এনআরবিসি ব্যাংকে অর্ধশত কোটি টাকার ঋণ অনিয়ম
এম এ আর || রাইজিংবিডি.কম
নিজস্ব প্রতিবেদক : এনআরবি কমার্শিয়াল (এনআরবিসি) ব্যাংকের উত্তরা শাখায় অর্ধশত কোটির বেশি টাকার ঋণ জালিয়াতির অভিযোগ উঠছে।
পরিচালনা বোর্ডের কার্যবিরণী জালিয়াতির মাধ্যমে ওই ঋণ প্রদানে অনিয়ম হয়েছে। শুধু তাই নয়, বিষয়টি ব্যাংকটির অডিট কমিটির দৃষ্টিগোচর হওয়ার পর এখন চলছে ধামাচাপা দেওয়ার প্রক্রিয়া।
গত বছরের ডিসেম্বরে গাজীপুরের আজিজ চৌধুরী অ্যান্ড ব্রাদার্সের নামে গৃহনির্মাণ ঋণ বাবদ ৫৭ কোটি টাকা ছাড় দেওয়া হয়। অথচ ২০১৫ সালের ২০ ডিসেম্বর অনুষ্ঠিত এনআরবিসি ব্যাংকের ৩৯তম বোর্ড সভার আলোচ্যসূচিতে উত্তরা শাখায় কোনো গৃহনির্মাণ ঋণদানের প্রস্তাব ছিল না। এমনকি আগের ৩৮তম বোর্ড সভার নিশ্চিতকৃত কার্যবিবরণীতেও এ ধরনের কোনো ঋণপ্রস্তাব ছিল না।
ব্যাংকের ৩৯তম বোর্ড সভা দেড় মাস আগে হলেও এর কার্যবিবরণী পরিচালকদের দেওয়া হয়নি। ধারণা করা হচ্ছে, ঋণ জালিয়াতির বিষয়টি যাতে ফাঁস না হয়, সেজন্যই পরিচালকদের তথ্য দেওয়া হয়নি।
যদিও ঋণ প্রদানে অনিয়মের বিষয়টি অস্বীকার করেছেন এনআরবিসি ব্যাংকের উত্তরা শাখার ব্যবস্থাপক মো. দেলোয়ার হোসেন।
রাইজিংবিডিকে তিনি বলেন, ‘ঋণ জালিয়াতির অভিযোগটি ভিত্তিহীন। এনআরবিসি ব্যাংকের ঋণ অনুমোদনের ক্ষেত্রে শাখা ব্যবস্থাপকের কোনো ক্ষমতা নেই। এই ব্যাংকের প্রতিটি ঋণ বোর্ডের অনুমোদন ক্রমেই ছাড় করা হয়। তাই বোর্ডকে এড়িয়ে এ ঋণ অনুমোদনের যে অভিযোগ তার আসলেই ভিত্তি নেই।’
তিনি আরো বলেন, ‘এ ঋণের বিষয়টি বেশ আগেই অনুমোদন দেওয়া হয়। আর যথাযথ প্রক্রিয়া অনুসরণ করেই অর্থ ছাড় করা হয়েছে। তবে বোর্ডের বিষয়টি নিয়ে আমি কোনো মন্তব্য করতে চাই না।’
অন্যদিকে ব্যাংকটির ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) দেওয়ান মজিবুর রহমান বিষয়টি এড়িয়ে যেতে চাইলেন। তিনি রাইজিবিডিকে বলেন, ‘ওই ঋণের বিষয়ে এ মুহূর্তে আমি কোনো মন্তব্য করতে পারব না।’
তবে এ বিষয়ে নাম প্রকাশ না করার শর্তে প্রতিষ্ঠানটির এক ঊর্ধ্বতনপক্ষ রাইজিংবিডিকে বলেন, ‘বহুল আলোচিত হলমার্ক ও বেসিক ব্যাংক কেলেংকারির চেয়ে এ ধরনের ঋণ অনিয়ম কোনো অংশে কম নয়। ঋণের বিষয়টি জানাজানি হওয়ার পর ব্যাংকের অডিট কমিটির সভা আহ্বান করলে ঋণ জালিয়াতির হোতাদের হস্তক্ষেপে অডিট কমিটির সভা বন্ধ করে দেয়। যদি জালিয়াতি নাই থাকবে, তবে কেন চেয়ারম্যান সরাসরি অডিট কমিটির সভা বন্ধ করার নির্দেশ দেবেন। শনিবার ব্যাংকটির হেড অফিসসহ অনেক শাখাই খোলা থাকে। অথচ চেয়ারম্যানের নির্দেশনায় ব্যাংকের অনেক শাখা বন্ধ থাকে। তাই অডিট কমিটির সভা হবে না। আমার মতে, বিষয়টি দুর্নীতি দমন কমিশনকে (দুদক) দিয়ে অনুসন্ধান করা প্রয়োজন।’
এক সূত্রে জানা যায়, এনআরবি কমার্শিয়াল ব্যাংকের উত্তরা শাখা থেকে বোর্ডের অনুমোদন ছাড়াই ৫৭ কোটি টাকা গৃহনির্মাণ ঋণ দেওয়ার বিষয়টি জানাজানি হওয়ায় অডিট কমিটির (এসি) চেয়ারম্যান ব্যাংকের ‘ইন্টারনাল কন্ট্রোল অ্যান্ড কমপ্লায়েন্স’ বিভাগের প্রধানকে চৌধুরী গ্রুপকে ঋণ দেওয়ার বিষয়ে বিশেষ পরিদর্শন করে পরবর্তী অডিট কমিটির সভায় তা উপস্থাপনের পরামর্শ দেন। এ ছাড়া কোম্পানি সচিবকে বিষয়টি পরবর্তী অডিট কমিটির সভায় আলোচ্যসূচিতে অন্তর্ভুক্ত করতে নির্দেশ দেওয়া হয়। এর পরিপ্রেক্ষিতে আগামী ৬ ফেব্রুয়ারি শনিবার অডিট কমিটির সভা আহ্বান করা হয়েছিল।
সূত্র আরো জানায়, গত বছরের ২০ ডিসেম্বর অনুষ্ঠিত ৩৯তম বোর্ড সভায় উত্তরা শাখার কোনো ঋণ প্রস্তাব ছিল না। অথচ আশ্চর্য্যজনকভাবে, ৩৯তম বোর্ড সভায় কার্যবিবরণীতে ৫৭ কোটি টাকা ঋণ বিতরণের কথা বলা হয়েছে। এমনকি পূর্ববর্তী ৩৮তম বোর্ড সভাও কোনো ঋণ প্রস্তাব যায়নি। অভিযোগ আছে, ব্যাংকের এমডি দেওয়ান মজিবুর রহমান ও চেয়ারম্যান ইঞ্জিনিয়ার ফরাছাত আলীসহ অন্যরা বড় ধরনের আর্থিক সুবিধার বিনিময়ে ৩৯তম সভার কার্যবিবরণী জালিয়াতি করে এ কাজ করেছেন। এর আগেও এ ধরণের জালিয়াতির ঘটনায় পরবর্তী বিভিন্ন বোর্ড সভায় পরিচালকরা তীব্র ক্ষোভ প্রকাশ করলেও ভবিষ্যতে এমনটা আর হবে না বলে অঙ্গীকার করা হয়েছিল। কিন্তু তারপরেও জাল-জালিয়াতি বন্ধ না হয়ে বরং অব্যাহত রয়েছে।
এর আগেও বাংলাদেশ ব্যাংকের পরিদর্শনে এনআরবিসি ব্যাংকের প্রিন্সিপাল শাখায় জামানতের বিপরীতে নিয়মবহির্ভূতভাবে ১৪০ কোটি টাকা ঋণ দেওয়ার অভিযোগ রয়েছে। যা বর্তমানে দুদক অনুসন্ধান করছে। অর্থ মন্ত্রণালয়ের অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে ২০১৩ সালের জুন মাসে বিশেষ পরিদর্শনে যায় বাংলাদেশ ব্যাংকের ফিন্যান্সিয়াল ইন্টিগ্রিটি অ্যান্ড কাস্টমার সার্ভিসেস বিভাগ। ওই প্রতিবেদনের সূত্র ধরেই অভিযোগ অনুসন্ধানে নেমেছে দুদক। ২০১৩ সালের ২ এপ্রিল আনুষ্ঠানিকভাবে যাত্রা শুরু করে প্রবাসী উদ্যোক্তাদের প্রথম ব্যাংক এনআরবি কমার্শিয়াল। ব্যাংকটির চেয়ারম্যান যুক্তরাষ্ট্রপ্রবাসী প্রকৌশলী ফরাছাত আলী।
**
রাইজিংবিডি/ঢাকা/৬ ফেব্রুয়ারি ২০১৬/এম এ আর/রফিক
রাইজিংবিডি.কম
আরো পড়ুন