ঢাকা     বুধবার   ২৪ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ১১ ১৪৩১

আজও আইলার ক্ষত বয়ে বেড়াচ্ছে উপকূলের মানুষ

শাহীন || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ১৮:০৮, ২৪ মে ২০১৫   আপডেট: ০৫:২২, ৩১ আগস্ট ২০২০
আজও আইলার ক্ষত বয়ে বেড়াচ্ছে উপকূলের মানুষ

শ্যামনগরে আইলায় ক্ষতিগ্রস্তদের খুপড়ি ঘরে বসবাস

এম. শাহীন গোলদার, সাতক্ষীরা : আইলার ৬ষ্ঠ বার্ষিকী আজ। ২০০৯ সালের এই দিনে সাতক্ষীরার সুন্দরবন উপকূলীয় এলাকায় আঘাত হেনেছিল প্রলয়ঙ্করী ঘূর্ণিঝড় ‘আইলা’। এতে সাতক্ষীরার উপকূলীয় এলাকায় ৭৩ জন নারী-পুরুষ ও শিশু মারা যায়। আজও সেই আইলার ক্ষত বয়ে বেড়াচ্ছে উপকূলের হাজারো ক্ষতিগ্রস্ত মানুষ।

 

সেই রাতে মুহূর্তের মধ্যে সাতক্ষীরার শ্যামনগর, আশাশুনি এবং খুলনার কয়রা, দাকোপ উপজেলার উপকূলবর্তী বিস্তীর্ণ এলাকা লণ্ডভণ্ড হয়ে যায়। ১৪-১৫ ফুট উঁচু সমুদ্রের পানির ঢেউ ভাসিয়ে নিয়ে যায় নারী-শিশুসহ কয়েক হাজার মানুষকে। শেষ হয়ে যায় হাজার হাজার গবাদী পশু আর ঘরবাড়ি। নিমিষেই গৃহহীন হয়ে পড়ে লক্ষাধিক মানুষ। চিংড়ি ঘের আর ফসলের ক্ষতিও ছিল অবর্ণনীয়।

 

সেদিনের তাণ্ডবে এসব এলাকার ৫ লাখ ৯৫ হাজার ১২২ জন মানুষ মুহূর্তেই আশ্রয়হীন হয়ে পড়ে। শুধু শ্যামনগরেই গৃহহীন হয় ২ লাখ ৪৩ হাজার ২৯৩ জন। শ্যামনগরের ৯৬ হাজার ৯১৬টিসহ মোট ১ লাখ ৪২ হাজার ২৪৪টি বসতঘর বিধ্বন্ত হয়। উপজেলার ৪৮ হাজার ৪৬০ পরিবারসহ মোট ১ লাখ ১৪ হাজার পরিবার আইলার আঘাতে সরাসরি ক্ষতির সম্মুখীন হয়।

 

আইলার ধ্বংসযজ্ঞে ৩৯৯টি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানসহ ৩ শতাধিক মসজিদ, মন্দির ধ্বংস হওয়ার পাশাপাশি ১৭৯ কিলোমিটার রাস্তা সম্পূর্ণ ও ৯৯ কিলোমিটার আংশিক নষ্ট হয়ে যায়। ৪১টি ব্রিজ ও কালভার্টসহ ১১৭ কিলোমিটার বেড়িবাঁধ নদীতে বিলীন হয়ে যায়। শুধু শ্যামনগরে ১২৭ কিলোমিটার উপকূল রক্ষা বাঁধের ৯৭ কিলোমিটার নিশ্চিহ্ন হয়ে যায়।

 

হাজার হাজার গবাদী পশু আর হাঁস-মুরগির মৃত্যুর পাশাপাশি শুধু উপজেলায় ১৯৪ হেক্টর ফসলি খেত ও ৩২ হাজার ৬৬১ একর চিংড়ি চাষের জমি তলিয়ে যায়। সহস্রাধিক নলকূপ ও ২০০০ বেশি পুকুর, জলাশয় জলমগ্ন হয়ে পড়ে।

 

আইলার ছয় বছর অতিবাহিত হলেও মানুষ এখনো সোজা হয়ে দাঁড়াতে পারেনি। নানা সমস্যায় জর্জরিত এখানকার মানুষ। খাবার পানির জন্য এখনো মানুষকে ছুটতে হচ্ছে পায়ে হেঁটে মাইলের পর মাইল। আইলায় সবচেয়ে ক্ষতিগ্রস্ত গাবুরা ইউনিয়নের ১৪টি গ্রামের মধ্যে মাত্র তিনতে টিউবওয়েল বসানো হয়েছে।  কাজের সন্ধানে মানুষ নিজ বাসভূমি ছেড়ে অন্যত্র চলে যাচ্ছে।

 

সুন্দরবন, কপোতাক্ষ ও খোলপেটুয়া নদীর ওপর নির্ভরশীল এলাকার মানুষের জীবনযাপন দুর্বিসহ হয়ে পড়েছে। আইলার পরপরই কিছু সরকারি-বেসরকারি উদ্যোগে ‘কাজের বিনিময় খাদ্য’ প্রকল্প চললেও এখন কোনো কাজ হচ্ছে না। ক্রমে বাড়ছে দরিদ্র ও অতি দরিদ্রের সংখ্যা। পানি উন্নয়ন বোর্ডের বেড়িবাঁধগুলো পুরোপুরি সংস্কার না হওয়ায় ঝুঁকিতে রয়েছে লাখো মানুষ। অনেক শিক্ষা প্রতিষ্ঠান এখনো পাঠদানের উপযোগী হয়নি। ফলে লেখাপড়ায় বিঘ্ন ঘটছে।

 

শ্যামনগর উপজেলার গাবুরা ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান জি. এম মাসুদুল আলম জানান, দুর্গত এলাকায় এখনো সমস্যার শেষ নেই। খাবার পানির তীব্র সংকট। আইলায় মিষ্টি পানির আধারগুলো নষ্ট হয়ে যায়। আজও পুকুর বা জলাশয় খনন করে মিষ্টি পানি সংরক্ষণের ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি। এলাকায় কাজ নেই। মাটি মাত্রাতিরিক্ত লবণাক্ত। এ কারণে জমিতে ফসল হচ্ছে না। পতিত পড়ে আছে হাজার হাজার বিঘা জমি। বেড়িবঁধের অবস্থা নাজুক। নদীতে বড় ধরনের জোয়ার আসলে ভেড়িবাঁধ উপচে পানি লোকালয়ে ঢোকে।

 

শ্যামনগর উপজেলার পদ্মপুকুর ইউনিয়নের চেয়ারম্যান আমজাদুল ইসলাম জানান, আইলা পরবর্তী সময়ে তার এলাকা থেকে বহু মানুষ কাজের সন্ধানে চলে যায়। আজও তারা এলাকায় ফেরেনি। এলাকায় কর্মসংস্থান না থাকায় অনেকে নতুন করে এলাকা ছাড়তে বাধ্য হচ্ছে। আইলার আঘাত কাটিয়ে উঠতে পারেনি তার এলাকার অন্তত ১৫টি গ্রামের মানুষ।

 

সাতক্ষীরা জেলা প্রশাসক নাজমুল আহসান বলেন, বেডিবাঁধ, সুপেয় পানিসহ যে সব সমস্যা রয়েছে, তার সমাধানে সরকার ও বেসরকারি সংস্থার যৌথ প্রচেষ্টা অব্যাহত রেখেছে। নদী ভাঙ্গন বা বেড়িবাঁধ সংস্কার করার জন্য ইতিমধ্যে ঊর্ধ্বতন মহলের দৃষ্টিতে আনা হয়েছে। এলাকায় সুপেয় পানি সরবরাহ নিশ্চিত করতে ওয়াটার টিটমেন্ট প্লান্ট নির্মাণের কাজ চলছে। বেড়িবাঁধ দ্রুত নির্মাণের ব্যাপারে পানি উন্নয়ন বোর্ডকে প্রয়োজনীয় সব ধরনের পদক্ষেপ নেওয়ার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।

 

 

রাইজিংবিডি/সাতক্ষীরা/২৫ মে ২০১৫/শাহীন/শাহ মতিন টিপু/বকুল

রাইজিংবিডি.কম

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়