কোটা সংস্কার আন্দোলনের নেত্রী লুমা ৩ দিনের রিমান্ডে
নিজস্ব প্রতিবেদক : রাজধানীর রমনা মডেল থানায় দায়ের করা তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি আইনের মামলায় কোটা সংস্কার আন্দোলনের কেন্দ্রীয় কমিটির যুগ্ম আহ্বায়ক লুৎফুন্নাহার লুমার তিন দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেছেন আদালত।
বৃহস্পতিবার শুনানি শেষে ঢাকা মহানগর হাকিম কাজী কামরুল ইসলাম জামিন নামঞ্জুর করে রিমান্ডের আদেশ দেন।
মামলার তদন্ত কর্মকর্তা পুলিশের কাউন্টার টেররিজম ইউনিটের সাইবার সিকিউরিটি অ্যান্ড ক্রাইম বিভাগের পরিদর্শক মো. রফিকুল ইসলাম লুমার ৫ দিনের রিমান্ড চেয়ে আবেদন করেন।
আবেদনে বলা হয়, গত ২৯ জুলাই ঢাকার এয়ারপোর্ট রোডে দুর্ঘটনায় দুই শিক্ষার্থী নিহতের ঘটনায় স্কুল-কলেজের কোমলমতি ছেলে-মেয়েরা নিরাপদ সড়কের দাবিতে আন্দোলন করে। ওই আন্দোলনকে কেন্দ্র করে রাজনৈতিক ফায়দা লুটের জন্য বিভিন্ন সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে প্রচারিত বিভিন্ন উসকানিমূলক লেখা/পোস্ট/ফটো/ভিডিওর মাধ্যমে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি অবনতির অপচেষ্টাকারীদের বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করা হয়।
আরো বলা হয়, এজাহারে উল্লেখিত ১৭ নং ক্রমিকে বর্ণিত ফেসবুক আইডি নেম : Luma Sarker এর পরিচালনাকারী হলো লুৎফুন্নাহার লুমা ওরফে নীলা ওরফে লুমা সরকার। আসামির টাইম লাইনে পোস্ট করা অশ্রাব্য স্ট্যাটাস দেখে যে কেউ নীতিভ্রষ্ট হতে পারে। আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির অবনতি হতে পারে। গোপন তদন্তে লুমা অনেক সক্রিয়ভাবে রাষ্ট্রবিরোধী কর্মকাণ্ডের সাথে সম্পৃক্ত আছে বলে জানতে পেরেছে পুলিশ। লুমার কাছ থেকে দুটি মোবাইল ফোন জব্দ করা হয়েছে।
লুমার সহযোগীদের শনাক্ত, অপপ্রচার বন্ধ ও মামলার প্রকৃত রহস্য উদঘাটনের জন্য ৫ দিনের রিমান্ড মঞ্জুরের প্রার্থনা করেন তদন্ত কর্মকর্তা।
আসামিপক্ষে নূর উদ্দিন, জায়েদুর রহমানসহ প্রমুখ আইনজীবী রিমান্ড বাতিলপূর্বক জামিনের আবেদন করেন। শুনানিতে তারা বলেন, লুমার বিরুদ্ধে যে অভিযোগ আনা হয়েছে তা সত্য নয়। আমরা জানি, ওই দিন দুই শিক্ষার্থী মারা গেছে। আর আসামিকে কেন রিমান্ডে নেওয়া হবে তা উল্লেখ করা হয়নি। পুলিশ আবেদন দিয়ে বলে, তদন্তের স্বার্থে, অমুকের স্বার্থে রিমান্ড চাই। এটা আইনসঙ্গত না।
তারা বলেন, মেয়েটির বাবা আব্দুল কুদ্দুস একজন অধ্যাপক ছিলেন। তিনি মারা গেছেন। তার কোনো ভাই নেই। তারা তিন বোন। আদালতে তার মা এসেছে। গরিব মানুষ তারা। আর অধিকাংশ সচেতন মানুষ কোটা সংস্কার আন্দোলনের পক্ষে। তার নামে একটা কথিত ভিডিও চালিয়ে দেওয়া হচ্ছে। অযৌক্তিক রিমান্ড আবেদন করা হয়েছে। মেয়েটির উজ্জ্বল ভবিষ্যৎ নষ্ট হয়ে যাবে।
তারা আরো বলেন, আন্দোলনের সময় ভয়ে দ্বিতীয় বর্ষের পরীক্ষা না দিয়ে সে বাড়িতে চলে যায়। তার বিরুদ্ধে মামলা করে পুলিশ রিমান্ড চেয়েছে। লুমা ষড়যন্ত্রের শিকার।
রিমান্ড বাতিল করে জামিন আবেদন করেন আইনজীবীরা। আর জামিন না দিলে জেলগেটে জিজ্ঞাসাবাদ করা হোক বলে দাবি করেন তারা।
উভয় পক্ষের শুনানি শেষে আদালত জামিন নামঞ্জুর করে লুমার তিন দিনের রিমান্ডের আদেশ দেন।
এদিকে, রিমান্ড শুনানিকালে আদালতে উপস্থিত ছিলেন লুমার মা রাশেদা বেগম। মেয়ের রিমান্ড মঞ্জুরের কথা শুনে তিনি বলেন, ওরে আল্লাহ রে, আমার মেয়েটা মরে যাবে।
রাশেদা বেগম বলেন, আন্দোলনের সময় আমার মেয়ে তিনটা পরীক্ষা না দিয়ে ভয়ে বাড়ি চলে যায়। একদিন টিভিতে আন্দোলন দেখে বলে, আম্মু কী অবস্থা দেখছ। তখন আমি তাকে বলি, কপালে যার যা আছে তাই তো হবে।
মেয়ে লুৎফুন্নাহার লুমার মুক্তির দাবি জানান রাশেদা বেগম।
বুধবার ভোর সাড়ে ৪টার দিকে সিরাজগঞ্জের বেলকুচি উপজেলার খিদ্রচাপড়ি এলাকায় দাদার বাড়ি থেকে লুৎফুন্নাহার লুমাকে গ্রেপ্তার করে কাউন্টার টেররিজম ইউনিট ও বেলকুচি থানার পুলিশ।
লুৎফুন্নাহার লুমা রাজধানীর ইডেন মহিলা কলেজের সমাজবিজ্ঞান বিভাগের স্নাতক দ্বিতীয় বর্ষের শিক্ষার্থী।
রাইজিংবিডি/ঢাকা/১৬ আগস্ট ২০১৮/মামুন খান/রফিক
রাইজিংবিডি.কম
আরো পড়ুন