ঢাকা     বৃহস্পতিবার   ১৮ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ৫ ১৪৩১

ঋণের ২৭০০০ কোটি টাকা ভর্তুকি হিসেবে চায় বিপিসি

কেএমএ হাসনাত || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ১৪:৫৩, ৭ জানুয়ারি ২০১৭   আপডেট: ০৫:২২, ৩১ আগস্ট ২০২০
ঋণের ২৭০০০ কোটি টাকা ভর্তুকি হিসেবে চায় বিপিসি

কেএমএ হাসনাত : সরকারের কাছ থেকে ঋণ হিসেবে নেওয়া প্রায় সাড়ে ২৭ হাজার কোটি টাকা ভর্তুকিতে রূপান্তরের অনুরোধ জানিয়েছে বাংলাদেশ পেট্রোলিয়াম করপোরেশন (বিপিসি)।

 

জ্বালানি তেলের সরবরাহ অব্যাহত রাখতে বিপিসি বিভিন্ন সময়ে সরকারের কাছ থেকে এ ঋণ নিয়েছিল।

 

সম্প্রতি অর্থ মন্ত্রণালয়কে এক চিঠির মাধ্যমে জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ বিভাগ এ অনুরোধ জানিয়েছে বলে সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে।

 

সূত্র জানায়, এর আগে বিষয়টি বিবেচনার জন্য জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ বিভাগ দুদফা অনুরোধ জানিয়ে ছিল। সে সময় বিপিসির ঋণের পরিমাণ ২৬ হাজার ৩৪৯ কোটি ৮১ লাখ টাকা উল্লেখ করা হয়েছিল। পরবর্তী সময়ে পর্যালোচনা করে দেখা যায়, অর্থ মন্ত্রণালয় ২০০৬ সালের ২১ মে তারিখে এক চিঠির মাধ্যমে সোনালী ব্যাংকের অনুকূলে এক হাজার কোটি টাকার বন্ড ইস্যু করে। একই সঙ্গে উক্ত টাকা বিপিসির বিপরীতে ৪ শতাংশ সুদসহ পরবর্তী ১৫ বছরে পরিশোধযোগ্য উল্লেখ করে ঋণ হিসেবে দেওয়া হয়। ওই সময়ে সংশ্লিষ্ট চিঠিতে অসাবধানতাবশত দুটি ভুল তথ্য উল্লেখ করায় এক হাজার ৭০ কোটি টাকার ঋণকে বন্ড হিসেবে বিবেচনা করা হয়েছিল। সুতরাং উক্ত এক হাজার ৭০ কোটি টাকাসহ বিপিসির মোট ঋণের পরিমাণ দাঁড়ায় ২৭ হাজার ৪১৯ কোটি ৮১ লাখ টাকা।

 

জানা গেছে, ১৯৭৭ সাল থেকে বিপিসির বাণিজ্যিক কার্যক্রম শুরু হয়। এরপর থেকে ১৯৭৬-৭৭ থেকে ১৯৮১-৮২ পর্যন্ত কয়েক বছর লোকসানের মুখোমুখি হয়। পরবর্তী সময়ে ১৯৮২-৮৩ থেকে ১৯৯৮-৯৯ পর্যন্ত বিপিসি লাভজনক প্রতিষ্ঠান হিসেবে আত্মপ্রকাশ করে। এর মধ্যে শুধু ১৯৯৬-৯৭ সালে বিপিসি লোকসান দিয়েছে। এরপর আন্তর্জাতিক বাজারে জ্বালানি তেলের দাম আকস্মিকভাবে বৃদ্ধি পাওয়ায় এবং সে অনুযায়ী স্থানীয় বাজারে জ্বালানি তেলের দাম সমন্বয় না করায় বিপিসিকে ক্রমাগত লোকসানের সম্মুখীন হতে হয়। ২০১৩-১৪ অর্থবছর পর্যন্ত বিপিসির পুঞ্জিভূত লোকসানের পরিমাণ ৫১ হাজার ৪৬১ কোটি টাকা।

 

সূত্র জানায়, বিপিসির লোকসান কাটিয়ে উঠার লক্ষ্যে আর্থিক সহায়তা অংশ হিসেবে সরকার বিভিন্ন সময়ে মোট ১৫০০ কোটি টাকা নগদ ভর্তুকি হিসেবে এবং ১৫ হাজার ৯৪৮ কোটি ১৮ লাখ টাকা বন্ড ইস্যুও মাধ্যমে বিপিসির দায় গ্রহণ করে। কিন্তু ২৭ হাজার ৪১৯ কোটি ৮১ লাখ টাকা ঋণের দায় এখনো বিপিসির ওপর রয়ে গেছে।

 

সূত্র জানায়, ২০১৩-১৪ অর্থবছর থকে আন্তর্জাতিক বাজারে জ্বালানি তেলের দাম কমতে থাকায় বিপিসি মুনাফা করছে। উক্ত মুনাফা থেকে বিপিসি পর্যায়ক্রমে ৩০৮৫ কোটি ৮৭ লাখ টাকা সোনালী, অগ্রণী ও রূপালী ব্যাংকের দেনা পরিশোধ করেছে। এ ছাড়া বিপিসি কর্তৃক পেট্রোবাংলার বকেয়া পাওনা ১৭০০ কোটি টাকা, ভ্যাট কর্তৃপক্ষের বকেয়া পাওনা, ৬০৩ কোটি টাকা, রিফাইনারি ২য় ইউনিটের জমি ক্রয়ের জন্য ২৩৫ কোটি টাকা পরিশোধ করা হয়েছে। একইসঙ্গে লভ্যাংশ হিসেবে সরকারকে পরিশোধ  করা হয়েছে ১০০০ কোটি টাকা। পাশাপাশি জ্বালানি নিরাপত্তা নিশ্চিত করার লক্ষ্যে ইআরএল ইউনিট-২, ঢাকা-চট্টগ্রাম পাইপলাইন, সিঙ্গেল পয়েন্ট মুরিং প্রকল্প, ভারতের নুমালিগত রিফাইনারি থেকে পার্বতীপুর পাইপলাইন স্থাপন, পায়রা বন্দরে নতুন অয়েল রিফাইনারি স্থাপনের অংশ হিসেবে প্রয়োজনীয় অর্থের সংস্থান রাখতে হচ্ছে।

 

সূত্র জানায়, আন্তর্জাতিক বাজারে জ্বালানি তেলের দাম স্থিতিশীল থাকে না। তাই দেশে জ্বালানি নিরাপত্তা নিশ্চিত করার লক্ষ্যে এনার্জি অনুযায়ী ৬০ দিনের জ্বালানি তেলের মজুদ ধরে রাখার জন্য বিপিসিকে ৫০০০ কোটি টাকার কার্যকরি মুলধন গঠন করতে হবে। এসব বিবেচনা করে বিপিসিকে ২৭ হাজার ৪১৯ কোটি ৮১ লাখ টাকার ঋণকে ভর্তুকি হিসেবে রূপান্তরের অনুরোধ করেছে জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ মন্ত্রণালয়।

 

 

রাইজিংবিডি/ঢাকা/৭ জানুয়ারি ২০১৭/হাসনাত/সাইফ

রাইজিংবিডি.কম

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়