ঢাকা     শুক্রবার   ২৬ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ১৩ ১৪৩১

উল্কির সাতকাহন

ইবনুল কাইয়ুম || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ১০:০৯, ২৮ মে ২০১৫   আপডেট: ০৫:২২, ৩১ আগস্ট ২০২০
উল্কির সাতকাহন

শরীরে উল্কি আঁকা বিদেশি নারী

ইবনুল কাইয়ুম : উল্কি হলো অমোচনীয় কালি দিয়ে মানব শরীরে বিচিত্র বর্ণের অলঙ্করণ। মানুষের সংস্কৃতির ইতিহাসে এই পদ্ধতি বহু পুরনো। প্রত্যেক জাতিই কমবেশি উল্কির ব্যবহার করে থাকে। তবে ইসলাম ধর্মের অনুসারীদের মধ্যে শরীরে উল্কি আঁকা নিষিদ্ধ।

উল্কির ইংরেজি Tattoo শব্দটি এসেছে পলিনেশিয় (প্রশান্ত মহাসাগরীয় দ্বীপপুঞ্জ) শব্দ tatau থেকে। কোথাও কোথাও এটি নিষিদ্ধ হলেও সেই প্রাচীণ কাল থেকেই এর জনপ্রিয়তা ঊর্ধ্বমুখিই বলা যায়।

প্রাগৈতিহাসিককাল থেকে মানুষের মধ্যে গায়ে রং মাখার ঝোঁক ছিল। গোত্রের সদস্য বা প্রধানকে আলাদা করা, ধর্মীয় সংস্কার, অন্ধবিশ্বাস, সৌন্দর্যচর্চা ও অলঙ্করণের খাতিরে তারা বেছে নিয়েছিল চামড়ার রং বদলের এই উপায়। ১৯৯১ সালে অস্ট্রিয়া ও ইতালির সীমান্তে খোঁড়াখুঁড়ি চালাতে গিয়ে একটি মানবদেহের ফসিল আবিষ্কৃত হয়। প্রায় ৩৩০০ খ্রিস্টপূর্বাব্দ সময়কার ওই ফসিলের গায়ে গুনে গুনে ৫৭টি উল্কি আবিষ্কার করেন গবেষক দল। তবে এগুলো দেহের যেসব স্থানে ছিল- সেসব স্থানেই হয় আকুপাংচার। তাই ধারণা করা হয়, প্রাচীনকালে চিকিৎসার উদ্দেশ্যে গায়ে উল্কি আঁকা হতো।

উল্কি আঁকার পেছনে কতগুলি কারণ বিবেচনা করা যায়। এর  আধ্যাত্মিক উদ্দেশ্যও রয়েছে। এবং এটিই মনে হয় অন্যতম একটি কারণ। কেননা, সব উল্কিই যে দেখতে সুন্দর তা নয়। শরীরে তাবিজ-কবজ বেঁধে মানুষ স্বস্তি পায়। অস্বীকার করার উপায় নেই যে, পৃথিবীর অধিকাংশ মানুষ এই একুশ শতকেও ‘ইভিল স্পিরিট’-এ বিশ্বাস করে! কাজেই শরীরে তাবিজের নকশা অনুযায়ী উল্কি এঁকে নিলে অশুভ শক্তির হাত থেকে রক্ষা পাওয়া গেল, আবার সৌন্দর্যের চর্চাও হলো- একের মধ্যে দুই প্যাকেজ আরকি!

একসময় কয়েদি ও ক্রীতদাসদের শরীরে এঁকে দেওয়া হতো বিচিত্র চিহ্ন। সহজে আড়াল করা যেত না সেই দাগ। শত চেষ্টাতেও সম্ভব হতো না মুছে ফেলা। এভাবে সারা জীবন চিহ্নিত হয়ে দুর্বিষহ জীবন কাটাতে হতো অপরাধীকে। ‘দাগি আসামি’ কথাটি এসেছে সেখান থেকেই। আর তাই ভদ্রসমাজ আজও ভালো চোখে দেখে না উল্কি আঁকা।

একটা সময় প্রাচীন উল্কির নিদর্শন হিসেবে আজ থেকে প্রায় ৪ হাজার বছরের পুরনো প্রাচীন মিশরের মমির উল্কির কথা বলা হতো। তবে গত শতকের নব্বইয়ের দশকের শুরুতে জানা গেছে যে, মানবদেহে উল্কি আঁকার রীতি আরো অনেক বছরের পুরনো। আল্পস পবর্তমালায় ওট উপত্যকায় ৫,২০০ বছরের পুরনো নবপোলীয় যুগের ‘ওট দি আইসম্যান’-এর যে ফসিল পাওয়া গেছে তার শরীরেও উল্কি আঁকা ছিল।

প্রাচীন মিশরীয় সমাজে মেয়েরা শরীরে উল্কি আঁকত। ৪ হাজার থেকে ৩৫০০ খ্রিস্টপূর্বের মূর্তি থেকে এ তথ্য জানা যায়। ১৩০০ খ্রিস্টপূর্বামব্দে প্রাপ্ত এক নারীমূর্তির উরুতে উল্কি আঁকা ছিল। বয়স্ক নারীরা উল্কি আঁকায় ছিল দক্ষ। তারাই কম বয়েসিদের শরীরের নানা স্থানে উল্কি আঁকত।

প্রাচীন পারস্য সমাজে উল্কি আঁকার চল ছিল। গ্রিকরা পারস্যের এই রীতি গ্রহণ করেছিল। বিশেষ করে মেয়েরা। জানা যায় গ্রিক মেয়েরা উল্কির নকশায় পরম সৌন্দর্য আবিষ্কার করেছিল। গ্রিকরা দাসদের শরীরে চিহ্ন বসাতে উল্কি আঁকত। গুপ্তচরেরা বিশেষ নকশাযুক্ত উল্কি ব্যবহার করত। এখনো বিশেষ কোনো দল বা গোষ্ঠীর মধ্যে বিশেষ ধরণের উল্কির ব্যবহার দেখা যায়।

খ্রিষ্টের জন্মের দুইশ বছর আগে গ্রিস অধিকার করে রোমানরা। রোমানরাও সৌন্দর্য চর্চায় গ্রিকদের কাছ থেকে উল্কি আঁকার রীতিটি গ্রহণ করেছিল। তবে অনেক দাস এবং অপরাধীও শরীরে উল্কি আঁকত।

খ্রিস্টপূর্ব সময়ের জার্মানিক ও কেল্টিক জাতির মধ্যে উল্কির ব্যবহার ছিল। মধ্য ও উত্তর ইউরোপীয় ট্রাইবালরাও উল্কির ব্যবহার করত। ট্রাইবাল কেল্টরা ১২০০ থেকে ৭০০ খ্রিস্টপূর্বাব্দের মধ্যবর্তী সময়কালে পশ্চিম ইউরোপে অভিপ্রয়ান করে। ৪০০ খ্রিষ্টপূর্বে তারা ব্রিটিশ দ্বীপপুঞ্জে পৌঁছে। ওদের সংস্কৃতির ওপরই গড়ে উঠেছে বর্তমান কালের আয়ারল্যান্ড, ওয়েলশ ও স্কটল্যান্ডের সংস্কৃতি। জনৈক ঐতিহাসিক এ প্রসঙ্গে লিখেছেন, ‘কেল্টিক কালচার ওয়াজ ফুল অভ বডি আর্ট।’

চিন, জাপান এবং কোরিয়াতেও প্রাচীনকাল থেকেই উল্কির ব্যবহার ছিল। জাপানি শব্দ irezumi অর্থ হলো- কালির প্রবেশ বা ঢোকানো। তবে আজকের পশ্চিমা বিশ্বের যে উল্কির চল,

রাইজিংবিডি.কম

সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়