ঢাকা     শনিবার   ২০ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ৭ ১৪৩১

ছিটমহলে উড়ল প্রতীক্ষার পতাকা

হাসিবুল করিম || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ০৩:১৫, ১ আগস্ট ২০১৫   আপডেট: ০৫:২২, ৩১ আগস্ট ২০২০
ছিটমহলে উড়ল প্রতীক্ষার পতাকা

পঞ্চগড় প্রতিনিধি : বাংলাদেশের সীমানায় যোগ হওয়া ছিটমহলগুলোতে প্রথমবার উড়ল বাংলাদেশের লাল-সবুজের পতাকা। শনিবার প্রথম প্রহরে সূর্যোদয়ের সঙ্গে সঙ্গে প্রতিটি ছিটমহলে জাতীয় পতাকা ওড়ানো হয়। ৫০ হাজার অধিবাসীর কাছে ঘুচল নিজ দেশে পরাধীনতার গ্লানি।

 

দীর্ঘ ৬৮ বছরের অপেক্ষার অবসান ঘটল ছিটমহলবাসীর। ভারত থেকে বেরিয়ে বাংলাদেশের ভূখণ্ডে সীমান্ত চুক্তি অনুযায়ী যুক্ত হওয়া দাশিয়ার ছড়ায় প্রথমবার ওড়ানো হয় বাংলাদেশের লাল-সবুজ পতাকা। একই চিত্র ছিল ভারতের সঙ্গে যোগ হওয়া ছিটমহলগুলোতেও।

 

পঞ্চগড় সদর উপজেলার সাবেক ভারতীয় গারাতী ছিটমহলে রাষ্ট্রীয়ভাবে বাংলাদেশের জাতীয় পতাকা উত্তোলন করা হয়। 

 

ভোর ৬টায় ভারপ্রাপ্ত জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ সামছুল আজম এই পতাকা উত্তোলন করেন। এ সময় পুলিশ সুপার মো. গিয়াস উদ্দিন আহাম্মেদ, জেলা মুক্তিযোদ্ধা কমান্ডার মির্জা আবুল কালাম দুলাল, গারাতী ছিটমহলের প্রাক্তন চেয়ারম্যান মফিজার রহমানসহ জেলা ও পুলিশ প্রশাসনের কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন। পরে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির স্বাভাবিক রাখাসহ সেখানকার অধিবাসীদের সার্বক্ষণিক নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে ফোরকানিয়া মাদ্রাসা মাঠে অস্থায়ী একটি পুলিশ ফাঁড়ির উদ্বোধন করা হয়।

 

পতাকা উত্তোলনের পর সংক্ষিপ্ত শুভেচ্ছা বক্তব্যে ভারপ্রাপ্ত জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ সামছুল আজম ৬৮ বছর পর ছিটমহলবাসীদের বাংলাদেশি নাগরিক হিসেবে স্বাগত জানান। তিনি পুলিশ ও জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে সব রকম সহযোগিতার আশ্বাস দেন।

 

এর আগে শুক্রবার রাত ১২টা ১ মিনিটে জেলার ৩৬টি ভারতীয় ছিটমহলে মোমবাতি, প্রদীপ ও মশাল জ্বালিয়ে ছিটমহল এলাকা আলোকিত করা হয়। সন্ধ্যার পর থেকে গারাতী এলাকার ফোরকানিয়া মাদ্রাসা মাঠে নাটক, সংগীতানুষ্ঠান উপভোগসহ সেখানকার অধিবাসীরা রাতভর উল্লাস করেন। ৬৮ বছর ধরে নাগরিক সুবিধাবঞ্চিত ছিটমহলের বাসিন্দারা আলো জ্বালিয়ে অন্ধকার থেকে আলোর পথে যাত্রা শুরু করেন। মুহূর্তেই বনে যান বাংলাদেশের গর্বিত নাগরিক।

 

বাংলাদেশ-ভারত স্থলসীমান্ত চুক্তি অনুযায়ী শুক্রবার রাত ১২টা ১ মিনিটে ক্যালেন্ডারের তারিখ ১ আগস্টে পৌঁছানোর সঙ্গে সঙ্গে কার্যকর হয় ছিটমহল বিনিময়। প্রতিটি বাড়ি প্রজ্বলিত হয় ৬৮ প্রদীপে।

 

দুই দেশের স্থলসীমান্ত চুক্তি অনুযায়ী, ভারতের ভেতর ৫১টি বাংলাদেশি ছিটমহল ও বাংলাদেশের ভেতর ১১১টি ভারতীয় ছিটমহল বিনিময় হওয়ার ফলে বাংলাদেশের ভেতর থাকা ছিটমহলবাসীরা পাচ্ছেন বাংলাদেশের নাগরিকত্ব আর ভারতের ভেতর থাকা ছিটমহলবাসীরা পাচ্ছেন ভারতের নাগরিকত্ব।

 

দীর্ঘদিনের অমীমাংসিত এই সমস্যার অবসানের মধ্য দিয়ে বাংলাদেশ ও ভারতের মানচিত্র পূর্ণতা পেল ।

 

ছিটমহলগুলোতে এখন কেবলই বিজয়োল্লাস। ৬৮ বছরের নাগরিকত্বহীন জীবন থেকে বেরিয়ে নতুন বাংলাদেশি হওয়ায় ছিটমহলবাসীর এ আনন্দ যেন বাঁধ ভাঙা।

 

 

 

রাইজিংবিডি/পঞ্চগড়/১ আগস্ট ২০১৫/হাসিবুল করিম/দিলারা/এএন

রাইজিংবিডি.কম

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়