ঢাকা     শনিবার   ২০ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ৭ ১৪৩১

চেনা চে’র অজানা কথা

সঞ্জীবন চট্টোপাধ্যায় || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ০৮:৫৬, ৯ অক্টোবর ২০১৫   আপডেট: ০৫:২২, ৩১ আগস্ট ২০২০
চেনা চে’র অজানা কথা

আর্নেস্তো চে গুয়েভারা

সঞ্জীবন চট্টোপাধ্যায় : আর্নেস্তো চে গুয়েভারা এক আমৃত্যু বিপ্লবীর নাম। তিনি স্বপ্ন দেখতেন কিউবার মতো ল্যাটিন আমেরিকার সকল দেশেই সমাজতন্ত্র প্রতিষ্ঠিত হবে। যে কারণে মৃত্যুর আগ পর্যন্ত যুদ্ধ করে গেছেন সাম্রাজ্যবাদের বিরুদ্ধে। বলিভিয়ার অরণ্যে-পাহাড়ে সরকারি বাহিনীর বিরুদ্ধে একটা বিচ্ছিন্ন গেরিলা আক্রমণের নেতৃত্ব দিতে গিয়ে গুলিবিদ্ধ হয়ে ধরা পড়েন চে গুয়েভারা। সময়টা হলো ১৯৬৭ সালের ৮ অক্টোবর। পরদিন গুলি করে হত্যা করা হয় তাকে। আজ এই বিপ্লবীর মৃত্যুদিন। পাঠক চলুন জানি তার অজানা কিছু তথ্য।

 

জন্মের পর এই বিপ্লবীর নাম রাখা হয়েছিল ‘আর্নেস্তো’। তার পুরো নাম আর্নেস্তো গুয়েভারা দে লা সারনা। কিন্তু এ নামে তাকে চেনা কষ্টই বটে! তিনি পরিচিত ‘চে’ নামে। এই শব্দটির অর্থ বন্ধু।
জন্ম নিবন্ধন অনুযায়ী চে’র জন্ম তারিখ ১৯২৮ সালের ১৪ জুন। তবে তার প্রকৃত জন্ম তারিখ ১৯২৮ সালের ১৪ই মে। জন্মদিন নিয়ে এক মাসের হেরফের কী কারণে তা অবশ্য জানা যায় না।

 

১৯৫৫ সালের জুলাই মাসে মারিয়া এন্টোনিয়ার বাড়িতে চে’র সঙ্গে পরিচয় হয় কিউবার বিপ্লবী নেতা ফিদেল ক্যাস্ত্রোর। ক্যাস্ত্রো গেরিলা দলের নেতৃত্বে ছিলেন। সেই গেরিলা দলে চিকিৎসক হিসেবে যোগ দেন চে। অবাক ব্যাপার হলো, দলে তখন তিনিই একমাত্র বিদেশী ছিলেন।

 

১৯৫৯ সালের ৯ ফেব্রুয়ারি চে গুয়েভারাকে কিউবার নাগরিকত্ব প্রদান করা হয়। এর আগে তিনি কিউবার নবগঠিত বিপ্লবী সরকারের গুরুত্বপূর্ণ নেতা হয়ে ওঠেন। কৃষি বিভাগের সর্বোচ্চ নির্বাহী, কেন্দ্রীয় ব্যাংকের প্রধান অথবা শিল্প মন্ত্রণালয়ের মন্ত্রীর দায়িত্বও পালন করেন তিনি।

 

১৯৬৫ সালে ১লা এপ্রিল চে গুয়েভারা কিউবার শিল্পমন্ত্রীর পদ, মেজরের পদ, কমিউনিস্ট পার্টির সদস্যপদ এবং কিউবার নাগরিকত্ব ত্যাগ করেন। তিনি এ সময় ফিদেল ক্যাস্ত্রোকে লেখেন : ‘ঠিক এই মুহূর্তে আমার অনেক পুরোনো কথা মনে পড়ছে, সেই যখন তোমার সঙ্গে মারিয়া এন্টোনিয়ার বাড়িতে আমার সাথে প্রথম পরিচয় হয়েছিল। সেদিন তুমি আমাকে বিপ্লবে অংশগ্রহণ করতে বলেছিলে এবং খুব উত্তেজনা অনুভব করছিলাম। আর তখন একটা প্রশ্ন উঠেছিল মৃত্যুকে বরণ করবে কে? এই প্রশ্নের উত্তর নিজেরাই পেয়েছিলাম। বুঝেছিলাম বিপ্লবের বিজয়ের আনন্দ আছে আবার তেমনি মৃত্যুর বেদনাও আছে।’

 

এরপর শোষণহীন সমাজ প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে চে বলিভিয়াকে বেছে নেন। ১৯৬৬ সালের নভেম্বর মাসে উরুগুয়ের ব্যবসায়ী এ্যাডোলফো মেনা গনজালেস নাম ধারণ করে ছন্মবেশে তিনি বলিভিয়া পৌঁছান।
বলিভিয়ায় চে গুয়েভারার গেরিলা সংগ্রামে সরকার ভীত হয়ে পড়ে। তারা চে গুয়েভারাকে ধরিয়ে দেয়ার জন্য ৫০ হাজার ডলার পুরস্কার ঘোষণা করে।

 

১৯৬৭ সালের ৮ অক্টোবর বলিভিয়ার সরকারি বাহিনীর বিরুদ্ধে একটা বিচ্ছিন্ন গেরিলা আক্রমণের নেতৃত্ব দিতে গিয়ে গুলিবিদ্ধ হয়ে ধরা পড়েন চে গুয়েভারা। তাকে বন্দি করার পর একটা স্কুলে আটকে রাখা হয়। পরদিন তাকে মারার জন্য মারিও তেরন নামে একজন সৈনিককে পাঠানো হয়। সেই সৈনিক প্রচণ্ড স্নায়ু চাপে ভুগতে থাকে এবং মদ পান করে প্রায় এক ডজন গুলি চালায় চে’কে লক্ষ্য করে।

 

মৃত্যু নিশ্চিত হওয়ার পর চে’র হাত এবং চুল কেটে ফেলা হয় এবং তাকে গণকবরে পুতে রাখা হয়। ১৯৯৭ সালের জুনের শেষ দিকে কিউবা ও আর্জেন্টিনার বিশেষজ্ঞরা সম্মিলিতভাবে চে’র মৃতদেহ উদ্ধারে অভিযান চালায়। এ সময় প্রায় ১০ হাজার বর্গমিটার এলাকায় অভিযান চালানো হয়।

 

১৯৯৭ সালের ২৮ জুন একটি গণকবর থেকে ৭টি কংকাল উদ্ধার করা হয় এবং হাসপাতালে পরীক্ষা করার পর দুটি হাত ছাড়া কঙ্কালটি চে’র বলে চিহ্নিত করা হয়।

 

বলিভিয়ার পাহাড়-জঙ্গলে লড়াইকালীন অস্ত্রের পাশাপাশি চে’র সঙ্গে সব সময় থাকত একটি ব্যাগ। ব্যাগের মধ্যে থাকত একটি সবুজ কবিতার খাতা। তিনি নিজে কবিতা লিখতেন। শুধু তাই নয়, চে গুয়েভারা কিউবান ভাষায় ৭০টি প্রবন্ধ লিখেছেন। এর মধ্যে প্রায় ২৫টি লিখেছেন ছন্মনামে। তিনি লিখে দিয়েছেন ৫টি বইয়ের ভূমিকা। সাক্ষাৎকার দিয়েছেন প্রায় ২৫০। তার লেখালেখি নিয়ে ৯ খণ্ডের রচনাবলী রয়েছে।

 

চে’র ‘মটর সাইকেল ডায়েরি’ সর্বোচ্চ বিক্রি হয়েছে। পরে এই শিরোনামে একটি চলচ্চিত্রও তৈরি হয়েছে। ২০০৮ সালের ৪ ডিসেম্বর একটি চলচ্চিত্র উৎসবে চে পার্ট-ওয়ান চলচ্চিত্রের প্রদর্শনী হয়। ২০০৯ সালের ফেব্রুয়ারিতে চে পার্ট-টু মুক্তি পায়।


 

রাইজিংবিডি/ঢাকা/৯ অক্টোবর ২০১৫/তাপস রায়

রাইজিংবিডি.কম

সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়