ঢাকা     বৃহস্পতিবার   ২৫ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ১২ ১৪৩১

ছড়িয়ে পড়ছে নতুন রোহিঙ্গারা

সুজাউদ্দিন রুবেল || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ০৭:১৪, ৯ ডিসেম্বর ২০১৬   আপডেট: ০৫:২২, ৩১ আগস্ট ২০২০
ছড়িয়ে পড়ছে নতুন রোহিঙ্গারা

মিয়ানমার থেকে আসা একটি পরিবার

সুজাউদ্দিন রুবেল, কক্সবাজার : কোনোভাবেই ঠেকানো যাচ্ছে না বাংলাদেশে রোহিঙ্গা অনুপ্রবেশ।

 

প্রতিদিনই সীমান্তের কোনো না কোনো পয়েন্ট দিয়ে রোহিঙ্গারা অনুপ্রবেশ করে ছড়িয়ে পড়ছে দেশের বিভিন্ন স্থানে।

 

আন্তর্জাতিক অভিবাসন সংস্থা (আইওএম) বাংলাদেশে ২১ হাজার নতুন রোহিঙ্গা অনুপ্রবেশ করেছে বললেও এ পরিসংখ্যান মানতে নারাজ স্থানীয়রা।

 

এমনকি স্থানীয়রা সম্প্রতি অনুপ্রবেশকারী নতুন রোহিঙ্গাদের তালিকা করে শিগগিরই মিয়ানমারে ফেরত পাঠানোর দাবি জানান।

 

কক্সবাজার শহর থেকে আরাকান সড়ক ধরে টেকনাফের দিকে যাওয়ার পথে প্রায় ৪০ কিলোমিটার পর উখিয়ার কুতুপালং শরণার্থী শিবির। ৯১ সালের আগে এখানে দোকানপাট দূরের কথা, ছিল না কোনো ঘরবাড়িও। এখানকার পাহাড়গুলোতে ছিল সবুজ বন-বনানী। নিচু জমিতে চাষ হত ধানের। এখন সেই কুতুপালং-এ লক্ষাধিক রোহিঙ্গার ঘনবসতি আর শিবিরের পাশে সহস্রাধিক দোকানপাট। যেন একটি ব্যস্ততম শহর।

 

নতুন করে রোহিঙ্গা আসায় কুতুপালং আরো জমজমাট হয়ে উঠেছে। পাশাপাশি এসব রোহিঙ্গার একটি বড় অংশ আশ্রয় ও কর্মসংস্থানের উদ্দেশে ছড়িয়ে পড়ছে দেশের বিভিন্ন স্থানে।

 

নতুন আসা এসব রোহিঙ্গা প্রথমে শিবিরের পুরনো শরণার্থীদের ঘরে আশ্রয় নিলেও পরবর্তীতে ছড়িয়ে পড়ছে কক্সবাজার ও বান্দরবান জেলার বিভিন্ন স্থানে।

 

মিয়ানমারে সহিংসতার পর বাবা-মা ও স্বজনদের হারিয়ে স্ত্রী-সন্তানকে নিয়ে কুতুপালং-এ আসেন মিয়ানমারের নাপ্পুরার সাদেক। এখন তিনি মহেশখালীতে। তার আগে নয়াপাড়ায় আসা জামবনিয়ার জামাল এখন কক্সবাজার শহরতলীর দরিয়ানগর বড়ছড়া গ্রামে।

 

এ ছাড়া খেয়ারিপ্যারাং থেকে আসা হামিদ ও কাওয়ারবিল থেকে আসা আবদুল্লাহও ঠাঁই নিয়েছেন শহরতলীতে। শহরতলীর বিসিকসংলগ্ন বর্মাইয়া পাড়ায় তাদের মতোই ঠাঁই নিয়েছেন অনেকে। আবার আশ্রয় ও কর্মসংস্থানের টানে মহেশখালী, কুতুবদিয়া, চকরিয়া, পেকুয়া, রামু, পার্বত্য নাইক্ষ্যংছড়ি, লামা ও আলীকদমসহ বিভিন্নস্থানে ছড়িয়ে পড়ছে নতুন আসা রোহিঙ্গারা।

 

 

এদিকে বৃহস্পতিবার ও শুক্রবারও শতাধিক রোহিঙ্গা এসেছেন নাফনদী সীমান্ত পেরিয়ে। আরাকানের খেয়ারিপ্যারাং এলাকা থেকে অন্তত ১৫টি পরিবারের শতাধিক নারী-পুরুষ-শিশু এসেছে কুতুপালং শিবিরে। এদের মধ্যে আবদুল ওয়ারেছের ছেলে আবদুর রহিমের (৩০) একটি চোখ নষ্ট। তার বাবাকে সেনাবাহিনী গুলি করে হত্যা করেছে। বেয়নেটের খোঁচায় তার একটি চোখও চিরতরের জন্য নষ্ট হয়ে গেছে।

 

জীবন বাঁচানোর তাগিদে পরিবারের ৬ সদস্যকে নিয়ে পালিয়ে এসেছেন বাংলাদেশে। তাদের সাথে পরিবারের ৪ সদস্যকে নিয়ে এসেছেন একই এলাকার দিল মোহাম্মদের ছেলে মোহাম্মদ ইউনুছ (২৬)। তিনি গুলিবিদ্ধ। এ ছাড়া আহত হয়ে আরো এসেছেন পরিবারের ৩ সদস্য নিয়ে আবদুল হাই এবং চার সদস্য নিয়ে মোহাম্মদ ইলিয়াছ (২৬)। তাদেরই সাথে প্রতিবন্ধী ৩ শিশু সন্তানকে নিয়ে কুতুপালং এসেছেন জাহেদা বেগম।

 

তিনি জানান, তার স্বামীকে সেনাসদস্যরা হত্যা করে তিনিসহ তার সন্তানদের ওপর নির্যাতন চালিয়েছে। এ কারণে আতংকে তিনি দেশ ছেড়েছেন।

 

কুতুপালং শিবিরের বাসিন্দা ফাতেমা জানান, মিয়ানমার থেকে ১৫ পরিবারের শতাধিক রোহিঙ্গা এসেছে। তাদের দুরাবস্থা ও অসহায়ত্ব দেখে কুতুপালং শিবিরের বাসিন্দারা তাদের আশ্রয় দিয়েছে। বর্তমানে মাত্র ১০০ বর্গফুট আয়তন বিশিষ্ট তার বাসাতেই ২০ জন মানুষ থাকে বলেও জানান তিনি।

 

আন্তর্জাতিক অভিবাসন সংস্থা (আইওএম) কক্সবাজার কার্যালয়ের প্রধান সংযুক্তা সাহানি জানান, জাতিসংঘ ১০ হাজার রোহিঙ্গা আশ্রয় নেওয়ার কথা বললেও মাত্র এক সপ্তাহের ব্যবধানে এই সংখ্যা ২১ হাজারে দাঁড়িয়েছে। এর মধ্যে অধিকাংশ রোহিঙ্গা টেকনাফ নয়াপাড়া, লেদা শরণার্থী ক্যাম্প এবং উখিয়া কুতুপালং শরণার্থী ক্যাম্পে আশ্রয় নিয়েছেন। অন্যরা জেলার বিভিন্ন স্থানে পরিচিতজনদের বাড়িতে আশ্রয় নিয়েছেন।

 

সংযুক্তা সাহানি আরও বলেন, ‘শুধু আইওএম নয়, কক্সবাজারে রোহিঙ্গাদের নিয়ে জাতিসংঘের ইউএনএইচসিআর, ডব্লিউএফপি, ইউনিসেফের মতো আন্তর্জাতিক সংস্থাসহ বিভিন্ন এনজিও কাজ করছে। সব সংস্থার হিসাবে বর্তমানে নতুন করে ২১ হাজার রোহিঙ্গা শুধুমাত্র কক্সবাজারে আশ্রয় নিয়েছে বলে আমরা একটি সিদ্ধান্তে পৌঁছাতে পেরেছি।’

 

এদিকে আন্তর্জাতিক অভিবাসন সংস্থার পরিসংখ্যান মানতে নারাজ রোহিঙ্গা প্রতিরোধ ও প্রত্যার্বাসন সংগ্রাম কমিটি ও স্থানীয়রা। তারা বলছেন, সম্প্রতি ৩০ হাজারের অধিক রোহিঙ্গা বাংলাদেশে অনুপ্রবেশ করেছে।

 

রোহিঙ্গা প্রতিরোধ ও প্রত্যার্বাসন সংগ্রাম কমিটি প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি মাহামুদুল হক চৌধুরী বলেন, ‘মিয়ানমারের সহিংসতার পর থেকে বাংলাদেশে প্রায় ৩০ হাজারের অধিক রোহিঙ্গা অনুপ্রবেশ করেছে। তারা এখন দেশের বিভিন্ন স্থানে ছড়িয়ে পড়েছে। তাই এখন সরকারের উচিত সম্প্রতি নতুন করে আসা রোহিঙ্গাদের তালিকা তৈরি করে নির্দিষ্ট একটি স্থানে রাখা। পরবর্তীতে মিয়ানমারের পরিস্থিতি স্বাভাবিক হলে আলোচনার মাধ্যমে তাদের ফিরিয়ে দেওয়ার ব্যবস্থা করতে হবে।’

 

 

রাইজিংবিডি/কক্সবাজার/৯ ডিসেম্বর ২০১৬/সুজাউদ্দিন রুবেল/রুহুল

রাইজিংবিডি.কম

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়