ঢাকা     বৃহস্পতিবার   ২৫ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ১২ ১৪৩১

সড়ক মৃত্যুপুরী : আইন প্রয়োগ জরুরি

সাইফ || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ০৮:৫৬, ১৮ সেপ্টেম্বর ২০১৬   আপডেট: ০৫:২২, ৩১ আগস্ট ২০২০
সড়ক মৃত্যুপুরী : আইন প্রয়োগ জরুরি

এত কান্না, এত স্বজনহারা, আর সহ্য করা যাচ্ছে না। শুধু ঈদুল আজহার আগে ও পরে (১১ দিনে) ঢাকা-টাঙ্গাইল মহাসড়কেই ঝরে গেছে ২৪টি প্রাণ। ৭ অক্টোবর থেকে ১৭ অক্টোবর পর্যন্ত এসব দুর্ঘটনা ঘটে। দুর্ঘটনাস্থল ঢাকা-টাঙ্গাইল-বঙ্গবন্ধু সেতু মহাসড়কের টাঙ্গাইল অংশের মির্জাপুর উপজেলার গোড়াই থেকে যমুনা সেতু পর্যন্ত ৬২ কিলোমিটার রাস্তা। এসকল দুর্ঘটনায় আহত হয়েছেন ৭০ জন।

 

রাইজিংবিডির ১৬ সেপ্টেম্বরের লিড নিউজ, ‘দুর্ঘটনায় ঝরল ১৮ প্রাণ’। রাইজিংবিডির ১৭ সেপ্টেম্বরের লিড নিউজ, ‘টাঙ্গাইলে পৃথক সড়ক দুর্ঘটনায় ১১ জনের মৃত্যু’। এদিন রাইজিংবিডি আরো একটি প্রতিবেদন প্রকাশ করে। শিরোনাম- ‘শোকে ভাসছে রুপশপুরবাসী’। ওই প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ‘শোকে ভাসছে রুপশপুরবাসী। নিহতদের স্বজনের কান্নায় আকাশ-বাতাস ভারী হয়ে উঠেছে। যারা সান্তনা দিতে আসছেন তারাও চোখের পানি ধরে রাখতে পারছেন না। রুপশপুরে বিয়েবাড়িতে যে আনন্দ উৎসবের জোয়ার বইছিল তা একটি সড়ক দুর্ঘটনায় নিমিষেই ম্লান করে দিল। একই পরিবারের ৮ জনের মৃত্যুতে সারা গ্রাম শোকে স্তব্ধ। বিয়ে বাড়িতে ছিল সাজ সাজ রব। বাড়ির ও গ্রামের মানুষ অপেক্ষায় ছিল নববধূকে বরণ করার জন্য। হঠাৎই একটি খবর সবকিছু তছনছ করে দিয়েছে। আনন্দমুখর বিয়েবাড়িতে নেমে আসে শোকের ছায়া।’

 

একের পর এক ঘটছে মর্মান্তিক দুর্ঘটনা। থামছেই না যেন। স্বজনহারা হচ্ছে অজস্র মানুষ, পঙ্গুত্বের অভিশাপ বরণ করছে কেউ কেউ। তবুও এসব নিয়ে কারো মাথা ব্যথা নেই।

 

গত কয়েকদিন পত্র-পত্রিকায় দেখা গেছে শুধু দুর্ঘটনার খবর। বাংলাদেশে গত বছর সড়ক দুর্ঘটনায় সাড়ে আট হাজার জন নিহত হন বলে যাত্রীকল্যাণ সমিতি নামে একটি সংগঠন পরিসংখ্যান প্রকাশ করে। নিরাপদ সড়ক চাই আন্দোলনের আরেকটি পরিসংখ্যানে বলা হয়, ২০১৫ সালে ঢাকা জেলায় সবচেয়ে বেশি মানুষ দুর্ঘটনায় নিহত হন। এই সংখ্যা ৩৫৯। এর মধ্যে রাজধানীতেই নিহত হন ২২৭ জন। একের পর এক সংঘটিত এসব দুর্ঘটনায় নিহত-আহত ছাড়াও দেশে এর সংখ্যা বাড়ছেই।

 

এই যে এত দুর্ঘটনা, তবু চালকদের দৃষ্টান্তমূলক কোনো শাস্তি হচ্ছে না। ফলে বন্ধ হচ্ছে না সড়কে মৃত্যুর মিছিল। মহাসড়কগুলো হয়েছে যেন মৃত্যুফাঁদ।

 

এসব দুর্ঘটনার প্রাথমিক কারণ হলো- ফুটপাত দখল, ওভারটেকিং, ওভারস্পিড ও ওভারলোড, হেলপার দিয়ে গাড়ি চালানো, রাস্তার নির্মাণ ত্রুটি, গাড়ির ত্রুটি, যাত্রীদের অসতর্কতা, ট্রাফিক আইন না মানা, গুরুত্বপূর্ণ সড়কে জেব্রাক্রসিং না থাকা ও না মানা, গাড়ি চালানো অবস্থায় চালকদের মোবাইল ফোন ব্যবহার, মহাসড়কে একইসঙ্গে ধীরগতির ও দ্রুতগতির যান চলাচল, মাদকদ্রব্য সেবন করে গাড়ি চালানো, ক্রসিংয়ে ফিডার রোডের যানবাহন প্রবেশ।

 

বিশেষজ্ঞরা বলছেন, ফুটপাত দখলমুক্ত করা, মহাসড়কগুলোর আশপাশ থেকে বাজার উচ্ছেদ, রোড সাইন স্থাপন ও জেব্রাক্রসিং অঙ্কন, গাড়ি চালকদের সঠিক প্রশিক্ষণ ও তাদের সাপ্তাহিক ছুটি-বিশ্রামের ব্যবস্থা করা, গাড়ির ফিটনেস প্রদান পদ্ধতি ডিজিটাল করা, স্বল্প ও দ্রুতগতির যানবাহনের জন্য মহাসড়কে আলাদা লেনের ব্যবস্থা করলে দুর্ঘটনা কমতে পারে। আমাদেরও তাই মতামত।

 

বলা যায়, দেশের যোগাযোগব্যবস্থার উন্নতি হয়েছে। বাড়ছে যানবাহনের সংখ্যা। দৃষ্টিনন্দন আধুনিক যানবাহন যেমন বিভিন্ন সড়কে চলাচল করছে, তেমনি ফিটনেসবিহীন যানবাহনও যে অবাধে সড়কজুড়ে চলাচল করছে, তা বলার অপেক্ষা রাখে না। তবে গাড়ির চালকদের যথাযথ প্রশিক্ষণ আছে, এ কথাও নিশ্চিত করে বলা যাবে না। একদিকে রাজনৈতিক বিবেচনা, অন্যদিকে লাইসেন্স প্রদানকারী প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে দুর্নীতির ব্যাপক অভিযোগ আছে। সামান্য কিছু টাকার বিনিময়ে প্রশিক্ষণহীন চালকদের হাতে ড্রাইভিং লাইসেন্স ধরিয়ে দেওয়া হয়। ভুয়া ড্রাইভিং লাইসেন্স তৈরির কারখানাও তো আছে দেশে।

 

একটি পরিসংখ্যান বলছে, দেশের ৬১ শতাংশ চালক পরীক্ষা না দিয়ে লাইসেন্স নিচ্ছেন, অন্যদিকে দেশের ১৬ লাখ চালক বৈধ লাইসেন্স ছাড়াই গাড়ি চালাচ্ছেন। এমন ঘটতে থাকলে সড়ক দুর্ঘটনা নৈমিত্তিক ব্যাপার হয়ে দাঁড়াবে—এটাই তো স্বাভাবিক। সড়ক দুর্ঘটনা রোধে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে কঠোর হতে হবে। কঠোর আইন প্রয়োগ এখন সময়ের দাবি। কারণ, আমরা আর দেখতে চাই না সড়ক দুর্ঘটনায় মৃত্যুর মিছিল।

 

 

রাইজিংবিডি/ঢাকা/১৮ সেপ্টেম্বর ২০১৬/সাইফ/শাহনেওয়াজ

রাইজিংবিডি.কম

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়