ঢাকা     বৃহস্পতিবার   ২৫ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ১২ ১৪৩১

কিশোরগঞ্জে বাঁধ ভেঙে হাওরের ফসলের ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি

রুমন চক্রবর্ত্তী || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ১৬:০১, ২৭ এপ্রিল ২০১৫   আপডেট: ০৫:২২, ৩১ আগস্ট ২০২০
কিশোরগঞ্জে বাঁধ ভেঙে হাওরের ফসলের ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি

ডুবে যাওয়া ধান কেটে নিয়ে যাচ্ছেন কৃষক (ছবি : রুমন)

কিশোরগঞ্জ প্রতিনিধি : হাওর মানেই বোরো ধান। আর সেদিক থেকে কিশোরগঞ্জের হাওরে এবারো বোরো ধানের ফলন ভালো হয়েছে। কিন্তু অতি বৃষ্টির কারণে ফসল তলিয়ে যাওয়ায় হাসি হারিয়েছে কৃষকের মুখ।

 

কয়েক দিনের টানা বৃষ্টি ও উজান থেকে নেমে আসা পাহাড়ি ঢলে হাওর এলাকার বিভিন্ন নদ-নদীর পানি বেড়ে ফসল তলিয়ে যেতে শুরু করেছে। এমনকি বন্যা প্রতিরোধে নির্মিত বাঁধ ভেঙ্গে যাওয়ার দিনদিন পরিস্থিতির অবনতিও ঘটছে। উজানের পাহাড়ি ঢলে ভেঙে গেছে, কিশোরগঞ্জের হাওর উপজেলা ইটনার বিজয় বাঁধ।

 

 

জানা গেছে, ৩২ কিলোমিটার বিজয় বাঁধের মিঠামইনের কৈশর এলাকার বিলসাটনি খালপাড় পয়েন্ট ভেঙে শুক্রবার বিকেল থেকে কালনি নদীর পানি ঢুকতে থাকে।

 

অভিযোগ উঠেছে, বিজয় বাঁধের ভেতর ১৬ হাজার একর বোরো জমি রয়েছে, যেখান থেকে প্রায় ৬০ হাজার মেট্রিক টন ধান পাওয়া যায়। কিন্তু প্রয়োজনীয় সংস্কারের অভাবে প্রায় প্রতিবছরই বাঁধটি আগাম বন্যার ঝুঁকিতে থাকে। বাঁধের কুড়ের খাল, দুধবান্নার খাল ও বিলসাটনির খাল অংশ সবচেয়ে ঝুঁকিপূর্ণ।

 

তবে এ বছর কুড়ের খাল ও দুধবান্নার খাল সংস্কার করা হলেও বিলসাটনির খালের কোনো সংস্কার করা হয়নি। ফলে টানা বৃষ্টি ও পাহাড়ি ঢলে এটি হুমকির মুখে পড়ে। এ অবস্থায় বিলসাটনির খালপাড়ের বাঁধে কয়েক হাজার মানুষ স্বেচ্ছাশ্রমে ফসল রক্ষা বাঁধ রক্ষার চেষ্টা করে। কৃষকরা রাতদিন চেষ্টা চালিয়েও বাঁধটিকে রক্ষা করতে পারেননি।

 

ইটনার জয়সিদ্ধি ও এলংজুরি, মিঠামইনের কাটখাল, বৈরাটি, ঢাকী এবং হবিগঞ্জের আজমিরীগঞ্জ উপজেলার কাকাইলচর-এ ছয়টি ইউনিয়নের ২২টি গ্রামের কৃষকের জমি রয়েছে এই বাঁধের হাওরে। এই বাঁধের ভিতরে ১৬ হাজার একর জমিতে বোরো আবাদ করা হয়েছিল। পানিতে বাঁধের ভেতরের হাওরের বেশির ভাগ জমির ধান তলিয়ে গেছে।

 

কৃষকরা জানিয়েছেন, বিজয় বাঁধ এলাকায় এখনও হাওরের অন্তত ৪০ ভাগ ধান কাটা বাকি আছে। তাদের দেওয়া তথ্য মতে এ হাওরে ১৬ হাজার একর জমিতে বোরো আবাদ করা হয়েছিল। এদিকে বাঁধ ভেঙে যাওয়ায় ফসল নষ্টের পাশাপাশি মরার উপর খাড়ার ঘা হয়ে এসেছে শ্রমিক সংকট। পানিতে হাওর তলিয়ে যাওয়ায় নিরুপায় কৃষক যতোটা সম্ভব ফসল সংগ্রহের শেষ চেষ্টা করে যাচ্ছেন। তবে শ্রমিকের অভাবে অনেক কৃষক তলিয়ে যাওয়া ধান রক্ষা করতে পারেননি।

 

বাঁধ এলাকার কৃষক আব্দুর রহমান জানান, বিজয় বাঁধের হাওরে তার প্রায় ৩০ একর জমি রয়েছে। এখন পর্যন্ত ১৬/১৭ একর জমি কাটতে পারলেও বাকি জমি তলিয়ে গেছে। শ্রমিকের অভাবে তলিয়ে যাওয়া জমির ধান কেটে আনতেও পারছেন না। কৃষক বাবলু মিয়া জানান, তার সাত একর জমির মধ্যে চার একর একর জমির ধান কাটতে পেরেছেন, বাকি গুলো কি হবে একমাত্র আল্লাহই জানেন।

 

ইটনার ইউএনও মোহাম্মদ আবদুল্লাহ বলেন, ‘মিঠামইনের হাশিমপুর এলাকা দিয়ে ওই হাওরটিতে পানি ঢুকে সেটি তলিয়ে গেছে। এর ফলে ইটনার জয়সিদ্ধি ইউনিয়নের ২০০ একর জমি তলিয়ে গেছে।’

 

কিশোরগঞ্জ কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক অমিতাভ দাস জানিয়েছেন, হাওরের ধান কাটা এরই মধ্যে ৫০ থেকে ৬০ ভাগ শেষ হয়েছে। বিজয় বাঁধের কয়েকটি এলাকা দিয়ে পানি ঢুকে নিচু জমিগুলো তলিয়ে গেছে। তার হিসেব মতে, তিন থেকে সাড়ে তিনশ একর জমি তলিয়ে যেতে পারে।  কৃষকরা তলিয়ে যাওয়া ফসলই কেটে ঘরে নেওয়ার চেষ্টা করছে বলে জানান তিনি।

 

 

 

 

রাইজিংবিডি/কিশোরগঞ্জ/২৭ এপ্রিল ২০১৫/রুমন চক্রবর্ত্তী/সনি

রাইজিংবিডি.কম

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়