ঢাকা     বৃহস্পতিবার   ২৫ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ১২ ১৪৩১

শোকে ভাসছে রুপশপুরবাসী

হোসাইন আহমদ || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ১২:৪৫, ১৭ সেপ্টেম্বর ২০১৬   আপডেট: ০৫:২২, ৩১ আগস্ট ২০২০
শোকে ভাসছে রুপশপুরবাসী

হোসাইন আহমদ, মৌলভীবাজার : শোকে মুহ্যমান কমলগঞ্জের রুপশপুর গ্রাম। শোকে ভাসছে রুপশপুরবাসী। নিহতদের স্বজনের কান্নায় আকাশ-বাতাস ভারী হয়ে উঠেছে। যারা সান্ত¦না দিতে আসছেন তারাও চোখের পানি ধরে রাখতে পারছেন না।

 

রুপশপুরে বিয়েবাড়িতে যে আনন্দ উৎসবের জোয়ার বইছিল তা একটি সড়ক দুর্ঘটনায় নিমিষেই ¤œান করে দিল। একই পরিবারের  ৮ জনের মৃত্যুতে সারা গ্রাম এখন শোকে নিস্তব্ধ। বিয়েবাড়িতে ছিল সাজ সাজ রব। বাড়ির ও গ্রামের মানুষ অপেক্ষায় ছিল নববধূকে বরণ করার জন্য। হঠাৎই একটি খবর সবকিছু তছনছ করে দিয়েছে। আনন্দমুখর বিয়েবাড়িতে নেমে আসে শোকের ছায়া।

 

ব্রাহ্মণবাড়িয়ার বিজয়নগর উপজেলার শশই নামক এলাকায় গাড়িটি পৌঁছামাত্রই বিপরীত দিক থেকে আসা এনা পরিবহন মাইক্রোবাসকে ধাক্কা দিলে ঘটনাস্থলে বর আবু সুফিয়ান (২৫), বরের বাবা আদিউর রহমান (৬০), আপন চাচা মতিউর রহমান (৪২), চাচাতো ভাই আলী হোসেনসহ (১২) তাদের নিকটাতœীয় ৪ জন মাওলানা সাইদুর রহমান (৫০), হাজি আব্দুল হান্নান (৫৮), মুক্তার চৌধুরী (৫৬) ও দুরুদ মিয়া (৫৫) মারা যান। আহত হন বরের ছোটভাই কামরান আহমদ (২০), জাকির হোসেন (১৮) ও সোহান মিয়া (২৬)।

 

বাবা, ভাই ও স্বজনদের নিয়ে পছন্দের মেয়েকে বিয়ে করতে সড়কপথে দুটি মাইক্রোবাসে ঢাকার নাখালপাড়ায় যাচ্ছিলেন কমলগঞ্জ উপজেলার মুন্সীবাজার ইউনিয়নের রুপশপুর গ্রামের মাওলানা আবু সুফিয়ান (২৬)।

 

রুপশপুর গ্রাম এখন শুধুই নিস্তব্ধ একটি গ্রাম। বরের পরিবারভুক্ত ৪ জনসহ একই গ্রামের ৮ জনের আকস্মিক মৃত্যুতে পুরো গ্রামটি নিস্তব্ধ হয়ে যায়। খবর শোনার পর রুপশপুর গ্রামে শুরু হয় মাতম। শুক্রবার বিকেলেই রুপশপুর বন্দের বাজার সংলগ্ন দিঘীরপার কবরস্থানে গ্রামবাসী ৮টি কবর খুঁড়ে রাখেন। রাত সাড়ে ৮টায় একযোগে ৮টি মরদেহ আসার পর রুপশপুর গ্রামজুড়ে কান্নায় আকাশ বাতাস ভারী হয়ে ওঠে।

 

আজ শনিবার  দুপুর ১টায় রুপশপুর গ্রামে নিহতদের বাড়িতে গিয়ে জানা যায়, সড়ক দুর্ঘটনায় বর মাওলানা আবু সুফিয়ানের পরিবার, তার চাচা মতিউর রহমানের পরিবার, দুরুদ মিয়ার পরিবার ও মাওলানা সাইদুর রহমানের পরিবার একেবারে নিঃস্ব হয়ে গেছে।

 

আবু সুফিয়ানের মা সুনারা বিবি জানান, দুর্ঘটনায় বড় ছেলে আবু সুফিয়ান, স্বামী হাদিউর রহমান সরফর, দেবর মতিউর রহমান মুর্শেদ, মুর্শেদের ছেলে আলী হোসেন (১২) ও মুর্শেদের মামা হাজি আব্দুল হান্নান মারা গেছেন। এক ছেলে তারিকুল ইসলাম কামরানের অবস্থা আশঙ্কাজনক। ঢাকার পঙ্গু হাসপাতালে চিকিৎসাধীন আছে।

 

বাড়িতে ৯ম শ্রেণিতে পড়ুয়া ছোট ছেলে শাহনুর আহমদ আছে। স্বামী হাদিউর রহমান ছোট ১টি চা দোকান থেকে আয় করে সংসার চালাতেন। এখন উপার্জনের আর কেউ রইল না।

 

মতিউর রহমান মুর্শেদের স্ত্রী অজুফা বেগম জানান, ১ ছেলে ও ১ মেয়েকে নিয়ে ছোট সংসার ছিল। স্বামী মুর্শেদ রাজমিস্ত্রির কাজ করতেন। দুর্ঘটনায় একমাত্র ছোট ছেলে আলী হোসেনসহ স্বামী মারা গেছেন। বাড়িতে  নবম শ্রেণি পড়ুয়া একমাত্র মেয়ে রুবিনাকে নিয়ে তিনি এখন অসহায়। সংসার চালানোর আর কেউ নেই পরিবারে।

 

নিহত দুরুদ মিয়া পেশায় রাজমিস্ত্রি ছিলেন। ১ ছেলে ও ৫ মেয়ের মাধ্যে বসত ভিটের এক অংশ বিক্রি করে বড় মেয়েকে বিয়ে দিয়েছেন। ২ মেয়ে কলেজে পড়ে। দুর্ঘটনায় দুরুদ মিয়া মারা যাওয়ায় এ পরিবার অন্ধকারে নিমজ্জিত।

 

দুর্ঘটনায় নিহত মাওলানা সাইদুর রহমানের ১ ছেলে ও ১ মেয়ের ছোট পরিবার ছিল। বয়সে ছেলে মেয়েরা খুবই ছোট। দুর্ঘটনায় মাওলানা সাইদুর মারা যাওয়ায় সংসারটি নিঃস্ব হয়ে গেছে।

 

নিহত হাজি আব্দুল হান্নান ও আব্দুল মুকিত চৌধুরী ওরফে মোক্তাদিরের পরিবারের সদস্যরা প্রবাসে আছেন বলে পরিবারটি অনেকটা স্বচ্ছল।

 

নিহত বর আবু সুফিয়ানের মা জরিনা বেগম কাঁদতে কাঁদতে বলেন, ‘৩ ছেলের মধ্যে সে বড় ছেলে ছিল। বিয়ে করে ঘরে ফিরে আনন্দ করার কথা ছিল। এ আমার কি হইল রে। আমার ছেলে বিয়ে করে বউ নিয়ে বাড়ি ফিরে আনন্দ করা কথা। তা না হয়ে সড়ক দুর্ঘটনায় আমার পরিবারকে তছনছ করে দিয়েছে। আমি এখন কারে নিয়ে বাঁচমো হে?’

 

স্থানীয় ইউপি সদস্য আবুল মিয়া জানান, হাসিখুশিতে ভরপুর রুপশপুর গ্রামটি এখন পরিণত হয়েছে কান্নার গ্রামে।
 

রাইজিংবিডি/মৌলভীবাজার/১৭ সেপ্টেম্বর ২০১৬/হোসাইন আহমদ/রিশিত

রাইজিংবিডি.কম

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়