ঢাকা     মঙ্গলবার   ১৬ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ৩ ১৪৩১

শীর্ষ বিশ পদ্ধতি আর থাকছে না : শিক্ষামন্ত্রী

নঈমুদ্দিন || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ০৭:৫৬, ৩০ মে ২০১৫   আপডেট: ০৫:২২, ৩১ আগস্ট ২০২০
শীর্ষ বিশ পদ্ধতি আর থাকছে না : শিক্ষামন্ত্রী

শিক্ষামন্ত্রী নুরুল ইসলাম নাহিদ

সচিবালয় প্রতিবেদক : শিক্ষামন্ত্রী নুরুল ইসলাম নাহিদ বলেছেন, ‘শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলো অসৎপথে এবং অনৈতিকভাবে শীর্ষ বিশে আসার অসুস্থ প্রতিযোগিতায় লিপ্ত হয়েছে।  তাদের কিছু সংখ্যক শিক্ষক প্রশ্নপত্রের খাম খুলে নিজেদের শিক্ষার্থীদের কাছে প্রশ্ন ফাঁস করে দিচ্ছে। এ ধরনের অপকর্মে জড়িত থাকার তথ্য পাওয়ায় এখন থেকে আর এই শীর্ষ বিশ পদ্ধতি থাকছে না।’

 

প্রশ্ন ফাঁসের সঙ্গে জড়িত শিক্ষক ও সংশ্লিষ্ট শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হবে বলেও হুঁশিয়ার করেছেন শিক্ষামন্ত্রী।

 

এসএসসি পরীক্ষার ফলাফল প্রকাশ উপলক্ষে শনিবার দুপুরে সচিবালয়ে নিজ মন্ত্রণালয়ের সভাকক্ষে অনুষ্ঠিত সংবাদ সম্মেলনে এসব কথা বলেন নুরুল ইসলাম নাহিদ।

 

শিক্ষামন্ত্রী বলেন, ‘শিক্ষকরাই শিক্ষা ব্যবস্থার শক্তি। তারা শ্রদ্ধার পাত্র। কিন্তু সেই শিক্ষকদের একটি অংশ আজ নিজেদের স্বার্থে প্রশ্নপত্র ফাঁসের মতো অনৈতিক কাজে জড়িত। তারা পরীক্ষাকেন্দ্রে গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্বে থাকায় খুব সহজেই এ অপকর্ম করে আসছেন। প্রশ্নপত্রের খাম খুলে এমসিকিইউ প্রশ্ন শিক্ষার্থীদের কাছে সহজেই ফাঁস করে দেন। তারা আজ পুরো শিক্ষক সমাজের কলঙ্ক। দেশের নামিদামি বিদ্যালয়, এমনকি গ্রামের বেশ কিছু বিদ্যালয়ের কতিপয় শিক্ষক এ অপকর্মে জড়িত, এমন প্রমাণ মিলেছে। বিশেষ করে এ বছর খ্যাতনামা শাহিন স্কুল অ্যান্ড কলেজ এবং  আমতলির মতো গ্রামের একটি স্কুলের কয়েকজন শিক্ষকের অপকর্মে জড়িত থাকার বিষয়টি ধরা পড়েছে। আমাদের টিম গিয়ে তাদের হাতেনাতে ধরেছে। তাদের বিরুদ্ধে মামলাসহ শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে।’

 

মন্ত্রী বলেন, ‘আরো বেশ কিছু নামিদামি স্কুলের শিক্ষকের বিরুদ্ধে প্রশ্ন ফাঁসসহ অনৈতিক কর্মকা-ের অভিযোগ পাওয়া গেছে। এসব স্কুলের ওপর কড়া নজরদারি রয়েছে। তদন্ত কাজও চলছে সমানতালে। অপকর্মে জড়িত অভিযোগ প্রমাণ পেলে সঙ্গে সঙ্গেই অভিযুক্ত শিক্ষকের চাকরি যাবে এবং একই সঙ্গে তার বিরুদ্ধে মামলা মোকদ্দমাসহ আইনি ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’

 

শিক্ষামন্ত্রী জানান, শুধু অভিযুক্ত শিক্ষকের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নয়, সংশ্লিষ্ট শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে পরীক্ষা কেন্দ্র বাতিল, একই সঙ্গে এমপিও বাতিলসহ কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হবে। শিক্ষকরা কোচিং বাণিজ্যের সঙ্গে জড়িত। সামান্য অর্থের জন্য তারা আজ অনৈতিক পথ বেছে নিয়েছেন। তারা পুরো শিক্ষক সমাজের ভাবমূর্তি নষ্ট করছেন। এসব শিক্ষকের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেবে সরকার।

 

মেধার তালিকায় আসতে অসুস্থ ও অনৈতিক প্রতিযোগিতার কারণে এখন থেকে আর শীর্ষ বিশ পদ্ধতি থাকছে না। ভালো ফল করতে উৎসাহ দিতে এ পদ্ধতি চালু করা হলেও দেখা যাচ্ছে, অনেকে অনৈতিকভাবে শীর্ষে আসার চেষ্টা করছে। এসব অসৎ প্রতিষ্ঠানের অনৈতিকতার কারণে ভালো স্কুলগুলো টিকে থাকতে পারছে না। তাই এ পদ্ধতি বাতিলের সিদ্ধান্ত নিয়েছি। এক-দুই জন নয়, সবাই যেন সেরা হতে পারে, সে দিকে লক্ষ্য রেখে এ সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে বলে জানান নুরুল ইসলাম নাহিদ।

 

শিক্ষামন্ত্রী বলেন, ‘ভবিষ্যতে এমসিকিইউ পদ্ধতি রাখা হবে কিনা, তা নিয়েও আমরা নতুন করে ভাবছি। এ বিষয়ে দেশের অভিজ্ঞ শিক্ষকম-লীসহ শিক্ষা সংশ্লিষ্টদের মতামত নেব। তার পর এ ব্যাপারে সিদ্ধান্তে নেব।’

 

‘বিএনপি-জামায়াতের হরতাল-অবরোধে ভয়ভীতি ও অনিশ্চয়তার মধ্যে পরীক্ষা নেওয়ার পরও নির্ধারিত ৬০ দিনের মধ্যেই এবারের এসএসসি পরীক্ষার ফলাফল প্রকাশে সক্ষম হয়েছি। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নির্দেশে বিশেষ কৌশল বাস্তবায়ন করার কারণে তা সম্ভব হয়েছে’, বলেন শিক্ষামন্ত্রী।

 

তিনি বলেন, টানা হরতাল-অবরোধের কারণে পরীক্ষার নির্ধারিত সময়ের চেয়ে ২৩ দিন বেশি লেগেছে। তবে ফলাফল ৬০ দিনের মধ্যে তিন দিন বাকি থাকতেই আমরা দিয়ে দিয়েছি। হরতাল অবরোধে শিক্ষার্থী, অভিভাবকদের মধ্যে শঙ্কা, নিরাপত্তাহীনতা ও অনিশ্চয়তা ছিল। এ বিষয়ে গুরুত্ব দিয়েই পরীক্ষার রুটিন তৈরি করেছি। বিশেষ কৌশলে পরীক্ষা নিতে সক্ষম হয়েছি। এবারের পরীক্ষায় হরতাল-অবরোধে অনেক শিক্ষার্থী, শিক্ষক ও অভিবাবকসহ সংশ্লিষ্টরা হতাহত হয়েছেন।’

 

সংবাদ সম্মেলনে শিক্ষাসচিব, মাউশির মহাপরিচালক, বিভিন্ন শিক্ষাবোর্ডের চেয়ারম্যানসহ সংশ্লিষ্টরা উপস্থিত ছিলেন।

 

 

 

 

রাইজিংবিডি/ঢাকা/৩০ মে ২০১৫/নঈমুদ্দিন/রফিক

রাইজিংবিডি.কম

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়