ঢাকা     শনিবার   ২০ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ৭ ১৪৩১

জোয়ারে ফুলে ওঠে টেমসের বুক : শেষ পর্ব

শিহাব শাহরিয়ার || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ০৯:১৫, ১৬ মে ২০১৫   আপডেট: ০৫:২২, ৩১ আগস্ট ২০২০
জোয়ারে ফুলে ওঠে টেমসের বুক : শেষ পর্ব

ট্রাফেলগার স্কয়ার

শিহাব শাহরিয়ার

ছোট্ট ছিমছাম রেস্টুরেন্ট। মকসুদ জানালেন, বাঙালি ফুড খেতে এই রেস্টুরেন্টে আসে শাদা-কালো আর বিলেত প্রবাসী বাঙালি সকলেই। সন্ধ্যায় জমে ওঠে রেস্টুরেন্ট। রেস্টুরেন্টের দোতলায় রেস্টরুম। মকসুদ বললেন, বাংলাদেশ থেকে কোনো সাহিত্যিক, রাজনীতিক কেউ এলে এখানে থাকার ব্যবস্থা করা হয়। বিশেষ করে কোনো কবি-সাহিত্যিক এলে, তাকে ঘিরে বসে সাহিত্যের আড্ডা-আসর। ঠাণ্ডা পানীয় পান করে রেস্টুরেন্ট থেকে চলে এলাম মকসুদের বাসায়। দুপুরের খাবার খেয়ে আবারও বেরিয়ে পড়লাম ব্রিকলেনের উদ্দেশে।

দুপুর গড়িয়েছে। মিষ্টি রোদ চারদিকে। গাড়ি চালাচ্ছেন মকসুদ। আমি পাশের সিটে। মকসুদ গাড়ি থামালেন ব্রেডি আর্ট সেন্টারের সামনে। পড়ন্ত বিকেলের হলুদ রোদ ছড়িয়ে আছে ব্রিকলেনের গায়ে। শামসুর রাহমান স্মরণসভার যারা আয়োজন করেছেন, তাদের দু’একজন এবং দর্শক-শ্রোতাদের কয়েকজন সেন্টারের সামনে দাঁড়িয়ে আছেন। গাড়ি থেকে নেমে পরিচয় হলো সবার সঙ্গে। হলের ভিতর প্রবেশ করলাম, সুন্দর হল! ভেতরে বসে আছেন কবি ও কথাশিল্পী সালেহা চৌধুরীসহ কয়েকজন। সালেহা আপার সঙ্গে পরিচয় অনেক আগে থেকেই। তিনি লেখালেখির ক্ষেত্রে যেমন, তেমনি সময়কেও খুবই গুরুত্ব দেন। সে কারণেই তার উপস্থিতি অনেকেরই আগে বুঝতে পারলাম। কয়েকদিন আগেই তিনি ঢাকা থেকে এসেছেন। পাশে বসিয়ে কথা বললেন বিভিন্ন বিষয়ে। ব্যক্তিগতভাবে আমাকে তিনি অত্যন্ত স্নেহ করেন। তার সঙ্গে কথা শেষ করে বাইরে লবিতে এলাম।  এক এক করে অনেকেই আসছেন। এদের মধ্যে কবি মুজিব ইরম, দেলোয়ার হোসেন মঞ্জু, মনজুরুল আজিম পলাশ। নতুন করে পরিচয় হলো মাসুদা ভাট্টি, আমিনা আলী, আমিনুল হক বাদশা, ওয়ালী মাহমুদ, মাজেদ বিশ্বাস প্রমুখের সঙ্গে। লবিতে বসে আছেন বিলেতে সফররত বাংলাদেশের বিশিষ্ট আইনজীবী ড. কামাল হোসেন। তিনি কথা বলছেন বিলেতে প্রবাসী কয়েকজনের সঙ্গে। তিনি এসেছেন প্রবাসীদের ভোটাধিকার বিষয়ে মতবিনিময় করতে। তার সঙ্গেও কথা হলো। কথা হলো ফজলুল বারীর সঙ্গে- বাংলাদেশের সাংবাদিকতায় যিনি নতুনত্বের ধ্বজাধারী। বারী এসেছেন লেবানন থেকে। ব্যক্তিগত উপায়ে লেবানন গিয়ে চমৎকার অনুসন্ধানী প্রতিবেদন করে আলোড়ন সৃষ্টি করেছেন। বিলেতে কয়েকদিন থাকবেন। আধা ঘণ্টার মধ্যে অনেক লোকের সমাগম হলো। তবে আয়োজকদের একটু অস্থির সময় পার করতে দেখছি। কারণ অনুষ্ঠানের সভাপতি ও আয়োজকদের প্রধান বিশিষ্ট সাংবাদিক আবদুল গাফফার চৌধুরী ট্রাফিক জ্যামের কারণে আসতে দেরি করছেন। ইতোমধ্যেই এসেছেন অনুষ্ঠানের প্রধান অতিথি অধ্যাপক জিল্লুর রহমান সিদ্দিকী, এসেছেন ড. গোলাম মুরশীদসহ অনেক শ্রোতা-দর্শক। হল মোটামুটি পূর্ণ। আয়োজকরা ছোটাছুটি করছেন- কী করবেন? পরে সিদ্ধান্ত হলো সভাপতি আসবার আগ পর্যন্ত সভাপতিত্ব করবেন কাদের মাহমুদ। ফলে তার সভাপতিত্বে বিলেতে প্রথম প্রবাসী লেখকদের আয়োজনে শুরু হলো কবি শামসুর রাহমান স্মরণসভা। মঞ্চে উপবিষ্ট হলেন অধ্যাপক জিল্লুর রহমান সিদ্দিকী, অধ্যাপক গোলাম মুরশিদ, কবি কাদের মাহমুদ এবং আমি। অনুষ্ঠান উপস্থাপন করছেন অত্যন্ত চমৎকার বাচনভঙ্গি ও ভরাট কণ্ঠের অধিকারী ছড়াকার দিলু নাসের।

রবীন্দ্রোত্তর বাংলা কবিতার প্রাণপুরুষ কবি শামসুর রাহমানকে নিবেদিত কবিতা পড়লেন আহমদ ময়েজ, মাসুদা ভাট্টি, মুজিব ইরম, দেলোয়ার হোসেন মঞ্জু, ওয়ালী মাহমুদ, আবু মকসুদ, অমরনাথ চক্রবর্তী, আবু সুফিয়ান, শামীম শাহান, গোলাম কবির প্রমুখ। কবির কবিতা থেকে আবৃত্তি করলেন  উদয় শঙ্কর দাশ, উর্মী মাযহার, মনিরা পারভীন, শহিদুল ইসলাম সাগর, সৈয়দা রেখা ফারুক ও মাজেদ বিশ্বাস। স্মৃতিচারণ করলেন সালেহা চৌধুরী, ডলি ইসলাম, মনঞ্জুরুল আজিম পলাশ, আমিনুল হক বাদশা ও মাহফুজা তালুকদার। শামসুর রাহমানের কয়েকটি কবিতার ইংরেজি অনুবাদ পড়ে শোনান কবি কাদের মাহমুদ। অনুষ্ঠানের মধ্য সময়ে এসে সভাপতির আসন নিলেন আবদুর গাফফার চৌধুরী। তিনি এসে ড. কামাল হোসেনকে অনুরোধ করলেন শামসুর রাহমান সম্পর্কে কিছু বলতে। ড. কামাল বললেন, শামসুর রাহমান শুধু একজন কবিই ছিলেন না, ছিলেন গণতান্ত্রিক ও মানবতাবাদী মানুষ, ছিলেন জাতির বিবেক। মুক্তিযুদ্ধের ওপর শ্রেষ্ঠ কবিতাগুলো লিখেছেন তো বটেই, পরবর্তীতে বাংলাদেশের সকল গণতান্ত্রিক আন্দোলনের একজন অন্যতম অগ্রপথিক ছিলেন।

ড. গোলাম মুরশিদ বললেন, শামসুর রাহমান আমাদের আধুনিক কবিতার চালক ছিলেন। তিনি শুধু রোমান্টিক কবিতাই লিখেননি, তাঁর কবিতায় স্বদেশ, মানুষ এবং মুক্তিযুদ্ধ আছে প্রবলভাবে। আমি আমার লিখিত বক্তব্যে উল্লেখ করি, শামসুর রাহমান জীবনানন্দ পরবর্তীকালের প্রধান কবি। কবির পাশাপাশি তিনি একজন শ্রেষ্ঠ মানুষ। শতাব্দীর শ্রেষ্ঠ বাঙালি। প্রধান অতিথির ভাষণে অধ্যাপক জিল্লুর রহমান সিদ্দিকী কবি শামসুর রাহমানের লেখালেখির শুরুর দিকের অনেক ঘটনার স্মৃতিচারণের পাশাপাশি কবির কবিতার মূল্যায়ন করেন। তিনি কবির সাহিত্যকর্মের মূল বিষয়টি তুলে ধরেন। তিনি আরও বলেন, রবীন্দ্রোত্তর আধুনিক বাংলা কবিতায় শামসুর রাহমানই আমাদের শ্রেষ্ঠ কবি। সভাপতির ভাষণে প্রখ্যাত সাংবাদিক আবদুল গাফফার চৌধুরী বলেন, সাহিত্যচর্চা ও ব্যক্তিজীবনে কবি শামসুর রাহমান এক মহান মানুষ ছিলেন, তিনি একাধারে প্রেমিক কবি, মানুষের কবি ও আধুনিকতার কবি। শামসুর রাহমান কবিতার মূল চেতনা ছিল ধর্মান্ধ ও মৌলবাদের বিরুদ্ধে শাণিত হাতিয়ার। অনুষ্ঠান শেষে সোজা চলে গেলাম মকসুদের বাসায়।

রাত নয়টায় দিকে মকসুদের বাসায় এলেন কবি আতাউর রহমান মিলাদ এবং ‘শব্দপাঠ’ ও প্রবাস প্রকাশনীর প্রকাশক কাজল রশীদ। বিলেতে এই তিনজন অর্থাৎ আবু মকসুদ, আতাউর রহমান মিলাদ ও কাজল রশীদ শুদ্ধ সাহিত্য-চর্চা ও সাহিত্য প্রকাশনা করছেন। চারজন মিলে সাহিত্যের নানা বিষয় নিয়ে গভীর রাত পযর্ন্ত আড্ডা দিলাম। সকালে আবু মকসুদ তার গাড়িতে উঠিয়ে আমাকে নিয়ে গেলেন ব্রিকলেনে। মকসুদ গাড়ি থামালেন রাস্তায়, নির্দিষ্ট স্থানে। কার্ড পাঞ্চ করে পার্কিং চার্জ পরিশোধ করলেন। গাড়ি থাকলো নিশ্চিত-চুরি হবার ভয় নেই। আমরা ফুটপাত ধরে হাঁটছি। হাঁটতে হাঁটতে দেখছি রাস্তার দু’পাশে প্রবাসী বাঙালিদের, দেখছি বাংলা সাইনবোর্ড, পোশাকের দোকান, মাছ-মাংস-সবজির দোকান। মকসুদ বললেন, ঢাকার মতো এখানে সবই পাওয়া যায়। কয়েকশ গজ হেঁটে আমরা ‘সুরমা’ পত্রিকার অফিসে এসে হাজির হলাম। সাপ্তাহিক বাংলা কাগজ ‘সুরমা’র অফিস খুবই পরিচ্ছন্ন। মকসুদ এক এক করে পরিচয় করিয়ে দিলেন পত্রিকার সকল কর্মকর্তাদের সঙ্গে। সকলেই খুবই ভদ্র ও আন্তরিক। সবাই কাজে ব্যস্ত, কাজের ফাঁকে ফাঁকেই কথা বলছেন। একটু পরে এলেন সুরমা’র আরেক দায়িত্ববান আহমদ ময়েজ। আহমেদ ময়েজ সাংবাদিকতার পাশাপাশি কবি, কথাশিল্পী ও সম্পাদক। ‘ভূমিজ’ নামে একটি সাহিত্যের কাগজ সম্পাদনা করেন। আমি তাঁকে, আমার সর্বশেষ প্রকাশিত কবিতার বই ‘ফড়িঙের পাখা পোড়ে’ দিলাম। আগের দিনের শামসুর রাহমান স্মরণসভা, বাংলাদেশের রাজনীতি এবং শিল্প-সাহিত্য বিষয়ে অনেকক্ষণ কথা হলো। এরই মধ্যে দুপুরের খাবার সময় হলো। কিচেনে তৈরি আছে রান্না। অতিথি হিসেবে তারা আমাকে বেশ যত্ন সহকারের খাওয়ালেন। চমৎকার খাবার। উন্নত সব ব্যবস্থা। খাওয়া শেষে চা দিলেন। আমি তাদের আন্তরিকতায় মুগ্ধ হলাম।

১৩ সেপ্টেম্বর। সকালে কবি  আতাউর রহমান মিলাদ এলেন আমাকে নিতে। আমি ওর সঙ্গে বেরিয়ে গেলাম বিলেতের উল্লেখযোগ্য দর্শনীয় স্থান দেখার জন্য। সাউথফিল্ড স্টেশন থেকে মিলাদ ভাই আমার জন্য একটি দৈনিক ভ্রমণ টিকিট কিনে নিলেন। তখন সকাল সাড়ে আটটা। টিউবের জন্য অপেক্ষা করছি। আমরা দু’জন বাঙালি যাত্রী ছাড়া প্লাটফরমে আরও কয়েকজন বিলেতি রয়েছে। এদের একজন অসম্ভব সুন্দরী নারী। ট্রেন এলো। তিন-চারটি স্টেশন যাওয়ার পর হঠাৎ ট্রেন থেমে গেল। যেতে দেরি হবে বলে মিলাদভাই বললেন, চলুন ট্রেন ছেড়ে দিই, বাসে যাই। আমরা নেমে গেলাম। ফুটপাত ধরে হাঁটছি। সকালের লন্ডন। সবাই কাজে ছুটছে। সবকিছু চলছে নিয়মে। আমরা একটি বাসে উঠলাম- যাচ্ছি বাকিংহাম প্যালেসের দিকে। অনেকক্ষণ সময় লাগল। নামলাম ট্রাফেলগার স্কয়ারে। মিলাদভাই বললেন, ১৯৭১ সালে বিচারপতি আবু সাঈদ চৌধুরী বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের জন্য জনমত গঠনের উদ্দেশে এই চত্বরে দাঁড়িয়েই সমাবেশ করেছেন। বিশাল একটি ভাস্কর্য। এই স্কয়ারের ইতিহাস হলো এখানেই ফ্রান্সের নেপোলিয়ান যুদ্ধে হেরে গিয়েছিলেন। জয়ী ব্রিটিশ বীরকে স্মরণীর করে রাখার জন্য এই ভাস্কর্য ও চত্বর তৈরি করা হয়েছে। অনেক দর্শনার্থী ঘুরে ঘুরে দেখছে, ছবি তুলছে। মিলাদ ভাই আমারও কয়েকটি ছবি তুলে দিলেন। এরপর দুপুরের খাবারের জন্য ঢুকলাম পাশের একটি ম্যাগডোনালসে। পৃথিবী বিখ্যাত ফাস্টফুড। খুবই টেস্টি। খাবার শেষে আবার বেরিয়ে পড়লাম। হাঁটতে হাঁটতে গেলাম বাকিংহাম প্যালেসে। রানীর বাড়ি, বাড়ির সামনের ভাস্কর্য, ভাস্কর্যের সামনে বাগান ইত্যাদি ঘিরে অসংখ্য পর্যটক। বিভিন্ন দেশ থেকে আগত দর্শকদের সঙ্গে আমি খুঁটে খুঁটে দেখছি নান্দনিক দৃশ্য ও সৌন্দর্য।

১৪ সেপ্টেম্বর। সকালে মিলাদ ভাইসহ গেলাম কিংক্রসে। সেখানে এলেন সুইডেন প্রবাসী কথাশিল্পী বাবুল সিরাজী। সিরাজী ভাই লন্ডনে আমাকে সঙ্গ দেওয়ার জন্যই সুদূর সুইডেন থেকে এসেছেন। সকাল ১১টার দিকে কিংক্রস বাস স্টপিজে তিনি এলেন। মিলাদ ভাইয়ের সঙ্গে তার পরিচয় করিয়ে দিলাম। পরে ৩ জন উঠে গেলাম বাসে। নামলাম টেমসের পাড়ে। ২০০০ সালে টেমস-এর ওপরে নির্র্মিত হয়েছে মিলিনিয়াম ব্রিজ। ব্রিজটি দৃষ্টিনন্দন। হেঁটে হেঁটে ব্রিজের ওপর যখন দাঁড়ালাম তখন দুপুর বারোটা। টেমসে তখন জোয়ার চলছে। টলটলে জলের ওপর সোনালি রোদের কিরণ। সুন্দর সে দৃশ্য! ব্রিজের ওপর একই সাথে নির্মিত হয়েছে লন্ডনআই।

বাকিংহাম প্যালেস থেকে দেখা যায় লন্ডনআই। আমরা ব্রিজ অতিক্রম করে লন্ডনআই-এর কাছে গেলাম। বিভিন্ন দেশের নানা বর্ণের মানুষ হাঁটছে, বসে আছে, ছবি তুলছে, কিংবা লন্ডন আই-এর উপরে উঠছে। টেমসের দু’পাড় এমন করে বাঁধাই করা হয়েছে যে, নদী শাসিত হচ্ছে মানুষের দ্বারা। দুর্ভাগ্য বাংলাদেশের যে, এদেশে নদীই শাসন করছে মানুষকে। নদীর তীরবর্তী স্থানে পর্যটকদের জন্য এতো আকর্ষণীয় ভ্রমণ স্থান হতে পারে, টেমসের পাড়ে না গেলে বোঝা যাবে না। যতই হাঁটছি টেমসের পাড় ধরে ততই ভালো লাগছে। কারণ তখন জোয়ারের জলে ফুলে উঠেছে টেমসের বুক। এমন পরিবেশে স্থানে স্থানে দাঁড়িয়ে একটার পর একটা ছবি তুলেছি। নির্মল পরিবেশ। মনে পড়লো, দেশের কথা। এমন পরিবেশ বাংলাদেশে কবে হবে। গ্লোব থিয়েটার সেন্টারের সামনে ছবি উঠালাম- যেখানে শুধু শেক্সপিয়রের নাটক প্রদর্শিত হয়। অনেকক্ষণ হাঁটলাম। পরে লন্ডন ব্রিজ দিয়ে আবার অপর পাড়ে গেলাম। পাড়েই পার্লামেন্ট ভবন। ভবনের পাশ থেকে বাসে উঠে গেলাম ট্রাফেলগার স্কয়ারে। সেখানে সিরাজী ভাই ম্যাগডোনালস খাওয়ালেন। খেয়ে পরে রাত্রি যাপনের জন্য গেলাম বাবুল সিরাজীর এক আত্মীয়ের বাসায়। বাসাটি ডুপলেক্স। মালিক ব্যারিস্টার। আদিনিবাস বাংলাদেশের টাঙ্গাইল জেলায়। অত্যন্ত সরল ও অমায়িক ব্যক্তি। তার স্ত্রীও একইরকম। দু’জনেই অসম্ভব আদর- যত্ন করলেন। বিভিন্ন আইটেমের বাঙালি খাবার খেয়ে ওখানে রাত্রি যাপন করলাম।

পরদিন গেলাম ব্রিটিশ মিউজিয়াম দেখতে। আমাকে দেখানোর জন্য ব্রিকলেনে এলো বাংলাদেশের বিশিষ্ট ফোকলোরবিদ শামসুজ্জামান খানের ছোট মেয়ে লন্ডন প্রবাসী তিশা ও ওর স্বামী তানভীর। আমাকে টিউব ও বাসে করে ওরা নিয়ে গেল ব্রিটিশ মিউজিয়ামের ভেতরে। ঘুরে ঘুরে দেখলাম মিউজিয়াম। মিশরের বিখ্যাত মমি থেকে এশিয়া অঞ্চলের অসংখ্য ঐতিহ্যবাহী নিদর্শন। প্রায় ঘণ্টা দুয়েক সময় লাগল পুরো মিউজিয়াম দেখতে।  গ্যালারির বাইরেই রয়েছে সুন্দর স্যুভেনির শপ ও ক্যাফেটেরিয়া। সেখান থেকে কয়েকটি কলম ও ব্রিটিশ মিউজিয়ামের মনোগ্রাম সম্বলিত দুটি মগ কিনলাম। অত্যন্ত চমৎকার লাগল মিউজিয়াম দেখতে। তবে মাদামতুষো মিউজিয়াম, বিবিসি ভবন, ক্রিকেট গ্রাউন্ড, শেক্সপিয়রের বাড়িসহ অসংখ্য জায়গায় যেতে পালাম না সময়ের কারণে। যেহেতু পরদিন ঢাকায় ফিরে আসতে হবে, যদিও আরো পাঁচদিনের ছুটি আমার ছিল, আমি থাকতেও চেয়েছিলাম কিন্তু জিল্লুর রহমান স্যার বললেন, শিহাব আমি একা ফিরতে পারবো না তোমাকে ছাড়া, কাজেই তুমি আমার সঙ্গে চলো। স্যার আরো বললেন, আমার বয়স আসি ছুঁই ছুঁই করছে, হয়ত আর কোনোদিনই আমার এখানে আসা হবে না আর তুমি ভবিষ্যতে আরো আসতে পারবে দেখতে পারবে চক্ষু মেলে। স্যারের এ রকম কথার পর ওখানে থাকি কি করে? পরদিন সকালে বাহরাইন হয়ে ফিরে এলাম ঢাকায়।  



রাইজিংবিডি/ঢাকা/১৬ মে ২০১৫/তাপস রায়    

রাইজিংবিডি.কম

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়