ঢাকা     বুধবার   ১৭ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ৪ ১৪৩১

অভিনন্দন ইসি, অভিনন্দন আইভী

সাইফ বরকতুল্লাহ || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ০৭:৫৬, ২৩ ডিসেম্বর ২০১৬   আপডেট: ০৫:২২, ৩১ আগস্ট ২০২০
অভিনন্দন ইসি, অভিনন্দন আইভী

সাইফ বরকতুল্লাহ

 

নারায়ণগঞ্জ পৌরসভার নির্বাচিত প্রথম চেয়ারম্যান আলী আহমেদ চুনকার মেয়ে আইভী- এটাই তার প্রথম পরিচয়। হ্যাঁ প্রিয় পাঠক, বলছি নারায়ণগঞ্জ সিটি করপোরেশন নির্বাচনে বিপুল ভোটের ব্যবধানে বিজয়ী ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের মেয়র প্রার্থী ডা. সেলিনা হায়াৎ আইভীর কথা। টানা দ্বিতীয়বারের মতো নারায়ণগঞ্জ নগর প্রধানের আসনে বসার সুযোগ পেয়েছেন তিনি।

 

তবে এই পদে পুনর্নির্বাচিত হতে আইভীকে দীর্ঘ ও বন্ধুর পথ পাড়ি দিতে হয়েছে। নির্বাচনে আইভীকে শুধু বিএনপির বিরুদ্ধে নয়, লড়তে হয়েছে নারায়ণগঞ্জ আওয়ামী লীগের একটি অংশের বিরুদ্ধেও। নারায়ণগঞ্জ সিটি করপোরেশন নির্বাচনে ডা. সেলিনা হায়াৎ আইভী ছিলেন প্রথম মেয়র এবং বাংলাদেশের ইতিহাসে তিনি একমাত্র নারী মেয়র। এবারেও তিনি বেসরকারি ফলাফলে নারায়ণগঞ্জ সিটি করপোরেশনের দ্বিতীয় মেয়র হিবেসে নির্বাচিত হয়েছেন। ২০১১ সালের ৩০ অক্টোবর নারায়ণগঞ্জে প্রথম সিটি করপোরেশন নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। ওই নির্বাচনেও জয়ী হয়েছিলেন আইভী।

 

২০১১ সালে অনুষ্ঠিত নারায়ণগঞ্জ সিটি করপোরেশনের প্রথম নির্বাচনে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ সমর্থিত প্রার্থী শামীম ওসমানকে ১ লাখ ৩ হাজার ৭ ভোটের ব্যবধানে হারিয়ে মেয়র হয়েছিলেন তিনি। আর এবার আওয়ামী লীগের প্রতীক নিয়েই তিনি মেয়র নির্বাচিত হলেন। এবারের নির্বাচনে আইভী আওয়ামী লীগের মনোনীত প্রার্থী। তাই বলা যায়, মেয়র নির্বাচিত হতে পারায় আইভী গড়লেন নতুন ইতিহাস। প্রথমবারের মতো দলীয় প্রতীকে অনুষ্ঠিত নাসিক নির্বাচনে ১৭৪টি কেন্দ্রে ভোট গ্রহণ অনুষ্ঠিত হয়। সবকটি কেন্দ্রের ফলাফলে নৌকা প্রতীকের প্রার্থী আইভী পেয়েছেন ১ লাখ ৭৫ হাজার ৬১১ ভোট। তার নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী বিএনপির মনোনীত প্রার্থী অ্যাডভোকেট সাখাওয়াত হোসেন ধানের শীষ প্রতীক নিয়ে পেয়েছেন ৯৬ হাজার ৪৪ ভোট। সেই হিসেবে ৭৯ হাজার ৫৬৭ ভোটের ব্যবধানে জয়ী হয়েছেন আইভী। রিটার্নিং অফিসারের অস্থায়ী কার্যালয় থেকে রিটার্নিং অফিসার নুরুজ্জামান তালুকদার বৃহস্পতিবার রাতে এ ফলাফল ঘোষণা করেন।

 

তবে এবারের নির্বাচন নতুন আশার আলো সঞ্চার করেছে। ১৭৪টি কেন্দ্রের কোথাও গোলযোগ-সহিংসতা হয়নি। ভোট স্থগিত হয়নি কোনো কেন্দ্রে। তেমন কোনো অভিযোগও ছিল না প্রার্থীদের। বৃহস্পতিবারের ভোটচিত্র দেখে নির্বাচন পর্যবেক্ষকেরা বলছেন, বর্তমান ইসির সময়ে অনুষ্ঠিত সব খারাপ দৃষ্টান্ত থেকে ভালোর পথে একটা রূপান্তর এই সিটি করপোরেশনের নির্বাচন। এখানে বলে রাখা ভালো- ইউনিয়ন, উপজেলা ও পৌরসভা নির্বাচনে সহিংসতা আর গোলযোগের পর এবার নারায়ণগঞ্জের নির্বাচন ঘিরেও ছিল শঙ্কা। সাত খুনের ঘটনাসহ নানা কারণে আলোচিত এই নগরীতে ঝুঁকিপূর্ণ হিসেবে চিহ্নিত ছিল প্রায় দুই-তৃতীয়াংশ কেন্দ্র। কিন্তু শঙ্কা মুছে দিয়ে ভোট হয়েছে নারায়ণগঞ্জে, যাতে ভোটারদের মধ‌্যে কোনো অস্বস্তি দেখা যায়নি। প্রার্থীদের কণ্ঠেও শোনা যায়নি অন‌্য সব ভোটের মতো অভিযোগের সুর। গত পাঁচ বছর ধরে সমালোচিত কাজী রকিবউদ্দীন আহমদ নেতৃত্বাধীন কমিশনের অধীনে এই নির্বাচনে সুষ্ঠু ভোট আয়োজনের সব নিয়ামক একসঙ্গে কাজ করেছে বলে মনে করছেন পর্যবেক্ষকেরা। তারা বলছেন, প্রার্থী, দল, ভোটার, আইনশৃঙ্খলা রক্ষকারী বাহিনী ও সরকারের সহায়তা থাকায় এবার গ্রহণযোগ্য ভোট হলো। যে কথা ভোট গ্রহণের পর সিইসি কাজী রকিবউদ্দীন আহমেদও স্বীকার করেছেন। তিনি সংবাদ সম্মেলন করে বলেছেন, সংশ্লিষ্ট সবার সহযোগিতায় নারায়ণগঞ্জে শান্তিপূর্ণ ভোট হয়েছে।

 

সেলিনা হায়াৎ আইভীর দ্বিতীয়বারের মতো জয়ী হওয়ায় বিষয়ে বিশ্লেষকেরা বলছেন, নতুন রাস্তা তৈরি, খাল দখলমুক্ত করা, নদীর পূর্ব পাড়ে প্রায় পাঁচ কিলোমিটার দীর্ঘ ও ১০০ ফুট প্রশস্ত রাস্তা তৈরি করা, শীতলক্ষ্যার পাড়ে প্রচুর ঘাটলা করা, জলাবদ্ধতা দূর করা, ড্রেনের কাজ করা আইভীকে বিজয়ী করতে সহায়তা করেছে। যেমনটি আইভী নিজেই বিজয়ের পর বলেছেন, এই জয়ে মানুষের ভালোবাসার প্রতিফলন ঘটেছে। যারা আমার বিজয়ে সহযোগিতা করেছেন তাদের নিয়ে পথ চলতে চাই। একই সঙ্গে উন্নয়নের ধারবাহিকতা রক্ষা করতে চাই।

 

শান্তিপূর্ণ নির্বাচনের একটা নতুন রেকর্ড স্থাপন হয়েছে নারায়ণগঞ্জ সিটি করপোরেশন নির্বাচনে। নির্বাচন অবাধ, সুষ্ঠু ও সুন্দরভাবে অনুষ্ঠিত হয়েছে বলে প্রাথমিক প্রতিবেদনে উল্লেখ করেছে নির্বাচন পর্যবেক্ষক সংস্থা ব্রতী। বৃহস্পতিবার নির্বাচন পর্যবেক্ষণ শেষে সংস্থাটির প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ব্রতীর পর্যবেক্ষকেরা বিভিন্ন কেন্দ্রে ৬২০ জন পোলিং অফিসার ও নির্বাচন কর্মকর্তা এবং প্রায় ২৪০ জন ভোটারের সঙ্গে কথা বলে এ তথ্য সংগ্রহ করেছেন।

 

তারা মোট ২১টি ওয়ার্ডের ৫৮টি কেন্দ্র পরিদর্শন করেন। সেখানে সর্বস্তরের মানুষ ও ভোটারদের সুশৃঙ্খল ও শান্তিপূর্ণভাবে ভোট দিতে দেখা গেছে। প্রায় সব বুথেই প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থীর এজেন্টদের উপস্থিতি দেখা গেছে। ভোট গ্রহণের সময় প্রার্থীদের কারো কাছ থেকে কোনো ধরনের অভিযোগ পাওয়া যায়নি।

 

ভোটাররা ব্রতীর পর্যবেক্ষকদের বলেছেন, সরকার, রাজনৈতিক দল ও প্রার্থীদের ইতিবাচক ভূমিকার কারণে নির্বাচন সুষ্ঠুভাবে অনুষ্ঠিত হয়েছে। যেমনটি আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের বলেছেন। তিনি বলেন, ‘অনেক শঙ্কা, তৃতীয় শক্তি, অনেক সমস্যা, সংকট, অনেক উদ্বেগ এসবের জল্পনা-কল্পনা ছিল। কিন্তু বাস্তবে সবকিছুই ভিত্তিহীন প্রমাণিত হয়েছে।’

 

নির্বাচন সুষ্ঠু হয়েছে জানিয়ে প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) কাজী রকিবউদ্দীন আহমদ বলেছেন, মূলত প্রার্থী ও তাদের সমর্থকদের সহযোগিতায় শান্তিপূর্ণভাবে নির্বাচন করা সম্ভব হয়েছে।

 

বিএনপির মেয়র পদপ্রার্থী সাখাওয়াত হোসেন খান বলেছেন, ‘জনগণ ভোট দেওয়ার অধিকার পেয়েছে, এটাই বড় কথা।’

 

তাই বলা যায়, সহিংসতা-বর্জনের ধারাবাহিকতার বিপরীতে অনুষ্ঠিত হওয়া নারায়ণগঞ্জের চিত্র আগামীতে ভোটের পরিবেশ বদলাতে ভূমিকা রাখবে। অভিনন্দন ইসি, অভিনন্দন আইভী।

 

সাইফ বরকতুল্লাহ : সাংবাদিক ও সাহিত্যিক

 

 

রাইজিংবিডি/ঢাকা/২৩ ডিসেম্বর ২০১৬/সাইফ/ইভা/এসএন

রাইজিংবিডি.কম

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়