ঢাকা     মঙ্গলবার   ২৩ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ১০ ১৪৩১

দখলবাজদের খপ্পরে স্মৃতিসৌধ

এমএমআরিফুল ইসলাম || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ০২:০৬, ১১ ডিসেম্বর ২০১৬   আপডেট: ০৫:২২, ৩১ আগস্ট ২০২০
দখলবাজদের খপ্পরে স্মৃতিসৌধ

নলডাঙ্গায় গণহত্যার স্মারক স্মৃতিস্তম্ভ

নাটোর প্রতিনিধি : খান সেনাদের সঙ্গে মুক্তিযোদ্ধাদের যুদ্ধ হয় নাটোরের লালপুর উপজেলার ময়না গ্রামে ২৯ মার্চ।

 

এতে সুপশিক্ষিত খান সেনারা হার মানলেও হার মানেননি অর্ধপ্রশিক্ষিত অথবা প্রশিক্ষণ ছাড়াই লড়াইয়ে নামা একদল বাঙালি। তবে লড়াইয়ে নিহত হন ৪২ মুক্তিযোদ্ধা।

 

আসলে তারা লড়াই করেন যুদ্ধে জয়ের জন্য নয়, বাঁচার জন্য। খান সেনারা লড়েছে বাঙালি নিধনের জন্য। সম্ভবত এ কারণেই তারা গণহত্যা চালিয়েছে নাটোরের একাধিক স্থানে।

 

বীর বাঙালিদের স্মরণ করার জন্য স্মৃতিসৌধ নির্মাণ করা হলেও রক্ষণাবেক্ষণের অভাবে স্মৃতিসৌধের জায়গাটি দখল হয়ে গেছে। কিংবা যাচ্ছে।

 

সেই যুদ্ধে শহীদ মুক্তিযোদ্ধাদের স্মরণে ১৯৯৮ সালে স্থানীয় আওয়ামী লীগ নেতা প্রয়াত সংসদ সদস্য মমতাজ উদ্দিনের উদ্যোগে ময়না গ্রামে নির্মাণ করা হয় একটি স্মৃতিসৌধ। কিন্তু দুর্গম এলাকায় সৌধটি নির্মাণ করায় এটির খোঁজ-খবর কেউ নেননি। এমন কি, কোনো সরকারি কর্মকর্তা পা পর্যন্ত মাড়াননি গ্রামটি অভিমুখে। স্মৃতিসৌধ তো দূরের কথা।

 

স্বাধীনতার ৪৫ বছরেও সরকারিভাবে এই স্মৃতিসৌধের স্বীকৃতি মেলেনি। বরং রক্ষণাবেক্ষণের অভাবে হারিয়ে যেতে বসেছে ময়না গ্রামের সেদিনের শহীদদের বীরত্বগাঁথা, স্মৃতিসৌধ।

 

নর্থ বেঙ্গল সুগার মিলে নির্মিত স্মৃতিস্তম্ভ (বাঁয়ে), স্মৃতিস্তম্ভে শহীদদের নামের তালিকা (মাঝে) ও শহীদ সাগরের মূল প্রবেশ দ্বার (সর্বডানে)

 

আক্ষরিক অর্থেই পাক হানাদাররা এ দেশে যুদ্ধ করতে আসেনি, এসেছিল বাঙালি নিধন করতে। তারা তদের দোসর রাজাকার-আলবদরদের নিয়ে হত্যাযজ্ঞে মেতে ওঠে। নাটোর সদর উপজেলার ছাতনী, দত্তপাড়া, মোহনপুর, লালবাজার, কাপুড়িয়াট্টি, শুকলপট্টি, মল্লিকহাটি, বড়াইগ্রামের বনপাড়া ক্যাথলিক মিশন, গুরুদাসপুরের নাড়িবাড়ি, সিংড়ার হাতিয়ানদহ, কলম এবং লালপুর উপজেলার গোপালপুরের নর্থ বেঙ্গল সুগার মিল চত্বরে  ইতিহাসের নৃশংসতম ও হৃদয়বিদারক গণহত্যা চালায়। ১৯৭১ সালের ৪ জুন ছাতনী গ্রামে ৪০০ বাঙালিকে গলা কেটে, ৫ মে নর্থ বেঙ্গল সুগার মিলের তৎকালীন জিএম আনোয়ারুল আজিমসহ শতাধিক কর্মকর্তা-কর্মচারীকে গুলি ও বেয়নেট দিয়ে খুচিয়ে, ১৭ এপ্রিল নাড়িবাড়িতে ১৭ বুদ্ধিজীবীকে এবং হাতিয়ানদহে ৩৭ বাঙালিকে গুলি করে হত্যা করা হয়।

 

বনপাড়ার রোমান ক্যাথলিক মিশনে আশ্রিত দুই শতাধিক নারী পুরুষ ও শিশুকে গুলি ও গলা কেটে হত্যা করার পর দত্তপাড়ার মোকরামপুরে তাদের লাশ মাটিচাপা দেওয়া হয়। স্বাধীনতার পর এসব এলাকায় শহীদ পরিবারের সদস্যসহ স্থানীয়রা নিজেদের উদ্যোগে স্মৃতিস্তম্ভ গড়ে তোলেন।

 

ছাতনী গ্রামে শহীদ মনির উদ্দিনের জমিতে স্থানীয়ভাবে স্মৃতিস্তম্ভ নির্মাণ করে নামকরণ করা হয় ছাতনী কেন্দ্রীয় শহীদ মিনার। শহীদ মিনারে কয়েকজন শহীদের নামও খোদাই করা হয়। আজও এই গণকবরের সরকারি স্বীকৃতি মেলেনি।

 

গুরুদাসপুরের নাড়িবাড়িতে শহীদ বুদ্ধিজীবীদের গণকবরে স্মৃতিস্তম্ভ গড়ে তোলা হলেও রক্ষণাবেক্ষণের অভাবে তা দখল হয়ে যাচ্ছে।

 

গোপালপুর নর্থ বেঙ্গল সুগার মিল চত্বরের গণহত্যার স্থানটিকে শহীদ সাগর নামকরণ করে মিল কর্তৃপক্ষ স্মৃতিস্তম্ভ নির্মাণ করেছে। প্রতিবছর ৫ মে শহীদদের স্মরণে নানা অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়। দত্তপাড়ার মোকরামপুরের গণকবরে ওপর নির্মিত স্মৃতিস্তম্ভ বর্তমানে দখল হয়ে গেছে।

 

এ ছাড়া জেলার বিভিন্ন স্থানে হত্যা করা হয়েছে আরো অনেক বাঙালিকে। এসব স্থান আজও চিহ্নিত করা হয়নি। মুক্তিযুদ্ধে নাটোরের চার বীর শহীদ রেজা, রঞ্জু, বাবুল ও সেলিম চৌধুরীর স্মরণে সরকারিভাবে আজও কিছু করা হয়নি। পাকবাহিনীর দোসর রাজাকারদের নির্মম নির্যাতনে শহীদ হন এই চার বীর। শহীদ রঞ্জুর পৈতৃক ভিটায় এই চার বীর শহীদকে কবরস্থ করা হয়। বিগত সরকারের সময় শহরের মাদ্রাসা মোড়ে নাটোরের শহীদ মুক্তিযোদ্ধাদের স্মরণে একটি স্মৃতিসৌধ নির্মাণ করা হলেও, শহীদ সেলিম চৌধুরীসহ শহীদ মুক্তিযোদ্ধাদের অনেকের নাম স্মৃতিসৌধে স্থান পায়নি।

 

 

 

রাইজিংবিডি/নাটোর/১০ ডিসেম্বর ২০১৬/এমএমআরিফুল ইসলাম/টিআর/রুহুল

রাইজিংবিডি.কম

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়