ঢাকা     শনিবার   ২০ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ৭ ১৪৩১

কোথায় পাব সঠিক ইসলাম

ফকির উয়ায়ছী || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ১৪:২৯, ৭ আগস্ট ২০১৪   আপডেট: ০৫:২২, ৩১ আগস্ট ২০২০
কোথায় পাব সঠিক ইসলাম

ছবি : সংগৃহীত

ফকির উয়ায়ছী : বর্তমানে ইসলাম (শান্তি) নামক শব্দটি পরিচালিত হচ্ছে ধর্ম ব্যবসায়ীদের হাতে। প্রথমত হচ্ছে বিজ্ঞ আলেম সাহেবদের কাছে এবং দিতীয়ত হচ্ছে ভণ্ড পীরদের হাতে। ইসলামের জন্য আহ্বান দাওয়াত বর্তমানে বিক্রি ব্যতীত অন্য কিছুই নয়।

আমরা একটু খেয়াল করলেই দেখতে পাবো কোনো ইমাম টাকা ব্যতীত নামাজ পড়ান না। ওয়াজ মাহফিল, কোরআন খতম, এমনকি মরলে জানাযাটা পড়িয়েও টাকা নেন। কোনো কিছুই বিনিময় ছাড়া হয় না। আর কোনো পীরের আস্থাভাজন বা নৈকট্য মিলতে যে যে পরিমাণ টাকা বা বড় গরু দেবে তার সম্পর্ক ততই গভীর হবে।

এই যদি পরিস্থিতি হয়, তাহলে আমাদের কোরআনের দুইটি আয়াতের কথা ভুলেই যেতে হয়। আল্লাহ পবিত্র কোরআনে সূরা আস-শুরা ৪২:২৩ নং আয়াতে নবীকে উদ্দেশ্য করে বলেছেন, ‘আপনি বলুন, আমি আমার দাওয়াতের বিনিময়ে তোমাদের কাছে আত্মীয়তার সম্প্রীতি (ভালবাসা) ব্যতিরেকে অন্য কোনো প্রতিদান প্রত্যাশা করি না।’

এই আয়াত কোনোদিন তো শুনি না হুজুরদের মুখে। বরং ‘আমার বাণী অল্পমূল্যে বিক্রি করো না’ এই আয়াতটা একটু বেশিই শোনা যায়। স্বার্থ হাসিলের জন্য এই আয়াত তারা বেশি বেশিই প্রচার করেন।

এ ছাড়াও কোরআনের সূরা বাকারার ১৭৪নং আয়াতটির দিকে দৃষ্টি দেওয়ার অনুরোধ করছি। আয়াতটিতে বলা হয়েছে, ‘নিশ্চয় যারা সেসব বিষয় গোপন করে, যা আল্লাহ কিতাবে নাযিল করেছেন এবং সেজন্য অল্প মূল্য গ্রহণ করে। তারা আগুন ছাড়া নিজের পেটে আর কিছুই ঢুকায় না। আল্লাহ কেয়ামতের দিন তাদের সাথে না কথা বলবেন, না তাদের পবিত্র করা হবে। বস্তুত তাদের জন্যে রয়েছে বেদনাদায়ক আযাব।’

খেয়াল করে দেখা দরকার এই আয়াতটি কোনোদিন শুনেছেন কি? এই আয়াতটাই গোপন রাখছেন তারা। সে জন্যই আমরা সঠিক ও প্রকৃত ইসলাম থেকে অনেক দূরে। এমনকি ইসলাম (শান্তি) নামক শব্দটি আমাদের থেকেও দূরেই থাকে।
চিন্তা করে দেখবেন প্রতি হাজারে কয়জন মানুষ তার নিজ হালাতের (বর্তমান অবস্থা) উপর আলহাদুলিল্লাহ বলে প্রতিষ্ঠিত থাকতে পারেন? হাজারে একজনের বেশি পাওয়া যাবে না। অথচ আল্লাহ যা করেন ভালোর জন্যই করেন। যেহেতু আলহামদুলিল্লাহ বলে মেনে নেওয়াটাই তো শান্তির। আমরা কি তা পারছি? সন্তুষ্টি যেহেতু আমাদের মধ্যে নেই, সেহেতু আমরা কি করে সঠিক ইসলাম (শান্তির) এর হতে পারি?

হাজারো কষ্ট, অসুবিধা বা দুঃখ থাকতেই পারে, আলহামদুলিল্লাহ বলে মেনে নিতে পারার নামকেই আমি সঠিক ইসলামের অনুসারী বলে মনে করি। ইহ জগতে যারাই একাধিক বিভক্তি এনেছে; তারা আল্লাহ এবং তার রাসুলের পথ ছেড়ে দিয়ে বেদআত এর জন্ম দিয়ে নানান শ্রেণিতে বিভক্ত করেছেন।

যারা মুসলমানদের সুন্নি, শিয়া, এবং বিভিন্ন মাযহাব মালেকি, সাফেয়ী, হাম্বলী, হানাফি আরও অনেক দলে ভাগ করেছেন তাদের এবং তাদের অনুসারিদের কি মনে হয় না- যে কাজ আল্লাহ এবং রাছুল সা. করেননি সেটা করা বা বলা বেদআত ছাড়া অন্য কিছু কি? সবারই উচিৎ এই সব নতুন চিন্তা বাদ দিয়ে ইসলামের গোড়ার সঠিক ইতিহাস খুঁজে এবং সঠিক মুসলমান হতে চেষ্টা করা। সেই রকমভাবে যেমন আল্লাহ ঘোষণা দিয়েছেন কোরআনের সূরা বাকারার ২:১৩২ নম্বর আয়াতে, ‘এরই ওছিয়ত করেছে ইব্রাহীম তার সন্তানদের এবং ইয়াকুবও যে, হে আমার সন্তানগণ, নিশ্চয় আল্লাহ তোমাদের জন্য এ ধর্মকে মনোনীত করেছেন। কাজেই তোমরা মুসলমান না হয়ে কখনও মৃত্যুবরণ করো না।’

আরেক আয়াত ৩:১০২-এ বলা হয়েছে, ‘হে ঈমানদারগণ! আল্লাহকে যেমন ভয় করা উচিৎ ঠিক তেমনিভাবে ভয় করতে থাক। এবং অবশ্যই মুসলমান না হয়ে মৃত্যুবরণ করো না।’

মানুষকে দেখানো নয় নিজকে জানার জন্য, আল্লাহর অনুগ্রহ পাওয়া এবং রাসুল সা. এর সাফায়াত লাভের জন্য। লেবাসের মুসলমান নয়, আকিদার মুসলমান হওয়া দরকার।

যেমন মালেক বিন মারোয়ান এর মত মুসলমান, লোক দেখানো নামাজি আর কেউই ছিলেন না। তিনি সকলের আগে মসজিদে যেতেন এবং সকলের পরে বের হতেন। এই সুযোগে মসজিদের মধ্যে সকল আলোচনা তার সামনেই হতো। তাকে বিশ্বাস করেই কেউ কিছুই গোপন করতেন না। তার আমলে ইয়াজিদের উমাইয়া বাহিনী মদিনা আক্রমণ করে। সে ব্যাপারে সমস্ত গোপন খবরই মালেক বিন মারোয়ানের কাছ থেকে নিয়ে আক্রমণে পূর্ণ সুবিধা ভোগ করে ইয়াজিদ।

 

রাইজিংবিডি/ঢাকা/৭ আগস্ট ২০১৪/সনি

রাইজিংবিডি.কম

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়