ঢাকা     শুক্রবার   ১৯ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ৬ ১৪৩১

ইস্টার্ন রিফাইনারির দ্বিতীয় ইউনিট স্থাপনের সিদ্ধান্ত

হাসনাত || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ১৫:০৫, ১৮ ডিসেম্বর ২০১৬   আপডেট: ০৫:২২, ৩১ আগস্ট ২০২০
ইস্টার্ন রিফাইনারির দ্বিতীয় ইউনিট স্থাপনের সিদ্ধান্ত

কেএমএ হাসনাত : দেশের জ্বালানি দ্রুত সরবরাহ নিশ্চিত এবং মূল্যবান বৈদেশিক মুদ্রা সাশ্রয়ের জন্য দেশের একমাত্র তেল পরিশোধনাগার ইস্টার্ন রিফাইনারির দ্বিতীয় ইউনিট স্থাপনের সিদ্ধান্ত নিয়েছে সরকার।

 

প্রকল্পের  জন্য ‘ফ্রন্ট অ্যান্ড ইঞ্জিনিয়ারিং ডিজাইন (ফিড)’ ডকুমেন্ট তৈরি করবে প্যারিসভিত্তিক প্রতিষ্ঠান টেকনিপ। এ জন্য মোট ব্যয় হবে ২৬৯ কোটি টাকা।

 

সূত্র জানায়, এর আগে প্রকল্পের ব্যবস্থাপনা পরামর্শক হিসেবে ভারতের পরামর্শক কোম্পানি ইঞ্জিনিয়ার্স ইন্ডিয়া লিমিটেডকে (ইআইএল) নিয়োগ  এবং  ‘ফ্রন্ট অ্যান্ড ইঞ্জিনিয়ারিং ডিজাইন (ফিড)’ ডকুমেন্ট তৈরির জন্য সমঝোতা স্মারক চুক্তিতে প্রধানমন্ত্রীর অনুমোদন নেওয়া হয় বলে জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ বিভাগ সূত্রে জানা গেছে।

 

সূত্র জানায়, দেশে  পরিশোধিত/অপরিশোধিত জ্বালানি তেলের বর্তমান চাহিদা সাড়ে পাঁচ মিলিয়ন টন। বিদেশ থেকে আশদানি করা অপরিশোধিত তেল ইস্টার্ন রিফাইনারিতে পরিশোধিত করা হয়। ইস্টার্ন রিফাইনারি লিমিটেড (ইআরএল) বর্তমান উৎপাদন ক্ষমতা বার্ষিক প্রায় ১ দশমিক ৫ মিলিয়ন টন। চাহিদামত তেল পরিশোধিত আকারে বিদেশ থেকে আমদানি করা হয়। দেশের আমদানি করা অপরিশোধিত তেলের পরিশোধন ক্ষমতা বাড়িয়ে দেশের জ্বালানি তেলের দাম তুলনামূলক কমানো এবং জ্বালানি নিরাপত্তা নিশ্চিত করার জন্য ‘ইস্টার্ন রিফাইনারির দ্বিতীয় ইউনিট স্থাপন’ প্রকল্পটি গ্রহণ করা হয়েছে। বিদ্যুৎ ও জ্বালানির দ্রুত সরবরাহ বৃদ্ধি (বিশেষ বিধান) আইন, ২০১০-এর আওতায় প্রকল্পটি প্রক্রিয়াকরণের জন্য প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার অনুমোদন নেওয়া হয় এবং এ বিষয়ে প্রস্তাবগুলো প্রক্রিয়াকরণের জন্য একটি প্রস্তাব প্রক্রিয়াকরণ কমিটি গঠন করা হয়।

 

সূত্র জানায়, প্রকল্পের নির্মাণ কার্যক্রম দ্রুত শুরু করতে দরপত্র ছাড়াই বিদ্যুৎ জ্বালানি সরবরাহ বিশেষ আইনে প্রকল্পটি নির্মাণের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। স্বাধীনতার আগে ১৯৬৮ সালে এই কোম্পানিটি ইআরএলএর তেল পরিশোধনাগার নির্মাণ করে দেয়। নির্মাণের ৪৮ বছর পর দেশে জ্বালানি তেলের চাহিদা বাড়লেও দেশের একমাত্র সরকারি তেল পরিশোধনাগার ইআরএলের ক্ষমতা বাড়ানো হয়নি। তবে তেল শোধনাগারটি এখনো ৯৫ শতাংশ দক্ষতায় পরিশোধন কার্যক্রম পরিচালিত হচ্ছে।

 

জ্বালানি বিভাগ সূত্র জানায়, প্রায় দেড় বিলিয়ন ডলারের এই প্রকল্পে টেকনিপ ৬০০ মিলিয়ন ডলার ঋণ দেবে বাকিটা বাংলাদেশকে সংস্থান করতে হবে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এ সংক্রান্ত একটি সার সংক্ষেপ অনুমোদন দিয়েছেন।

 

সূত্র জানায়, জ্বালানি তেলের পরিশোধন ক্ষমতা বাড়ানো হলে প্রতি লিটার জ্বালানি তেল আমদানিতে অন্তত ৬ টাকা সাশ্রয় হবে। বর্তমানে বিশ্ব বাজারে অপরিশোধিত জ্বালানি তেলের দাম গত কয়েক বছরের তুলনায় সর্বনিম্ন পর্যায়ে রয়েছে। এখন বিপিসি তেল বিক্রি করে মুনাফা অর্জন করলেও নিজস্ব পরিশোধন ব্যবস্থার সীমাবদ্ধতায় জ্বালানি তেলের দাম কমার পুরো সুফল ঘরে তুলতে পারছে না। কারণ পরিশোধিত জ্বালানি তেল ক্রয় করতে বেশি অর্থের প্রয়োজন হয়।

 

সূত্র জানায়, ইআরএলের বর্তমান পরিশোধন ক্ষমতা ১৫ লাখ টন। কিন্তু দেশে জ্বালানি তেলের চাহিদা সাড়ে পাঁচ মিলিয়ন টনের ওপরে। চাহিদার অধিকাংশই পরিশোধিত জ্বালানি তেল আমদানি করতে হয়। এতে করে আমদানি ব্যয় বেড়ে যায়। বাংলাদেশ পেট্রোলিয়াম করপোরেশনের (বিপিসি) কর্মকর্তারা জানান, প্রকল্পটি বাস্তবায়ন হলে ইআরএল পরিশোধন ক্ষমতা ১৫ লাখ টন থেকে বেড়ে ৪৫ লাখ টনে উন্নীত হবে। এতে করে একবারে পরিশোধন ক্ষমতা ৩০ লাখ টন বৃদ্ধি পাবে। যাতে প্রতি বছর বিপুল পরিমাণ বৈদেশিক মুদ্রা সাশ্রয় হওয়ার কথা। একইসঙ্গে দেশে জ্বালানি তেলের লাভও অনেকাংশে বেড়ে যাবে। তরল জ্বালানির উপজাত হিসেবে এলপিজিসহ অন্যান্য পেট্রোলিয়াম পণ্যের চাহিদা মেটানোও সম্ভব।

 

বিগত সরকারের সময় ২০১০ সালে দেশের একমাত্র সরকারি তেল পরিশোধনাগারের ক্ষমতা বৃদ্ধির উদ্যোগ নেওয়া হয়। চার বছর অতিবাহিত হলেও বিনিয়োগ, নির্মাতা প্রতিষ্ঠান নিয়োগ দিতে না পারায় প্রকল্পটি ঝুলে থাকে। দরপত্রের মাধ্যমে উপযুক্ত প্রতিষ্ঠান নির্বাচন করতে না পারায় দরপত্র ছাড়াই প্রকল্পটি বাস্তবায়নের সিদ্ধান্ত নেয় সরকার। এ জন্য দেশি-বিদেশি বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের কাছে আগ্রহ পত্র চায় ইআরএল।

 

জ্বালানি বিভাগ সূত্র জানায়, পরিশোধন ক্ষমতা বাড়াতে সরকারি-বেসরকারি অংশীদারিত্বের (পিপিপি) ভিত্তিতে ২০১০ সালে প্রকল্পটি বাস্তবায়নে উদ্যোগ নেয় সরকার। ওই সময়ে আগ্রহপত্র চাওয়া হয়। এতে ৩৫টি কোম্পানি অংশ নিলেও শেষ পর্যন্ত নির্বাচিত হয় দেশীয় একটি ব্যবসায়িক গ্রুপ। অর্থায়ন নিয়ে সৃষ্ট জটিলতায় পরে ওই দর প্রস্তাব বাতিল করা হয়।

 

এখন সরকারি-বেসরকারি অংশীদারিত্বের ভিত্তিতেই প্রকল্পটি বাস্তবায়নের চেষ্টা করা হচ্ছে। এতে করে সরকার প্রকল্পটি বাস্তবায়নে জমি দেবে। আর বেসরকারি কোনো কোম্পানি বিনিয়োগ করবে, যাতে লভ্যাংশে সরকারের একটি অংশ থাকবে। বেসরকারি কোম্পানিটি একটি নির্দিষ্ট সময় পর ইউনিটটি পরিচালনার জন্য ইআরএলএর কাছে হস্তান্তর করবে।

 

সূত্র জানায়, প্রকল্পটি বাস্তবায়নের জন্য ‘ইন্সটলেশন অব ইস্টার্ন   রিফাইনারি ইউনিট-২’ এর ‘ফ্রন্ট অ্যান্ড ইঞ্জিনিয়ারিং ডিজাইন (ফিড)’ ডকুমেন্ট তৈরির জন্য ফ্রান্সের টেকনিপের একটি প্রস্তাব অনুমোদনের জন্য সরকারি ক্রয় সংক্রান্ত মন্ত্রিসভা কমিটির বৈঠকে উপস্থাপনের জন্য পাঠানো হয়েছে। অনুমোদন পাওয়া গেলে পরবর্তী পদক্ষেপ নেওয়া হবে।

 

 

রাইজিংবিডি/ঢাকা/১৮ ডিসেম্বর ২০১৬/হাসনাত/সাইফ

রাইজিংবিডি.কম

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়