ঢাকা     বুধবার   ২৪ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ১১ ১৪৩১

এক পায়ে আকাশ ছোঁয়ার স্বপ্ন

মো. আনোয়ার হোসেন শাহীন || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ০৮:৪৫, ২৫ আগস্ট ২০১৬   আপডেট: ০৫:২২, ৩১ আগস্ট ২০২০
এক পায়ে আকাশ ছোঁয়ার স্বপ্ন

বাবা-মায়ের সঙ্গে কাজল ভৌমিক

মো. আনোয়ার হোসেন শাহীন, মাগুরা : তার জন্মের পর মন খারাপ হয়েছিল অনেকেরই। কারণ, ফুটফুটে চেহারার এই শিশুটির বাম পা ছিল না। কিন্তু এই শিশু একদিন বড় হয়ে বাড়ির মুখ উজ্জল করবে, পরিবার এমনকি দশ গ্রামের মানুষের গর্বের ধন হবে, কে জানত।

 

সেদিনের সেই শিশু আজ কাজল ভৌমিক। তার ইচ্ছাশক্তির কাছে হেরে গেছে প্রতিবন্ধকতা। এবারের এইচএসসি পরীক্ষায় মাগুরার মহম্মদপুর উপজেলা সদরের আমিনুর রহমান কলেজ থেকে বিজ্ঞান বিভাগে জিপিএ ৫ (গোল্ডেন) পেয়েছে কাজল। তাও আবার চতুর্থ বিষয় বাদেই। মহম্মদপুর উপজেলার পলাশবাড়িয়া ইউনিয়নের শড়াবাড়িয়া গ্রামের কাজল এখন প্রশংসায় ধন্য।

 

কাঠের ক্রাচে ভর কওে, কখনোবা বাইসাইকেলে  চলাফেরা করেন কাজল। নিজের শরীরের সঙ্গেই প্রতিনিয়ত যুদ্ধ করতে হয় তাকে। প্রতিবন্ধকতাকে জয় করে  কাজলের এই সাফল্যের গল্প এখন মানুষের মুখে মুখে।

 

নিভৃত গ্রাম শড়াবাড়িয়ায় কাজলদের বাড়িতে গিয়ে কথা হয় তার পরিবারের সবার সঙ্গে। কাজলের বাবা কার্তিক ভৌমিক প্রান্তিক কৃষক। মা কমলা রাণী ভৌমিক গৃহিণী। দুই ভাইয়ের মধ্যে কাজল ছোট। বড় ভাই হিরো ভৌমিক স্থানীয় কলেজে ডিগ্রি শেষ বর্ষের পরীক্ষা দিয়েছেন।

 

বাবা কার্তিক ভৌমিক বলেন, ‘কাজল ছোট বেলা থেকেই পড়ালেখায় ভালো। বরাবরই সব শ্রেণিতে সে প্রথম হয়। প্রাথমিক, জুনিয়র বৃত্তি ও এসএসসিতেও সে জিপিএ ৫ পায়।   দারিদ্রতার কারণে ছেলের একটি কৃত্তিম পা স্থাপন করতে পারিনি। বাবা হিসেবে এই আক্ষেপ তার কোনদিনও যাবে না। অন্য দশজনের মতো  স্বাভাবিক জীবপন যাপন করতে না পারলেও মেধাবী এই ছেলেকে নিয়ে গর্ববোধ করেন তিনি।’

 

মা কমলা রাণী ভৌমিক ছেলের কথা উঠতেই কেঁদে উঠলেন। তিনি বলেন, ‘জন্মের পর যখন জেনেছি ছেলের বাম পা নেই- তখন অনেক কেঁদেছি। অনেক প্রতিকূলতা কাটিয়ে তিনি পরম যতেœ তার এই নাড়ি ছেড়া ধনকে মানুষ করছেন। তার একটি পা নেই, ছেলেকে বুঝতে দেননি। সব সময় সাহস যুগিয়েছেন।

 

তিনি বলেন, ‘স্বামীর সামান্য জমির ফসলে সংসার চলতে চায় না। কাজল অনেক কষ্ট করে পড়াশোনা করছে। ছেলেকে বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ানোর মতো  সামর্থ্য তাদের নেই। কাজলের ইচ্ছাশক্তিই এখন তাদের ভরসা।’

 

কাজল ভৌমিক জানান, ‘কখনো হতাশ হইনি। ইচ্ছা শক্তি থাকলে সব করে দেখানো সম্ভব বললেন কাজল। গ্রামের বাড়ি থেকে প্রতিদিন আসা-যাওয়া মিলে ২০ কিলোমিটার পথ বাইসাইকেল চালিয়ে উপজেলা সদরে কলেজ করতেন। এই সাইকেল তার প্রিয় সঙ্গী।’

 

সে ক্লাশের  সময় বাদে ছয়-সাত ঘন্টা পড়ালেখা করত বলে জানায়। ভবিষ্যতে বুয়েটে ভর্তি হয়ে প্রকৌশলী হতে চায় কাজল ।

 

পলাশবাড়িয়া ইউনিয়নের সাবেক চেয়ারম্যান এম. রেজাইল করিম চুন্নু বলেন, ‘কাজলকে আমি ছোটবেলা থেকেই চিনি। সে সবার কাছে অনুকরণীয়। নানা প্রতিকূলতা ডিঙিয়ে ভালো ফল করে কাজল প্রমাণ করেছে ইচ্ছাশক্তি থাকলে সাফল্য পাওয়া সম্ভব।’

 

মহম্মদপুর আমিনুর রহমান ডিগ্রি কলেজের ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ ওসমান আলী বলেন, ‘কাজল দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছে। আমরা অন্য শিক্ষার্থীদের কাজলকে অনুসরণ করতে বলি। বলি, কাজল পারলে তোমরা কেন পারবে না।’

 

রাইজিংবিডি/মাগুরা/২৫ আগস্ট ২০১৬/শাহীন/টিপু

রাইজিংবিডি.কম

সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়