ঢাকা     শনিবার   ২০ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ৭ ১৪৩১

খুলনা বিভাগে বাড়ছে কিশোরী মায়ের সংখ্যা

নূরুজ্জামান || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ০১:৪২, ২৯ সেপ্টেম্বর ২০১৫   আপডেট: ০৫:২২, ৩১ আগস্ট ২০২০
খুলনা বিভাগে বাড়ছে কিশোরী মায়ের সংখ্যা

মুহাম্মদ নূরুজ্জামান, খুলনা : খুলনা বিভাগের ১০ জেলায় বাল্য বিয়ের হার গড়ে ৭৫ শতাংশ। এই ১০ জেলার মধ্যে শীর্ষে রয়েছে কুষ্টিয়া। ফলে অল্পবয়সী গর্ভবর্তী মায়ের সংখ্যা দিন দিন বেড়ে চলেছে।

অল্প বয়সে গর্ভ ধারণ করায় মা ও শিশু অপুষ্টিতে ভুগছে। এ ছাড়া শিশু বিয়ের ফলে মাতৃমৃত্যু, শিশু মৃত্যু ও স্কুল থেকে ঝরে পড়ার হারও বাড়ছে। শিশুদের ভবিষ্যৎ নষ্ট হচ্ছে। বিবিএস মল্টিপল ক্লাস্টার সার্ভের এক প্রতিবেদনে এ তথ্য প্রকাশ করা হয়েছে।

প্রতিবেদনে বলা হয়, দেশের ছয় বিভাগের মধ্যে খুলনা বিভাগে বাল্য বিবাহের হার সবচেয়ে বেশি। কুষ্টিয়ায় ২৬ দশমিক ২ শতাংশ, মাগুরায় ৭৫ দশমিক ৭ শতাংশ, মেহেরপুরে ৭৫ দশমিক ৪ শতাংশ, সাতক্ষীরায় ৭৪ শতাংশ, নড়াইলে ৭৩ দশমিক ৩ শতাংশ, বাগেরহাটে ৭০ দশমিক ৩ শতাংশ, চুয়াডাঙ্গায় ৭০ দশমিক ৬ শতাংশ, খুলনায় ৬৯ দশমিক ২ শতাংশ, যশোরে ৬৭ দশমিক ৪ শতাংশ এবং ঝিনাইদহে ৬৫ দশমিক ৮ শতাংশ বাল্য বিবাহ হচ্ছে।

খুলনা বিভাগীয় কমিশনার মো. আব্দুস সামাদ সম্প্রতি এক আলোচনায় উল্লেখ করেন, স্বামী পরিত্যক্ততা নারী অসহায় হয়ে তার কন্যাকে বিয়ে দিতে বাধ্য হন। সামাজিক এ সংকট নিরসনে উপজেলা পর্যায়ে নারী উন্নয়ন ফোরাম ও নারী উন্নয়ন তহবিল গঠনের প্রস্তাব করা হয়েছে। এর ফলে এ অপরাধের পরিমাণ কমবে।

জেলা প্রশাসক মো. মোস্তফা কামাল শিশু বিবাহ বন্ধে খুলনা জেলা কর্মপরিকল্পনা বাস্তবায়ন নির্দেশিকায় উল্লেখ করেন, শিশুদের উন্নয়নের জন্য খুলনাকে আদর্শ জেলা হিসেবে গড়ে তোলার প্রচেষ্টা চলছে। শিশু বিয়ে নিরোধ সংক্রান্ত কর্মকাণ্ড যথারীতি চালানো হবে। ৬৮টি ইউনিয়নে একই স্লোগান ‘বালিকা বধূ নয়’।

খুলনা জেলা প্রশাসনের এক নিদের্শনায় উল্লেখ করা হয়, জাতীয় পর্যায়ে ১৪-৪৯ বছর বয়সী নারীর (যাদের ১৫ বছরের আগে বিয়ে হয়েছিল) সংখ্যা ২৩ দশমিক ৮ শতাংশ হলেও খুলনায় এ সংখ্যা ৩০ দশমিক ২ শতাংশ, জাতীয় পর্যায়ে ২০-৪৯ বছর বয়সী নারী (যাদের ১৮ বছরের আগে বিয়ে হয়েছিল) ৬২ দশমিক ৮  শতাংশ হলেও খুলনায় ৬৯ দশমিক ২ শতাংশ। এ ছাড়া ১৫-১৯ বছর বয়সি বিবাহিত মেয়ের সংখ্যা জাতীয় পর্যায়ে ৩৪ দশমিক ৩ শতাংশ হলেও খুলনায় ৪৫ দশমিক ৪ শতাংশ।

কুষ্টিয়ার অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (সার্বিক) মুজিবুল ফেরদাউস জানান, বাল্য বিবাহ বন্ধে উপজেলা প্রশাসন পুলিশের সহযোগীতায় দুই পক্ষের বিরুদ্ধেই কঠোর ব্যবস্থা গ্রহণ করে থাকে। প্রতি মাসে কমপক্ষে চার/পাঁচজনকে শাস্তি দেওয়া হয়।

খুলনা জেলা আনসার কমান্ডেন্ট মো. আব্দুল আউয়াল বলেন, ‘বাল্য বিয়ে প্রতিরোধে জেলার ৬৮টি ইউনিয়নের আনসার ভিডিপি সদস্যরা সক্রিয় ভূমিকা পালন করছে। এ জন্য গ্রাম পর্যায়ে আনসারদের মৌলিক প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়েছে।’

সাতক্ষীরার তালা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. মাহবুবুর রহমান জানিয়েছেন, উপজেলার খলিশখালী ইউপি’র এনায়েতপুর গ্রামে এবং খেশরা ইউপি’র হরিহরনগর গ্রামে দুটি বাল্য বিয়ে প্রতিরোধ করা হয়। অল্প বয়সী বিয়ের ক্ষতিকর দিকগুলো তুলে ধরে প্রতিমাসে কলেজ ও স্কুল পর্যায়ে সেমিনার করা হয়।’

ঝিনাইদহ জেলার শৈলকুপা উপজেলার নির্বাহী কর্মকর্তা মো. দিদারুল আলম উল্লেখ করেন, বাল্য বিায়ের ব্যাপারে কঠোর পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে। ভ্রাম্যমাণ আদালতের অভিযান চালানো হয়, কাউকে ছাড় দেওয়া হয় না।

খুলনার বটিয়াঘাটা উপজেলার জলমা ইউপি চেয়ারম্যান মো. আব্দুল গফুর মোল্যার অভিমত, শহরতলীতে বাল্য বিয়ে আপাতত নেই। উপজেলা প্রশাসন কয়েকজন অভিভাবককে এ ব্যাপারে জেল-জরিমানা করেছে। তবে আগে এ ইউনিয়নের তেঁতুলতলা গ্রামে বাল্য বিয়ের পরিমাণ বেশি ছিল।

সাতক্ষীরার আশাশুনি উপজেলার প্রতাপনগর ইউপি চেয়ারম্যান শেখ জাকির হোসেন বলেন, ‘মাসের অধিকাংশ সময় এ ব্যাপারে ব্যয় করতে হয়। বাল্য বিয়ের ফলে শিশু মৃত্যু, অপুষ্টি, অল্পবয়সী মায়ের নানা রোগে আক্রান্ত হওয়া এবং সামাজিক ক্ষতিকর দিকটি তুলে ধরায় বাল্য বিয়ের প্রবণতা কমেছে।’

 

স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন ওয়ার্ল্ড ভিশনের প্রজেক্ট ডাইরেক্টর প্রভাস চন্দ্র বিশ্বাস জানান, বাল্য বিয়ে প্রতিরোধে গণসচেনতা আগের তুলনায় অনেক বেড়েছে।



রাইজিংবিডি/খুলনা/২৯ সেপ্টেম্বর ২০১৫/নূরুজ্জামান/সনি

রাইজিংবিডি.কম

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়