ঢাকা     শুক্রবার   ১৯ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ৬ ১৪৩১

ইতিহাস গড়ল সুনামগঞ্জ

রফিকুল ইসলাম কামাল || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ১৬:২৭, ২৭ আগস্ট ২০১৬   আপডেট: ০৫:২২, ৩১ আগস্ট ২০২০
ইতিহাস গড়ল সুনামগঞ্জ

রফিকুল ইসলাম কামাল, সিলেট : ম্যাচের শুরুর তিন মিনিট পার হতেই ডিবক্সের অনেক বাইরে সিলেটের এক ডিফেন্ডারের সঙ্গে পোস্টে বল নিয়ে যাওয়ার প্রতিযোগিতায় সুনামগঞ্জে ফরোয়ার্ড ডুডু।

 

আচমকা গোলপোস্ট ছেড়ে বেরিয়ে এলেন সিলেটের গোলরক্ষক সোহেল। ফাউল করে বসলেন ডুডুকে। হলুদ কার্ড দেখাতে কার্পণ্য করলেন না রেফারি। ম্যাচের শুরুর এই চিত্র দেখেই সিলেট জেলা স্টেডিয়ামের প্রেসবক্সে ‘অলক্ষুণে’ এক গুঞ্জন- আজ বোধহয় সিলেটের হবে না! গুঞ্জন শেষ পর্যন্ত কল্পলোকে থাকেনি, বাস্তব হয়ে নেমে এসেছে মর্ত্য।

 

বাংলাদেশের ফুটবল ইতিহাসে প্রথমাবেরর মতো সিলেট জেলা দলকে হারিয়েছে সুনামগঞ্জ জেলা দল। এর আগে কোনো ধরনের টুর্নামেন্টেই সিলেটকে হারাতে পারেনি সুনামগঞ্জ। সিলেট জেলা স্টেডিয়ামে শনিবার রাতে সিলেটকে ৩ (৫)- ৩ (৪) গোলে হারিয়েছে সুনামগঞ্জ। এই জয়ে সিলেট দ্বিতীয় বিভাগীয় কমিশনার গোল্ডকাপের ফাইনালের মহারণে জায়গা করে নিয়েছে সুনামগঞ্জ।

 

এ ম্যাচ নিয়ে নানা আলোচনা হয়েছে। একই বিভাগের দুটি জেলা দল- সমর্থকও উভয়দলের পক্ষে বেশ উচ্চকিত। ম্যাচের আগেই তাই উত্তেজনার পারদ ছিল উর্ধ্বমুখী। ম্যাচের শেষ শট পর্যন্ত সেই উত্তেজনা ছিল টগবগে।

 

শুরু থেকে আক্রমণ-পাল্টা আক্রমণে জমে ওঠে সেমিফাইনাল এই ম্যাচটি। তবে প্রথমার্ধে আক্রমণ শানাতে গিয়ে নিজেদের ডিফেন্সকে অরক্ষিত করে রাখে সিলেট। ফলাফল-প্রথমার্ধেই সিলেট ৩-১ গোলে পিছিয়ে!

 

ম্যাচের ৬ মিনিটেই সোহেলের গোলে এগিয়ে যায় সুনামগঞ্জ। এই সোহেল পরে করেছেন আরেক গোল। গোল খাওয়ার পরের মিনিটেই কাউন্টার অ্যাটাকে ওঠে সিলেট। ইকোর জোরালো শট পোস্টে লাগায় গোল শোধ করতে পারেনি সিলেট। তবে গোল শোধে বেশিক্ষণ অপেক্ষা করতে হয়নি সিলেটকে। ম্যাচের ২২ মিনিটেই কর্ণার কিক থেকে জটলায় বল পেয়ে সেই ইকোই গোল করে ম্যাচে ফেরান সিলেটকে।

 

প্রথমার্ধের ৪৩ মিনিটে কাউন্টার অ্যাটাক থেকে সিলেটের ডিফেন্সকে বোকা বানিয়ে দারুণ এক গোল করেন বাংগুরা। দ্রুতগতিতে ছোটা বাংগুরার গতির কাছে পরাস্ত হতে হয় সিলেটের গোলরক্ষক সোহেলকে। ২-১ গোলে পিছিয়ে থাকা হতভম্ব সিলেট ঠিক পরের মিনিটেই খেয়ে বসে আরেক গোল। ডিফেন্সকে বোকা বানিয়ে নিজের দ্বিতীয় গোল করেন সুনামগঞ্জের ফরোয়ার্ড সোহেল।

 

৩-১ এ পিছিয়ে থাকা সিলেট দ্বিতীয়ার্ধের শুরু থেকে গোল শোধে একের পর এক আক্রমণ শানাতে থাকে সুনামগঞ্জের ডিবক্সে। এ অর্ধের ১৭ মিনিটে কর্ণার কিক থেকে বক্সে জটলায় বল পেয়ে ব্যাক হিলে অনেক দিন মনে রাখার মতো গোল করে ব্যবধান ৩-২ এ নামিয়ে আনেন সিলেটের বিদেশি ফরোয়ার্ড কিংসলে। এরপর সিলেটের আক্রমণ। কিন্তু গোলের জন্য তাদের অপেক্ষা বাড়তেই থাকে।

 

ম্যাচ ৩-২ গোলে সুনামগঞ্জ জিতে যাচ্ছে এমনটা যখন জোর গুঞ্জন, ম্যাচের অতিরিক্ত সময়ে তখন সেই কিংসলেই সমতা ফেরান ম্যাচে। প্রতিপক্ষের ডিবক্সে ফাঁকায় পাওয়া বলে শট নিয়ে জাল কাঁপাতে ভুল করেননি এই ফরোয়ার্ড।

 

ম্যাচ গড়ায় টাইব্রেকারে। ডাগআউটে উভয়দলের টেনশন। গ্যালারিতে পিনপতন নিরবতা। সেই নিরবতা ছুঁয়ে গেল প্রেসবক্সে থাকা সাংবাদিকদেরও।

 

সিলেটের রিপনের শট গোলপোস্টে ঢুকতেই খান খান হয়ে গেল স্টেডিয়ামের নিরবতা। পরের শটে সুনামগঞ্জের বাংগুরার শট ঠেকিয়ে দেন সিলেটের বদলি গোলরক্ষখ শামসুল। সিলেটের দর্শকদের উন্মাদনা তখন বাঁধনহারা। তবে তাদের সেই উৎফুল্লাতা শেষ পর্যন্ত আর থাকেনি। সিলেটের হয়ে ইসা, ভিক্টরি ও কিংসলে গোল করলেও সাদ্দাম মারেন পোস্টের বাইরে। সুনামগঞ্জের হয়ে বাংগুরা মিস করলেও ডুডু, মাকালাকি ও লাকি গোল করতে ব্যর্থ হননি। ম্যাচে ৩ (৪) - ৩ (৪) গোলে সমতা। এরপর শট মিস করে বসেন সিলেটের আব্বাস। গোল করলেই ফাইনাল, এমন সমীকরণের মুখে সুনামগঞ্জের বিদেশি ফরোয়ার্ড ম্যাজি শট নিলেন ঠাণ্ডা মাথায়। গোল! সিলেটকে হারিয়ে সুনামগঞ্জের ইতিহাস। সেমিফাইনাল থেকে সিলেটের বিদায়।

 

 

রাইজিংবিডি/সিলেট/২৭ আগস্ট ২০১৬/রফিকুল ইসলাম কামাল/সাইফ

রাইজিংবিডি.কম

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়