ঢাকা     বৃহস্পতিবার   ২৫ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ১২ ১৪৩১

জঙ্গিবাদ নির্মূল করে নিরাপদ করতে হবে দেশ

নওশের || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ১৮:০৮, ২৮ নভেম্বর ২০১৫   আপডেট: ০৫:২২, ৩১ আগস্ট ২০২০
জঙ্গিবাদ নির্মূল করে নিরাপদ করতে হবে দেশ

আলী নওশের : অনেক চড়াই উৎরাই পেরিয়ে মানবতাবিরোধী অপরাধীদের বিচার কাজ শুরু হওয়ার পর এ পর্যন্ত চার কুখ্যাত অপরাধীর মৃত্যুদণ্ড কার্যকর করেছে সরকার। দেশকে কলঙ্কমুক্ত  করতে বাকি অপরাধীদের বিচার কাজ দ্রুত সম্পন্ন হবে এ প্রত্যাশা আমাদের সবার।

 

তবে উদ্বেগজনক বিষয় হচ্ছে, সম্প্রতি দেশে একের পর এক বিদেশি নাগরিকদের হত্যা বা তাদের ওপর হামলার ঘটনা ঘটছে । দেশি-বিদেশি চক্র এসব ঘটনার পেছনে রয়েছে বলে ধারণা করা হচ্ছে। তা ছাড়া  দেশের মধ্যে ঘাপটি মেরে থাকা উগ্র গোষ্ঠীও এসবের সঙ্গে জড়িত থাকতে পারে। এদের নির্মূল করে দেশকে নিরাপদ করতে হবে।

 

অবশ্য সরকার প্রথম থেকেই জঙ্গিবাদের বিরুদ্ধে জিরো টলারেন্স প্রদর্শন করছে।  জঙ্গিবাদ দমনে এই সরকারের অবস্থান বেশ দৃঢ়। আমাদের আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীও আগের চেয়ে আরো বেশি সতর্ক। দেশব্যাপী গোয়েন্দা নজরদারি বাড়ানো হয়েছে। তবে শুধু আইন কিংবা শক্তি প্রয়োগ করে এসব ক্ষেত্রে সফলতা পাওয়া কঠিন।

 

এক্ষেত্রে গণসচেতনতা তৈরির মাধ্যমে জঙ্গিবাদ ও সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে সামাজিক প্রতিরোধ গড়ে তোলা অত্যন্ত জরুরি। জঙ্গিদের অর্থায়নকারীদের খুঁজে বের করতে হবে। পাশাপাশি সমাজের বিভিন্ন স্তরে বিশেষত সাংস্কৃতিক, ধর্মীয় ও শিক্ষা প্রতিষ্ঠানকে জঙ্গিবাদ ও সন্ত্রাস দমনে সম্পৃক্ত করা প্রয়োজন। দেশ-বিদেশে বাংলাদেশের গণতন্ত্রের ভাবমূর্তি রক্ষার জন্য জঙ্গিবাদের বিরুদ্ধে সামাজিক সচেতনতা গড়ে তুলতে হবে। উগ্র সাম্প্রদায়িক হামলা বন্ধ করতে সমাজের সর্বস্তরের লোকদের এগিয়ে আসতে হবে। গণমাধ্যমে জঙ্গিবাদের নেতিবাচক দিক তুলে ধরে ব্যাপক প্রচারের ব্যবস্থা করা প্রয়োজন। এক্ষেত্রে গণমাধ্যমসংশ্লিষ্টরা গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করতে পারেন।

 

মনে রাখতে হবে, জঙ্গিরা যুদ্ধকেই তাদের আদর্শ বলে গ্রহণ করে। এটিই জঙ্গিবাদের প্রধান বৈশিষ্ট্য। তাদের অন্যতম হাতিয়ার হচ্ছে সহিংসতা। তারা নিজেদের মতাদর্শকে সর্বশ্রেষ্ঠ মতাদর্শ হিসেবে বিবেচনা করে। ফ্যাসিবাদী হিটলারের মতো সব জঙ্গিবাদীর সাধারণ বৈশিষ্ট্য হচ্ছে আক্রমণ, বল প্রয়োগ এবং যুদ্ধ করে নিজের মতবাদ ও ক্ষমতা প্রতিষ্ঠা করা। মূলত ধর্মীয় জঙ্গিবাদীরা নিজেদের ধর্মের শ্রেষ্ঠত্বে বিশ্বাসী। যেমন আইএস বা ইসলামি জঙ্গিরা সব বিধর্মীর বিরুদ্ধে জিহাদ, ক্রুসেড বা ধর্মযুদ্ধের আহ্বান জানায়। কেবল ব্যক্তি নয়, রাষ্ট্রীয় ক্ষমতায় অধিষ্ঠিত মুসলমান শাসক তাদের মতাদর্শের বিরুদ্ধে থাকলে সহিংস কর্মকাণ্ড ও অপপ্রচারের মাধ্যমে সেই ক্ষমতাবানদেরও চ্যালেঞ্জ ছুড়ে দেয় জঙ্গিরা।

 

বিশ্বের বিভিন্ন দেশের মতো বাংলাদেশেও একাধিক জঙ্গিবাদী সংগঠনের অপতৎপরতা রয়েছে। বিশিষ্ট অর্থনীতিবিদ অধ্যাপক ড. আবুল বারকাতের হিসাব অনুসারে জঙ্গি সংগঠন ১২৫টি। এদের মধ্যে জামায়াত, হিযবুত তাহির ও অন্যান্য মৌলবাদী দল একত্র হয়ে সন্ত্রাস ও নৈরাজ্য সৃষ্টি করে দেশকে ব্যর্থ রাষ্ট্রে পরিণত করার ষড়যন্ত্রে লিপ্ত রয়েছে।

 

ড. বারকাতের মতে, তাদের মধ্যে কোনোটি হয়তো শুধু একটি ইউনিয়নের মধ্যেই কাজ করছে। কোনোটি হয়তো একটি অঞ্চলে কাজ চালায়, কোনোটি সারা দেশে কাজ করে আবার কোনোটির নেটওয়ার্ক হয়তো আন্তর্জাতিক পর্যায়েও বিস্তৃত রয়েছে। এই ১২৫ সংগঠনের কোনোটিই কোনোটি থেকে বিচ্ছিন্ন নয়। আপাতদৃষ্টিতে এদের নাম, কর্মক্ষেত্র, নেতৃত্ব পরস্পর পৃথক বলে মনে হলেও এদের মূল লক্ষ্য একটিই। ইসলাম কায়েমের কথা বলে ‘রাজনৈতিক ক্ষমতা’ দখল। ড. আবুল বারকাতের মতে, এদের সবার গুরু ‘জামায়াতে ইসলামী’। মুক্তিযুদ্ধ চলাকালে এই দল একই সঙ্গে ‘পিস কমিটি’ এবং ‘বদর বাহিনী’ গঠন করে।

 

দেশের শান্তিকামী জনগণের জন্য সব দলকে রাজনৈতিক বিভাজন ভুলে ঐকমত্যের ভিত্তিতে দেশ থেকে জঙ্গিবাদ নির্মূলে যত দ্রুত সম্ভব প্রয়োজনীয় উদ্যোগ গ্রহণ করা প্রয়োজন। দলীয় স্বার্থে কোনো কোনো দল এসব জঙ্গি সংগঠনকে ব্যবহার, অধিক প্রশ্রয় এবং সন্ত্রাসী হামলার ঘটনাকে রাজনৈতিক উদ্দেশ্য হাসিলের জন্য ব্যবহার করে থাকে।

 

এ ধরনের হীন কার্যকলাপ থেকে তাদের বিরত রাখার জন্য জনগণকে সচেতন থাকতে হবে। মানুষের মঙ্গলের জন্য বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির যথার্থ ব্যবহার নিশ্চিত করতে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলো শিক্ষার্থীদের সতর্ক করবে। দেশ ও জনগণের স্বার্থে জঙ্গিবাদ নির্মূলে সবার ভেতরে সুপ্ত দেশপ্রেম ও শুভবোধ জাগ্রত করার দায়িত্ব সবার। মূলত দেশ থেকে জঙ্গিবাদ নির্মূলে সরকারের পাশাপাশি সব রাজনৈতিক দল, আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীসহ সবাইকে ঐক্যবদ্ধ প্রচেষ্টায় জঙ্গিদের বিরুদ্ধে প্রতিরোধ ও সামাজিক আন্দোলন গড়ে তুলতে হবে।

 

সবার সার্বিক প্রচেষ্টায় এ ধরনের ঐক্যবদ্ধ সামাজিক প্রতিরোধব্যবস্থা গড়ে তোলা অসম্ভব কিছু নয়। মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় জাগ্রত ধর্মনিরপেক্ষ ও সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির বাংলাদেশের মানুষ কখনোই জঙ্গিবাদের হীন ষড়যন্ত্রকে এ দেশের মাটিতে কার্যকর হতে দিতে পারে না। তাই গণতন্ত্র, সার্বিক আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি এবং নিজেদের অস্তিত্বের জন্য হুমকি জঙ্গিবাদ নির্মূলে সামাজিক প্রতিরোধ গড়ে তুলতে হবে। এর কোনো বিকল্প নেই।

 

 

রাইজিংবিডি/ঢাকা/২৯ নভেম্বর ২০১৫/রাসেল পারভেজ

রাইজিংবিডি.কম

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়