্যাশ ভাউচার। ওয়ালটন প্লাজা এবং পরিবেশক শোরুম থেকে ১০ হাজার টাকা বা তার বেশি মূল্যের পণ্য কিনে ডিজিটাল রেজিস্ট্রেশন করে সর্বনিম্ন ২০০ থেকে সর্বোচ্চ এক লাখ টাকার ক্যাশ ভাউচার পাচ্ছেন ক্রেতারা। ক্যাশ ভাউচার পাওয়ার এই সুযোগ থাকবে আগামী ২৮ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত।



রাইজিংবিডি/ঢাকা/১৯ ফেব্রুয়ারি ২০১৮/অগাস্টিন সুজন/সাইফ

রাইজিংবিডি.কম

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়