ঢাকা     শুক্রবার   ১৯ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ৬ ১৪৩১

জনপ্রিয় হচ্ছে আধানিবিড় পদ্ধতির চিংড়ি চাষ

মুহাম্মদ নূরুজ্জামান || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ১১:৪৮, ১১ অক্টোবর ২০১৫   আপডেট: ০৫:২২, ৩১ আগস্ট ২০২০
জনপ্রিয় হচ্ছে আধানিবিড় পদ্ধতির চিংড়ি চাষ

সুন্দরবনসংলগ্ন উপকূলে আধানিবিড় পদ্ধতির চিংড়ি চাষের একটি পুকুর

মুহাম্মদ নূরুজ্জামান, খুলনা : সুন্দরবনসংলগ্ন উপকূল খুলনার কয়রা উপজেলার প্রত্যন্ত এলাকায় আধুনিক প্রযুক্তি ব্যবহারের মাধ্যমে আধানিবিড় পদ্ধতিতে বাগদা চিংড়ি চাষে ব্যাপক সফলতা এসেছে।

 

প্রযুক্তির মাধ্যমে অক্সিজেন, ওষুধ ও খাবার সরবরাহের কারণে সম্পূর্ণ ভাইরাসের ঝুঁকিমুক্ত হওয়ায় পদ্ধতিটি জনপ্রিয় হয়ে উঠতে শুরু করেছে।  সাধারণ চাষের তুলনায় মুনাফার পরিমাণ অধিক হওয়ায় পার্শ¦বর্তী কয়েকটি জেলায়ও এ পদ্ধতি ব্যবহার হচ্ছে।

 

স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, ২০০৩ সালে প্রথম খুলনার কয়রা উপজেলায় আধুনিক প্রযুক্তি ব্যবহারের মাধ্যমে আধানিবিড় পদ্ধতিতে বাগদা চিংড়ির চাষ শুরু হয়। তৎকালীন উপজেলার প্রত্যন্ত এলাকা খিরোল গ্রামে প্রান্তি একোয়া কালচার লিমিটেড নামে একটি প্রতিষ্ঠান গড়ে ওঠে। ১২০ বিঘা জমিতে ২৪টি পুকুর খনন করে শুরু করা আধুনিক প্রযুক্তির চিংড়ি চাষে সফলতা দেখা দেয়। চাষের ধারাবাহিকতায় বাগদা চিংড়ি উৎপাদন ও বিপণন করে প্রতিষ্ঠানটি দেশে-বিদেশে বেশ সুনাম অর্জন করেছে। এমনকি এ পদ্ধতির চিংড়ি বিদেশেও রপ্তানি করা হচ্ছে। এ প্রকল্পের দেখাদেখি পার্শ¦বর্তী কয়েকটি প্রকল্পেও আধানিবিড় পদ্ধতিতে বাগদার চাষ শুরু হয়েছে। 

 

প্রান্তি একোয়া কালচার লিমিটেড চিংড়ি প্রকল্পের ভারপ্রাপ্ত পরিচালক মাহমুদ হাসান জানান, আধানিবিড় পদ্ধতির চাষে তাদের প্রকল্পে প্রতি বছর ৪০ থেকে ৫০ হাজার কেজি বাগদা উৎপাদন হয়। এ প্রকল্পে উৎপাদিত ৪৫ হাজার কেজি চিংড়ি ২০১৪ সালে বিদেশে রপ্তানি করা হয়েছে। যার মূল্য ৩ কোটি ১৫ লাখ টাকা।

 

তিনি বলেন, থাইল্যান্ডের সিপি গ্রুপের টেকনিক্যাল সাপোর্ট থাকায় চিংড়িতে ভাইরাসজনিত কোন সমস্যা দেখা দেয় না। চিংড়ির খাদ্য, রাসায়নিক পদার্থ ও যাবতীয় ঔষধপত্র সিপি গ্রুপ সরবরাহ করে থাকে। বর্তমানে প্রান্তি কালচার প্রকল্পে ৩৫ জন কর্মরত রয়েছেন। সুন্দরবনের নিকটবর্তী হলেও বনদস্যু কিংবা সন্ত্রাসীদের তৎপরতা নেই। এছাড়া বাগেরহাট, সাতক্ষীরা ও বটিয়াঘাটা এলাকায়ও তাদের আরো কয়েকটি প্রকল্পে একইভাবে বাগদা উৎপাদন ও বিপণন কার্যক্রম পরিচালিত হচ্ছে। এ প্রকল্পের সহযোগিতা ও সাপোর্ট পেয়ে পার্শ¦বর্তী আরো কয়েকটি ছোট ও মাঝারি প্রকল্প গড়ে উঠেছে। তারাও বাগদা চাষ করে ব্যাপক লাভবান হচ্ছেন।

 

প্রকল্পের ব্যবস্থাপনা পরিচালক এমএ হাসান পান্না বলেন, সম্পূর্ণ বৈজ্ঞানিক উপায়ে আধুনিক প্রযুক্তি কাজে লাগিয়ে চিংড়ি উৎপাদন করে সফলতা পাওয়া যাচ্ছে। বাগদা চিংড়ি উৎপাদন ও মৎস্য সম্পদ উন্নয়নের স্বীকৃতিস্বরূপ ২০১১ সালে প্রধানমন্ত্রী কর্তৃক তার প্রতিষ্ঠানটি জাতীয় পুরস্কার পেয়েছে বলেও জানান তিনি। 

 

এ ব্যাপারে কয়রা উপজেলা মৎস্য কর্মকর্তা (ভারপ্রাপ্ত) মো. আলাউদ্দিন জানান, আধানিবিড় পদ্ধতিটি হচ্ছে স্বল্প জমিতে অধিক চাষ। যাকে ইংরেজিতে সেমি ইন্টেন্সি বলা হয়। যেহেতু ঘেরে চিংড়ি চাষের জন্য অধিক জমির প্রয়োজন হয়, সে কারণে নানা সমস্যা তৈরি হয়। প্রয়োজনীয় উপযোগী জমিরও অভাব রয়েছে। তাই স্বল্প জমিতে পুকুর কেটে এ পদ্ধতির চাষ বেশ সুবিধা ও লাভজনক।

 

তিনি বলেন, এক হেক্টর (সাড়ে ৭ বিঘা) জমিতে আধানিবিড় পদ্ধতির চাষে ৫-৬ হাজার কেজি চিংড়ি উৎপাদন করা সম্ভব। সে ক্ষেত্রে ১, ২ ও ৩ বিঘা আয়তনের পুকুরে ৫ ফুট পানি থাকা আবশ্যক। চিংড়িতে প্রতিদিন ২-৩ বার করে (এক ঘণ্টা) মেশিনের মাধ্যমে অক্সিজেন সরবরাহ করতে হয়। উপজেলায় বর্তমানে পাঁচটি প্রতিষ্ঠান কয়েকশ বিঘা জমিতে এ পদ্ধতিতে চিংড়ি চাষ করে লাভবান হচ্ছে বলেও জানান তিনি।

 

 

রাইজিংবিডি/খুলনা/১১ অক্টোবর ২০১৫/মুহাম্মদ নূরুজ্জামান/মুশফিক

রাইজিংবিডি.কম

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়