ঢাকা     শনিবার   ২০ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ৭ ১৪৩১

গডফাদার

টিপু || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ০৫:৫৮, ২ জুলাই ২০১৫   আপডেট: ০৫:২২, ৩১ আগস্ট ২০২০
গডফাদার

‘গডফাদার’ এর স্রষ্টা মারিও জিয়ানলুইগি পুজো

শাহ মতিন টিপু : গডফাদার। যাদের বলা হয় অপরাধের অন্ধকার জগতের নেপথ্য নায়ক। ‘গডফাদার’ এর জন্ম কবে থেকে জানিনা, তবে ‘গডফাদার’ এর লেখকের জন্ম ১৯২০ সালের ১৫ অক্টোবর আমেরিকার নিউইয়র্কে। নাম মারিও জিয়ানলুইগি পুজো। আজকে আমরা যে ‘গডফাদার’ শব্দটির সঙ্গে পরিচিত তার জনক মারিও পুজো, এটা নিঃসন্দেহ। বিখ্যাত এই মার্কিন লেখক ও চিত্রনাট্যকারের মৃত্যুদিবস আজ। ১৯৯৯ সালের ২ জুলাই তিনি মৃত্যুবরণ করেন।

এমন একটি মন্তব্য অনেকেরই চোখে পড়বে হয়তোবা- মাফিয়াদের জীবন নিয়ে মারিও পুজোর চেয়ে ভালো আর কেউ লিখতে পেরেছে বলে মনে হয় না। গডফাদার পড়েননি বা গডফাদার মুভিটি দেখেননি এরকম পাঠক বা মুভিপ্রেমী সম্ভবত খুঁজে পাওয়া যাবে না। আমেরিকার মাফিয়াদের নিয়ে লেখা গডফাদার উপন্যাসটি প্রকাশিত হয় ১৯৬৯ সালে।

দ্য গডফাদার হচ্ছে অন্ধকারের গল্প। দুর্বল যখন আদালতের সুবিচার পায় না তখন হাজির হয় এক গোপন বিচারকের কাছে। রাজনীতিবিদরা ক্ষমতার স্বাদ নিতে আর ব্যবসায়ীরা সাহায্যের জন্যে ছুটে যান তারই কাছে। নিজেই নিজের জগতে একচ্ছত্র অধিপতি তিনি। বন্ধুর জন্য জীবন বিপন্ন করতে পিছপা হন না, শত্রুর কাছে ভয়ংকর এক বিভীষিকা। তিনি বিশ্বাস করেন, প্রতিটি মানুষের একটাই নিয়তি থাকে আর সেটা তৈরি হয় ঘটনাচক্রে। সমাজের ভেতর সমাজ আর রাষ্ট্রের ভেতর রাষ্ট্রের যে জগৎ, সেই জগতের শক্তিকেন্দ্রে বসে সবার অলক্ষ্যে কলকাঠি নাড়েন গডফাদার।

উপন্যাসের পটভূমি ১৯৪৫-১৯৫৫ সালের আমেরিকা। ভিটো করলিয়নি একজন বর্ষীয়ান পুরুষ, তিনি একজন ব্যবসায়ী, এবং নৈতিকতার মাপে খুবই উঁচু একজন ব্যক্তি। কিন্তু একটু ভিতরে ঢুকলেই বোঝা যায়, আপাতদৃষ্টিতে ভিটো করলিয়নিকে যা মনে হয়, তিনি মোটেও তা নন। তার অধীনে চলছে এক বিরাট সন্ত্রাসী সাম্রাজ্য, বিশাল মাফিয়া পরিবার। ক্লেমেঞ্জা আর টেসিও নামের দুই সহকারীকে সাথে নিয়ে, পালকপুত্র টম হেগেনের আইনি জ্ঞানে তিনি চালিয়ে যাচ্ছেন তাঁর পরিবার। বড় দুই ছেলে-সনি আর ফ্রেডি, বাবাকে সাহায্য করে তার কাজে। ব্যতিক্রম ছোট ছেলে মাইকেল, সে তার বাবার এ ধরনের ব্যবসাকে ঘৃণা করে পরিবার থেকে দূরে দূরে থাকে। পরে অবশ্য আমরা দেখি- সেই মাইকেলই উত্তরসূরি হয় তার পিতার, সে হয়ে ওঠে ডন মাইকেল করলিয়নি!

গল্পের শুরু হয় ভিটো করলিয়নির মেয়ে কনির বিয়ের অনুষ্ঠানের বর্ণনার মাধ্যমে, তারপর নানা ঘটনায় কাহিনি এগিয়ে চলে। এরই মধ্যে দৃশ্যপটে সলোজো নামের এক ড্রাগডিলারের আবির্ভাব ঘটে। সে নিউইয়র্কে মাদক ব্যবসা ছড়িয়ে দিতে চায়। কিন্তু ডন ভিটো করলিয়নি মূল্যবোধের সঙ্গে আপস করে বেশি লাভের আশায় মাদক ব্যবসায় জড়িত হবেন না কোনোক্রমেই। উপায়ন্তর না পেয়ে সলোজো ডনকে হত্যার চক্রান্ত করে, প্রকাশ্যে তার ওপর পরপর পাঁচটা গুলি চালানো হয়। অলৌকিকভাবে ডন বেঁচে যান।

মাইকেল সে সময় ছুটি কাটাচ্ছিলেন তার বান্ধবী কে অ্যাডামসের সঙ্গে, শহরে। বাবার ওপর আক্রমণের খবর শুনে তাড়াতাড়ি ছুটে যান বাড়িতে। তার মাথায় তখন প্রতিশোধের আগুন। সে সলোজোকে এক রেস্টুরেন্টে ডাকেন ব্যবসায়িক আলাপের উদ্দেশ্যে। সলোজো এলে সে তাকে খুন করেন কপালে গুলি করে, হত্যা করেন এক পুলিশ অফিসারকেও। জোড়া খুন করে মাইকেল পালিয়ে যান সিসিলিতে। এবার শত্রুর রক্তে হাত রাঙিয়ে আনুষ্ঠানিকভাবে জড়িত হয়ে যান পারিবারিক ব্যবসার সঙ্গে!

দ্য গডফাদার উপন্যাসটি একটি ক্লাসিক-ক্রাইম থ্রিলার। মূলত এই উপন্যাসের মাধ্যমে পুজো ইতালিয়ান-আমেরিকান মাফিয়া পরিবারগুলোকে নিয়ে থ্রিলার লেখার ধারার সূচনা করেন। উপন্যাসটি চারটি পর্বে বিভক্ত। শেষ দুই পর্বের অনেকটা এসেছে ফ্ল্যাশব্যাক আকারে, দেখানো হয়েছে ভিটো করলিয়নির প্রথম জীবন, যৌবন ও ডন হিসেবে উত্থান।

দ্য গডফাদার সম্পর্কে এক আলোচনায় বলা হয়- অসাধারণ বই। পড়তে পড়তে কখনো কখনো চরিত্রগুলোর প্রতি অতিরিক্ত ঘৃণা জন্মে যাবে, আবার কখনো জাগবে ভালোবাসা, কখনো সহানুভূতি। তবে ওই অন্ধকার জীবনের প্রতি আকর্ষণ জাগবে নিশ্চিত, একবারের জন্য হলেও।

মারিও পুজো ম্যানহাটনের হেলস কিচেনে জন্মগ্রহণ করেন। তার বাবা-মা ইতালির নেপলস থেকে আমেরিকায় ইমিগ্রান্ট। কলাম্বিয়া ইউনিভার্সিটিতে পড়াশোনা করার পর দ্বিতীয় মহাযুদ্ধের সময় আমেরিকান এয়ারফোর্সে যোগ দেন। পরবর্তীকালে তিনি সাহিত্য সম্পাদক হিসেবে কাজ করেন একটি পত্রিকাতে। ১৯৫০ সালে পুজোর প্রথম ছোটগল্প দি লাস্ট ক্রিস্টমাস আমেরিকান ভ্যানগার্ড পত্রিকায় প্রকাশিত হয়।গডফাদার-এর চিত্রনাট্যের জন্য তিনি দুবার অস্কার পেয়েছিলেন।


 




রাইজিংবিডি/ঢাকা/২ জুলাই ২০১৫/টিপু/এএন

রাইজিংবিডি.কম

সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়