ঢাকা     বৃহস্পতিবার   ২৫ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ১২ ১৪৩১

নারায়ণগঞ্জে ঝড় তুলতে চায় বিএনপি

এস কে রেজা পারভেজ || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ০২:০২, ৫ ডিসেম্বর ২০১৬   আপডেট: ০৫:২২, ৩১ আগস্ট ২০২০
নারায়ণগঞ্জে ঝড় তুলতে চায় বিএনপি

এস কে রেজা পারভেজ : নারায়ণগঞ্জ সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনে জয়ের ব্যাপারে ‘শতভাগ আশাবাদী’ বিএনপি প্রচার-প্রচারণার ক্ষেত্রে শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত ঝড় তুলতে চায়। দ্বন্দ্ব ভুলে স্থানীয় প্রভাবশালী নেতারা তো বটেই, ঢাকা থেকে ছুটে যাচ্ছেন শতাধিক নেতা, যারা নাওয়া খাওয়া ছেড়ে প্রচার চালাবেন মহানগরীর অলি-গলিতে।

 

এজন্য কেন্দ্রীয় ও স্থানীয় নেতাদের সমন্বয়ে এরই মধ্যে পৃথক কমিটি করে দেওয়া হয়েছে। পাশাপাশি ঢাকা থেকে জ্যেষ্ঠ নেতারাও যোগ দেবেন প্রচার-প্রচারণায়। আর নির্বাচনে বিএনপির পক্ষে গণজোয়ার তুলতে এবং জনগণের মধ্যে উন্মাদনা ছড়াতে প্রচারণার শেষ দুই দিন বাড়তি আকর্ষণ হিসেবে দেখা যেতে পারে বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়াকে।

 

দলটির দায়িত্বশীলরা বলছেন, যেহেতু তিনি (খালেদা জিয়া) সরকার বা বিরোধী দলে নেই এবং সরকারি কোনো সুযোগ সুবিধাও নিচ্ছেন না, সেহেতু প্রচার-প্রচারণা চালাতে তার কোনো বাধা নেই। অর্থাৎ ঢাকা সিটি কর্পোরেশনের মতো নারায়ণগঞ্জ সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনেও তাকে দেখা যেতে পারে ভোটারের দ্বারে দ্বারে।

 

আগামী ২২ ডিসেম্বর অনুষ্ঠিতব্য ওই নির্বাচনে বিএনপির মেয়র প্রার্থী হয়েছেন সাখাওয়াত হোসেন খান, যার প্রধান প্রতিদ্বন্দ্বী ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের প্রার্থী সেলিনা হায়াৎ আইভী।

 

গত ২৯ ডিসেম্বর খালেদা জিয়ার সঙ্গে বৈঠকে জোটের উচ্চ পর্যায়ের নেতারা সাখাওয়াত হোসেন খানকে সমর্থন জানান। তারা জোটবদ্ধভাবে প্রচারণায় নামবেন বলেও সে সময় জোটনেত্রীকে জানান। এ কারণে জোটের দুই দল এলডিপি ও কল্যাণ পার্টি নারায়ণগঞ্জ সিটি কর্পোরেশন থেকে তাদের প্রার্থীদের মনোনয়নপত্র প্রত্যাহারের সিদ্ধান্ত নেয়।

 

জোটের এক নেতা রাইজিংবিডিকে বলেন, ‘ঢাকা সিটি কর্পোরেশনের চেয়েও নারায়ণগঞ্জ সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনকে ২০ দলীয় জোট গুরুত্ব সহকারে নিয়েছে। আমরা মনে করছি, বর্তমান নির্বাচন কমিশন তার শেষ নির্বাচন নিরপেক্ষ করার প্রয়াস চালাবে। কারণ আগামী ফেব্রুয়ারিতে নতুন নির্বাচন কমিশন গঠনের বিষয়টি রয়েছে। সেজন্য ক্ষমতাসীনরা এই নির্বাচন বিতর্কিত করতে চাইবে না। ২০ দলীয় জোট এই সুবিধাটিই নিতে চাইছে।’

 

তিনি জানান, প্রচারণা শুরুর প্রথম দিক থেকেই জোটের নেতাকর্মীদের ঝাঁপিয়ে পড়তে এরই মধ্যে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। প্রচারণা শেষ হওয়ার আগের দুই দিন বিএনপি চেয়ারপারসন ও জোটনেত্রী খালেদা জিয়া নারায়ণগঞ্জ সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনে মাঠে নামতে পাারেন। তবে বিষয়টি তার শারীরিক অসুস্থতার ওপর নির্ভর করছে বলে জানান ওই জোট নেতা।

 

বিএনপি নেতাদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, নারায়ণগঞ্জ জেলা বিএনপিতে দীর্ঘদিন ধরে চলে আসা দ্বন্দ্বকে একপাশে রেখে সিটি নির্বাচনে ঐক্যবদ্ধভাবে কাজ করতে চায় নেতাকর্মীরা। এই নির্বাচনে বিএনপি ইতিবাচক ফল আনতে না পারলে তা দলের জন্য নেতিবাচক হয়ে দেখা দেবে বলে মনে করেছেন তারা। এতে নেতাকর্মীদের মনোবলে বড় ধরনের চির ধরতে পারে। এজন্য কোনোভাবেই নাসিক নির্বাচনকে হালকাভাবে নিচ্ছে না বিএনপি।

 

নির্বাচনে দলের দায়িত্বশীলরা জানিয়েছেন, একই এলাকায় যাতে প্রচারণার পুনরাবৃত্তি না ঘটে, সেজন্য পৃথকভাবে এলাকা ভিত্তিতে শীর্ষ নেতাদের নেতৃত্বে পৃথক কমিটি করে দেওয়া হয়েছে। এক্ষেত্রে জেলার সিদ্ধিরগঞ্জ এলাকায় প্রাক্তন সংসদ সদস্য গিয়াস উদ্দিন আহমেদ, নগরীতে জেলা বিএনপির সভাপতি তৈমুর আলম খন্দকার এবং বন্দরে প্রাক্তন সংসদ সদস্য অ্যাডভোকেট আবুল কালামকে দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে।

 

এদিকে শনিবার কেন্দ্রীয় সমন্বয়ক কমিটির এক বৈঠকে দলের কেন্দ্রীয় শতাধিক নেতাকে নির্বাচনে গণসংযোগের জন্য চূড়ান্ত করা হয়। সঙ্গে থাকছেন বিএনপির অঙ্গ ও সহযোগী সংগঠনের শীর্ষ নেতারা। নেতাদের কে কোথায় কীভাবে কাজ করবেন, তাও বৈঠকে আলোচনা হয়। সোমবার প্রতীক বরাদ্দ পাওয়ার পর ধানের শীষের পক্ষে তারা একযোগে মাঠে নামবেন।

 

সমন্বয় কমিটির প্রধান বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য গয়েশ্বর চন্দ্র রায় বলেন, ‘নাসিকে আমাদের জয়ের সম্ভাবনা মোর দেন হান্ড্রেড পারসেন্ট। আমরা যদি একসঙ্গে, এক হয়ে কাজ করি, আমাদের কেউ হারাতে পারবে না। তাই আপনারা যার যার মতো করে নির্বাচনী মাঠে নেমে পড়–ন।’

 

নাসিক নির্বাচন বিএনপির জন্য চ্যালেঞ্জ জানিয়ে তিনি বলেন, ‘এ চ্যালেঞ্জটা মোকাবেলায় যদি সফল হওয়া যায়, তাহলে শুধু সাখাওয়াতের (বিএনপির মেয়র প্রার্থী-সাখাওয়াত হোসেন খান) নয়, সবার ভাগ্য নির্ধারিত হবে। প্রত্যেক নেতাকর্মীর কাছে এ নির্বাচনটা পরীক্ষার।’

 

বৈঠকে সমন্বয় কমিটির সদস্য সচিব দলের সাংগঠনিক সম্পাদক ফজলুল হক মিলনের পরিচালনায় অন্যদের মধ্যে জেলা সভাপতি তৈমুর আলম খন্দকার, সাধারণ সম্পাদক কাজী মুনিরুজ্জামান মনির, প্রাক্তন সংসদ সদস্য অ্যাডভোকেট আবুল কালাম, গিয়াস উদ্দিন, বিএনপির কেন্দ্রীয় নেতা আবদুস সালাম আজাদ, শহীদুল ইসলাম বাবুল, স্থানীয় নেতা আতাউল ইসলাম মুকুল, আজাহারুল ইসলাম মান্নান, আবদুল হালিম জুয়েল, মাজহারুল ইসলাম ময়ুর, মনিরুল ইসলাম রবি, সরকার হুমায়ুন কবীর, আবদুল হাই রাজু, হাজী নুরুউদ্দিন অংশ নেন। বৈঠকে নারায়ণগঞ্জ সিটি কর্পোরেশনের ২৭টি ওয়ার্ডের বিএনপির সভাপতি, সাধারণ সম্পাদকরাও অংশ নেন।

 

নারায়ণগঞ্জ জেলা বিএনপি ও কেন্দ্রীয় সমন্বয় কমিটির দায়িত্বশীলদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, সব প্রস্ততি শেষ করে এখন প্রচারণার জন্য প্রহর গুনছে বিএনপির নেতাকর্মীরা। নারায়ণগঞ্জ সিটি কর্পোরেশন নির্বাচন বিষয়ে শনিবার রাতে দলের শীর্ষ নেতাদের নিয়ে বৈঠক করেন খালেদা জিয়া। কীভাবে প্রচারণা চালানো যায়, সে বিষয়ে বৈঠকে বিস্তারিত আলোচনা হয়। বিএনপি নেতারা তাদের মতামত ব্যক্ত করেন। নারায়ণগঞ্জ সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনে ভোটারদের মনোযোগ আকর্ষণ করার জন্য সরকারের বিভিন্ন নেতিবাচক কর্মকা-ের বিষয় তুলে ধরার পরামর্শ দেওয়া হয়।

 

 

রাইজিংবিডি/ঢাকা/৪ ডিসেম্বর ২০১৬/রেজা/শাহনেওয়াজ

রাইজিংবিডি.কম

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়