ঢাকা     বৃহস্পতিবার   ১৮ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ৫ ১৪৩১

ট্রাম্প : কী বলেছেন, কতটুকু করতে পারবেন

সাইফুল || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ০৯:২৫, ১৭ নভেম্বর ২০১৬   আপডেট: ০৫:২২, ৩১ আগস্ট ২০২০
ট্রাম্প : কী বলেছেন, কতটুকু করতে পারবেন

সাইফুল আহমেদ : যুক্তরাষ্ট্রের ৪৫তম প্রেসিডেন্ট হিসেবে গত ৮ নভেম্বর নির্বাচিত হয়েছেন বিতর্কিত প্রার্থী ডোনাল্ড ট্রাম্প। প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হলে তিনি কী কী কাজ করবেন, নির্বাচনের আগে নানা প্রচারণায় তিনি সেসবের ইঙ্গিত দিয়েছেন। তার প্রতিশ্রুত এসব কাজের মধ্যে অধিকাংশই বিতর্কিত।

 

এখন ট্রাম্প প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হওয়ার পর প্রশ্ন উঠেছে, আসলে ট্রাম্প যেসব কাজ করার কথা বলেছিলেন, তার সব চাইলেই করতে পারবেন কি না।

 

এক নজরে দেখে নেওয়া যাক, ট্রাম্প কী কী কাজ করার শপথ নিয়েছেন এবং সত্যিই তিনি কী কী করতে পারবেন।

 

প্রতিশ্রুতি : ৩০ লাখ অবৈধ অভিবাসীকে যুক্তরাষ্ট্র থেকে বিতাড়ণ

কতটুকু সম্ভব : এই কাজ করা ট্রাম্পের জন্য সত্যিই খুব কঠিন হবে। যুক্তরাষ্ট্রের কাছে বর্তমানে প্রায় ১ লাখ ৭৮ হাজার অবৈধ অভিবাসীর অপরাধমূলক কর্মকাণ্ডের রেকর্ড আছে। অথচ প্রকৃত সংখ্যা এর চেয়ে অনেক বেশি। ৩০ লাখ অবৈধ অভিবাসীকে বের করে দেওয়া মুখের কথা নয়। এর জন্য আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে নতুন কয়েক হাজার সদস্য সংগ্রহ করতে হবে। আর এর জন্য বিলিয়ন ডলারও খরচ হবে ট্রাম্পকে।

 

প্রতিশ্রুতি : যুক্তরাষ্ট্র ও মেক্সিকোর মাঝে দেয়াল তৈরি

কতটুকু সম্ভব : নির্বাচনী প্রচারণায় ট্রাম্প বলেছেন, প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হলে তিনি যুক্তরাষ্ট্র-মেক্সিকো সীমান্তে যত দ্রুত সম্ভব তিনি একটি ‘সুন্দর’ দেয়াল তৈরি করবেন। তবে সীমান্তে দেয়াল তৈরি শুরু করা এক কথা, আর সেটি শেষ করা আরেক কথা। শুরু করা যত সহজ, এত দীর্ঘ সীমান্তে দেয়াল তৈরি শেষ করা তত সহজ নয়। তা ছাড়া, মুখ দিয়ে বললেই দেয়াল তৈরি সম্ভব নয়। এ নিয়ে উপকূল ও সীমান্ত এলাকা নিয়ে ভালভাবে গবেষণা করতে হবে। আর ট্রাম্প বলেছেন, মেক্সিকোর কাছ থেকে তিনি এই দেয়াল তৈরির খরচ আদায় করবেন। মেক্সিকো কি আদৌ তা মানবে? ট্রাম্পের চিন্তাভাবনা আসলে কতটুকু বাস্তব সম্মত?

 

প্রতিশ্রুতি : যেসব দেশ তাদের নাগরিক ফিরিয়ে না নেবে তাদেরকে ভিসা-ফ্রি ট্রাভেলের সুযোগ দেওয়া হবে না

কতটুকু সম্ভব : বাস্তব প্রেক্ষাপটে এই কাজটি করতে পারবেন ট্রাম্প। ১৯৫২ সালের অভিবাসন ও জাতীয়তা আইনের ২১২(চ) ধারা অনুসারে এই কাজ করতে পারবেন তিনি। বারাক ওবামা কয়েকটি গ্রুপের ভিসা ব্লক করতে এই আইন ব্যবহার করেছেন। তবে খুব সীমিত কয়েকটি গ্রুপ যেমন- জাতিসংঘ যাদের ওপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করেছে কিংবা যারা সিরিয়ার সরকারকে সহায়তা করে মানবাধিকার লঙ্ঘন করছে তাদের জন্য এই আইন ব্যবহার করেছেন ওবামা। পুরো একটি দেশ কিংবা কয়েকটি দেশের ওপর তিনি এটি কখনোই ব্যবহার করেননি।

 

প্রতিশ্রুতি : সুপ্রিম কোর্টে নতুন বিচারক নিয়োগ

কতটুকু সম্ভব : অ্যান্টোনিন স্ক্যালিয়ার মৃত্যুর পর যুক্তরাষ্ট্রের সুপ্রিম কোর্টে বিচারকের একটি পদ শূন্য আছে। প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামা পদের জন্য একজনকে মনোনীত করেছেন। তবে রিপাবলিকান নিয়ন্ত্রিত সিনেট সেটি বিবেচনা করতে প্রত্যাখ্যান করেছে। ট্রাম্প এখন স্ক্যালিয়ার পদে নতুন কাউকে নিয়োগের সুযোগ পাবেন। ফলে সুপ্রিম কোর্টে নিজের প্রভাব খাটাতে পারবেন। তা ছাড়া, সুপ্রিম কোর্টে এখন ৭০ বছরের বেশি বয়সি অনেক বিচারক রয়েছেন। এদের কেউ ট্রাম্পের প্রেসিডেন্ট মেয়াদকালে মারা গেলে, তিনি পছন্দসই ব্যক্তিকে মনোনীত করতে পারবেন।

 

প্রতিশ্রুতি : প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামার সব নির্বাহী আদেশ বাতিল

কতটুকু সম্ভব : প্রেসিডেন্ট ওবামার নির্বাহী আদেশ বাতিলের যে শপথ ট্রাম্প নিয়েছেন, প্রেসিডেন্টের দায়িত্ব নেওয়ার পরই তা করতে পারবেন ট্রাম্প। ওবামা তার প্রেসিডেন্টের দায়িত্ব পালনকালে ৩২টি নির্বাহী আদেশ দিয়েছেন। এর মধ্যে একটি হলো মিয়ানমারের ওপর থেকে অবরোধ তুলে নেওয়া। তবে তার সবচেয়ে সুদূরপ্রসারী ও বিতর্কিত নির্বাহী আদেশ ছিল, লাখো অবৈধ অভিবাসীকে বিতাড়ণের হুমকি থেকে রক্ষা করা ও তাদেরকে কাজ করার সুযোগ দেওয়া। এর বিরুদ্ধে আইনি পদক্ষেপও নেওয়া হয়েছিল।

 

প্রতিশ্রুতি : ওবামাকেয়ার বাতিল

কতটুকু সম্ভব : বর্তমান প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামার স্বাস্থ্যসেবা (ওবামাকেয়ার) পুনর্গঠনের পদক্ষেপকে ‘বিপর্যয়’ হিসেবে আখ্যায়িত করে সেটি বাতিলের ঘোষণা নির্বাচনী প্রচারণায় দিয়েছেন ট্রাম্প। তিনি কংগ্রেসকেও ওবামাকেয়ার বাতিলের আহ্বান জানান। রিপাবলিকানদের জ্যেষ্ঠ নেতারা ট্রাম্পের সঙ্গে একমত পোষণ করেন। এখন সিনেট ও কংগ্রেস দুটি হাউসই রিপাবলিকানদের দখলে। এরপরও ওবামাকেয়ার বাতিল করা কোনো সহজ কাজ হবে না। কারণ আমেরিকানরা খুব সহজেই এ ব্যাপারটি মেনে নেবেন না।

 

রাইজিংবিডি/ঢাকা/১৭ নভেম্বর ২০১৬/সাইফুল

রাইজিংবিডি.কম

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়