ঢাকা     শুক্রবার   ১৯ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ৬ ১৪৩১

গণতন্ত্র ফেরাতে নতুন প্লাটফর্ম চায় বিএনপি

রেজা || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ১৪:০৬, ২৯ মে ২০১৬   আপডেট: ০৫:২২, ৩১ আগস্ট ২০২০
গণতন্ত্র ফেরাতে নতুন প্লাটফর্ম চায় বিএনপি

জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদক : বর্তমান ভু-তাত্ত্বিক রাজনৈতিক প্রেক্ষাপটে বিএনপির একার পক্ষে ‘গণতন্ত্র ফিরিয়ে আনা’ সম্ভব নয় জানিয়ে এজন্য সব শ্রেণি-পেশার মানুষকে নিয়ে নতুন প্লাটফর্ম গঠনের প্রয়োজনীয়তার কথা তুলে ধরেছেন বিএনপির নেতারা।

তাদের মতে, বিএনপির সামনে এখন সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ গণতন্ত্র ফিরিয়ে আনা। বিএনপির প্রতি দেশের জনগণের যে জনসমর্থন রয়েছে, তাতে এই প্লাটফর্ম তৈরি করতে পারলে সফলতা আসবে।

 

রোববার বিকেলে রাজধানীর রমনায় ইঞ্জিনিয়ার্স ইনস্টিটিউশন মিলনায়তনে এক আলোচনা সভায় বক্তারা এ অভিমত প্রকাশ করেন। দলের প্রতিষ্ঠাতা প্রয়াত রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমানের ৩৫তম শাহাদাৎবার্ষিকী উপলক্ষে এর আয়োজন করে বিএনপি।

 

বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত থাকলেও বক্তব্য রাখেননি। দর্শক সারিতে বসে আলোচনা শোনেন। এতে সভাপতিত্ব করে বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর।

 

আলোচনা সভায় অংশ নিয়ে বিএনপি মহাসচিব বলেন, ‘বিএনপিকে ধ্বংস করার জন্য অনেক চক্রান্ত হচ্ছে। বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া থেকে শুরু করে তৃণমুল পর্যন্ত নেতা-কর্মীদের নামে শত শত মামলা দিয়ে তাদের রাজনীতি থেকে বিরত রাখার চেষ্টা করা হচ্ছে। বিএনপি নেত্রীকে রাজনীতি থেকে দূরে রাখতে তার নামে একের পর এক মামলা দেওয়া হচ্ছে।’

 

মির্জা ফখরুল বলেন, ‘৭২ থেকে ৭৫-এ যেভাবে একদলীয় দুঃশাসন সৃষ্টি করা হয়েছিল, এখনও আওয়ামী লীগ জনগণ থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে আবারো সেই অবস্থার চিরস্থায়ী করতে কাজ করছে। এই অবস্থা থেকে বেরিয়ে আসতে আন্দোলনের কোনো বিকল্প নেই।’

 

ইসরায়েলের সঙ্গে বিএনপির সমপৃক্ততা নামে বিভ্রান্তিকর তথ্য দেওয়া হচ্ছে অভিযোগ করে দলটির মহাসচিব বলেন, ‘আজ মিথ্যা বলে ইসরায়েলের সঙ্গে সমপৃক্ততার কথা বলা হচ্ছে। আসলাম চৌধুরী নিজে বলেছেন, এমনকি যার সঙ্গে সাক্ষাৎ হয়েছে সেই সাফাদি বলেছেন, দুজনের শুধু কথা হয়েছে। কোনো বৈঠক হয়নি।

 

“সেখানে আগ্রার মেয়রের অফিসে বসে সাক্ষাত হয়েছে। তাহলে আগ্রার মেয়রও কী ষড়যন্ত্রের সঙ্গে জড়িত? সেই সাফাদিই আবার বলছে, এর আগে জয়ের সঙ্গে বৈঠক হয়েছে। আওয়ামী লীগ নেতারা বলছেন, জয়ের সঙ্গে বৈঠকটি নাটক। জয়ের সঙ্গে বৈঠক সাজানো নাটক আর আলাম চৌধুরীর সঙ্গে বৈঠক আসল নাটক?”, বলেন মির্জা ফখরুল।

 

দেশে শাসরুদ্ধকর পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে দাবি করে মির্জা ফখরুল বলেন, ‘জিয়াউর রহামান যে গণতন্ত্র তৈরি করেছিলেন সেটিকে আজ ধ্বংস করে দেওয়া হয়েছে। এখান থেকে বেরিয়ে আসতে এবং ফ্যাসিষ্ট সরকারকে সরাতে সবাইকে ঐক্যবদ্ধ হতে হবে।’

 

সরকারের সব ধরনের কর্মকাণ্ড সম্পর্কে জনগণের কাছে জবাবদিহিতা করতে হবে বলেও এ সময় মন্তব্য করেন তিনি।

 

আলোচনা সভায় অংশ নিয়ে ব্যারিস্টার মওদুদ আহমেদ বলেন, ‘বিএনপির সামনে সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ গণতন্ত্র ফিরিয়ে আনা। জিয়াউর রহমান যে গণতন্ত্র ফিরিয়ে দিয়েছিলেন আমরা তা হারিয়ে ফেলেছি। সেটি ফিরিয়ে আনতে হবে। তবে আজকের ভু-তাত্ত্বিক রাজনীতিতে বিএনপির একার পক্ষে তা সম্ভব নয়। এজন্য দলমত নির্বিশেষে সব শ্রেণিপেশার মানুষকে নিয়ে ঐক্যবদ্ধ করে নতুন প্লাটফর্ম তৈরি করতে হবে।’

 

তিনি বলেন, বিএনপির প্রতি এই মুহূর্তে এদেশের মানুষের ব্যাপক জনসমর্থন রয়েছে। সুষ্ঠু নির্বাচনের মধ্য দিয়ে প্রমাণিত হবে বাংলাদেশের মানুষ কাদের সমর্থন দেয়।

 

দেশের বর্তমান রাজনৈতিক সংকট নিরসনে সুষ্ঠু নির্বাচন প্রয়োজন উল্লেখ করে বিএনপির এই নেতা বলেন, ‘এই সরকারের শাসনামলে অনেক প্রতিষ্ঠান ধ্বংস হয়েছে। সবেচেয়ে বড় যে ক্ষতিটি হয়েছে, সেটি জনগণের ভোটাধিকার কেড়ে নেওয়া হয়েছে।’

 

গণতন্ত্র না থাকলে দেশে জঙ্গিবাদ ও উগ্রবাদের উত্থান হয় মন্তব্য করে মওদুদ বলেন, ‘বিএনপি জঙ্গিবাদ-উগ্রবাদকে ঘৃণা করে। ব্লগারসহ সব ধরনের হত্যাকাণ্ডকে নিন্দা করে। একই সঙ্গে জানতে চায়, যারা এর সঙ্গে জড়িত তাদের ধরা হচ্ছে না কেন?’

 

উগ্রবাদ দমনে সরকারকে সহায়তা করতে বিএনপি প্রস্তুত বলেও জানান বিএনপির এই নীতিনির্ধারক। তিনি বলেন, বাংলাদেশকে ব্যর্থ রাষ্ট্র পরিণত করতে যারা ষড়যন্ত্র করছে দেশের মানুষ কখনো তাদের সেই ষড়যন্ত্র সফল হতে দেবে না।

 

মওদুদ আরো বলেন, বিএনপির ক্রান্তিকাল চলছে। তবে এটি সাময়িক। এতে চিন্তার কিছু নেই। কারণ বিএনপি নেতা-কর্মীরা ঠিক আছেন। তাদের ওপর এতো অত্যাচার, নির্যাতন চলছে, এরপরও তৃণমুল থেকে কেন্দ্র পর্যন্ত কোনো নেতা-কর্মী আওয়ামী লীগে যোগ দেয়নি।

 

বিএনপির আরেক স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন বলেন, ‘বিএনপির এমন কোনো নেতা-কর্মী নেই যারা মামলার শিকার হয়নি। এই সরকার যেহেতু নির্বাচিত সরকার নয় এবং গায়ের জোরে দেশ চালাচ্ছে, সুতরাং তারা মনে করছে, বিএনপিকে যদি গণতান্ত্রিক অধিকার দেওয়া হয় তারা টিকে থাকতে পারবে না। সেজন্য অত্যাচর-নির্যাতন করে হামলা মামলা করে ক্ষমতায় থাকতে চায়। ইতিহাস বিকৃত করতে চায়।’

 

বিএনপি সম্পর্কে গণমাধ্যমে বিভ্রান্তিকর তথ্য আসছে দাবি করে বিএনপির এই নেতা বলেন, ‘এই সরকার যখন দেখছে হামলা-মামলা করে বিএনপির কিছু করা যাচ্ছে না, তখন গণমাধ্যমে বিভ্রান্তির তথ্য দিয়ে ষড়যন্ত্রমুলক প্রতিবেদন প্রকাশ করছে।’

 

সভায় আরো বক্তব্য রাখেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য মির্জা আব্বাস, বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান আব্দুল্লাহ আল নোমান, সেলিমা রহমান, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রো-ভিসি ড. মোস্তাহিদুর রহমান, সাংবাদিক মাহবুব উল্লাহ, প্রাক্তন ছাত্রমৈত্রীর সভাপতি আতাউর রহমান ঢালি প্রমুখ।

 

দর্শক সারিতে উপস্থিত ছিলেন বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান চৌধুরী কামাল ইবনে ইউসূফ, ব্যারিস্টার শাহজাহান ওমর, শামসুজ্জামান দুদু, অ্যাডভোকেট আহমেদ আযম খান, এম এ হালিম, ব্যারিস্টার হায়দার আলী, ব্যারিস্টার মাহবুব উদ্দিন খোকন, সৈয়দ মোয়াজ্জেম হোসেন আলাল, খায়রুল কবির খোকন, শামা ওবায়েদ, আব্দুস সালাম, নাজিম উদ্দিন আলম, আসাদুল করিম শাহীন, শামীমুর রহমান শামীম, তাইফুল ইসলাম টিপু, শহিদুল ইসলাম বাবুল, ইসতিয়াক আজিজ উলফাত, আনোয়ার হোসাইন, মুনির হোসেন, শিরিন সুলতানা, মাওলানা নেছারুল হক, রাজিব আহসান প্রমুখ।

 

সভা পরিচালনা করেন দলটির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব অ্যাডভোকেট রুহুল কবির রিজভী আহমেদ। সভায় কবি আল মাহমুদের কবিতা ‘ডানাওয়ালা মানুষ’ কবিতাটি আবৃত্তি করেন সীমা ইসলাম।

 

রাইজিংবিডি/ঢাকা/২৯ মে ২০১৬/রেজা/রফিক/সাইফ

রাইজিংবিডি.কম

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়