ঢাকা     মঙ্গলবার   ২৩ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ১০ ১৪৩১

স্বাধীনতার সুবর্ণ জয়ন্তীর আগেই বদলে যাবে ঢাকা

নৃপেন রায় || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ১২:০৩, ১৩ ডিসেম্বর ২০১৬   আপডেট: ০৫:২২, ৩১ আগস্ট ২০২০
স্বাধীনতার সুবর্ণ জয়ন্তীর আগেই বদলে যাবে ঢাকা

নৃপেন রায় : ২০২১ সালে বাংলাদেশের স্বাধীনতার সুবর্ণ জয়ন্তীর আগেই বদলে যাবে রাজধানী ঢাকা। সে লক্ষ্যে রাজধানীকে ঘিরে বিভিন্ন উন্নয়ন পরিকল্পনা বাস্তবায়ন করছে সরকার। ইতিমধ্যে বদলের ছোঁয়া লেগেছে। অদূর ভবিষ্যতে বিশ্বের বিভিন্ন উন্নত মেগাসিটির মতোই হবে ঢাকা শহর। পাওয়া যাবে সর্বোচ্চ নাগরিক সুবিধা।

 

আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য ও প্রাক্তন খাদ্যমন্ত্রী ড. আবদুর রাজ্জাক রাইজিংবিডিকে বলেন, ‘রাজধানী ঢাকাকে কেন্দ্র করে বাংলাদেশের সামগ্রিক কমকাণ্ড পরিচালিত হয়। দেশকে ব্র্যান্ডিং করতে রাজধানীর গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা থাকে। গোটা বিশ্বই এখন গ্লোবাল ভিলেজের অংশ। আমরা যেমন নিজেদের প্রয়োজনে বিশ্বের এক প্রান্ত থেকে অন্য প্রান্তে ছুটে যাই। তেমনি বিদেশিরাও আমাদের দেশে আসেন। এ কারণে বিশ্বের অন্যান্য মেগাসিটির মতো করে ঢাকাকে গড়তে সরকার এবং সেবা সংস্থাগুলো সমন্বিত উদ্যোগে উন্নয়ন পরিকল্পনাগুলো বাস্তবায়ন করে যাচ্ছে।

 

তিনি আরো বলেন, ইতিমধ্যে হাতিরঝিলের সৌন্দর্য রাজধানীর চেহারা পাল্টে দিয়েছে। আগামী দিনে বুড়িগঙ্গার নাব্যতা ফিরিয়ে এনে নদীর তীর ঘেঁষে নান্দনিক স্থাপনা নির্মাণ করা হবে। এগুলো হলে ঢাকা বিশ্বের যেকোনো মেগাসিটিকে হার মানাবে, এতে কোনো সন্দেহ নেই। বুড়িগঙ্গার রূপ-সৌন্দর্য ফিরিয়ে আনতে যে কাজ করবে তারই নাম দেশের উন্নয়ন ইতিহাসে লেখা থাকবে।

 

সরকার সংশ্লিষ্টরা বলছেন, বর্তমান সরকার সুদুরপ্রসারী পরিকল্পনা নিয়ে কাজ করছে। রাজধানী ঢাকায় যত মানুষ বাস করেন তা শ্রীলঙ্কার মতো একটি দেশের সমান। আবার রাজধানীর মতিঝিলে যত লোক জীবিকা অন্বেষণে প্রতিদিন ছোটাছুটি করেন তত লোক মালদ্বীপ এবং ভুটানে নেই। জন্যসংখ্যার এতো চাপ থাকার পরও সরকারের আন্তরিকতা এবং সেবা সংস্থারগুলোর সমন্বিত উদ্যোগে ২০২১ সালের আগেই বদলে যাবে ঢাকা। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ২০২১ সালে বাংলাদেশের সুবর্ণ জয়ন্তী পালনকে জাতির জন্য মাইলফলক বিবেচনা করছেন। তিনি রাজধানীকে অন্যতম মেগাসিটিতে পরিণত করতে ঢাকার যানজট নিরসনে সংশ্লিষ্টদের কাজ করার নির্দেশ দিয়েছেন। ঢাকার যানজট নিরসনে মেট্রোরেল প্রকল্প, ঢাকার পাশে উপশহর গড়ে তোলা, আইকন টাওয়ার, অসামাপ্ত ফ্লাইওভারগুলোর নির্মাণ সম্পন্ন করাসহ দুই সিটি করপোরেশনের বিভিন্ন প্রকল্প বাস্তবায়নকে প্রাধান্য দিয়েছেন।

 

আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক খালিদ মাহমুদ চৌধুরী বলেন, ‘বাংলাদেশের স্বাধীনতা এসেছে আওয়ামী লীগের হাত ধরে। স্বাধীনতা পরবর্তী দেশের উন্নয়নও হয়েছে আমাদের হাত ধরে। আওয়ামী লীগ সরকারই এটা পারে। আমাদের প্রাণপ্রিয় নেত্রী শেখ হাসিনা আবারও তা প্রমাণ করেছেন। ২০২১ সালে আমরা যখন স্বাধীনতার সুবর্ণ জয়ন্তী পালন করব, তখন রাজধানীর চিত্র আমূল বদলে যাবে।’

 

১৯৭৪ সালে ঢাকা শহরে মাত্র ১৭ লাখ মানুষ ছিল। বর্তমানে প্রায় দুই কোটি ছুঁই ছুঁই। জনসংখ্যার চাপ ক্রমাগত বাড়ছে।

 

রাজধানীকে বাসযোগ্য করতে ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরশন (ডিএসসিসি) বুড়িগঙ্গা নদীকে ঘিরে নানা উন্নয়ন পরিকল্পনা গ্রহণ করেছে। বুড়িগঙ্গাকে দূষণমুক্ত, নয়নাভিরাম ও দৃষ্টিনন্দন করে সাজাতে বিশ্বব্যাংক ও ডিএসসিসির যৌথ অর্থায়নে প্রায় ২ হাজার কোটি টাকার প্রকল্প হাতে নিয়েছে। বুড়িগঙ্গার ধারে বিলাসবহুল রিসোর্ট, হাঁটার রাস্তা, পার্ক, বসার স্থান, ঘাট এবং নদীতে পর্যটকদের জন্য প্রমোদতরী, ভাসমান বিনোদন কেন্দ্র ও রেস্তোরাঁ নির্মাণ করা হবে।

 

২০০৭ সালে ৩০২ একর জমির ওপর হাতিরঝিল প্রকল্পের কাজ শুরু হয়। ২০১৩ সালের ২ জানুয়ারি এটি উদ্বোধন করা হয়। এটি এখন ঢাকাবাসীর অন্যতম বিনোদন স্পট। এখানে গড়ে তোলা হচ্ছে দেশের প্রথম অপেরা হাউস। বিশ্বের বিভিন্ন দেশে এক বা একাধিক অপেরা হাউস থাকলেও বাংলাদেশে আগে এ ধরনের কোনো স্থাপনা তৈরি হয়নি। দর্শনার্থীদের সুবিধার জন্য শুধু হাতিরঝিল রুটে ছয়টি বাস চলাচল করছে। আগামী ১৬ ডিসেম্বর মহান বিজয় দিবস থেকে ছয়টি ওয়াটার ট্যাক্সি চলাচল করবে। ট্যাক্সিগুলো ইতিমধ্যে হাতিরঝিলে এসে পৌঁছেছে। শিশুদের বিনোদন সুবিধার কথা চিন্তা করে তৈরি করা হচ্ছে চিলড্রেন পার্ক।

 

মূলত রাজধানীবাসীকে বিনোদন দেওয়ার পাশাপাশি গুলশান-বাড্ডা এবং রামপুরা-মগবাজার এলাকার যানজট নিরসন এবং পানি নিষ্কাশনের কথা চিন্তা করেই হাতিরঝিল প্রকল্প। ধানমন্ডি লেকের উন্নয়নেও বিভিন্ন পরিকল্পনা গ্রহণ করা হয়েছে।

 

২০১৯ সাল নাগাদ মেট্রোরেল প্রকল্প বাস্তবায়ন হলে ঢাকাবাসীর যানজট ভোগান্তি কমে যাবে বলে আশা করছেন নগর পরিকল্পনাবিদরা। ইতিমধ্যে এ প্রকল্পের কাজ শুরু হয়েছে। উত্তরার দিয়াবাড়িতে মেট্রোরেলের ডিপো নির্মাণের কাজ এগিয়ে চলছে। সম্প্রতি সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের ডিপো পরিদর্শনে গিয়ে বলেছেন, ২০১৯ সালের মধ্যেই মেট্রোরেলের লাইন-৬ এর কাজ শেষ হবে। সে বছরই যাত্রী চলাচলের জন্য খুলে দেওয়া হবে মেট্রোরেল। মেট্রোরেল-৬ এর রুট হচ্ছে উত্তরা থেকে মতিঝিল। লাইন-৫ এর রুট হচ্ছে গাবতলী থেকে ভাটারা। আর লাইন-১ এর রুট হচ্ছে কমলাপুর থেকে বিমানবন্দর। বাকি তিনটি লাইনের রুট এখনো চূড়ান্ত হয়নি। পর্যায়ক্রমে এগুলোর কাজ করতে চায় সরকার।

 

ঢাকার পূর্বাচলে ১৪২ তলাবিশিষ্ট একটি আইকন টাওয়ার, একটি আন্তর্জাতিক কনভেনশন সেন্টার ও একটি স্পোর্টস কমপ্লেক্স গড়ে তোলার পরিকল্পনা করেছে সরকার। পূর্বাচল ও নিকটস্থ এলাকা নিয়ে একটি স্বতন্ত্র মহানগর গড়ে তালার উদ্যোগ হিসেবে এসব মেগা প্রকল্প বাস্তবায়ন করা হবে। জাতীয় সংসদে ২০১৬-২০১৭ অর্থবছরে বাজেট বক্তৃতায় এ পরিকল্পনার কথা জানিয়েছিলেন অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আব্দুল মুহিত। ২০১৮ সালে প্রকল্পটি শেষ হবে।

 

আওয়ামী লীগের বিজ্ঞান ও প্রযুক্তিবিষয়ক সম্পাদক এবং ইঞ্জিনিয়ার্স ইনস্টিটিউশন, বাংলাদেশের (আইইবি) সাধারণ সম্পাদক প্রকৌশলী মো. আব্দুস সবুর রাইজিংবিডিকে বলেন, আওয়ামী লীগে ভিশনারি নেত্রী আছেন। যিনি জাতিকে স্বপ্ন দেখান এবং স্বপ্ন বাস্তবায়ন করেন। তিনি থাকলে তো উন্নয়ন হবেই। এজন্য আগামী জাতীয় নির্বাচনে আওয়ামী লীগকে পুনরায় ক্ষমতায় আনতে হবে।

 

 

রাইজিংবিডি/ঢাকা/১৩ ডিসেম্বর ২০১৬/এনআর/রফিক

রাইজিংবিডি.কম

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়