ঢাকা     শনিবার   ২০ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ৭ ১৪৩১

জমিদার সাজ্জালেলার নাচঘর

রেজাউল করিম || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ১২:২৫, ২ মার্চ ২০১৫   আপডেট: ০৫:২২, ৩১ আগস্ট ২০২০
জমিদার সাজ্জালেলার নাচঘর

চট্টগ্রামের জমিদার সাজ্জালেলার তৈরি ‘নাচঘর’ ভবনের সামনের অংশ (ছবি : রেজাউল করিম)

নাচঘর। নামটি কানে আসলে সবার মাঝেই কৌতুহলের সৃষ্টি হয়। নাচঘর মানেই যে ঘরে নাচ হয়। জমিদারি শাসনামলে প্রায় প্রতিটি জমিদারবাড়ির পাশেই আলাদভাবে থাকতো নাচঘর। যেখানে নর্তকীরা নেচে-গেয়ে জমিদারদের মনোরঞ্জন করতো।

 

এমনই একটি নাচঘরের অস্থিত্ব এখনো বিদ্যমান বন্দরনগরী চট্টগ্রামে। চট্টগ্রাম মহানগরীর মধ্যে প্রায় তিনশো বছরের ঐতিহ্য ধারণ করে এখনো দাঁড়িয়ে আছে জমিদার সাজ্জালেলার জমিদারবাড়ির নাচঘর।

 

তিনশ বছর পূর্বে পর্তুগিজ শাসনামলের ধারাবাহিকতায় চট্টগ্রামের চন্দনপুরা এলাকায় দাদা ও বাবার পর জমিদারিত্ব লাভ করেন জমিদার সাজ্জালেলা। ২৫০ বছর আগে বর্তমান স্থানে জমিদার সাজ্জালেলার দাদার আমলে এই জমিদার বাড়িটি নির্মিত হয়। সাজ্জালেলার জমিদারি সময়কালে পাকিস্তান সরকার হিন্দু জমিদারদের জায়গা, জমি ও বাসভবন অধিগ্রহণ করে নেয়। সে সময়ে সাজ্জালেলার পৈত্রিক সূত্রে পাওয়া এই বাড়িটি সরকারি সম্পত্তি হয়ে যায়।

 

নাচঘরের বাইরের দেওয়ালের বাইরের নকশা (ছবি : রেজাউল করিম)

 

পাকিস্তান সরকার এখানে স্থাপন করে চট্টগ্রাম বিভাগীয় অগ্নিনির্বাপক কার্যালয়। দিনে দিনে এটি ক্রমশ অভিভাবকহীন হয়ে পড়ে। বিগত ২৫ বছর আগে বাংলাদেশ সরকার এই ভবনটিকে পরিত্যক্ত ঘোষণা করে। জানা গেছে, ব্রিটিশ আমলে ভবনের চারদিক পরিষ্কার করে নিচের অংশে চুনকাম করার পর পরই সাজ্জালেলার মৃত্যু হয়। তার পুরো পরিবার চলে যায় ভারতে। পরবর্তীতে সাজ্জালেলার পরিবারসহ আত্মীয় স্বজনরা ভবনসহ পাশের জমি পুণরুদ্ধারের চেষ্টা করেও সফল হয়নি।

 

চট্টগ্রাম মহানগরীর চকবাজার থানাধীন চন্দনপুর এলাকার এই জমিদার বাড়িটি ধসে পড়ার উপক্রম হয়েছে। রক্ষণাবেক্ষণের অভাবে ভবনটি আজ অনেকটা পরিত্যক্ত। স্থানীয় লোকজনের মতে প্রায় ২৫০ বছরের পুরনো এ ভবনটি এখন চট্টগ্রাম বিভাগীয় অগ্নিনির্বাপক কার্যালয়ের নামে পরিচিত।

 

সরেজমিনে গিয়ে দেখা গেছে, এটি জমিদার বাড়ি হলেও আসলে জমিদার সাজ্জালেলার নাচঘর হিসেবে ব্যবহৃত হতো। এখানে বাইজিদের জন্য আলাদা সাজকক্ষ রয়েছে। অতিথি কক্ষসহ দ্বিতল ভবনে রয়েছে ১৪টি কক্ষ। নাচ ঘরের চারদিকে ১০টি দরজা দিয়ে প্রবেশ করা যায়। ভবনের নির্মাণ শৈলী অভিনব। কোথাও নেই কোনো লোহার কাঠামো। ১০ইঞ্চি চওড়া দেয়াল সম্পূর্ণ ইট দিয়ে তৈরি। ভবনের কোণে রয়েছে মাত্র একটি সিঁড়ি। ভিতরের দেয়ালে দেব-দেবী আর ফুলের ছবি অঙ্কিত হয়েছে শৈল্পিক ছোঁয়ায়। এটি এখনো চট্টগ্রাম মহানগরীর পুরাতন ঐতিহ্য ধারণ করে আছে।

 

 

 

রাইজিংবিডি/চট্টগ্রাম/২ মার্চ ২০১৫/রেজাউল করিম/সনি

রাইজিংবিডি.কম

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়