কেঁচো সার বদলে দেবে কৃষকের ভাগ্য
সোহেল মিয়া || রাইজিংবিডি.কম
কম্পোস্ট সার তৈরিতে ব্যস্ত গোবিন্দ কুমার মোদক
সোহেল মিয়া, রাজবাড়ী : মাটির উর্বরতা রক্ষায় চাষাবাদে রাসায়নিক সারের ব্যবহার কমিয়ে জৈব সারের ব্যবহার বাড়াতে কেঁচো কম্পোস্ট সার তৈরিতে ব্যস্ত এক কৃষক।
কেঁচো কম্পোস্ট সার বদলে দেবে এই অঞ্চলের কৃষকের ভাগ্য এমনটাই প্রত্যাশা তার। কেঁচো কম্পোস্ট সার তৈরির এই উদ্যোক্তা কৃষকের নাম গোবিন্দ কুমার মোদক।
তিনি রাজবাড়ী জেলার বালিয়াকান্দি উপজেলার নবাবপুর ইউনিয়নের দিলালপুর গ্রামের বাসিন্দা। স্বল্প খরচে কম্পোস্ট ব্যবহারে আশানুরুপ ফল পাওয়ায় কেঁচো কম্পোস্ট সারের কদর বাড়ছে এই অঞ্চলের কৃষকের মধ্যে। অনেক কৃষক এখন কেঁচো কিনে নিজেরাই কম্পোস্ট সার তৈরি করে জমিতে ব্যবহার করে উপকৃত হচ্ছেন।
সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, একটি দোচালা টিনের ঘরের পিছনে স্ত্রী শিউলী বেগম, দুই ছেলে পিয়াস ও দ্বীপ এবং কৃষক গোবিন্দ ব্যস্ত সময় পার করছেন কেঁচো কম্পোস্ট সার তৈরিতে। প্রায় ৩০টি মাটির তৈরি পাত্রের মধ্যে গোবরের সারের ভেতরে কেঁচো দিয়ে তৈরি হচ্ছে এই সার। এক মাসের মধ্যে এক একটি পাত্র পরিপূর্ণ কম্পোস্ট সারে পরিণত হয়। যা জমিতে ব্যবহার করলে মাটির শক্তি দ্বিগুণ বৃদ্ধি পায়।
তিনি জানান, কেঁচো সার তৈরি করার পর প্রথমে নিজের জমিতে প্রয়োগ করি। বিভিন্ন শাক-সবজি ও অন্যান্য ফসলি জমিতে প্রয়োগ করে ভাল ফলাফলও পাওয়া গেছে। জমিতে এই সার ব্যবহারের ফলে আমাকে অন্য কোনো রাসায়নিক সার প্রয়োগ করতে হয়নি। ফলে অর্থনৈতিকভাবে আমি অনেকটাই লাভবান হয়েছি।
তিনি জানান, প্রায় ৪ মাস আগে থেকে এই কম্পোস্ট সার তৈরির কাজ শুরু করেছি। প্রথম দিকে নিজের জমিতে ব্যবহার শুরু করলেও পরবর্তীতে প্রতিবেশী গ্রামগুলোর কৃষকের মধ্যে জানাজানি হয়ে গেলে এখন কৃষকেরা আমার বাড়িতে ভিড় জমাচ্ছে। কৃষকদের মধ্যে ব্যাপক চাহিদা থাকার কারণে এখন এটি আমি বাণিজ্যিকভাবে তৈরি করার চেষ্টা চালাচ্ছি। কেঁচো সার ব্যবহার কৃষকের মধ্যে নিশ্চিত করতে পারলে মাটির উর্বরতা বৃদ্ধির সঙ্গে সঙ্গে এই অঞ্চলের কৃষকও লাভবান হবেন।
তিনি আরো জানান, সীমিত খরচে খুব সহজেই জৈব সারের চাহিদা মেটাতে পারে এই কেঁচো সার। জমির উর্বরতা বাড়িয়ে তোলাসহ বিষমুক্ত ফসল ফলাতে কেঁচো কম্পোস্ট সারের কোনো বিকল্প নেই। তবে অর্থনৈতিক সমস্যার কারণে তিনি কেঁচোর কম্পোস্ট সার তৈরি বৃদ্ধি করতে হিমশিম খেয়ে যা্েচ্ছন। সরকারিভাবে অর্থনৈতিক সহযোগিতা পেলে সার উৎপাদন বৃদ্ধি করা সম্ভব হতো বলে তিনি দাবি করেন। এতে এই অঞ্চলের কৃষক উপকৃত হতো।
বালিয়াকান্দি উপজেলা কৃষি সম্প্রসারণ কর্মকর্তা কৃষিবিদ গোলাম ছামদানী জানান, কেঁচো সারের চাহিদা প্রতিবছরই বাড়ছে। কৃষক গোবিন্দ নিজ উদ্যোগে কেঁচো কম্পোস্ট সার তৈরি করছে যা আমাদের কৃষি অর্থনীতিতে ব্যাপক ভূমিকা রাখবে। এই সার ব্যবহার করলে কৃষক লাভবান হবে ও মার্টির উর্বরতা শক্তিও রক্ষা পাবে। আমরা বিভিন্ন প্রশিক্ষণের সময় এই সার ব্যবহার করতে কৃষকদের পরামর্শ দিচ্ছি।
রাইজিংবিডি/রাজবাড়ী/২১ নভেম্বর ২০১৫/সোহেল মিয়া/রিশিত
রাইজিংবিডি.কম
আরো পড়ুন