আনোয়ারার বাতাসে পঁচা মাছের গন্ধ
রেজাউল || রাইজিংবিডি.কম
অ্যামোনিয়া গ্যাসের বিরূপ প্রভাবে মরে যাওয়া মাছ
নিজস্ব প্রতিবেদক, চট্টগ্রাম : অ্যামোনিয়া গ্যাসের বিরূপ প্রভাবে চট্টগ্রামের আনোয়ারা উপজেলার রাঙাদিয়া এলাকায় সব মৎস্য খামারের মাছই যেন মরে পঁচে গেছে।
সমগ্র আনোয়ারায় এখন পঁচা মাছের গন্ধ। অ্যামোনিয়া গ্যাসে এলাকার সব মৎস্য খামারের মাছ মরে গিয়ে খামারিরা পথে বসে গেলেও তাদের ক্ষতিপূরণ দেয়নি কর্তৃপক্ষ। মিলেছে শুধু আশ্বাস।
গত সোমবার রাতে বিসিআইসি নিয়ন্ত্রিত অ্যামোনিয়া গ্যাস ট্যাঙ্ক বিস্ফোরণের বড় ক্ষতি বহন করতে হচ্ছে এলাকার মৎস্য খামারিদের। আনোয়ারার রাঙাদিয়া এলাকায় কোনো জলাশয়ে মাছসহ কোনো জলজ প্রাণির এখন আর কোনো অস্তিত্ব নেই।
রাঙাদিয়া এলাকার স্থানীয় বাসিন্দা আবু সাঈদ সওদাগর বলেন, ‘আমরা এখানে পঁচা মাছের গন্ধে টিকতে পারছি না। এই এলাকার সব জলাশয়ের সব মাছ মরে পঁচে ভেসে উঠেছে। হাজার হাজার কেজি মাছ চাষিরা মাটি খুঁড়ে চাপা দিয়েছে। ঘটনার তিন দিন পরেও মাছ মরে ভেসে উঠছে। মাছের সঙ্গে সাপ, ব্যাঙসহ অন্যান্য জলজ প্রাণিও মরে গেছে।’
রাঙাদিয়া এলাকার মৎস্য চাষি মোবারক মিয়া বলেন, ‘আমরা পথে বসে গেছি। একেবারে নিঃস্ব হয়ে গেছি। আমাদের আর কিছু অবশিষ্ট নেই। খামারের সব মাছ মরে পঁচে গেছে। এখন এই মাছ জলাশয় থেকে তুলে শ্রমিক দিয়ে মাটি চাপা দিতেও আমাদের অনেক টাকা খরচ হচ্ছে। কিন্তু যাদের অবহেলায়, যাদের কারণে এই অঘটন তারা কোনো সহায়তাও করছে না।’
প্রায় কোটি টাকার রুই, কাতলা, তেলাপিয়া, মৃগেলসহ বিভিন্ন প্রজাতির মাছ মরে যাওয়ার কথা জানিয়ে মোবারক মিয়া বলেন, ‘আমরা ইতিমধ্যে ক্ষতিপূরণের দাবি জানিয়েছি স্থানীয় সাংসদ ও মন্ত্রী সাইফুজ্জামান চৌধুরী জাভেদের কাছে। এ ছাড়া শিল্পমন্ত্রী এবং বিসিআইসি চেয়ারম্যানের কাছেও আবেদন জানিয়েছি। কিন্তু শুধু আশ্বাস পেয়েছি।’
অ্যামোনিয়া গ্যাসের বিরূপ প্রভাবে বিবর্ণ হয়ে গেছে গাছপালা
মৎস্য খামারি আনোয়ার হোসেন বলেন, ‘আমাদের কয়েকজন পার্টনারের এখানে ৪০০ একরের বড় মৎস্য খামার রয়েছে। ড্যাপ সার কারখানার এই গ্যাস ট্যাঙ্ক বিস্ফোরণে আমাদের খামারের এক কোটি টাকা মূল্যের মাছ মরে পঁচে গেছে। এইসব পঁচা মাছ মাটি চাপা দিতেও হাজার হাজার টাকা খরচ হচ্ছে। অথচ আমরা এখনো কোনো ক্ষতিপূরণ পাচ্ছি না।’
মাছের পাশাপাশি এলাকায় অ্যামোনিয়া গ্যাসের প্রভাবে দুটি গরু মরে যাওয়ার খবর পাওয়া গেছে। এ ছাড়া এলাকায় গাছপালা, লতা-পাতা, ঘাস ধূসর বা বিবর্ণ হয়ে গেছে।
এসব বিষয়ে চট্টগ্রাম পরিবেশ অধিদপ্তরের সহকারী পরিচালক মো. বদরুল হুদা বলেন, ‘অ্যামোনিয়ায় পরিবেশগত ক্ষয়ক্ষতি নিরূপণ ও বিরূপ প্রভাব অনুসন্ধানে কাজ করছে পরিবেশ অধিদপ্তর। ইতিমধ্যে এলাকার পানির নমুনা সংগ্রহ করে পরীক্ষা করা হচ্ছে।’
পরিবেশ অধিদপ্তরের সিনিয়র কেমিস্ট কামরুল হাসানের নেতৃত্বে একটি টিম এ ব্যাপারে কাজ করছে বলে বদরুল হুদা নিশ্চিত করেন।
রাইজিংবিডি/২৫ আগস্ট ২০১৬/রেজাউল/টিপু
রাইজিংবিডি.কম
আরো পড়ুন