ঢাকা     শনিবার   ২০ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ৭ ১৪৩১

উদ্যোগ ও উৎসবে রাজস্বময় ২০১৬

এম এ রহমান || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ১০:১৯, ২৮ ডিসেম্বর ২০১৬   আপডেট: ০৫:২২, ৩১ আগস্ট ২০২০
উদ্যোগ ও উৎসবে রাজস্বময় ২০১৬

এম এ রহমান : রাজস্ব লক্ষ্যমাত্রা পূরণের শঙ্কা নিয়ে বছর শুরু হলেও ২০১৫-২০১৬ অর্থবছর শেষে নয়া রেকর্ড এবং বছরজুড়ে এনবিআরের কর বান্ধব নানা উদ্যোগে অনেকটা উৎসবমুখর ছিল ২০১৬।

 

তবে বছরের মাঝামাঝি সময়ে নতুন মূল্য সংযোজন কর (মূসক/ভ্যাট) আইন বাস্তবায়ন নিয়ে ব্যবসায়ী ও জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) মধ্যে এক ধরণের জটিলতা তৈরি হয়।

 

যদিও বিভিন্ন উদ্যোগে দূরত্ব অনেকটা কমেছে এমন দাবি করে প্রতিষ্ঠানটির চেয়ারম্যান মো. নজিবুর রহমান নতুন উদ্দীপনায় আগামি বছর রাষ্ট্রকে কাক্ষিত রাজস্ব উপহার দেওয়ার অঙ্গীকার ব্যক্ত করেন।

 

বছরজুড়ে রাজস্ব আদায়ে এনবিআরের নতুন রেকর্ড, উচ্চাভিলাসী বাজটে রাজস্ব লক্ষ্যমাত্রার নতুন চ্যালেঞ্জ, কর সেবায় এনবিআরের উদ্ভাবনী উদ্যোগ, শুল্ক, মূসক গোয়েন্দা ও সিআইসি সেল শক্তিশালী ও নতুন ভ্যাট বাস্তবায়নে জটিলতা ইত্যাদি বিষয় বেশ আলোচিত ছিল।

 

রাজস্ব আদায়ে এনবিআরের নতুন রেকর্ড : বিদায়ী বছরের পুরো সময়জুড়ে আলোচনায় ছিল রাজস্ব লক্ষ্যমাত্রা ও রাজস্ব আদায়ে বিষয়টি। গত জুন মাস পর্যন্ত কিংবা ২০১৫-১৬ অর্থবছরে রাজস্ব আদায়ে লক্ষ্যমাত্রা ছাড়িয়ে নতুন রেকর্ড গড়ে জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর)। যা বছরের মাঝামাঝি সময়ে বেশ আলোচিত ছিল। যেখানে ২০১৫-১৬ অর্থবছরের প্রথম নয় মাসে রাজস্ব আদায়ে ঘাটতি ছিল ১৪ হাজার ৪৬ কোটি ৬০ লাখ টাকা। সেখান থেকে অর্থবছর শেষে লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে ৪ হাজার ৭৮৩ কোটি ৯৩ লাখ টাকা বেশি রাজস্ব আদায় করে বেশ চমক সৃষ্টি করেছিল প্রতিষ্ঠানটি। যদিও এর আগের ২০১৪-১৫ অর্থবছরেও প্রায় ২ হাজার কোটি টাকা বেশি রাজস্ব আদায় হয়েছিল।

 

২৫ লাখ করদাতার মাইলফলক : রাজস্ব বোর্ডের বিভিন্ন উদ্যোগে করদাতা সংগ্রহে বড় ধরণের সাফল্য এসেছে। ইতিমধ্যে অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিতের প্রত্যাশিত ২৫ করদাতা সংগ্রহের লক্ষ্যমাত্রা পূরণ করেছে। সর্বশেষ তথ্যানুসারে ইলেকট্রনিক কর সনাক্তকরণ নম্বর (ইটিআইএন) নেওয়া করদাতার সংখ্যা ২৫ লাখ ৭৫ হাজার। এনবিআর আশা করছে বছর শেষে নিবন্ধিত করদাতার সংখ্যা ৩০ লাখ অতিক্রম করবে।

 

নতুন চ্যালেঞ্জে রাজস্ব লক্ষ্যমাত্রা : পুরাতন বছরে সাফল্যের ধারাবাহিকতায় ঘোষিত চলতি ২০১৬-১৭ অর্থবছরে এনবিআরের ২ লাখ ৩ হাজার ১৫২ কোটি টাকা লক্ষ্যমাত্রাও বেশ আলোচনায় রয়েছে। এর মধ্যে আয়কর খাতে ৭১ হাজার ৯৪০ কোটি টাকা, মূল্য সংযোজন করে (মূসক/ভ্যাট) ৭২ হাজার ৭৬৪ কোটি টাকা এবং আমদানি-রপ্তানি শুল্কে ৫৮ হাজার ৪৪৭ কোটি টাকার লক্ষ্যমাত্রা দেওয়া হয়েছে। বিশেষজ্ঞদের মতে এনবিআরের বর্তমান কাঠামোতে এই লক্ষ্যমাত্রা পূরণ অসম্ভব। কিন্তু বর্তমান এনবিআর চেয়ারম্যান মো. নজিবুর রহমানের দুষ্টের দমন ও শিষ্টের পালন- এমন নীতিতে প্রতিষ্ঠানটির তিনটি বিভাগে অংশীজনের সেবায় দৃষ্টান্ত স্থাপন করছে। সর্বশেষ তথ্যানুসারে চলতি অর্থবছরের প্রথম পাঁচ মাসে (জুলাই-নভেম্বর) রেকর্ড ১৬.৩২ শতাংশ প্রবৃদ্ধিতে এর মধ্যে ৬৩ হাজার ৮১৯ কোটি টাকা রাজস্ব আদায় করতে সক্ষম হয়েছে।

 

কর সেবায় এনবিআরের বছরব্যাপী উদ্যোগ : দেশের উন্নয়নে অধিক সংখ্যক করদাতাকে সম্পৃক্ত ও কর প্রদাণে ভীতি হ্রাস করতে ২০১৬ সালে এনবিআর কর বান্ধব নানা উদ্যোগ গ্রহণ করে। কর হয়রানি বন্ধে করদাতা ও কর সংগ্রহকারীদের (কর কর্মকর্তা) এফবিসিসিআইসহ বিভিন্ন ব্যবসায়ী সংগঠনের মধ্যে রাজস্ব সংলাপ, আন্তর্জাতিক কাস্টমস দিবস, আয়কর দিবস, ভ্যাট দিবস, অনলাইনে আয়কর রিটার্ন দাখিল সুবিধার পাশাপাশি প্রথমবারের মতো এনবিআরের নিজস্ব ভবনে আয়কর মেলা ও কর অঞ্চলগুলোতে আয়কর সপ্তাহ উদযাপন করে করদাতাদের কাছ থেকে বেশ সাড়া পায় প্রতিষ্ঠানটি। এছাড়া প্রথম বারের মতো ভ্যাট মেলা ও বছরের শেষ দিকে এসে ‘মেলার পর ঠেলা’ হিসেবে ২১ ডিসেম্বর থেকে ২১ জানুয়ারি পর্যন্ত কর ফাঁকিবাজদের বিরুদ্ধে অভিযান ইত্যাদিকে ঘিরে এনবিআর ছিল বেশ সক্রিয়।

 

রাজস্ব মামলা ও এডিআর সচল : উচ্চ আদালতে কাস্টমস, আয়কর ও ভ্যাটের প্রায় ২৪ হাজার রিট মামলায় ৩০ হাজার কোটি টাকার বকেয়া রাজস্ব আটকে আছে। ওই মামলাগুলো দ্রুত নিষ্পত্তিতে বিকল্প বিরোধ নিষ্পত্তি ব্যবস্থাকে (এডিআর) অধিকতর কার্যকর করার উদ্যোগ ছিল বছর জুড়েই। এ কারণে অ্যাটর্নি জেনারেল ও উচ্চ আদালতের বিচারপতিদের সহায়তার জন্য বেশ কয়েকটি সেমিনার ও বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়।

 

শক্তিশালী শুল্ক, মূসক গোয়েন্দা ও সিআইসি সেল : রাজস্ব ফাঁকি ঠেকাতে শুল্ক, মূসক গোয়েন্দা ও সিআইসি সেলকে শক্তিশালী করেছে এনবিআর। ইতোমধ্যেই মানি লন্ডারিং আইনের ক্ষমতা পাওয়ায় প্রতিষ্ঠানটি এ বছর অর্থ পাচারের অভিযোগে কয়েকটি প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে মামলা করেছে। শুল্ক গোয়েন্দা ও তদন্ত অধিদফতর বিমানবন্দরসহ বিভিন্ন জায়গায় সোনা এবং মিথ্যা ঘোষণায় শত শত কোটি টাকার পণ্য জব্দ ও মামলা করে। এছাড়া বছরজুড়ে ভ্যাট ফাঁকির বিরুদ্ধে অভিযানও বেশ আলোচিত ছিল।

 

নতুন ভ্যাট আইনে এনবিআর-ব্যবসায়ী মুখোমুখি : নতুন মূল্য সংযোজন কর (মূসক) বা ভ্যাট আইন-২০১২ প্যাকেজ ভ্যাট পুনর্বহালসহ সাতদফা দাবিতে বছরের শুরু থেকেই এনবিআরকে বেশ বেগ পেতে হয়েছে। এমনকি ২০১৬ সালের জুলাইতে নতুন ভ্যাট আইন বাস্তবায়ন করার কথা থাকলেও ব্যবসায়ীদের অনুরোধসহ নানা জটিলতায় শেষ পর্যন্ত অর্থমন্ত্রী বাজেট ঘোষণায় ২০১৭ সালের ১ জুলাই থেকে তা বাস্তবায়নের তারিখ ঘোষণা করেন। এরপর ক্ষুদ্র ও মাঝারী ব্যবসায়ীদের সংগঠন ব্যবসায়ী ঐক্য ফোরাম পূর্বের মতো প্যাকেজ পুনর্বহালের দাবিতে বছরের বিভন্ন সময়ে বিক্ষোভ, স্মারকলিপি পেশ ও দোকানপাট বন্ধসহ বেশ কিছু কর্মসূচি পালন করে। শেষ পর্যন্ত এনবিআর প্যাকেজ ভ্যাট আগের চেয়ে একটু বেশি স্লাব রেখে নতুন ভ্যাট আইন বাস্তবায়নের সিদ্ধান্ত নিলে সমস্যার সমাধান হয়। তবে ব্যবসায়ীরা এখনো নতুন আইনের বিরোধীতা করে যাচ্ছেন।

 

বছরের সাফলতা প্রসঙ্গে এনবিআর চেয়ারম্যান মো. নজিবুর রহমান রাইজিংবিডিকে বলেন, ‘এ বছরটা ছিল আমাদের জন্য অত্যন্ত সফলতার বছর। বছরের শুরুতে প্রধানমন্ত্রী চট্টগ্রামের ওয়ার্ল্ড ট্রেড সেন্টার উদ্বোধনকালে ঘোষণা দিয়েছিলেন আমরা স্বাবলম্বী হবো, সবাই কর দিবো। এটাতে দেশের মানুষ সাড়া দিয়েছেন। সারা বছরই আমরা করদাতাদের কাছ থেকে সহযোগিতা পেয়েছি।’

 

তিনি বলেন, ‘বছরের শেষে এসে আয়কর সপ্তাহ ও আয়কর মেলায় উৎসবমুখর পরিবেশে করদাতারা রাজস্ব দিয়েছেন। ভ্যাট ও কাস্টমসেও করদাতাদের কাছ থেকে সহযোগিতা পাচ্ছি। আমরা সফলতা পাচ্ছি। এ বছরে যে যাত্রা শুরু হয়েছে আগামী বছর তার ফলাফল বিকশিত হবে বলে আমি মনে করি। আমরা অনলাইনের যে সেবা দিতে শুরু করেছি আগামী বছরে তার পূর্ণতা দিতে হবে। যাতে আমরা ভ্যাট আইন ২০১২ আগামি জুলাই থেকে বাস্তবায়ন করতে পারি।’

 

নতুন ভ্যাট আইন নিয়ে এনবিআর ও ব্যবসায়ীদের সম্পর্কের বিষয়ে এনবিআর চেয়ারম্যান বলেন, ‘এ মুহূর্তে আমরা হৃদ্যতাপূর্ণ পরিবেশে কাজ করছি। আমি নিজেও বেশকিছু দোকান পরিদর্শণ করেছি। আমরা এফবিসিসিআইসহ ব্যবসায়ী সংগঠনের সঙ্গে ট্রেনিং প্রোগ্রাম করেছি। এতে দূরত্ব কমেছে। শিগগিরই আমরা নতুন বছরে নতুন উদ্দীপনা নিয়ে কাজ করবো। সব মিলিয়ে আগামিতে রাষ্ট্রকে কাক্ষিত রাজস্ব উপহার দেবো।’

 

 

রাইজিংবিডি/ঢাকা/ডিসেম্বর ২০১৬/এম এ রহমান/শাহনেওয়াজ

রাইজিংবিডি.কম

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়