ঢাকা     বৃহস্পতিবার   ২৫ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ১২ ১৪৩১

কোরআন অনুযায়ী নেতা সম্পর্কে আলোচনা

ফকির || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ১৫:৩৭, ২৭ আগস্ট ২০১৪   আপডেট: ০৫:২২, ৩১ আগস্ট ২০২০
কোরআন অনুযায়ী নেতা সম্পর্কে আলোচনা

ফকির উয়ায়ছী : পবিত্র কোরআন অনুযায়ী ওলীল আমর শব্দটির অনুরূপ শব্দ হচ্ছে ইমাম, ফার্সী পীর, ঊর্দু ওস্তাদ, ইংরেজি লিডার/মাস্টার/টিচার, বাংলা নেতা/হুকুম দাতা/ হুকুমের অধিকারী। এমনকি আরবি আমাম শব্দ থেকে ইমাম শব্দটির উৎপত্তি; যার আভিধানিক অর্থ হলো, সম্মুখে, সামনে, অগ্রে ইত্যাদি।
ওলীল আমর যে বা যারাই হবে তাদেরকে আমাদের সামনে অর্থাৎ দুই চোখের সামনেই হতে হবে।

 

অন্তত যখন আমরা তাদের নেতা বলে মেনে নেব। এমনকি রাসুল (সা.)- এর হাদিস অনুযায়ী মৃত্যুর পর সে নেতাকেই আমাদের সঙ্গে হাশরের ময়দানে আল্লাহ উঠাবেন।

 

হযরত আনাস (রা.) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, ‘এক ব্যক্তি রাসুল (সা.)- এর কাছে এসে জিজ্ঞাসা করল, ইয়া রাসূলুল্লাহ! কিয়ামত কখন হবে? নবী (সা.) নামাজে দাঁড়িয়ে গেলেন। নামাজ শেষে তিনি জিজ্ঞাসা করেন, কিয়ামত হওয়ার ব্যাপারে প্রশ্নকারী লোকটি কোথায়? সে বলল, ইয়া রাসুল (সা.)! এই যে, আমি। তিনি জিজ্ঞাসা করলেন, তুমি কিয়ামতের জন্য কি প্রস্তুতি নিয়েছ? সে বলল, হে আল্লাহর রাসূল! আমি অবশ্য তেমন দীর্ঘ  সময় নিয়ে নামাজও পড়িনি, রোজাও রাখি নি, তবে আমি নিশ্চয়ই আল্লাহ ও তার রাসুল (সা.)- কে ভালবাসি। রাসূল সা. বললেন, যে ব্যক্তি যাকে ভালোবাসে, সে রোজ কিয়ামতে তার সঙ্গেই থাকবে। আর তুমিও যাকে ভালোবাস তার সঙ্গেই থাকবে’। তিরমিজী-২৩২৭
উক্ত এই হাদিসটিতে রাসুল (সা.) কিন্তু বলেন নাই তুমি আমার সঙ্গে থাকবে বরং বলেছেন তুমি যাকে পছন্দ কর তার সঙ্গেই থাকবে। খুব সহজেই বোঝা যায় উম্মতে মুহাম্মদি সবার জন্যই একই নিয়ম।
যারা রাসুলকে (সা.) সামনে পেয়েছিলেন এবং নেতা হিসাবে মেনেছিলেন এবং তারা তাদের মৃত্যু পর্যন্ত রাসুলকেই   (সা.) নেতা হিসাবে মেনে মারা গেছেন। তারা তো রাসুল (সা.)- এর সাথ পাবেনই। তারা বড়ই ভাগ্যবান। আর যারা রাসুলকে (সা.) পাওয়ার পরও মৃত্যু পর্যন্ত তার আদেশ নিষেধের খেলাফ করে মুত্যুবরণ করেছেন তারা কতই না দুর্ভাগা। এমনকি জাহান্নামী বলতেও দ্বিধা করার কোন কারণ নেই। এই দুর্ভাগাদের কথা বুখারী শরীফের হাউজে কাউসার অধ্যায়ে হাদিস বিদ্যমান দেখে চিন্তা করার অনুরোধ রইল।  

 

এই নেতার ব্যাপারে আল্লাহ পবিত্র কোরআনে বলেছেন সূরা বনি ইস্রাইলের ৭১ নং আয়াতে ১৭:৭১# ‘স্মরণ কর, যেদিন আমি প্রত্যেককে তার নেতাসহ আহবান করব, অতঃপর যাদেরকে তাদের ডান হাতে আমলনামা দেওয়া হবে, তারা নিজেদের আমলনামা পাঠ করবে এবং তাদের প্রতি সামান্য পরিমাণও জুলুম হবে না।’

 

এই আয়াতটাও ভাল করে চিন্তা করলে উপরে উল্লেখিত হাদিসের সঙ্গে মিলই পাওয়া যায়। আল্লাহ নেতা ছাড়া যেহেতু কাউকেই ডাকবেন না, সেহেতু নেতা নির্ধারন করতেই হবে। না হয় আল্লাহ ডাকবেনই না। আর আল্লাহ যদি না ডাকেন তাদের জন্য তো জাহান্নাম অবধারিত। কারণ, আল্লাহর জায়গা তো দুইটাই। এক হলো জান্নাত দ্বিতীয় হলো জাহান্নাম।

 

আল্লাহর কোরআন রাসুল (সা.)-এর সহিহ হাদিস অনুযায়ী যার যার পছন্দ মত নেতা জীবনদশায় নির্ধারিত করতেই হবে। রাসুল (সা.) জীবিত থাকার শেষ বৃহস্পতিবারে ওসিয়ত লেখার সময় হযরত ওমর বলেছিলেন, তোমাদের নিকট আল্লাহর কোরআন বর্তমান আছে। উহাই আমাদের জন্য যথেষ্ট। -মুসলিম শরীফ হাদিস নং- ৪০৯০। কতই না ভাল হতো যদি এই কথার উপরই সমস্ত ইসলাম কায়েম থাকতো। মুসলমানদের জন্য একটাই মান্যবর সেটা হচ্ছে আল্লাহর কোরআন। তাহলে এত দল এত মতভেদ হওয়ার সুযোগ ছিল না।

 

মুসলমানদের মধ্যে মতভেদকারী দল সবচেয়ে বেশি। নেতা কাদেরকে মানতে হবে এবং কোন সময় পর্যন্ত মানা যাবে- এই ব্যাপারে কোরআনে বলা আছে। নিম্নে আয়াতটি পেশ করা হচ্ছে।

 

সূরা নিসা- ৪:৫৯ ‘হে ঈমানদারগণ! আল্লাহর নির্দেশ মান্য কর, নির্দেশ মান্য কর রাসুলের (সা.) এবং তোমাদের মধ্যে যারা বিচারক তাদের। তারপর যদি তোমরা কোন বিষয়ে বিবাদে প্রবৃত্ত হয়ে পড়, তাহলে তা আল্লাহ ও তার রসুলের (সা.) প্রতি প্রত্যর্পণ কর, যদি তোমরা আল্লাহ ও কেয়ামত দিবসের উপর বিশ্বাসী হয়ে থাক। আর এটাই কল্যাণকর এবং পরিণতির দিক দিয়ে উত্তম।’

 

সুন্নিদের মধ্যে একদল বলেন, রাসুল (সা.) আমাদের নেতা। আমি আপনাদের সঙ্গে একমত পোষন করছি। সেটা হচ্ছে হাশরের ময়দানে রাসুল (সা.) আল্লাহর সমস্ত সৃষ্ট উম্মতের জন্য সাফায়াতকারী নেতা। এই জামানায় যিনি আমায় আল্লাহর কোরআন এবং রাসুল (সা.) সম্পর্কে সঠিক জ্ঞান দান করবেন তাকেই আমি নেতা মানবো কোরআন অনুযায়ী। সূরা নিসার-৫৯ আয়াতটি আলোচনা করলে এবং চিন্তা করলে জ্ঞানী মানুষরা বুঝতে পারবেন।

 

আয়াতটিতে পরিষ্কার বলা হয়েছে, প্রথমে আল্লাহকে মান। দ্বিতীয়তে বলা হয়েছে রাসুলকে (সা.) মান। এবং তোমাদের মধ্যকার হুকুমের অধিকারীকে মান। তৃতীয়তে আলাদা সত্ত্বাকে মানতে বলা হয়েছে। কিন্তু তৃতীয় সত্ত্বার সঙ্গে যদি মতভেদ হয় তবে ১ম+২য় সত্ত্বার দিকে ফিরে যেতে বলা হয়েছে। অর্থাৎ আমার নেতা যদি আল্লাহ এবং রাসুল (সা.)- এর কোন কথার সঙ্গে মতভেদ করে শিক্ষাদেন সেটা মানা যাবে না। রাসুল (সা.) হচ্ছেন সমস্ত বিশ্ব মানবের এমনকি সমস্ত নেতাদেরও নেতা। কাজেই চিন্তা করার অনুরোধ রইল।

 

একটি কথা উল্লেখ করার প্রয়োজন না থাকা সত্ত্বেও উল্লেখ করছি। পবিত্র কোরআনের প্রতিটি আয়াতই কিয়ামত পর্যন্ত থাকবে। কেউ যদি মনে করেন এই আয়াতটা আমাদের জন্য বা ৫০০ বছর পর ঐ দলের জন্য প্রযোজ্য নয়, সেটা আল্লাহর সঙ্গে মতবিরোধই করা হবে।

 

মুসলমানদের মধ্যে সুন্নির পর শিয়ারা একটা বড় অংশ। শিয়াদের মধ্যে একটা বিষয় দেখা যায়। সূরা নিসার-৫৯ আয়াতকে তারা বলে এই আয়াত ১২ ইমাম পর্যন্তই বহাল। যেহেতু বার ইমামের শেষ ইমাম, ইমাম মাহদী তারাই হচ্ছেন প্রকৃত ওলীল আমর। এখানে একটা কথা বলতেই হয়। যে বার ইমামকে প্রতি ওয়াক্তে সালাম না দিলে নামাজই হয় না দরূদে ইব্রাহিমে দেখতে পাই। তাদেরকে তো অবশ্যই মাসুম হিসাবেই গ্রহণ করতে হবে। আর যারা মাসুম, তাদের সঙ্গে আল্লাহ রাসুল (সা.)- এর মতভেদ হবে যদি মনে করি সেটা তো ঈমান না থাকারই সামিল। কারণ, উক্ত আয়াতটিতে মতভেদের কথা আছে। নবীর বংশের ১২ ইমামের কথা নবী বলে গেছেন।

 

অনেক শিয়া অনুসারীর সঙ্গে আলোচনা করেছি। তারা বলেন, এই আয়াত বুঝতে হলে কোরআনের সুরা মায়েদার ৫৫ নং আয়াত দেখতে হবে। আমি সেটা নিয়েও নিম্নে আলোচনা করছি পরিষ্কার করার জন্য।
৫:৫৫ # ‘তোমাদের বন্ধু তো আল্লাহ, তার রাসুল (সা.) এবং মুমিনবৃন্দ-যারা নামাজ কায়েম করে, যাকাত দেয় এবং বিনম্র।’

 

শিয়া মাহজাবের অনুসারীরা বলেন, শুধু এই আয়াতের অধিকারীরাই হচ্ছেন ওলীল আমর হওয়ার যোগ্য। এই আয়াতে মুমিনদের কথা বলা আছে। যদি শুধু ঐ ১২ জন ইমামই মুমিনদের মধ্যে পরেন তবে আমাদের ইবাদতের কি মূল্য। যদি আমরা মুমিনবৃন্দে সামিল নাই হতে পারি? নামায কায়েম, যাকাত প্রদান তো আমাদের জন্যও ফরয।

 

উল্লেখ্য, মুমিন আরবি শব্দের বাংলা হচ্ছে ঈমানদার। যদি ঈমানদার নাই হতে পারি ‘মুসলমানই’ বা হবো কি করে? আল্লাহ হুকুম কোরআনে কিন্তু মুমিনদের উপরই করেছেন। ৩:১০২# ‘হে ঈমানদারগণ! আল্লাহকে যেমন ভয় করা উচিৎ ঠিক তেমনিভাবে ভয় করতে থাক। এবং অবশ্যই মুসলমান না হয়ে মৃত্যুবরণ করো না।’

 

কাজেই চিন্তা করার আহবান করেই শেষ করছি। আল্লাহর কাছে আমার একান্ত চাওয়া, মানুষের মধ্যে হিংসা ভুলে যার যার ধর্মে প্রতিষ্ঠিত থাকুন বিশেষ করে ইসলামে (শান্তিতে) প্রতিষ্ঠিত থাকুন। আমি আমার সৃষ্টি কর্তার প্রতি কৃজ্ঞতার জন্যই লিখছি।

 

রাইজিংবিডি/ঢাকা/২৭ আগস্ট ২০১৪/ফকির/শাহনেওয়াজ

রাইজিংবিডি.কম

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়