ঢাকা     বৃহস্পতিবার   ২৫ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ১২ ১৪৩১

গুলশানের অভিজাত হোটেলে ভারতীয়র অবৈধ ব্যবসা!

এম এ রহমান || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ১৬:৩২, ২২ আগস্ট ২০১৬   আপডেট: ০৫:২২, ৩১ আগস্ট ২০২০
গুলশানের অভিজাত হোটেলে ভারতীয়র অবৈধ ব্যবসা!

এম এ রহমান : বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের অনুমোদন ছাড়াই অভিজাত আবাসিক হোটেলে অবৈধভাবে ব্যবসা করছিলেন এক ভারতীয়। প্রশাসনের নাকের ডগায় চলছিল অবৈধ পণ্যের অবাধ ব্যবসা। শুধু তাই নয়, প্রচার বাড়াতে অভিযুক্ত ব্যবসায়ী আয়োজন করেন চার দিনব্যাপী বিশেষ বস্ত্রমেলার।

 

রাহুল সঞ্জয় জুনজুনওয়ালা নামের ওই ভারতীয় ব্যবসায়ী পণ্য আমদানিতে ভ্যাট-ট্যাক্সও পরিশোধ করেননি। সম্প্রতি তাকে হাতেনাতে ধরেছে ভ্যাট/মূসক গোয়েন্দা কর্মকর্তারা। রাইজিংবিডির অনুসন্ধানেও উল্লিখিত তথ্যের সত্যতা নিশ্চিত হওয়া গেছে।

 

ভ্যাট গোয়েন্দা সূত্রে জানা যায়, গুলশানের সিক্স সিজন হোটেলে রাহুল সঞ্জয় জুনজুনওয়ালা নামের ভারতের এক নাগরিক বেশ কিছুদিন ধরে অবৈধভাবে ব্যবসা করে আসছিলেন। সিক্স সিজন হোটেলের প্রায় ৪০০ বর্গফুট জায়গা ভাড়া নিয়ে এ অবৈধ ব্যবসা প্রতিষ্ঠান চালাচ্ছিলেন রাহুল। ক্রেতাদের আকৃষ্ট করার জন্য তিনি চার দিনের মেলার ঘোষণা দিয়ে ব্যবসা শুরু করেন। কিন্তু দেশীয় ব্যবসায়ীদের গোপন অভিযোগের ভিত্তিতে অভিযান চালিয়ে ভারতের ওই নাগরিককে আটক করা হয়। আটক রাহুল ভারতের মুম্বাইয়ের অধিবাসী।


এ বিষয়ে জানা যায়, বিভিন্ন ধরনের শাড়ি ও থ্রি পিস বিক্রির মধ্য দিয়ে অবৈধ এ ব্যবসা শুরু করেন তিনি। প্রায় ৪ লাখ ৫০ হাজার ভারতীয় রুপির পণ্য শুল্ক ফাঁকি দিয়ে এনে ভাড়া করা হোটেলে ডিসপ্লে করা হয়। অভিজাত এলাকায় উচ্চবিত্ত ক্রেতাদের কাছে বিক্রির মধ্য দিয়ে জমে ওঠে তার ব্যবসা। কিন্তু বিপত্তি ঘটে ভ্যাট গোয়েন্দাদের অভিযানে। সম্প্রতি অভিযান চালিয়ে আটক করা হয় জুনজুনওয়ালাকে। জব্দ করা হয় চোরাই পথে আনা তার সব পণ্য সামগ্রী।

 

অনুসন্ধানে আরো জানা যায়, সম্পূর্ণ অবৈধভাবে ব্যবসা করছিলেন ওই ভারতীয়। ব্যবসা শুরুর আগে বাংলাদেশে বাণিজ্য মন্ত্রণালয় ও জাতীয় রাজস্ব বোর্ডসহ (এনবিআর) সংশ্লিষ্ট কোনো দপ্তরের অনুমতি নেননি তিনি। জুনজুনওয়ালা সম্পূর্ণ জালিয়াতি করে শুল্ক ফাঁকি দিয়ে বাংলাদেশে পণ্য আনেন। ভারত থেকে বিক্রির উদ্দেশ্যে পণ্যগুলো চোরাই পথে আনেন তিনি। কোনো শুল্ক পরিশোধ না করেই দেশের অভিজাত এলাকায় গড়ে তোলেন চোরাই পথে আনা পণ্যের ব্যবসা।

 

সূত্র আরো জানায়, ২২ জুন আখাউড়া সীমান্ত দিয়ে ছয়টি কাপড়ের ব্যাগে করে পণ্যগুলো বাংলাদেশে নিয়ে আসেন জুনজুনওয়ালা। এরপর সেগুলো স্থলপথে রাজধানীর অভিজাত এলাকা গুলশানে আনা হয়। পরে হোটেল কর্মকর্তাদের সহযোগিতায় ভারতীয় নাগরিক সিক্স সিজনে গড়ে তোলেন অবৈধ ব্যবসা প্রতিষ্ঠান।

 

বিষয়টি নিয়ে মূসক গোয়েন্দার এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ভারত থেকে এসব পণ্য সম্পূর্ণ অবৈধভাবে এনে ব্যবসা প্রতিষ্ঠান গড়ে তোলা হয়েছে, যা শাস্তিযোগ্য অপরাধ। এ ছাড়া পণ্য বিক্রি করে কীভাবে ও কোন পদ্ধতিতে ভারতে অর্থ স্থানান্তর করা হচ্ছে তার কোনো বৈধ কাগজপত্র দেখাতে পারেননি রাহুল সঞ্জয়। সুতরাং অর্থ স্থানান্তরের ক্ষেত্রে মুদ্রা পাচারের বিষয়টি সম্পৃক্ত রয়েছে।

 

প্রতিবেদনে আরো বলা হয়, অবৈধভাবে বিদেশি পণ্য এনে অত্যন্ত সুকৌশলে বিক্রি করে দেশ থেকে অর্জিত অর্থ ভারতে পাচারের মাধ্যমে প্রযোজ্য শুল্ক ও কর ফাঁকি দিয়ে দেশের সরকার ও ব্যবসায়ীদের ক্ষতিগ্রস্ত করেন রাহুল। এ প্রসঙ্গে মূসক গোয়েন্দার অতিরিক্ত মহাপরিচালক বেলাল চৌধুরী রাইজিংবিডিকে বলেন, আটক ভারতীয় নাগরিক অবৈধভাবে ব্যবসা প্রতিষ্ঠান খুলে সরকারকে প্রাপ্য রাজস্ব থেকে বঞ্চিত করেছেন। তার বিরুদ্ধে চোরাচালানির অভিযোগ এনে ইতিমধ্যে মামলা করা হয়েছে। আমরা খতিয়ে দেখছি, এর সঙ্গে আরো কারা জড়িত।

 

তিনি আরো বলেন, অবৈধ পণ্য বিক্রি ও ব্যবসা প্রতিষ্ঠান গড়ে তুলতে সহযোগিতা করার দায়ে সিক্স সিজন হোটেল কর্তৃপক্ষের বিরুদ্ধে মামলার সুপারিশ করেছি আমরা। কীভাবে এত পণ্য শুল্ক স্টেশন ব্যবহার করে চোরাই পথে বাংলাদেশে প্রবেশ করেছে তদন্ত করতে ভ্যাট কমিশনারেট কুমিল্লাকে  নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। আশা করছি তদন্তে সব বেরিয়ে আসবে।

 

 

রাইজিংবিডি/ঢাকা/২২ আগস্ট ২০১৬/এম এ রহমান/রফিক/তারা

রাইজিংবিডি.কম

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়