ঢাকা     বৃহস্পতিবার   ১৮ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ৫ ১৪৩১

পোশাকশিল্প

অক্ষুণ্ণ রাখতে হবে উন্নয়নের ধারাবাহিকতা

আলী নওশের || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ১৯:১১, ২৮ জানুয়ারি ২০১৬   আপডেট: ০৫:২২, ৩১ আগস্ট ২০২০
অক্ষুণ্ণ রাখতে হবে উন্নয়নের ধারাবাহিকতা

আলী নওশের : দেশের সবচেয়ে সম্ভাবনাময় শিল্প পোশাক খাত। দেশ-বিদেশে দিন দিন এর চাহিদা এবং গুরুত্ব বেড়েই চলেছে। কারখানায় উৎপাদিত তৈরি পোশাক একদিকে যেমন আমাদের দেশের রপ্তানি আয়ে অবদান রাখছে। অন্যদিকে লক্ষাধিক মানুষের কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা করেছে। সুতরাং দেশের অর্থনীতিতে তৈরি পোশাক খাতের অবদান অস্বীকার কোনো উপায় নেই। কিন্তু সম্ভাবনাময় এই শিল্প অগ্রগতির পথে নানা বাধার সম্মুখীন হচ্ছে।

 

তাজরীন ফ্যাশন কারখানায় অগ্নিকাণ্ড, রানা প্লাজা ট্র্যাজেডি ও দেশের রাজনৈতিক অস্থিরতার নেতিবাচক প্রভাব কাটিয়ে উঠতে না উঠতেই দুই বিদেশি নাগরিক হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় তৈরি পোশাক খাত নতুন চ্যালেঞ্জের মুখে পড়ে।

 

শ্রমিক অসন্তোষ আর রাজনৈতিক সহিংসতা এ সংকট আরো বাড়িয়ে তোলে। বিশ্বে বাংলাদেশের পোশাকশিল্প ভাবমূর্তির সংকটে পড়ে। টানা হরতাল-সহিংসতায় সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে পোশাকশিল্প। এ ছাড়া একের পর এক দুর্ঘটনা, আগুন, আর শ্রমিক অসন্তোষে বিপর্যস্ত হয় দেশের সবচেয়ে বড় এই শিল্প।

 

এ পরিস্থিতিতে আস্থা হারাতে থাকে বিদেশি ক্রেতারা। বিদেশি ক্রেতা সংগঠনগুলো ক্রয়াদেশ কমিয়ে দিয়েছিল। বাংলাদেশ থেকে অনেক অর্ডার চলে যায় ভারত, ভিয়েতনাম, কম্বোডিয়া, ইন্দোনেশিয়ায়। তাজরীন ফ্যাশন কারখানায় আগুন এবং রানা প্লাজা ট্র্যাজেডির পর বাংলাদেশ বহির্বিশ্বে ইমেজ সংকটে পরে। যুক্তরাষ্ট্র শ্রমিক অধিকার লঙ্ঘন ও নিম্নমানের কর্মপরিবেশের অভিযোগ তুলে বাংলাদেশকে যে অবাধ বাজারসুবিধা (জিএসপি) দিয়ে আসছিল, তা স্থগিত করে। এরপর জিএসপি ফিরে পেতে বাংলাদেশ সরকারের পক্ষ থেকে বিভিন্ন পদক্ষেপ গ্রহণ করলেও মার্কিন প্রশাসন তাদের স্থগিতাদেশ বহাল রেখেছে এখনও।

 

 তবে আশার কথা, ধীরে ধীরে সংকট কাটিয়ে উঠছে পোশাকশিল্প। দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচনের পর পরিস্থিতি স্বাভাবিক হওয়ায় ক্ষতি কাটিয়ে আবারো চাঙ্গা হয়ে উঠছে দেশের বৃহত্তম রফতানির এ খাত। রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা আসায় পুরোদমে কাজ চলছে এ শিল্পে। পোশাক কারখানা মালিকরা ব্যস্ত বিদেশি ক্রেতাদের আস্থা ফিরিয়ে আনতে। বর্তমানে বাংলাদেশের পোশাকশিল্প উন্নয়নের একটি মডেল হিসেবে চিহ্নিত হয়েছে।

 

বাংলাদেশের পোশাকশিল্পের কর্মপরিবেশ উন্নয়নে যেসব আন্তর্জাতিক সংস্থা সহযোগিতা করছিল, তারা এখন বাংলাদেশের কর্মপরিবেশ উন্নয়নের অভিজ্ঞতা তথা ‘বাংলাদেশ মডেল’ পোশাক রপ্তানিকারী অন্যান্য দেশেও প্রয়োগের চিন্তা করছে। বাংলাদেশের পোশাকশিল্পের এই অর্জন যেমন শিল্পটির অর্জন, তেমনি দেশের জন্যও গৌরবের বিষয়।

 

বাংলাদেশের ব্যবসায়ীরা সুনাম পুনরুদ্ধারের জন্য আপ্রাণ চেষ্টা করেছেন। অ্যালায়েন্স ও অ্যাকর্ড নামে আন্তর্জাতিক ক্রেতাদের দুটি জোট ও আইএলওর অধীনে বাংলাদেশের ৩ হাজার ৬৬০টি কারখানার কর্মপরিবেশ পরিদর্শন করা হয়। অসংগতিপূর্ণ হওয়ায় ৩৭টি কারখানা সম্পূর্ণ ও ৩৬টি কারখানা আংশিকভাবে বন্ধ রাখা হয়। অনেক কারখানায় প্রয়োজনীয় সংস্কার করা হয়।

 

এ ছাড়া শ্রম আইন সংশোধন করা হয়েছে এবং বাস্তবায়নের ক্ষেত্রেও অনেক অগ্রগতি হয়েছে। ট্রেড ইউনিয়ন নিবন্ধনের সংখ্যাও বেড়েছে। নেওয়া হয়েছে আরো অনেক যৌক্তিক উদ্যোগ। এর ইতিবাচক ফলও পাওয়া গেছে। ২০১৫-২০১৬ অর্থবছরের প্রথম ছয় মাসেই এ খাতের রপ্তানি প্রবৃদ্ধি প্রায় ১০ শতাংশে গিয়ে দাঁড়িয়েছে। বছর শেষে তা আরো বাড়ার সম্ভাবনা রয়েছে। বিদেশি ক্রেতারাও বাংলাদেশের পোশাক ক্রয়ে স্বাচ্ছন্দ্য অনুভব করছেন।


সম্প্রতি বাণিজ্যমন্ত্রী তোফায়েল আহমেদও বলেছেন, সম্ভাবনাময় পোশাকশিল্প দ্রুতগতিতে এগোচ্ছে। রানা প্লাজা দুর্ঘটনার পর এ খাত যে ভাবমূর্তির সংকটে পড়েছিল, বর্তমান সরকার এবং পোশাকশিল্পের মালিকদের প্রচেষ্টায় বাংলাদেশ সেই সংকট কাটিয়ে উঠেছে। বসুন্ধরা কনভেনশন সিটিতে বাংলাদেশ গার্মেন্টস এক্সেসরিজ অ্যান্ড প্যাকেজিং ম্যানুফ্যাকচারার্স অ্যান্ড এক্সপোর্টার্স অ্যাসোসিয়েশন আয়োজিত চার দিনের প্রদর্শনী গ্যাপেক্সপোর সমাপনী অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তৃতায় বাণিজ্যমন্ত্রী এ কথা বলেন।

 

বাংলাদেশের অর্থনীতি দ্রুত এগিয়ে চলেছে। এগিয়ে যাচ্ছে মানুষের জীবনধারণের মান। বাংলাদেশের এই অগ্রগতি সারা বিশ্বেই প্রশংসিত হচ্ছে। বিজিএমইএর বর্তমান সভাপতি সিদ্দিকুর রহমান বলেছেন, বাংলাদেশের পোশাক খাতে কর্মপরিবেশ উন্নয়নের কাজটি আমরা কারো তাগিদে করছি না, নিজেদের প্রয়োজনেই করছি। এটি একটি চলমান প্রক্রিয়া। আমরা আশা করি, বাংলাদেশের পোশাক খাত নিজেদের প্রয়োজনেই কর্মপরিবেশ উন্নয়নের প্রক্রিয়াটি অব্যাহতভাবে চালিয়ে যাবে।

 

তবে দেশের সম্ভাবনাময় এ শিল্পকে রক্ষা করার জন্য সরকারকে দেশের আইনশৃঙ্খলা ব্যবস্থা স্বাভাবিক রাখতে হবে। বিদেশি নাগরিকদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে হবে। দেশে বিনিয়োগবান্ধব পরিবেশ গড়ে তুলতে হবে। দুই বিদেশি হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় ক্রেতা ও ব্র্যান্ডদের কাছে যে ভুল বার্তা যাচ্ছে সরকারকে তা কূটনৈতিক কৌশলে সমাধান করতে হবে। সরকারকে বিদেশি ক্রেতা ও নাগরিকদের দেশে অবস্থান, চলাচলসহ প্রয়োজনীয় সার্বিক নিরাপত্তা ব্যবস্থা নিশ্চিত করার মাধ্যমে সম্ভাবনাময় এ শিল্পের উন্নয়নের ধারাবাহিকতা অক্ষুণ্ন রাখতে হবে।

 

বিশ্ববাজারে মন্দা এবং বহির্বিশ্বে বাংলাদেশ সম্পর্কে নেতিবাচক ধারণা প্রচারিত থাকা সত্ত্বেও চলতি (২০১৪-১৫) অর্থবছরে তৈরি পোশাক খাত থেকে রপ্তানি আয় হয়েছে ২ হাজার ৫৪৯ কোটি ১৪ লাখ ডলার যা দেশের রপ্তানি আয়ের সিংহভাগ। তৈরি পোশাকশিল্প মালিকদের সংগঠন বিজিএমইএ পোশাক খাতের ভবিষ্যৎ নিয়ে আশাবাদী। বিজিএমইএ ২০২১ সালের মধ্যে বাংলাদেশের তৈরি পোশাক রপ্তানি আয় ৫ হাজার কোটি ডলারে উন্নীত করার লক্ষ্যমাত্রায় কাজ করে যাচ্ছে। এ লক্ষ্যমাত্রা বাস্তবায়নে সরকারসহ সংশ্লিষ্টদের সর্বোতভাবে চেষ্টা করে যেতে হবে। কোনো কিছু যেন এতে  বাধা হয়ে দাঁড়াতে না পারে এটিই আমাদের প্রত্যাশা।

 

 

রাইজিংবিডি/ঢাকা/২৯ জানুয়ারি ২০১৫/নওশের/রফিক

রাইজিংবিডি.কম

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়