ঢাকা     বৃহস্পতিবার   ২৫ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ১২ ১৪৩১

গোর্কির প্রভাবে বাংলা সাহিত্যে নব চেতনার উন্মেষ

ফেরদৌস জামান || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ১৪:২৬, ১৭ জুন ২০১৬   আপডেট: ০৫:২২, ৩১ আগস্ট ২০২০
গোর্কির প্রভাবে বাংলা সাহিত্যে নব চেতনার উন্মেষ

ফেরদৌস জামান : ১৯০৫ সালের ৩ ফেব্রুয়ারি। পৃথিবীর ইতিহাসে রক্তাক্ত রোববার বলে খ্যাত। বারবার যুদ্ধের দরুন স্বৈরতান্ত্রিক জার সরকার দুর্বল হয়ে পড়ল, সে সঙ্গে দেশের অর্থনীতি। দুঃখ-কষ্টের কথা জানাতে হাজার হাজার মেহনতি মানুষ উপস্থিত হল জারের শীত প্রাসাদের সামনে। সেখানে চালানো হলো গুলি।

 

পিটাসবুর্গের সাদা বরফ রক্তে লাল হয়ে গেল। ছড়িয়ে পড়ল বিক্ষোভ, বিদ্রোহ। অতঃপর প্রায় চার সপ্তাহের যুদ্ধ। জার সরকার কঠোর হস্তে যুদ্ধ দমন করল। ১৯০৫ সালে রুশ বিপ্লবের ব্যর্থতা সত্বেও উক্ত ঘটনার পর থেকেই সমগ্র বিশ্বের দৃষ্টি পড়ে রাশিয়ার দিকে। অর্থাৎ, আগ্রহের বিষয় হয়ে দাঁড়ায় রাশিয়া।

 

বলা যায়, এই অধ্যায়টিতেই বাংলাদেশে রুশ সাহিত্য ব্যাপকভাবে পঠিত হয়েছিল। সেই সুবাদে ম্যাক্সিম গোর্কি আমাদের এখানকার পত্র-পত্রিকায় স্থান পেলেন। তখন বাঙ্গালি একদিকে বঙ্গভঙ্গ আন্দোলনের মধ্যদিয়ে জাতীয়তাবোধে উদ্ধুব্ধ হচ্ছে। অপরদিকে ঠিক সেই সময়ে রুশ-জাপান যুদ্ধে সাম্রাজ্যবাদী রাশিয়ার পররাজ্য লিপ্সার বিরুদ্ধে তেজগর্ভ জাপানের আত্মরক্ষার লড়াইয়ের সংবাদ ছড়িয়ে পড়ছে। অপমাণিত রাশিয়া হারানো মর্যাদা পুনরুদ্ধারের স্বপ্ন দেখছে। গোর্কিকে যেহেতু সেই সাম্রাজ্যবাদবিরোধী যোদ্ধা বলে জানা গেছে। তাই বঙ্গভঙ্গের পরিস্থিতিতে জাতীয়তাবোধে জাগ্রত বাঙ্গালি স্বাভাবিকভাবেই তার প্রতি আকর্ষণ বোধ করেছিল।

 

১৯০৫-এ গোর্কির বয়স ৩৭ বছর। এই সময় সুরেন্দ্রনাথ বন্দ্যোপাধ্যায় সম্পাদিত তৎকালীন ইংরেজি ভাষার দৈনিক পত্রিকা ’বেঙ্গলী’-তে গোর্কি যেন এক সাড়ম্বর অভ্যর্থনা পেলেন। ১৭ ফেব্রুয়ারি বের হল ‘ম্যাক্সিম গোর্কি-ঔপন্যাসিক, কবি এবং বিপ্লবের অগ্রদূত’-শিরোনামের একটি প্রবন্ধ। মূলত এই প্রবন্ধের মাধ্যমেই তার বাংলায় পরিচিতি ঘটে।

 

সে বছর ২১ ফেব্রুয়ারি গোর্কি চতুর্থবারের মত কারাগারে নিক্ষিপ্ত হন। কারান্তরাল থেকেই মস্কো বিপ্লবের ওপর লিখতে শুরু করলেন তার বিখ্যাত চিঠি। রুশ স্বৈরতন্ত্রের অত্যাচারের ভয়াবহ বর্ণনা ছিল চিঠির মূলকথা।

 

ইংরেজি অনূদিত চিঠিগুলি বেঙ্গলি পত্রিকায় টানা তিনমাস ধরে বের হতে থাকল। এই সময় জুড়ে রুশ বিপ্লবের খবর মানেই গোর্কির চিঠি, যার ফলে পাঠকের কাছে রুশ বিপ্লব ও গোর্কি এক ও অভিন্ন হয়ে গেলেন।

 

বাংলার অগ্নিযুগ (১৯০২-১৯১৬) এর প্রথম দিকের কোনো এক বছরে গোর্কির লেখা ছোট গল্প প্রথম বাংলায় ছাপা হয় তৎকালীন ’জাহ্নবী’ মাসিক পত্রিকায়। তথ্যটি মেলে গল্পটির অনুবাদক সুধীরচন্দ্র সরকারের আত্মজীবনী ‘আমার কাল আমার দেশ’ নামক গ্রন্থে। তবে ঠিক কোন গল্পটি বেরিয়েছিল তা জানা যায় না। রাধারমণ মিত্র বলেছেন ১৯১৬-১৭ সালে ছাত্রজীবনে তিনি গোর্কির বই পড়েছেন রিপন কলেজের পাঠাগারে। তার যে সমস্ত সহপাঠী বিদেশি সাহিত্যে আগ্রহী ছিলেন বিভূতিভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায়ও তাদের মধ্যে একজন। বিভূতির কোনো লেখায় গোর্কির প্রভাব না থাকলেও ১৯২৭ সালে তার দিনলিপিতে অবশ্য গোর্কির বিষয়ে সশ্রদ্ধ উল্লেখ রয়েছে।

 

ড. ভবানী ভট্টাচার্যের মুখেও এমন কথা শোনা গেছে। ১৯৬৮ সলে দিল্লীতে গোর্কির জন্মবার্ষিকীর সভায় তিনি বলেছিলেন, কলেজ জীবনের শুরুতেই তিনি গোর্কির লেখার সাথে পরিচিত হন। যদিও গোর্কির প্রভাবে সাহিত্য আন্দোলন গড়ে ওঠে তার কলেজ জীবনের অনেক পরে। বিপ্লবী ভূপেন্দ্রকুমার দত্ত তার ‘বিপ্লবের পদচিহ্ন’ গন্থে লিখেছেন, ১৯১৮ সালে রাজশাহী জেলখানায় বন্দী অবস্থায় তিনি গোর্কির নাম প্রথম শোনেন। যেসব লেখক ও গ্রন্থ নিয়ে সেই সময় বন্দীরা জেলে তর্ক-বিতর্ক করতেন তার মধ্যে অন্যতম ছিল গোর্কির ‘থ্রি অব দেম’।

 

সরোজ আচার্য লিখেছেন, কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের উচ্চমাধ্যমিক ইংরেজি পাঠ সংকোলনে গোর্কির ‘চেলকাশ’ গল্পটি অন্তর্ভূক্ত ছিল।

 

বিংশ শতকের শুরুতে ইউরোপ, আমেরিকার মত বাংলাতেও গোর্কির ব্যাপক অভ্যর্থনা মিললো। এরপর দেখা গেল বাংলা থেকে কিছুকালের জন্য তিনি যেন আড়ালে পড়ে গেলেন। কিছুদিন পর দু-একটি ঘটনার ফলশ্রুতিতে তিনি যেন আবারও আবির্ভূত হলেন।

 

১৯১৯ সালের রাওলাট আইনের প্রতিবাদে করমচান্দ গান্ধী ৬ এপ্রিল ভারবর্ষে হরতালের ডাকা দিলেন। ১৩ এপ্রিল জালিয়ানওয়ালাবাগ হত্যাকাণ্ডের প্রতিক্রিয়ায় অন্যান্য জায়গার ন্যায় বংলার বুকেও ঝড় উঠল। ঘটে যায় আরো ঘটনা। ঘটনার ধারাবাহিকতায় ঝটিকা হয়ে হাজির হলেন কাজী নজরুল ইসলাম। বাংলা সাহিত্যে সত্যিই এক নবযুগের সূত্রপাত হল। ‘রুদ্রমঙ্গল’ প্রবন্ধে নজরুল লিখলেন, ‘জাগো জনশক্তি! হে আমার পদপিষ্ট কৃষক, আমার মুটে মজুর ভাইরা! তোমার হাতের ঐ লাঙ্গল আজ বলরাম-স্কন্ধে হলের মত ক্ষিপ্ত তেজে গগনের মাঝে উৎক্ষিপ্ত হয়ে উঠুক, এই অত্যাচারীর বিশ্ব উপড়ে ফেলুক-উল্টে ফেলুক। আনো তোমার হাতুড়ি, ভাঙো ঐ উৎপীড়িতের প্রাসাদ-ধুলায় লুটাও অর্থপিশাচ বলদর্পীর শির। ছোড়ো হাতুড়ি, চালাও লাঙল, উচ্চে তুলে ধর তোমার রক্তমাখা লালে-লাল ঝাণ্ডা।’

 

ভোলগা তীরের গোর্কির হাওয়া যে নজরুলকে আলোড়িত করেছিল তার প্রমাণ মেলে গোর্কির একটি লেখা থেকে। তিনি লিখেছিলেন, ‘এমনি করে বোবা হয়ে থাকবে না মানুষ। দিন আসবে হে দিন আসবে। সেদিন দেখবে শাস্তি কাকে বলে। যে অন্যায়, অবিচার আর জুলুম মানুষ এতকাল সয়ে এসেছে, পাহাড় হয়ে জমে অছে সব। বহু রক্ত দিয়ে এ পাপের প্রায়শ্চিত্ত কত্তে হবে বাছাধনদের। রক্ত-কার রক্ত জানো? আমাদেরই রক্ত, জনগণের রক্ত। মানুষগুলোর গতর থেকে চোঁ মেরে রক্ত শুষে দেহ ফুলিয়েছে রক্তচোষারা। ওদের গতরে যে-রক্ত আছে সে তো তালে আমাদের রক্ত। আমাদের বীজ নিয়ে যা খুশি করব আমরা।’

 

রাশিয়ার আকাশে গোর্কির ’ঝড়োপাখির গান’ নামক কবিতায় বেজে উঠেছিল: ’যেন কালো দৈত্য এক, ঝঞ্ঝার,-সে/পাখি ঝড়ের; যেমন অভিশাপ ছিটোয়, নাকি হাসে/চিরন্তনী হাসি নাকি চিরন্তনী কান্না-সে যে হাসে/ঝড়ের মেঘের দিকে চেয়ে চেয়ে, কান্না নয়, এ যে তার/জেগে-ওঠা পরম উল্লাস, আর ফুঁপিয়ে ফুঁপিয়ে ওঠা স্বর/।’

 

এদিকে বংলার আকাশেও শোনা গেল: ’আমি প্রাণ খোলা হাসি উল্লাস-আমি সৃষ্টিবৈরী মহাত্রাস,/আমি মহাপ্রলয়ের দ্বাদশ রবির বাহু গ্রাস!/আমি কভু প্রশান্ত-কভু অশান্ত দারুণ স্বেচ্ছাচারী।/আমি অরুণ খুনের তরুণ আমি বিধির দর্পহারী।’

 

শুনে মনে হয় এ যেন একই কণ্ঠ। সুতরাং, বলা যেতে পারে নজরুলের এই উল্লাসের পেছনেও রয়েছে ঝড়োপাখির প্রভাব। ১৯২৩ সালে শৈলজানন্দ মুখোপাধ্যায় ‘সংহতি’ পত্রিকায় লিখলেন, ‘বাঙ্গালি ভাইরা আমার’ উপন্যাস। উপন্যাসের প্রথম পঙক্তি ছিল, ‘লোহার কারখানার বৈদ্যুতিক পাওয়ার হাউজ হইতে প্রথম সিটি বাজিতে শুরু হইল।’ যেখানে গোর্কির ’মা’ উপন্যাসের সরাসরি প্রভাব লক্ষ করা যায়। গোর্কির বিখ্যাত এই উপন্যাসের প্রথম পঙক্তি ছিল: ’রোজ রোজই সেই এক-সেই ভোর না হতেই কারখানার বাঁশিটা কাঁপাকাঁপা বিশ্রী চিৎকার...কুলি বস্তির গুমোট তেলচিটে আকাশটা আঁতকে ওঠে’।

 

লক্ষণীয় বিষয় হল, একই সালে তার (শৈলজানন্দ’র) ‘মা’ নামক একটি গল্প প্রকাশিত হয়। ১৯২০ সলে ‘কল্লোল’ পত্রিকায় নৃপেন্দ্রকৃষ্ণ চট্টোপাধ্যায় এক দীর্ঘ প্রবন্ধ লিখলেন, যার শিরোনাম ছিল ’ম্যাক্সিম গোর্কি’। প্রবন্ধে তিনি গোর্কিকে রাশিয়ার সর্বশ্রেষ্ঠ লেখক হিসেবে ঘোষণা করেন। যদি শরৎচন্দ্রের বেলায় আসা হয় তাহলে দেখা যায়, সে সময় বিক্রমপুরের এক সাহিত্য সভায় তিনি বলেছিলেন, এখানকার সাহিত্য যেদিন রুশ সাহিত্যের ন্যায় সমাজের আরো নিচের স্তরে নেমে গিয়ে তাদের সুখ-দুঃখ বেদনার মাঝখানে দাঁড়াতে পারবে, সেদিনই বাংলা সাহিত্য দেশের সীমা ছাপিয়ে  বিশ্বসাহিত্যেও স্থান করে নিতে পারবে। পরবর্তীতে তার ‘পথের দাবী’ উপন্যাস ’বঙ্গবানী’-তে ছাপা হতে থাকে, যার ব্যাপারে তিনি নিজে বলেছেন যে, এই উপন্যাসে তার প্রেরণা গোর্কি। গোর্কির ব্যাপারে শরৎচন্দ্রের ব্যক্তিগত অভিব্যক্তি ছিল, তার (গোর্কি) লেখা পড়ার পর মনে হয় মানবজীবনের এত গভীর বিশ্লেষণ অন্য কোনো লেখকের লেখায় মেলে না। তিনি এও বলেছিলেন, গোর্কির রচনা না পড়া মানে জীবনের একটি বিশেষ দিক সম্বন্ধে জ্ঞান লাভে বঞ্চিত থাকা।

 

বাংলা সাহিত্যের ভূবনে গোর্কির সরাসরি প্রবেশ ঘটে ১৯২৫ সালে। নৃপেন্দ্রকৃষ্ণ চট্টোপাধ্যায় কর্তৃক অনুদিত ‘মা’ উপন্যাসের মাধ্যমে। উপন্যাসটি সাপ্তাহিক ’লাঙল’ পত্রিকার প্রথম সংখ্যা থেকেই প্রকাশিত হতে থাকে। সে সময় লাঙল এর প্রধান পরিচালক ছিলেন কাজী নজরুল ইসলাম।

 

বছর খানেকের মধ্যেই গোর্কির ‘টলস্টয়ের স্মৃতি’ কল্লোলে প্রকাশিত হতে শুরু করে। গ্রন্থটি অনুবাদ করেন পবিত্র গঙ্গোপাধ্যায়। ১৯২৫ থেকে ৩৮ সালের মধ্যে বাংলাতেই ‘মা’ চারটি রুপে প্রকাশিত হয়। উল্লেখ্য বাংলার আগে ভারতীয় অন্যান্য ভাষার মধ্যে একমাত্র মারাঠা ভাষায় মা অনূদিত হয়েছিল। তাও আবার মাত্র এক বছর আগে ১৯২৪ সালে।

 

মা উপন্যাসটির আবেদন যে কেবল সমাজতান্ত্রিক ও সাম্যবাদীদের মধ্যেই সীমাবদ্ধ ছিল না, তার বহু প্রমাণ রয়েছে। উদাহরণস্বরুপ, নেতাজী সুভাসচন্দ্র বসু ১৯২৬ সালে জেলে বন্দী। সে সময় রাশিয়ান একটি বই পড়ে তার মুগ্ধতার কথা তিনি লিখে রাখেন। যদিও গ্রন্থটির নাম উল্লেখ করেননি তবে তার লেখা বাক্যগুলি হুবহু মা উপন্যাসের সংলাপ।

 

১৯৩৫ সালে বাংলায় গোর্কির দ্বিতীয় গ্রন্থ হিসেবে বের হল মনিলাল শ্রীমানী অনুদিত ‘লেনিনের সহিত’। এই সময় গোর্কির আদর্শে অনুপ্রাণিত বাংলার বহু লেখকের মধ্যে গোর্কিয়ানা দেখা দেয়, বিশেষ করে নবীনদের মাঝে। অগ্রণী মাসিক পত্রিকার সম্পাদক প্রফুল্লরায় বলেছেন, তার ‘মজদুর’ উপন্যাস প্রত্যক্ষভাবে গোর্কির মা উপন্যাসের ভাবে প্রভাবিত। কৃষক বিদ্রোহের ওপর রচিত মনরঞ্জন হাজরার ‘নোঙরহীন নৌকা’ সেই একই প্রেরণার ফসল।

 

‘একদিন যারা মানুষ ছিল’ বাংলা ভাষায় গোর্কির তৃতীয় গ্রন্থ হিসেবে আবির্ভুত হয় ১৯৪০ সালে। ১৯৪২-এ বাংলা সাহিত্যের ভাণ্ডারে তার আরো দুইটি গ্রন্থ সংযোজিত হয়, খগেন্দ্র মিত্রের অনুবাদে ‘গোর্কির ডায়েরী’ ও ‘গোর্কির ছোটগল্প’।

 

এরপরে বাংলা সাহিত্যের সর্বাপেক্ষা উল্লেখযোগ্য ঘটনা হল: ফ্রয়েডীয় ভাববাদের মোহ কাটিয়ে মানিক বন্দ্যোপাধ্যায়ের স্বার্থক উত্তোরণ। নারায়ণ গঙ্গোপাধ্যায়ের ভাষায় বললে-‘শিল্পীর দ্বিতীয় জন্ম’। মানিক নিজেকে শ্রেণিহীন কর্মকার করে গড়ে তোলার প্রেরণা গোর্কির কাছ থেকেই পেয়েছিলেন। ১৯৪৫ সালে চারণ কবি বিজয়লাল চট্টোপাধ্যায়ের বিশেষ অনুরোধে মহেন্দ্রচন্দ্র রায় বাংলায় লিখলেন গোর্কির পূর্ণাঙ্গ জীবনী। একই বছর খগেন্দ্রনাথ মিত্র গোর্কির আত্মজীবনীমূলক গ্রন্থের প্রথম খণ্ড ‘আমার ছেলেবেলা’ অনুবাদ করলেন। গঙ্গেশরায় চৌধুরী অনুবাদ করলেন ‘চেলকাশ’ নামক বিখ্যাত গল্পটি, যার নাম দিলেন ‘চোর’।

 

পরের বছর আত্মজীবনীর তৃতীয় খণ্ড ‘যৌবনস্মৃতি’ বের হয় খগেন্দ্র মিত্রের অনুবাদে। একই বছর হীরেন্দ্রনারায়ণ মুখোপাধ্যায় ও  নির্মলকান্তি মুখোপাধ্যায় যুগ্মভাবে ‘ম্যাক্সিম গোর্কির মৃত্যু ও মস্কো বিচার’ নামক একটি গ্রন্থ রচনা করেন। ১৯৪৮-এ খগেন্দ্র মিত্র আত্মজীবনীর মাঝের অর্থাৎ দ্বিতীয় খণ্ড ‘পৃথিবীর পথে’ অনুবাদ করলেন। ১৯৬৮ সাল পর্যন্ত কল্লোলে প্রায় প্রতি বছরই গোর্কির কিছু না কিছু অনুবাদ পাওয়া গেছে। এ ছাড়া গোর্কি সাহিত্যের বাংলা নাট্যরুপ দেওয়া হয় সর্বপ্রথম ১৯৪৬ সালে ক্যালকাটা রেনেসাঁস ক্লাবের উদ্যোগে। এর মধ্যে শিবনারায়ণ রায় লিখিত ‘লোয়ার ডেফত’ অবলম্বনে ’রাতকুঠুরী’।

 

১৯৫৩ সালে দারিকাদাস গঙ্গোপাধ্যায় ও অধীর মুখোপাধ্যায় এর নাট্যরুপে মা মঞ্চস্থ হয়। ১৯৫৭ সালে মঞ্চস্থ হয় ‘নীচের মহল’, এটিও লোয়ার ডেফত অবলম্বনে। মা উপন্যাস অবলম্বনে ১৯৬১ সালে ‘মে দিবস’ নামে নাটকটি প্রকাশিত হয়, রচনা করেন উৎপল দত্ত। এরপরও গোর্কির বহু রচনা বাংলা ভাষায় রচিত হয়েছে, যা কেবল বাংলা সাহিত্যের ভাণ্ডারকে সমৃদ্ধই করেনি। অধিকন্তু বহুসংখ্যক নবীন সহিত্যিককে তাদের লক্ষ্য নির্ধারণের ক্ষেত্রে দিশা যুগিয়েছে। যার প্রভাব আজও বিদ্যমান।

 

 

রাইজিংবিডি/ঢাকা/১৭ জুন ২০১৬/সাইফ

রাইজিংবিডি.কম

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়