ঢাকা     বৃহস্পতিবার   ১৮ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ৫ ১৪৩১

শান্তিরক্ষায় বাংলাদেশি নারী পুলিশদের ভূমিকা প্রশংসনীয়

রেজাউল || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ০৫:২৭, ২৮ আগস্ট ২০১৫   আপডেট: ০৫:২২, ৩১ আগস্ট ২০২০
শান্তিরক্ষায় বাংলাদেশি নারী পুলিশদের ভূমিকা প্রশংসনীয়

যুদ্ধ ও ভূমিকম্প বিধ্বস্ত হাইতির রাজধানী মিনোস্তায় দায়িত্ব পালন করছেন বাংলাদেশ পুলিশের একজন নারী কর্মকর্তা কামরুন নাহার

রেজাউল করিম, চট্টগ্রাম : বাংলাদেশ পুলিশ বাহিনী শুধু দেশেই নয় বিদেশেও প্রশংসনীয় ভূমিকা রাখছে। দেশের আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের পাশাপাশি পুলিশ বাহিনী ভূমিকা রাখছে আন্তর্জাতিক পরিমন্ডলেও। পুলিশ বাহিনীর পুরুষ ও নারী সদস্যরা অস্ত্র হাতে ঝুঁকির মুখে মাঠের দায়িত্ব পালনের পাশাপাশি নানা সামাজিক দায়িত্বও পালন করছেন। এক সময় পুলিশ বাহিনীতে নারী পুলিশের সংখ্যা অনেক কম থাকলেও বর্তমানে এই সংখ্যা দিন দিন বাড়ছে। বাড়ছে নারী পুলিশের সাফল্যগাঁথাও। একটা সময় ছিল নারী পুলিশ মানেই নানা দাপ্তরিক কাজে দায়িত্ব পালন। কিন্তু বর্তমানে নারী পুলিশের সদস্যরা দেশের গন্ডি পেরিয়ে যুদ্ধ বিধ্বস্ত বিভিন্ন দেশে প্রতিকূল পরিবেশ পরিস্থিতিতে ভারি ও অত্যাধুনিক অস্ত্র হাতে দায়িত্ব পালন করছেন।

 

পুলিশ সদর দপ্তর থেকে প্রাপ্ত তথ্য মতে, ১৯৮৯ সাল থেকে জাতিসংঘের শান্তিরক্ষা কার্যক্রমে অন্যান্য বাহিনীর পাশাপাশি বাংলাদেশ পুলিশের সদস্যরা অংশ নিচ্ছেন ধারাবাহিকভাবে। এর মধ্যে ২০১০ সাল থেকে মিশনসমূহে দায়িত্ব পালন করছে উল্লেখযোগ্য সংখ্যক নারী পুলিশ সদস্য। নির্বাহী কার্যক্রম ও পর্যবেক্ষণ মিশনে দায়িত্ব পালনের পাশাপাশি বাংলাদেশের নারী পুলিশ সদস্যরা বিভিন্ন জটিল ও অপারেশনাল দায়িত্বও সাফল্যের সঙ্গে পালন করছে জাতিসংঘের বিভিন্ন শান্তিরক্ষা মিশনে। নিরাপত্তা রক্ষার পাশাপাশি টেকসই পুলিশ ব্যবস্থা উন্নয়ন, স্থানীয় তদন্তকারীদের উৎসাহিত করতে সহায়তা, মানুষের জন্য ঝুঁকি প্রশমনের পাশাপাশি শত্রুর মোকাবিলাতেও নারী পুলিশরা দায়িত্ব পালন করছেন।

 

জাতিসংঘের শান্তিরক্ষা কার্যক্রমে এই পর্যন্ত প্রায় ৮ হাজার পুলিশ সদস্য অংশ নিয়েছেন। বর্তমানে জাতিসংঘের ৯টি মিশনে আড়াই হাজার পুলিশ সদস্য মোতায়েন রয়েছে। এর মধ্যে বিশ্বের অতি ঝুঁকিপূর্ণ ও যুদ্ধ বিধ্বস্ত দেশ হাইতি ও কঙ্গোতে ফর্মেড পুলিশ ইউনিট- এফপিইউ জাতিসংঘ শান্তিরক্ষা মিশনে তিন শতাধিক নারী পুলিশ সদস্য সফলতার সঙ্গে দায়িত্ব পালন করছেন। হাইতি ও কঙ্গোর নারী এফপিইউতে (ফর্মেড পুলিশ ইউনিট) নারী পুলিশের দক্ষতার কার্যক্রম ইতিমধ্যে জাতিসংঘের ব্যাপক প্রসংশা কুড়িয়েছে। কঙ্গো হাইতি ছাড়াও  দক্ষিণ সুদান, দারফুর, আইভরিকোস্ট, মালি, লাইবেরিয়া এবং সোমালিয়াসহ বিভিন্ন শান্তিরক্ষা মিশনে বাংলাদেশ পুলিশের দেড় হাজার নারী পুলিশ সদস্য দায়িত্ব পালন করছেন। এসব দেশে দায়িত্ব পালনে সফল ও প্রসংশনীয় ভূমিকা রাখায় বাংলাদেশের পুলিশ সদস্যদের চাহিদা দিন দিন বাড়ছে জাতিসংঘ মিশনে। বাংলাদেশের পুলিশ সদস্যদের সাফল্যের কারণে চলতি ২০১৫ সালের মধ্যে জাতিসংঘ তার শান্তিরক্ষা মিশনগুলোতে বাংলাদেশি নারী পুলিশ সদস্যের সংখ্যা ৩০ শতাংশ বৃদ্ধির উদ্যোগ নিয়েছে বলে জানা গেছে।

 

পুলিশ সদর দপ্তরের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা জানান, জাতিসংঘ শান্তিরক্ষা মিশনে বাংলাদেশের নারী পুলিশ সদস্যদের ভূমিকা ব্যাপকভাবে প্রশংসিত। যুদ্ধবিধ্বস্ত অথবা সংঘাতপীড়িত অঞ্চলে নির্যাতিত নারীর আস্থা ফিরিয়ে আনার ক্ষেত্রে নারী পুলিশ সদস্যরা গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করছেন। ২০১০ সালে প্রথম ৮১ নারী পুলিশ সদস্য বাংলাদেশ এফপিইউ (ফর্মেড পুলিশ ইউনিট) হিসেবে কঙ্গোয় মিশনে যান। এর ধারাবাহিকতায় বিভিন্ন দেশে পুরুষ পুলিশ সদস্যের পাশাপাশি নারী পুলিশ সদস্যরা সফলতার সঙ্গে দায়িত্ব পালন করে আসছেন।

 

শান্তিরক্ষা মিশনের অংশগ্রহণকারী প্রথম নারী পুলিশের প্রথম দলের কর্মকর্তা ডিআইজি ও বর্তমানে ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের অতিরিক্ত কমিশনার মিলি বিশ্বাস বলেন, নানা সমস্যা সংকুল পথ পাড়ি দিয়ে বাংলাদেশ পুলিশ বাহিনীতে ১৪ জন নারী সদস্য অংশগ্রহণ করে প্রায় ৩৫ বছর আগে। এরপর ধাপে ধাপে পুলিশ বাহিনীতে বেড়েছে নারী সদস্য। এখন এই সংখ্যা প্রায় আট হাজারে পৌঁছেছে। আর জাতিসংঘ শান্তিরক্ষা মিশনে নারী পুলিশের অংশগ্রহণ এবং শীর্ষ অবস্থানে পৌঁছানোটাও বাংলাদেশের পুলিশ বাহিনীর জন্য একটি মাইলফলক ও গৌরবজনক। জাতিসংঘ শান্তি রক্ষা মিশনের সদস্য হয়ে বাংলাদেশের নারী পুলিশ সদস্যরা অনেক গুরুত্বপূর্ণ ও দুঃসাহসিক ভূমিকা রাখছে। যা জাতিসংঘ কর্তৃক প্রশংসনীয় হয়েছে।

 

বিশ্বের বিভিন্ন দেশের দুর্যোগ, যুদ্ধবিধ্বস্ত পরিস্থিতি মোকাবিলা, আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতি রক্ষায় দায়িত্ব পালন করে ব্যাপক সাফল্য অর্জন করে আসছে বাংলাদেশের নারী পুলিশ সদস্যরা। ফলে জাতিসংঘের কাছে বাংলাদেশের নারী পুলিশের আলাদা কদর রয়েছে। বাংলাদেশ থেকে প্রথমবার যাওয়া নারী পুলিশ সদস্যদের মধ্যে ২৫ সদস্যকে জাতিসংঘ সদর দফতরে দায়িত্ব দেওয়া হয়। এই সদস্যরা সেখানে ফুটপ্রিন্ট, ফিঙ্গারপ্রিন্ট বিষয়ে দায়িত্ব পালন করা ছাড়াও নানাবিধ কাজে নিয়োজিত আছে। এ ছাড়া অন্যান্য মিশনে বিশেষ করে সুদানের দারফুর, কঙ্গো এবং হাইতির দুর্যোগ, গৃহযুদ্ধ ও আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতি মোকাবিলার দায়িত্ব পালন করছে বাংলাদেশের নারী পুলিশরা।

 

জাতিসংঘে নিযুক্ত বাংলাদেশের স্থায়ী প্রতিনিধি একেএম মোমেন জানান, দায়িত্ব পালনে সফলতা ও কর্তব্যনিষ্ঠার কারণে জাতিসংঘের বিভিন্ন মিশনে বাংলাদেশের নারী পুলিশ সদস্যরা প্রশংসিত। এইজন্য জাতিসংঘ মিশনে বাংলাদেশি নারী পুলিশের সংখ্যা আরো বাড়ানোর উদ্যোগ নিচ্ছে জাতিসংঘ। আগামী দিনগুলোতে আরো অনেক বেশি সংখ্যায় নারী পুলিশ সদস্যরা জাতিসংঘের মিশনগুলোতে যোগ দিতে শুরু করবে বলে প্রত্যাশা ব্যক্ত করেন এই কর্মকর্তা।

 

 

 

রাইজিংবিডি/চট্টগ্রাম/২৮ আগস্ট ২০১৫/রেজাউল/দিলারা

রাইজিংবিডি.কম

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়