ঢাকা     শনিবার   ২০ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ৭ ১৪৩১

খুলনা বিভাগে অষ্টম সেরা পিসি কলেজ

টুটুল || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ০৫:৫১, ১৮ মে ২০১৬   আপডেট: ০৫:২২, ৩১ আগস্ট ২০২০
খুলনা বিভাগে অষ্টম সেরা পিসি কলেজ

বাগেরহাট সরকারী পিসি কলেজ

আলী আকবর টুটুল, বাগেরহাট : এবারের জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের সেরা শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের তালিকায় বাগেরহাট সরকারী পিসি কলেজ খুলনা বিভাগে ৮ম, দেশের মধ্যে ৮৯ তম। প্রায় শতবর্ষী এই কলেজের পিসি হচ্ছে প্রফুল্ল চন্দ্রের সংক্ষেপ। হ্যাঁ আচার্য্য প্রফুল্ল  চন্দ্রের নামেই কলেজটি প্রতিষ্ঠিত। আর ভাল রেজাল্ট করে সেই নামেরই মান রেখেছে এই প্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীরা।

 

কলেজটিতে বর্তমানে উচ্চ মাধ্যমিক ও স্নাতকসহ ষোলটি বিষয়ে সম্মান ও ছয়টি বিষয়ে তকোত্তর (মাষ্টার্স) কোর্স চালু রয়েছে। শিক্ষক ও ভৌত অবকাঠামোসহ নানাবিধ সংকটের মাঝেও এগিয়ে যাচ্ছে প্রতিষ্ঠানটির শিক্ষা কার্যক্রম।

 

সেই শুরু থেকেই লেখাপড়ার মান এ অঞ্চলে ঈর্ষনীয় হলেও স্বাধীনতাত্তোর সময়ে প্রতিষ্ঠানটির তেমন কোন অবকাঠামোগত উন্নয়ন হয়নি। কলেজ কর্তৃপক্ষ তাদের সংকট ও চাহিদার কথা বিভিন্ন সময়ে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের কাছে লিখিতভাবে জানিয়েও কোন ফল পাননি। জরাজীর্ণ হয়ে পড়েছে কলেজের বিজ্ঞান ভবন, কলা ভবন, ছাত্রাবাসসহ কয়েকটি বিভাগের শ্রেণিকক্ষ। সংকট রয়েছে ছাত্র-ছাত্রীদের আবাসনের।

 

কলেজটিতে গেলে দেখতে পাওয়া যায়, প্রায় শতবর্ষী কলা ভবনের দুইটি শ্রেণিকক্ষ ঝুঁকিপূর্ণ হওয়ায় তা পরিত্যক্ত ঘোষণা করে তালাবন্ধ করে রাখা হয়েছে। একই ভবনের দোতলায় ইতিহাস বিভাগের কক্ষের ছাদের পলেস্তারা খসে খসে পড়ছে এবং অনেক স্থানে ফাটল দেখা দিয়েছে। এরমধ্যেই জীবনের ঝুঁকি নিয়েই শিক্ষকরা পাঠদান কার্যক্রম অব্যাহত রেখেছেন।

 

অন্যদিকে কলা ভবনের নিচতলার বারান্দায়ও দেখা দিয়েছে ছোটবড় ফাঁটল। এসব কাঠামো ভেঙ্গে পড়ে যে কোন সময়ে ঘটতে পারে মারাত্মক দূর্ঘটনা। বিজ্ঞান ভবনের দোতলা অধিক ঝুঁকিপূর্ণ হওয়ায় তাও পরিত্যক্ত ঘোষণা করা হয়েছে। সেখানে গিয়ে দেখা গেছে বিজ্ঞানাগারের (ল্যাব) সরঞ্জামাদি বাইরে পড়ে থেকে নষ্ট হচ্ছে।

 

কলেজ সূত্রে জানা গেছে, বর্তমানে এই কলেজের শিক্ষার্থীর সংখ্যা প্রায় দশ হাজার। যে ভৌত অবকাঠামো রয়েছে তা দিয়ে উচ্চ মাধ্যমিক, অনার্স এবং মাষ্টার্সের প্রতিদিনের পাঠদান কার্যক্রম সুষ্ঠুভাবে পরিচালনা করা সম্ভব হচ্ছেনা। ‘এনাম’ কমিটির সুপারিশ অনুযায়ী অনার্স বিষয়ে সাতটি করে পদ এবং মাষ্টার্স বিষয়ে বারোটি করে পদ সৃষ্টির বিধান থাকলেও গত পনেরো বছরেও তা বাস্তবায়ন করতে পারেনি।

 

কলেজে সব মিলিয়ে ১৯২ জন শিক্ষকের স্থলে রয়েছে মাত্র ৭২ জন। জোড়াতালি দিয়ে শিক্ষা কার্যক্রম চালাতে কর্তৃপক্ষকে হিমশিম খেতে হচ্ছে।

 

কলেজে দূরবর্তী এলাকা থেকে আসা শিক্ষার্থীদের আবাসনের জন্য ষাট শয্যার একটি হিন্দু হোষ্টেল, ষাট শয্যার একটি মুসলিম হোষ্টেল এবং মেয়েদের জন্য এক শ শয্যার একটি হোষ্টেল রয়েছে। এর মধ্যে কামাক্ষ্যাচারণ নামের হিন্দু হোষ্টেলটি দীর্ঘদিন সংষ্কার না হওয়ায় সেখানে জীবনের ঝুঁকি নিয়ে শিক্ষার্থীদের বসবাস করতে হচ্ছে।

 

কলেজের শিক্ষার্থীরা বলছে, শ্রেণিকক্ষের সংকট থাকায় একই কক্ষে একাধিক শ্রেণির শিক্ষার্থীদের ক্লাস করতে হয়। শিক্ষক সংকট থাকায় প্রতিদিন সব বিভাগে শিক্ষকরা পাঠদান করতে পারছেন না। এ ছাড়া কলেজের মূল একাডেমিক ভবন, অডিটোরিয়াম ও ক্লাসরুম অনেক পুরনো হওয়ায় প্রায়ই ছাদ ও দেওয়ালের পলেস্তারা ভেঙ্গে পড়ে। আর এমন আতঙ্কে ক্লাস করা দুরুহ বলে জানিয়েছেন সাধারণ শিক্ষার্থীরা। তাদের দাবি অনতি বিলম্বে পর্যাপ্ত শিক্ষক , শ্রেণিকক্ষের ব্যবস্থা করে শিক্ষার পরিবেশ ফিরিয়ে দেবার।

 

বাগেরহাট সরকারী পিসি কলেজের অধ্যক্ষ অধ্যাপক এএইচএম ছালেক বলেন, ‘শিক্ষার্থীদের সব সময় কলেজে উপস্থিত থাকার জন্য আমরা বলি, কিন্তু উপস্থিতি বেশি হলে তাদের শ্রেণিকক্ষে বসার জায়গা দেওয়া সম্ভব হয়না।একটি ক্লাস শেষ হওয়ার পর আবার কোন ক্লাসরুম ফাঁকা হলো তা খুঁজে ছেলে-মেয়েদের ক্লাস করতে হয়। কলেজের সবচেয়ে পুরাতন যে ভবনটি রয়েছে তা পরিত্যাক্ত ঘোষণা করা হয়েছে কয়েক বছর আগে। কিন্তু নতুন কোন ভবন এখনও না হওয়ায় কলেজের অফিস কক্ষ বানিয়ে জীবনের ঝুঁকি নিয়ে সেখানে কাজ করতে হচ্ছে।’

 

বাগেরহাট জেলা প্রশাসক মো. জাহাঙ্গীর আলম বলেন, ‘চাহিদার তুলনায় সরকারি পিসি কলেজে যে অবকাঠামো রয়েছে অপ্রতুল। তবে কলেজের পুরাতন ভবনটি অপসারণ করে সেখানে আধুনিক ভবন নির্মাণের উদ্যোগ নিচ্ছে সরকার। দক্ষিণাঞ্চলের ঐহিত্যবাহী এই প্রতিষ্ঠানটিতে বর্তমানে শিক্ষার্থীদের তুলনায় শিক্ষক সংকট রয়েছে। ৩৪তম বিবিএস-এ শিক্ষা ক্যাডারের শিক্ষকগণ যোগদান করলে এই সংকটের অনেটাই সমাধান হবে বলে আশা করছি।’

 
রাইজিংবিডি/ বাগেরহাট/১৮ মে ২০১৬/ টুটুল/টিপু

রাইজিংবিডি.কম

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়