ঢাকা     বুধবার   ২৪ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ১১ ১৪৩১

রাকিবকে নিয়ে স্বপ্ন পূরণ হলো না মায়ের

মুহাম্মদ নূরুজ্জামান || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ১২:১৮, ৫ আগস্ট ২০১৫   আপডেট: ০৫:২২, ৩১ আগস্ট ২০২০
রাকিবকে নিয়ে স্বপ্ন পূরণ হলো না মায়ের

রাকিবের স্বপ্নের কথা বলছেন, আর কেঁদেই যাচ্ছেন মা

মুহাম্মদ নূরুজ্জামান, খুলনা : মো. রাকিব হাওলাদার। বয়স মাত্র ১৩। দুরন্ত কিশোর। সংসারে অভাবের কারণে পঞ্চম শ্রেণির পর আর লেখাপড়া করতে পারেনি। একদিন বড় ‘ম্যাকানিক’ হওয়ার স্বপ্ন নিয়ে কাজ শিখতে যোগ দেয় মোটরসাইকেল গ্যারেজে। এভাবেই চলছিল সবকিছু। রাকিব কাজও শিখে ফেলে দ্রুত। আসন্ন কুরবানির ঈদের আগেই সাতক্ষীরায় গ্রামের বাড়িতে গিয়ে একটি মোটরসাইকেলের গ্যারেজ করে দেওয়ার স্বপ্ন ছিল মায়ের। কিন্তু সে স্বপ্ন অধরাই থেকে গেল। পৈশাচিক নির্যাতনে রাকিবের স্বপ্নও তার সঙ্গে মাটিতে মিশে গেল।

 

এসব স্বপ্ন ও ইচ্ছার কথা স্মরণ করে বারবার কান্নায় ভেঙে পড়ছেন রাকিবের মা লাকি বেগম। তার কান্না যেন থামতেই চাইছে না। নানা স্থান থেকে স্বজন ও লোকজন এসে রাকিবের মা, বোন ও বাবাকে সান্ত¦না দিচ্ছেন। কিন্তু তার মা আর ছোট বোনের গগণবিদারি আহাজারিতে পুরো পরিবেশ ভারি হয়ে উঠছে। চোখের পানি আটকাতে পারছে না আগত লোকজও।

 

বুধবার রাকিবের বাসায় গিয়ে এমনই চিত্র দেখা যায়। শোকে পাথর হয়ে আছেন মা। ছেলেকে নিয়ে তার স্বপ্ন আর স্মৃতিচারণের বিলাপ ছাড়া মুখে আর কোন কথা নেই। ছেলে হারানোর শোকে সারারাত ঘুমাননি। প্রতিবেশীরা ওষুধ আর কিছু খাবার খাইয়েছেন। অনেকে সান্ত¦না দেয়ার চেষ্টা করেও ব্যর্থ হয়েছেন।

 

কাঁদতে কাঁদতে এ প্রতিবেদককে রাকিবের মা বলেন, ‘শরীফের গ্যারেজে রাকিবকে প্রতিদিন ১০ টাকা করে দিত; আবার কোন দিন দিত না। এ কারণে সে কাজ ছেড়ে নাসিরের গ্যারেজে যোগ দেয়। এখান থেকে সে প্রতিদিন ৫০ টাকা করে মজুরি পেত।

 

তিনি বলেন, ‘আমার বাবারে কইছিলাম, ভালো করে কাজ শেখো, তোমারে মোটরসাইকেলের একটা গ্যারেজ করে দেব। সে জন্য টাকাও জমা করছিলাম। আমার বাবাও ভালো করে কাজ শিখে নিজেও গ্যারেজের জন্য টাকা জমা করেছে। কোরবানির ঈদের আগেই সাতক্ষীরার রসুলপুরে গিয়ে একটা গ্যারেজ করার ইচ্ছা ছিল তার। কিন্তু শরীফ ও মিন্টুরা সে স্বপ্ন ভেঙে চুরমার করে দিল।’

 

লাকি বেগম বলেন, কখন জানি রাকিব এসে বলে, ‘ও মা দরজা খোল’ এ কারণে তিনি আর চোঁখ বুজতে পারছেন না। চোখ খুললেই দেখছেন, রাকিব তাকে ডাকছে।

 

রাকিবের বাবা মো. নূরুল আলম বলেন, ‘আমি আর কোন দিনই আমার কলিজার টুকরো রাকিবকে ফিরে পাবনা, কিন্তু যারা তাকে মেরেছে, তাদের যেন ফাঁসি হয়’। রাকিবের  ছোট বোন পারভীন আক্তার রিমিও ভাই হত্যাকারীদের ফাঁসি দাবি করেছে।

 

গত ২ আগস্ট বিকেলে নগরীর টুটপাড়া কবরখানাসংলগ্ন শরীফ মটরস নামক একটি মোটরসাইকেল গ্যারেজের ভিতরে নিয়ে গিয়ে কিশোর রাকিবের পায়ুপথে কম্প্রেশার মেশিন দিয়ে পেটে হাওয়া ঢুকিয়ে হত্যা করে। এ ঘটনায় ক্ষুব্ধ জনতা গ্যারেজ মালিক ওমর শরীফ ও তার কথিত চাচা মিন্টু খানকে গণধোলাই দিয়ে পুলিশে সোপর্দ করে।

 

 

 

 

রাইজিংবিডি/খুলনা/০৫ আগস্ট ২০১৫/মুহাম্মদ নূরুজ্জামান/রহমান

রাইজিংবিডি.কম

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়