খাদ্য নিরাপত্তায় যুক্ত হচ্ছে সাদা ভুট্টা
আকাশ বাসফোর : বাংলাদেশের কৃষিবিজ্ঞানীরা আবিষ্কার করেছেন ‘সাদা দানার ভুট্টা’। কৃষক পর্যায়ে ভুট্টার এই জাতটি খুব শিগগিরই উন্মুক্ত করা হবে।
বরিশাল, গাজীপুরের জয়দেবপুর এবং রাজশাহীর বরেন্দ্র অঞ্চলে পরীক্ষামূলক আবাদের পর নতুন জাতটির ভালো ফলন পেয়েছেন কৃষিবিজ্ঞানীরা।
বাংলাদেশে কৃষি গবেষণা ইনস্টিটিউটের (বারি) মুখ্য বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা ড. আমীরুজ্জামান রাইজিংবিডিকে বলেন, উদ্ভাবিত নতুন জাত দুটি খরা সহনশীল বলে বরেন্দ্র এলাকায় চাষ উপযোগী। এছাড়া হলুদ ভুট্টা চাষে সেচ প্রয়োজন হয় চার বার। কিন্তু সাদা ভুট্টা চাষে সেচ লাগে মাত্র একবার বলে জানান এ কর্মকর্তা।
সংশ্লিষ্টরা বলছেন, বাংলাদেশের মানুষের খাদ্যাভ্যাসে চাল ও গমের প্রাধান্যই বেশি। তবে আশঙ্কার বিষয়, জনসংখ্যার বাড়তি চাপে প্রতিদিনই কমছে দেশের চাষযোগ্য জমির পরিমাণ, বাড়ছে খাদ্যের চাহিদা। সম্প্রতি চাল ও গমের ওপর চাপ কমাতে দেশের কৃষিবিদরা গবেষণা করছেন সাদা ভুট্টা নিয়ে। সাদা ভুট্টা খেতে সুস্বাদু ও এর আটা হলুদ ভুট্টার চেয়ে মিহি হওয়ায় পৃথিবীর বহু দেশে সাদা ভুট্টা অন্যতম একটি প্রধান খাদ্য হিসেবে সমাদৃত।
গবেষকরা মনে করছেন, বেশি ফলন ও সুস্বাদু হওয়ায় বাংলাদেশে সাদা ভুট্টার চাষ করা গেলে চাপ কমবে চাল ও গমের ওপর।
পরিসংখ্যান বলছে, বাংলাদেশে বর্তমানে তিন লাখ হেক্টর জমিতে ২২ লাখ টন হলুদ ভুট্টা উৎপাদিত হয়। হলুদ ভুট্টায় অধিক ক্যারোটিন থাকে। তাই উৎপাদিত ভুট্টার বেশির ভাগই মুরগি ও মাছের খাবার হিসেবে ব্যবহৃত হয় খামারগুলোতে।
ভুট্টার এ ক্যারোটিন শরীরে অধিক পুষ্টি চাহিদা মেটালেও তা খাদ্যদ্রব্যের স্বাদ কমিয়ে দেয়। তাই, স্বাদপ্রিয় এ দেশের মানুষ ঝুঁকেছে ভাত ও গমের দিকে। স্বাদ বেশি হওয়ায়, সারা বিশ্বে মানুষের খাদ্য হিসেবে হলুদ ভুট্টার চেয়ে সাদা ভুট্টার চাহিদা বেশি। তাই পর্যাপ্ত জমিতে সাদা ভুট্টার আবাদ করা গেলে চাপ কমবে চাল ও গমের। এমনটাই মনে করছেন সংশ্লিষ্ট গবেষকরা।
ফেব্রুয়ারিতে বাংলাদেশে কৃষি গবেষণা ইনস্টিটিউট (বারি) সাদা ভুট্টার দুটি জাত বারি হাইব্রিড ভুট্টা-১২ ও বারি হাইব্রিড ভুট্টা-১৩ অবমুক্ত করেছে। বারি থেকে অবমুক্ত ভুট্টার আগের জাতগুলো ছিল হলুদ জাতের।
বারির মুখ্য বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা ড. আমীরুজ্জামান এ প্রসঙ্গে জানান, বর্তমানে ধান ও গমের সর্বোচ্চ উৎপাদনশীলতা হেক্টর প্রতি পাঁচ টনের মতো যা বাংলাদেশের ফসল বিন্যাসে আরো বাড়ানো খুবই কঠিন। অন্যদিকে সাদা ভুট্টার প্রতি হেক্টরে ফলন আট থেকে ১২ টন।
স্বাদ ও ফলন বেশি হওয়ায় ভাত ও আটার পাশাপাশি এক সময় সাদা ভুট্টাও স্থান পাবে আমাদের খাদ্য তালিকায়। এমনটাই আশা সংশ্লিষ্ট গবেষকদের।
কৃষি গবেষণা ফাউন্ডেশন (কেজিএফ) সাদা ভুট্টা উৎপাদনের সম্ভাব্যতা যাচাইয়ের লক্ষ্যে একটি প্রকল্প প্রণয়ন করেছে।
এ প্রকল্পের আওতায় শেকৃবি, এগ্রেরিয়ান রিসার্চ ফাউন্ডেশন ও বাংলাদেশ কৃষি গবেষণা ইনস্টিটিউটের সমন্বিত উদ্যোগে শেকৃবির ক্যাম্পাস, বান্দরবান, বরিশাল, ঢাকা, দিনাজপুর, নীলফামারী ও রংপুরে সাদা ভুট্টার ওপর ব্যাপক গবেষণা চলছে।
বাংলাদেশের জলবায়ুর উপযোগী সাদা ভুট্টার জাত বাছাই ও এদের উপযুক্ত উৎপাদন প্রযুক্তি সৃষ্টি, সাদা ভুট্টা দিয়ে সুস্বাদু খাবার তৈরি, সাদা ভুট্টা চাষে কৃষকদের উদ্বুদ্ধকরণ, ভুট্টাজাত খাবারে জনগণকে উৎসাহীকরণ এবং সাদা ভুট্টা উৎপাদনের উপযুক্ত অঞ্চল শনাক্তকরণ এ প্রকল্পের উদ্দেশ্য।
এ প্রকল্পের সমন্বয়ক শেরে বাংলা কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের (শেকৃবি) অধ্যাপক ড. মো. জাফর উল্লাহ জানান, চীন, ভারত, দক্ষিণ আফ্রিকাসহ অন্যান্য কয়েকটি দেশের ১৫টি সাদা ভুট্টার জাত গবেষণার জন্য সংগ্রহ করা হয়েছে।
প্রকল্পটি সফল হলে সাদা ভুট্টা বাংলাদেশের খাদ্য নিরাপত্তায় ধান ও গমের চেয়ে বেশি ভূমিকা রাখবে এবং ক্রমবর্ধমান জনসংখ্যার কারণে সৃষ্ট খাদ্যাভাবের আশঙ্কাও সাদা ভুট্টা দূর করতে সাহায্য করবে।
রাইজিংবিডি/ঢাকা/১৪ ডিসেম্বর ২০১৬/আকাশ/হাসান/মুশফিক
রাইজিংবিডি.কম
আরো পড়ুন