ঢাকা     বুধবার   ২৪ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ১১ ১৪৩১

কাফুর ক্লাসরুটিন || রণজিৎ সরকার

কাফুর ক্লাসরুটিন || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ১৬:১০, ২৮ জুন ২০১৫   আপডেট: ০৫:২২, ৩১ আগস্ট ২০২০
কাফুর ক্লাসরুটিন || রণজিৎ সরকার

কাফুর ক্লাসরুটিন একদম ভালো লাগে না। সারা বছর ধারাবাহিকভাবে বাংলা, অংক, ইংরেজি, ইতিহাস, ভূগোল, বিজ্ঞান আর ধর্ম ক্লাস। একের পর এক ক্লাস। একঘেয়ে লাগে ক্লাসগুলো ওর।

 

কাফু স্কুলে এসে ভাবছে, নিজের মতো করে যদি ক্লাসরুটিন সাজানো যেত, তাহলে কত মজা হতো। ক্লাসের পড়ার ধরন বদলে যেত।

 

কাফুর বন্ধু রাফান এসে বলল, ‘কি রে কাফু? চুপচাপ বসে কি ভাবছিস?’

 

রাফানের দিকে তাকিয়ে কাফু বলল, ‘ক্লাসরুটিন। এক ঘেয়েমি লাগছে সব ক্লাস। ক্লাসরুটিন নিয়ে নতুন কিছু ভাবছি।’

রাফান বলল, ‘ক্লাস নিয়ে নতুন করে আবার তুই কি ভাবছিস?’

কাফু বলল, ‘তোকে বলা যাবে না। আমার এই ভাবনা কোনো দিন বাস্তবায়িত হবে না।’

 

রাফান রেগে বলল, ‘যা, ভেবে কাজ হবে না। তা ভাবিস কেন?’

কাফু ধীরে ধীরে বলল, ‘হঠাৎ করে মনের মধ্যে ভাবনাটা এলো। তাই ভাবলাম। কিন্তু আমার একটা বিষয় খুব নাড়া দেয়।’

‘কোন বিষয়? আমাকে বল।’

‘তোকে বলে কাজ হবে না। তাই বলে লাভ নেই।’

‘কি বলিস, আমাকে বলে কাজ হবে না, মানে!’

‘হ্যা, হবে না। আমি জানি।’

‘আমাকে বলে দেখ।’

‘না, তোকে বলা যাবে না। কাজ তো হবে না।’

‘কি বলিস। আমি আছি, বন্ধুরা আছে। সবাই মিলে তোকে সাহায্য করব। বল, কী এমন কথা।’

‘আমি কি অভাবে- অর্থ কষ্টে পড়েছি। সবার কাছে থেকে সাহায্য নিতে হবে?’

‘মানুষ কি শুধু অর্থের অভাবে সাহায্য নেয়। নেয় না। তুই সঠিক করে বলল, কি সমস্যা। যদি আমরা না পারি, তাহলে তো স্যারদের সাহায্য নেব।’

‘বললাম তো বলা যাবে না। কার্যকার হবে না।’

 

রাফান দুই হাত দুই দিক দিয়ে বলল, ‘তুই বল। বাস্তায়িতব করার জন্য প্রয়োজনে মানববন্ধন করব, পথসভা করব। সব করব। তবু তোর কথাটা বল।’

কাফু মাথা নাড়াতে নাড়াতে বলল, ‘আমার মনে হয় কোনো কাজ হবে না।’

‘কথাটা আগে খুলে বলবি তো।’

 

কাফু বেঞ্চে থেকে উঠল। দাঁড়িয়ে বলল, ‘এই ক্লাসরুটিন দিয়ে ক্লাস চলবে না। নতুন করে নতুন ক্লাসরুটিন করতে হবে। যাতে আমাদের পড়ালেখার সুবিধা হয়।’

‘কি সুবিধা চাস তুই। খুলে বল।’

‘আমি যে সুবিধা চাই। তা বললে সঙ্গে সঙ্গে স্কুল থেকে টিসি দিয়ে বের করে দিতে পারে আমাকে।’

‘তাই।’

‘হ্যা।’

‘তাহলে এমন কথা না বলাই ভালো। তোর এই চিন্তা মাথা থেকে ঝেড়ে ফেলে দে। চল, ক্লাসে যাই।’

‘ক্লাসে তো যাবই।’

 

হারেজ স্যার এসে হারিজ হলেন। এসে বললেন, ‘তোদের খুঁজছি।’

কাফু বলল, ‘স্যার, কেন?’

স্যার বললেন, ‘বাইরে চল।’

রাফান বলল, ‘স্যার, আমারও যেতে হবে।’

রাফানের দিকে তাকিয়ে স্যার বললেন, ‘অবশ্যই।’

রাফান বলল, ‘স্যার, কাফুর একটা কথা আছে।’

‘কি কথা?’

‘স্যার, কাফুতো বলছে না।’

‘কাফু, কি কথা আমাকে বল।’

 

মাথার চুলের ভেতর বাঁ হাত দিয়ে ধীরে ধীরে কাফু বলল, ‘স্যার, ক্লাসরুটিনটা যদি একটু পরিবর্তন করা যেতে তাহলে ভালো হতো।’

স্যার রেগে বললেন, ‘তোর কথা মতো ক্লাসরুটিন করতে হবে? আমার তো ইচ্ছে করে বাংলাদেশের শিক্ষা ব্যবস্থা পরিবর্তন করতে।’

কাফু বলল, ‘স্যার কেন?’

‘আমাদের শিক্ষা পদ্ধতি ধনীদের জন্য এক রকম। আর গরিরদের এক রকম। এর ফলে ধনীর ছেলেমেয়েরা উচ্চশিক্ষা গ্রহণ করেছে। তারাই বড় বড় কর্মকর্তা হচ্ছে। গরিবরা গরিব থেকে যাচ্ছে। ধনী-গরিবের এই বৈষম্য দূর করতে হবে।’

 

কাফু বলল, ‘ঠিক বলেছেন স্যার।’

‘ঠিক তো বলেছি। কিন্তু আমাদের ভাবনার কোনো মূল্য নেই। যাদের ভাবার কথা তারা যদি না ভাবে আমাদের পরিবর্তন আসবে কেমন করে?’

রাফান বলল, ‘স্যার, এই নিয়ে আমরা কিছু করতে পারি না।’

‘কী করব। আমরা বললে কিছুই হবে না। যাদের ভারাব বিষয় তারা ভাবুক। চল, জাতীয় সংগীত গাইতে হবে।’

 

স্যারের সঙ্গে জাতীয় সংগীত গাওয়ার জন্য মাঠে গেল ওরা।

 

 

 

 

রাইজিংবিডি/ঢাকা/২৮ জুন ২০১৫/রণজিৎ/সনি

রাইজিংবিডি.কম

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়