ঢাকা     শুক্রবার   ১৯ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ৬ ১৪৩১

এখন দরকার উন্নয়ন

রফিক মুয়াজ্জিন || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ১৩:৫৭, ৩১ জুলাই ২০১৫   আপডেট: ০৫:২২, ৩১ আগস্ট ২০২০
এখন দরকার উন্নয়ন

রফিক মুয়াজ্জিন : ৩১ জুলাই। দিনটি বাংলাদেশ ও ভারতের ইতিহাসে স্মরণীয় হয়ে থাকবে। কারণ, আজ রাত ১২টার পর ৬৮ বছরের বঞ্চনা ও দুর্ভোগ থেকে মুক্তি পাচ্ছে উভয় দেশের ১৬২ ছিটমহলের ৫১ হাজার মানুষ। এতদিন যারা ছিলেন নিজভূমে পরবাসী, আজ তারা স্বাধীন দেশের নাগরিকত্ব পাচ্ছেন। পয়লা আগস্ট থেকে ছিটমহল বলে আর কিছু থাকবে না বাংলাদেশ ও ভারতে।

ছিটবাসীদের নাগরিকত্ব নিয়ে সমস্যা না থাকলেও দীর্ঘদিন ধরে বঞ্চনা ও নানা সমস্যার সমাধান সহসাই হবে কিনা সে প্রশ্ন থেকেই যায়। সেখানে শিক্ষা ও স্বাস্থ্যসহ নানা নাগরিক সমস্যা প্রকট। আগে মূল ভূখণ্ডের সঙ্গে যোগাযোগে সমস্যা থাকায় তারা শিক্ষা ও উন্নয়নের ক্ষেত্রে পিছিয়ে পড়েছে। এখন নাগরিক হিসেবে এসব মানুষের শিক্ষা ও স্বাস্থ্যসহ অন্য সমস্যা সমাধানেরও উদ্যোগ নিতে হবে। সেখানে স্কুল-কলেজ, হাসপাতাল প্রতিষ্ঠাসহ অন্যান্য নাগরিকসেবা নিশ্চিত করতে হবে উভয় দেশকে। যোগাযোগব্যবস্থার উন্নয়নের পাশাপাশি অর্থনৈতিক উন্নয়নে বিশেষ ব্যবস্থা করতে হবে। ছিটমহলের যেসব বাসিন্দা মিথ্যা ঠিকানা ব্যবহার করে পড়ালেখা করেছেন বা এখন চাকরি করছেন, তাদের নিজ ঠিকানা ব্যবহারের সুযোগ দিতে হবে।

 

ছিটমহল কী ?
ছিটমহল হচ্ছে একটি রাষ্ট্রের কিছু অংশ, যা অন্য একটি বা দুটি রাষ্ট্রের ভৌগোলিক সীমার মাঝে অবস্থিত। ছিটমহল শব্দটির ইংরেজি এনক্লেভ (ENCLAVE)। শব্দটির ইংরেজি কূটনৈতিক শব্দের অভিধানে অন্তর্ভুক্ত হয় ১৮৬৮ সালে। ফরাসি ভাষা থেকে শব্দটি ইংরেজিতে আসে। এনক্লভ এবং এর সঙ্গে সম্পর্কিত কিছু শব্দ আগেই ফরাসি ও স্প্যানিশ ভাষায় ছিল। এসব শব্দের অর্থ কোনো কিছু দিয়ে ঘেরা, অন্তর্ভুক্ত, নির্দিষ্ট ইত্যাদি। এগুলো এসেছিল ল্যাটিন ‘clavus’ শব্দ থেকে। এর তিন দশক পর আসে Exclave শব্দটি। EXCLAVE বোঝানো হয় একটি দেশের মাঝে আবদ্ধ থাকলে আর ENCLAVE ব্যবহৃত হয় দুটো দেশ দ্বারা ঘেরা থাকলে।

 

কীভাবে হলো ছিটমহল ?
নানা ঐতিহাসিক, রাজনৈতিক এবং ভৌগোলিক কারণে সৃষ্টি হয়েছে ছিটমহল। নদীর গতিপথ পরিবর্তনের জন্যও অনেক জায়গায় ছিটমহল সৃষ্টি হয়েছে। ছিটমহলের মানুষের জীবনযাত্রা নানা সমস্যায় জর্জরিত। চলাচল, বিদ্যুৎ, কর্মসংস্থান, ঠিকানা ইত্যাদি বিষয়ে তারা বঞ্চিত। ইন্দো-বাংলাদেশ ছিটমহলবাসীর দুর্ভোগ এ ক্ষেত্রে উল্লেখযোগ্য। অবশ্য দুনিয়াজুড়েই এখন ছিটমহল সমস্যার সমাধানের চেষ্টা চলছে।

 

অখণ্ড ভারত ভাগ করে ভারত এবং পাকিস্তান নামক দুটি স্বাধীন রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার লগ্নে ১৯৪৭ খ্রিস্টাব্দে রেডক্লিফের মানচিত্র বিভাজন থেকেই উদ্ভব ছিটমহলের। এক দেশের ভূখণ্ডে থেকে যায় অন্য দেশের অংশ। এতে এক অসহনীয় মানবিক সমস্যার উদ্ভব হয়। ১৬২টি ছিটমহল আছে দুই প্রতিবেশী দেশে। এর মধ্যে ভারতের ১১১টি ছিটমহল আছে বাংলাদেশে। আর বাংলাদেশের ৫১টি ছিটমহল ভারতে। এসব ছিটমহলে বসবাসকারী মানুষের সংখ্যা ৫১ হাজার। ২০১১ সালের জনগণনা অনুযায়ী ভারতের ছিটমহলে বসবাসরত লোকসংখ্যা ৩৭ হাজার এবং বাংলাদেশের ছিটমহলের লোকসংখ্যা ১৪ হাজার। ২৪ হাজার ২৬৮ একর ভূমি নিয়ে দুই দেশের ছিটমহল। তার মধ্যে ভারতের ১৭ হাজার ১৫৮ একর। বাংলাদেশের ছিটমহলের জমির পরিমাণ ৭ হাজার ১১০ একর। ভারতীয় ছিটমহলগুলোর অধিকাংশই রয়েছে বাংলাদেশের উত্তর-পশ্চিমাঞ্চলে। এসবের মধ্যে লালমনিরহাটে ৫৯, পঞ্চগড়ে ৩৬, কুড়িগ্রামে ১২ ও নিলফামারীতে চারটি ভারতীয় ছিটমহল রয়েছে। অপরদিকে বাংলাদেশের ৫১টি ছিটমহলের অবস্থান ভারতের পশ্চিমবঙ্গ রাজ্যে। এর মধ্যে ৪৭টি কুচবিহার ও চারটি জলপাইগুড়ি জেলায়। 

 

কোচবিহার রাজ্যের কোচ রাজার জমিদারির কিছু অংশ রাজ্যের বাইরের বিভিন্ন থানা পঞ্চগড়, ডিমলা, দেবীগঞ্জ, পাটগ্রাম, হাতিবান্ধা, লালমনিরহাট, ফুলবাড়ী ও ভুরুঙ্গামারীতে ছিল। ভারত ভাগের পর ওই আট থানা পূর্ব পাকিস্তানে অন্তর্ভুক্ত হয়। আর কোচবিহার রাজ্য পশ্চিমবঙ্গের সঙ্গে একীভূত হয়। ফলে ভারতের কিছু ভূখণ্ড আসে বাংলাদেশের কাছে। আর বাংলাদেশের কিছু ভূখণ্ড যায় ভারতে। এই ভূমিগুলোই হচ্ছে ছিটমহল।

 

ভারত বিভক্ত হওয়ার পূর্বমুহূর্তে, লর্ড মাউন্টব্যাটেন-পরিকল্পনা অনুযায়ী (৩ জুন ১৯৪৭) বাংলা ও পাঞ্জাবকে ভারত ও পাকিস্তানের মধ্যে ভাগ করার জন্য গঠিত একটি সীমানা কমিশনের প্রধান হিসেবে নিযুক্ত হন স্যার র্যা ডক্লিফ। স্বাধীনতা ঘোষণার সময় তৎকালীন পরিস্থিতিতে জরুরি ভিত্তিতে এবং দ্রুততার সঙ্গে র্যা ডক্লিফকে সীমানা চিহ্নিতকরণের কাজটি সম্পন্ন করতে হয়েছিল। কার্যত এ কাজ মাত্র ছয় সপ্তাহের মধ্যে নিষ্পন্ন হয়। স্যার র্যা ডক্লিফ জুলাইয়ের ৮ তারিখে লন্ডন থেকে দিল্লিতে পৌঁছেন এবং আগস্টের ১৩ তারিখে তার প্রতিবেদন পেশ করেন। দীর্ঘকালের যোগাযোগ ব্যবস্থা, সমন্বিত অর্থনীতি ও স্থিতিসম্পন্ন অখণ্ড এলাকার মাঝ বরাবর সানন্দে দাগ টেনে দেওয়া হয়। ফলে দুই নতুন সার্বভৌম দেশের সীমারেখার এপারে ওপারে, ব্রিটিশ-ভারতের পূর্ব-পশ্চিম এ দুই অঞ্চলের দুটি প্রদেশ বাংলা ও পাঞ্জাব, প্রত্যেকটি বিভক্ত হয়ে পড়ে। ১৬ আগস্ট সীমারেখা নির্ধারণী টপো-শিটের মূলকপি জনসমক্ষে প্রকাশ করা হয়।

 

এ রায় যে বিতর্কের বিষয় হবে তা কমিশনের কাছেও ছিল নিশ্চিত এবং অনিবার্যভাবেই অবিচার ও দুর্ভোগ এড়ানো যায়নি। কাগজে সীমানা যেভাবেই দাগানো হোক, মৌজা ও সামাজিক, সাংস্কৃতিক, এমনকি পারিবারিক বা গোষ্ঠীগত কারণে এবং জমিজমার মানচিত্রে অসঙ্গতির কারণে বহু স্থানেই র্যা ডক্লিফ যেভাবে দাগিয়েছেন, বাস্তবে সীমানা সেভাবে নির্ধারিত হওয়া সম্ভব ছিল না।

 

ফলে  সেই দেশের ছিটমহলগুলো বিন্যস্তভাবে তৈরি হলেও অস্থিরকল্প সমস্যা হয়ে দাঁড়ায়। কমিশনের সদস্যদের নিষ্ক্রিয়তার সুযোগে জমিদার, নবাব, স্থানীয় নেতা এবং এমনকি চা বাগানের মালিকরা বাংলা বিভক্তিকে কেন্দ্র করে তাদের নিজস্ব স্বার্থানুকূল রায়ের জন্য প্রভাব বিস্তার করে। ১৯৪৭ সালে এভাবে ব্রিটিশের হাতে ভারত বিভাগের মধ্য দিয়ে বাংলাদেশের ওপর ছিটমহল সমস্যা বর্তেছে।

 

কোনোরকম সুবিবেচনা ছাড়াই হুট করে এ ধরনের একটি সিদ্ধান্ত নেওয়ায় সীমানা নির্ধারণের বিষয়টি যথাযথভাবে হয়নি। অভিযোগ রয়েছে, কমিশন সদস্যদের নিষ্ক্রিয়তা আর জমিদার, নবাব, স্থানীয় রাজনীতিবিদ ও চা-বাগানের মালিকরা নিজেদের স্বার্থে দেশভাগের সীমারেখা নির্ধারণে প্রভাব ফেলেছে। আর উত্তরাধিকার সূত্রেই উপমহাদেশের বিভক্তির পর এই সমস্যা বয়ে বেড়ায় দুই দেশ।
বাংলাদেশের সীমানার মধ্যে অবস্থিত ভারতের কিংবা ভারতের মধ্যে অবস্থিত বাংলাদেশের ছিটমহল সম্পর্কিত তথ্যাবলি দুষ্প্রাপ্য। প্রাপ্ত তথ্যে জানা যায় যে, শুধু উত্তর-পশ্চিম সীমান্তেই ১৭৯টি ছিটমহল রয়েছে, যেগুলির অবস্থান অমীমাংসিত এবং যেগুলির বিষয়ে কোনো বিনিময় চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়নি।

 

১৯৯৬ সালের ৯ থেকে ১২ অক্টোবর কলকাতায় অনুষ্ঠিত বাংলাদেশ-ভারত সীমানা সম্মেলনে ছিটমহল সমস্যা নিয়ে বিস্তৃত আলোচনা হয় এবং ওই বছর ২১ থেকে ২৪ নভেম্বর সরেজমিন পরিদর্শনে ভারতীয় ভূখণ্ডে মোট ১১১টি বিনিময়যোগ্য বাংলাদেশি ছিটমহল চিহ্নিত করা হয় যার আয়তন ১৭ হাজার ১৬০ দশমিক ৬৩ একর। ওই পরিদর্শনে বাংলাদেশ ভূখণ্ডে ৫১টি বিনিময়যোগ্য ভারতীয় ছিটমহল চিহ্নত করা হয়, যার আয়তন প্রায় ৭ হাজার ১১০ দশমিক শূন্য ২ একর। বাংলাদেশের উত্তর-পূর্বাঞ্চলে ভারতীয় সীমানায় অবস্থিত বাংলাদেশি ৭৫টি ছিটমহলের মধ্যে ৪১টি লালমনিরহাট জেলায় (২টি হাতিবান্ধা উপজেলায়, ১টি লালমনিরহাট সদরে, ৪টি কালীগঞ্জে, ৩টি আদিতমারীতে, ২৮টি পাটগ্রামে এবং ৩টি ফুলবাড়ীতে), ১৬টি কুড়িগ্রাম জেলায় (সবকটি ভুরুঙ্গামারি উপজেলায়) এবং ১৮টি পঞ্চগড় জেলায় (২টি পঞ্চগড় সদরে, ১২টি বোদায় এবং ৪টি দেবীগঞ্জে)।

 

২০১১ সালের ৬ সেপ্টেম্বর ভারতের প্রধানমন্ত্রী মনমোহন সিং ঢাকা সফরের সময় বাংলাদেশের সাথে ছিটমহল সম্পর্কিত একটি স্মারক স্বাক্ষর করেন। এ চুক্তিতে বলা হয়, বাংলাদেশের সীমানার মধ্যে ভারতের ১১১টি ছিটমহল যার অধিবাসী ৩৭ হাজার ৩৩৪ এবং ভারতের ভূখণ্ডের ভেতর বাংলাদেশের ৫১টি ছিটমহল যার জনসংখ্যা প্রায় ১৪ হাজার ২১৫ জন। ভারতীয় সীমানায় অবস্থিত বাংলাদেশের ছোট ছোট ছিটমহলের ওপর বাংলাদেশের প্রশাসনিক নিয়ন্ত্রণ নেই, এসব জায়গার কোনো রকম উন্নয়ন কর্মকাণ্ড পরিচালনাও সম্ভব নয়, যদিও ওই  সকল ছিটমহলে বসবাসকারী সব মানুষ বাংলাদেশের নাগরিক হিসেবে সাংবিধানিকভাবেই বিভিন্ন সুযোগ-সুবিধাসহ নাগরিক অধিকারের হকদার।

 

ভৌগোলিক ও রাজনৈতিক কারণে ছিটমহলে বসবাসকারী মানুষের প্রশাসনিক মর্যাদা নিশ্চিত করা দুই দেশের সরকারের জন্যই লাভজনক। সীমান্ত নিরাপত্তা, অবৈধ চলাচল এবং জনসাধারণের জন্য উন্নয়ন কর্মকাণ্ড পরিচালনার বৃহত্তর স্বার্থে ছিটমহলগুলোর রাজনৈতিক অবস্থান নির্ধারণ, কার্যত কঠিন হলেও জরুরি। আর তা পারস্পরিক বিনিময় বন্দোবস্তের মাধ্যমেই অর্জন করা সম্ভব।

 

দেশ বিভাগের এক বছরের মধ্যে ছিটমহল ইস্যু ভারত ও পাকিস্তানের মধ্যে চাপা সাম্প্রদায়িক উত্তেজনার প্রকাশ ঘটায়। অবস্থা সামাল দিতে ভারতের প্রধানমন্ত্রী জওহরলাল নেহেরু এবং পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী ফিরোজ খান নুন কর্তৃক ১৯৫২ সালে দুই দেশের মধ্যে ছিটমহল দক্ষিণ বেরুবাড়ির (৭.৩৯ বর্গ কিমি) একটি অংশ পূর্ব বাংলার কাছে হস্তান্তরের সিদ্ধান্ত নিলে ভারতের বিরোধী রাজনৈতিক শিবির এর কঠোর বিরোধিতা করে। সিদ্ধান্ত ছিল যে, পূর্ববাংলার মূল ভূমির সঙ্গে নীলফামারী জেলার পাটগ্রাম থানাধীন আঙ্গরপোতা-দহগ্রাম ছিটমহলকে সংযুক্ত করতে ‘তিন বিঘা’ নামে খ্যাত এক একর জমির বিনিময়ে ভারত ছিটমহল সংলগ্ন অন্য এক খণ্ড জমির অধিকারী হতে পারে। কিন্তু ভারতে এ নিয়ে লড়াই শুরু হলে এ সিদ্ধান্ত দুই দশক সময়েও বাস্তবায়িত হয়নি।

 

১৯৭১ সালে স্বাধীন বাংলাদেশের জন্ম ছিটমহল ও অন্যান্য সীমান্ত বিরোধ নিরসনে আশার সঞ্চার করে। ১৯৭৪ সালের ১৬ মে ইন্দিরা গান্ধি ও শেখ মুজিবুর রহমান স্বাক্ষরিত চুক্তি অনুসারে সম্মত সীমান্তরেখাগুলো বলবৎ রাখার সিদ্ধান্ত হয়। চুক্তির ১৪ ধারায় ছিল, বাংলাদেশের পাটগ্রামের আঙ্গরপোতা-দহগ্রামকে যুক্ত করতে স্থায়ী সংযোগভূমির বিনিময়ে বাংলাদেশকে ভারতের নিকট দক্ষিণ বেরুবাড়ীর দক্ষিণাংশ ছেড়ে দিতে হবে। ১৯৭৪ সালে বাংলাদেশ সরকার চুক্তি মোতাবেক ভারতকে দক্ষিণ বেরুবাড়ীর সংশ্লিষ্ট অংশ হস্তান্তর করে। কিন্তু ভারতের সাংবিধানিক ও আইনগত বিতর্কের কারণে ১৭ হাজার ৮৮৫ মিটার আয়তনের স্থায়ী করিডোর হস্তান্তর বিলম্বিত হয়। এ বিতর্ক ১৯৮২ সালের ৭ অক্টোবর আরেকটি চুক্তি স্বাক্ষরিত হওয়ার আগ পর্যন্ত অব্যাহত ছিল।

 

এ চুক্তিতে স্থায়ীভাবে তিন বিঘা হস্তান্তরের বিষয়টি ভারতের অবশিষ্ট সিদ্ধান্ত হিসেবে ছাড় দিয়ে বাংলাদেশের নাগরিকদের ছিটমহল থেকে মূলভূমিতে চলাচলের ব্যবস্থা রাখা হয়। ওই দেশের স্থানীয় বিরোধী পক্ষ এ ব্যবস্থার বিরুদ্ধে আইনগত পদপেক্ষ নেওয়ায় ভারত-কর্তৃক চুক্তিটি বাস্তবায়নে আরেকটি দশক বিলম্বিত হয়।

 

এসব সমস্যা নিষ্পত্তির পর, ভারত এবং বাংলাদেশ ১৯৯২ সালের ২৬ মার্চ চলাচলের জন্য করিডোর ব্যবহার, ছিটমহল এবং বাংলাদেশের মূল ভূখণ্ডের মধ্যে যানবাহন চলাচল ও নিরাপত্তা সম্পর্কিত একটি আচরণবিধি সম্বলিত প্রোটোকল স্বাক্ষর করে। এ সংযোগ-স্থানের ওপর নিয়ন্ত্রণ এখনও মূলত ভারতই ধরে রেখেছে। অন্যান্য সমস্যাক্রান্ত ছিটমহলগুলো এখনো সমাধানের বাইরে রয়ে গেছে। অবশেষে ২০১১ সালে বাংলাদেশি জনগণের জন্য সীমিতভাবে চলাচলের জন্য তিন বিঘা করিডোর উম্মুক্ত করে দেওয়া হয়। ২০১১ সালের সেপ্টেম্বরে উভয় দেশের প্রধানমন্ত্রী সীমানা নির্ধারণী এক চুক্তিতে স্বাক্ষর করেন। এতে বলা হয়, ছিটমহলবাসী তাদের ইচ্ছানুযায়ী নিজ দেশে প্রত্যাবর্তন অথবা বর্তমান ভূখণ্ডে বসবাস করতে পারবে।

 

লেখক : সাংবাদিক ও সংস্কৃতিকর্মী।

 



রাইজিংবিডি/ঢাকা/৩১ জুলাই ২০১৫/রহমান

রাইজিংবিডি.কম

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়