ঢাকা     বুধবার   ২৪ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ১১ ১৪৩১

‘রিজাল ব্যাংককে অর্থ ফেরত দিতেই হবে’

নঈমুদ্দীন || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ০৯:০৬, ১ ডিসেম্বর ২০১৬   আপডেট: ০৫:২২, ৩১ আগস্ট ২০২০
‘রিজাল ব্যাংককে অর্থ ফেরত দিতেই হবে’

সচিবালয় প্রতিবেদক : বাংলাদেশ ব্যাংকের রিজার্ভ থেকে চুরি হওয়া অর্থ ফিলিপাইনের রিজাল কমার্শিয়াল ব্যাংকিং করপোরেশনকে (আরসিবিসি) অবশ্যই ফেরত দিতে হবে বলে মন্তব্য করেছেন আইনমন্ত্রী আনিসুল হক।

 

বৃহস্পতিবার দুপুরে সচিবালয়ে আইন ও সংসদ বিষয়ক মন্ত্রণালয়ে নিজ কক্ষে অর্থ উদ্ধারের বিষয়ে আইনমন্ত্রীর নেতৃত্বে চার সদস্যের প্রতিনিধিদলের অগ্রগতি সর্ম্পকে জানতে চাইলে তিনি এ কথা বলেন।

 

আইনমন্ত্রী বলেছেন, ‘ফিলিপাইনের রিজাল কমার্শিয়াল ব্যাংকিং করপোরেশনের অর্থ ফেরত দিতে অস্বীকৃতি জানানো অনৈতিক। কারণ, তারা এ ঘটনায় দ্বায় স্বীকার করেছে। এখন অর্থ ফেরত দিতে না চাওয়া অগ্রহণযোগ্য। তাদের অর্থ ফেরত দিতেই হবে।’

 

আনিসুল হক বলেন, ‘ফিলিপাইন সরকারের সঙ্গে আমাদের আলাপ হয়েছে। তারা রিজার্ভ চুরির অর্থ ফেরত পেতে আমাদের সব ধরনের আইনি সহায়তার প্রতিশ্রুতি দিয়েছে। ফিলিপাইনের সিনেটে এ ঘটনায় স্থগিত শুনানি আবার শুরু করার আশ্বাস দিয়েছে তারা।’

 

ফিলিপাইনের প্রেসিডেন্টের সঙ্গে পূর্বনির্ধারিত বৈঠক হয়নি কেন, জানতে চাইলে আইনমন্ত্রী বলেন,  ‘প্রেসিডেন্টের ব্যস্ততার কারণে বৈঠকটি স্থগিত হয়েছে। এর সঙ্গে চুরি হওয়া অর্থ ফেরত না দেওয়ার কোনো সম্পর্ক নেই।’

 

তিনি বলেন, ‘ফিলিপাইনের আইন প্রতিমন্ত্রীর সঙ্গে দেখা হয়েছে। আইন প্রতিমন্ত্রী, তাদের চিফ প্রসিকিউটরসহ সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে মামলার ব্যাপারে খোলাখুলি আলাপ করেছি।’

 

টাকা উদ্ধারে কী আলোচনা হয়েছে, এ প্রশ্নের জবাবে মন্ত্রী বলেন, ‘ক্যাসিনোতে টাকা আটকে আছে, এ কথা আমি মানব না। ব্যাপারটা হচ্ছে, ২৯ মিলিয়ন ইউএস ডলার ব্যাংকে ছিল। সেখানে ফিলিপাইনের প্রসিকিউশন সার্ভিস এই টাকা ফ্রিজ করার জন্য প্রার্থনা করেছিল। সেই টাকা ফ্রোজেন করা হয়। সেখানের আইনে আছে, এটাকে ৩০ দিনের বেশি ফ্রিজ করে রাখা যাবে না। ৩০ দিন পর হাইকোর্ট সেটাকে আনফ্রিজ করে দেয়। তার কারণ, ৩০ দিনের মধ্যে সমস্যার সমাধান করা যায়নি। সেখানে অপরপক্ষ একটি যুক্তি খাড়া করেছিল। আনফ্রিজ অর্ডারের বিপরীতে একটি দরখাস্ত করা হয়েছে, সেখানে সুপ্রিম কোর্ট একটি টেম্পোরারি রেসট্রেইন্ড অর্ডার দিয়েছে। যেটা হচ্ছে, এখন ফ্রোজেন থাক, মামলার শুনানির পর একটি ফাইনাল অর্ডার দেওয়া হবে। এই মামলাটা ফাইনাল অর্ডারের পর্যায়ে আছে।’

 

আইনমন্ত্রী বলেন, ‘তাদের সঙ্গে যুক্তিতর্কের সময় একটা কথা উঠেছে যে, ২৯ মিলিয়ন ডলারের কথা হচ্ছে তা থেকে ১ দশমিক ৩ মিলিয়ন ডলার ছাড়া বাকি অর্থ ক্যাসিনো অপারেটরদের কাছে চলে গেছে। অপরপক্ষের যুক্তি এটা। কিন্তু অপরপক্ষের যুক্তির বিরুদ্ধে আমাদের সঙ্গে আলাপের সময় তারা একটা পয়েন্ট আমাদের বলেছে যেটা অত্যন্ত গ্রহণযোগ্য। আলাদতে যখন মামলার শুনানি হবে তখন সেই পয়েন্টটা তুলে ধরা হবে।’

 

তিনি বলেন, ‘ফিলিপাইনের সিনেট শুনানিতে অনেকের বক্তব্য ছিল আরসিবিসি এ ঘটনার শুনানির জন্য দায়ী। সেই শুনানি শেষ হওয়ার আগেই ফিলিপাইনে নির্বাচন হয়েছিল। সেজন্য এটি সম্পন্ন হতে পারেনি।’

 

‘আমাদের একটা বক্তব্য ছিল, সেখানে সিনেটে যেন আবার এটার ব্যাপারে একটা হেয়ারিং শুরু হয়। আমরা যখন সিনেট সভাপতির কাছে এ অনুরোধ রাখি, তিনি তখনই এই অনুরোধ গ্রহণ করেন এবং তার অফিসকে সিনেটের হেয়ারিংয়ের তারিখ ঠিক করার নির্দেশ দেন। তিনি অত্যন্ত পরিষ্কারভাবে বলেন, কেউ অন্যায়ভাবে লাভবান হোক, ফিলিপাইন সরকার সেটা হতে দেবে না। কারো অর্জিত আয়ের টাকা অন্যায়ভাবে কেউ রেখে দেবে সরকার তা হতে দেবে না’ বলেন আনিসুল হক।

 

টাকা উদ্ধারের বিষয়ে ফিলিপাইনের অর্থমন্ত্রীর সঙ্গে আলোচনার কথা জানিয়ে আনিসুল হক বলেন, ‘তার সঙ্গে দেখা করার পর আমরা আমাদের দাবি তুলে ধরি। সেসব দাবির মধ্যে সবচেয়ে বড় যে দিক ছিল তা হলো- ফিলিপাইনের কেন্দ্রীয় ব্যাংক এ ঘটনার পর বাংলাদেশের অর্থ গ্রহণ করার জন্য আরসিবিসি প্রশাসনকে দায়ী করেছিল এবং এজন্য তাদের ২ বিলিয়ন পেসো বা ২১ মিলিয়ন মার্কিন ডলার জরিমানা করেছিল। কোনো আপিল না করে সেই জরিমানা মেনে নিয়ে ১০ মিলিয়ন ডলার তারা ইতিমধ্যে পরিশোধ করেছে ও ১১ মিলিয়ন ডলার পরিশোধ করবে বলে আরসিবিসি বলেছে। সেখানে আমাদের বক্তব্য ছিল- এই জরিমানা পরিশোধের মাধ্যমে পরিষ্কারভাবে প্রমাণিত হয়েছে যে, আরসিবিসি তার অপরাধ স্বীকার করে নিয়েছে। সেই কারণেই আরসিবিসিকে সম্পূর্ণ টাকাটা ফেরত দিতে হবে বাংলাদেশকে। অর্থমন্ত্রী বাংলাদেশের এ দাবিটাকে অত্যন্ত যুক্তিসঙ্গত বলেছেন।’

 

৬৬ মিলিয়ন ডলার অর্থের মধ্যে কী পরিমাণ অর্থ বাংলাদেশে আসতে পারে? এটা জানতে চাইলে আইনমন্ত্রী বলেন, ‘আমরা কথা হচ্ছে, ৬৬ মিলিয়নই আসবে ইনশাআল্লাহ। আমরা আইনি লড়াই চালিয়ে যাব। সরকার যদি অর্থ আদায়ে অন্য কোনো পন্থা অবলম্বন করে তাতেও আমরা সর্বাত্মক সহায়তা করব।’

 

গত ২৯ নভেম্বর এক বিবৃতিতে আরসিবিসি জানিয়েছে, রিজার্ভের চুরি হওয়া অর্থের বাকিটা তারা ফেরত দেবে না। বাংলাদেশ ব্যাংকের অবহেলার কারণেই রিজার্ভের অর্থ চুরি হয়েছে বলেও জানিয়েছে ব্যাংকটি।

 

এ বিষয়ে মন্ত্রীর দৃষ্টি আকর্ষণ করা হলে তিনি বলেন, ‘দায় স্বীকার করার পর আরসিবিসির টাকা ফেরত না দেওয়ার কথা বলা গ্রহণযোগ্য নয়।’

 

চলতি বছরের ফেব্রুয়ারি মাসে যুক্তরাষ্ট্রের ফেডারেল রিজার্ভ ব্যাংক অব নিউইয়র্কে (নিউইয়র্ক ফেড) রক্ষিত বাংলাদেশ ব্যাংকের রিজার্ভ থেকে ১০ কোটি ১০ লাখ মার্কিন ডলার (প্রায় ৮০০ কোটি টাকা) চুরি হয়। এর মধ্যে ২ কোটি ডলার চলে যায় শ্রীলঙ্কায় আর বাকি ৮ কোটি ১০ লাখ ডলার যায় ফিলিপাইনে। শ্রীলঙ্কা থেকে ২ কোটি ডলার ফেরত পাওয়া গেছে বলে বাংলাদেশ ব্যাংকের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে। চুরি হওয়া অর্থের মধ্যে ১ কোটি ৫২ লাখ ডলার ফিলিপাইন থেকে ফেরত পাওয়া গেছে। বাকি থাকল আরো ৬ কোটি ৫৮ লাখ ডলার।

 

এ ঘটনায় জড়িত থাকার দায়ে আরসিবিসিকে ২ কোটি ১০ লাখ ডলার জরিমানা করেছে দেশটির কেন্দ্রীয় ব্যাংক। চুরির এ ঘটনায় আরবিসির ছয় কর্মকর্তার বিরুদ্ধে ফিলিপাইনের অ্যান্টি-মানি লন্ডারিং কাউন্সিল মামলা করেছে।

 

চুরি হওয়া অর্থ উদ্ধারের বিষয়ে ব্যবস্থা নিতে গত ২৬ নভেম্বর আইনমন্ত্রীর নেতৃত্বে একটি প্রতিনিধিদল ফিলিপাইনে যায়। বুধবার (৩০ নভেম্বর) দলটি ফিরে আসার পর বৃহস্পতিবার সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করা হয়।
 

 

রাইজিংবিডি/ঢাকা/১ ডিসেম্বর ২০১৬/নঈমুদ্দীন/হাসান/সাইফুল/রফিক

রাইজিংবিডি.কম

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়